• সিরি আ
  • " />

     

    নাটকীয় জয়ে শিরোপার পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল জুভেন্টাস

    নাটকীয় জয়ে শিরোপার পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল জুভেন্টাস    

    ৭১৬ মিনিট গোলের দেখা পান না, ইতালিতে আসার পর এমন বাজে সময় যায়নি তার। 'বড় ম্যাচে' ছায়া হয়ে থাকার দুর্নাম তার অনেক আগে থেকেই। ইন্টার মিলানের বিপক্ষে সান সিরোতেও সুবিধা করতে পারছিলেন না একেবারেই। পুরো ম্যাচে একবারও গোলে শট করতে না পারা সেই গঞ্জালো হিগুয়াইনই পার্থক্য গড়ে দিলেন। ৮৮ মিনিটের ওই গোলেই সান সিরোর সঙ্গে চুপ স্তব্ধ হয়ে গেল নেপলসের উৎসবও। আর তিন মিনিটে দুই গোল দিয়ে ৩-২ ব্যবধানে জিতে চ্যাম্পিয়নের মতোই ফিরে এলো জুভেন্টাস।

    ডার্বি ডি ইতালিয়ার ইতিহাস এমনিতেই সমৃদ্ধ, তারওপর সিরি আর শেষদিকে এসে মুখোমুখি দুই দল- সবমিলিয়ে অনেক কারণেই ম্যাচটা ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। জুভেন্টাসের হার মানে অনেকটাই শিরোপা থেকে ছিটকে পড়া, আর ইন্টারের হার মানে পরের মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলতে না পারা অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যাওয়া। আর পয়েন্ট ভাগাভাগি হলে ঝুলে থাকা ভাগ্যের শিকে। ৯০ মিনিটের একটা ম্যাচ, তাতে ছড়ালো সবরকম উত্তেজনা, সবরকম রোমাঞ্চ। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বদলালো সমীকরণের হিসাব-নিকাশ।


    আগের ম্যাচে নাপোলির কাছে হারের পর দুইয়ে থাকা নাপোলির সঙ্গে জুভেন্টাসের ব্যবধান ছিল এক পয়েন্ট। কিন্তু কাগজে কলমে লিগের শেষ ৪ ম্যাচে নাপোলির চেয়ে জুভেন্টাসের প্রতিপক্ষই ছিল বেশি কঠিন। ইন্টার আর রোমার বিপক্ষে দুটি অ্যাওয়ে ম্যাচকে ধরা হচ্ছিল জুভেন্টাসের কঠিন পরীক্ষা। আজ মিলানে খেলার ১২ মিনিটেই গোল দিয়ে কঠিন কাজটা শুরুতেই দলের জন্য সহজ করে দিয়েছিলেন ডগলাস কস্তা। ৫ মিনিট পরই ইন্টারের মাতিয়াস ভেসিনো লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লে পরীক্ষায় সহজে উতরে যাওয়ার স্বপ্নই দেখছিল জুভেন্টাস। কিন্তু সেই কাজটাই শেষ পর্যন্ত এতো কঠিন হবে সেটা কে জানত! 

    দশ জনের দল নিয়ে প্রথমার্ধে বলের দখল পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল ইন্টারকে। অ্যান্টোনিও ক্যান্দ্রেভার দূরপাল্লার একটা শট ছাড়া তেমন কিছু ছিল না ইন্টারের আক্রমণে।  দ্বিতীয়ার্ধের আগেই অবশ্য দুই গোলে পিছিয়েও যেতে পারত তারা। ভেসিনোর লাল কার্ডটা রেফারি দিয়েছিলেন ভিডিও রিপ্লে দেখে। শুরুতে হলুদ কার্ড দেখালেও পরে ভিএআর এর সাহায্য নিয়ে সিদ্ধান্ত বদলান রেফারি। প্রথমার্ধের ইনজুরি টাইমে ব্লেইস মাতুইদি গোলের উৎসব করলেও পরে সেটা মিলিয়ে গিয়েছিল রেফারির সিদ্ধান্তেই। ভিএআর থেকে সে দফায় লাভবান হয় ইন্টার। প্রথমার্ধে তাই এক গোলে পিছিয়েই শেষ হয় তাদের। 

    সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিরতির পরই ঘুরে দাঁড়ায় ইন্টার। অধিনায়কই হাল ধরেন দলের, ৫২ মিনিটে দারুণ এক হেডে গোল করে ইন্টারকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন মাউরো ইকার্দি। মাসিমিলিয়ানো আলেগ্রির শুরুর একাদশে আজ ছিলেন পাউলো দিবালা। পয়েন্ট হারানোর শঙ্কায় পড়ে শেষ পর্যন্ত আর্জেন্টাইনকে জুভে ম্যানেজার মাঠে নামান ৬১ মিনিটে। কিন্তু উলটো অন্যপ্রান্তে গোল খেয়ে সবরকম বিপদ ডেকে আনে জুভেন্টাস। ইভান পেরিসিচের একটা ক্রস ঠেকাতে গিয়ে সেটা নিজের জালেই ঢুকিয়ে দেন জুভেন্টাস ডিফেন্ডার আন্দ্রে বার্জালি। জর্জিও কিয়েলিনি আর মেধি বেনাতিয়ার অনুপস্থিতিতে বার্জালি আর রুগানিই আজ ধরেছিলেন জুভেন্টাসের রক্ষণের দায়িত্ব। যার নেতৃত্ব দেওয়ার কথা সেই তিনিই দিলেন দলকে পিছিয়ে!

    সান সিরোতে তখন দশ জনের দল নিয়েই জুভেন্টাসকে হারানোর স্বপ্নে বিভোর প্রায় ৭৫ হাজার ইন্টার সমর্থক। ইন্টারের জমাট বাধা রক্ষণ গলে বলই বের করতে পারছিলেন না কুয়াদ্রাদো, কস্তারা। ইন্টার ডিফেন্ডারদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন গোলরক্ষক সামির হান্দানোভিচও। পাউলো দিবালার একটা ফ্রি কিক অবিশ্বাস্যভাবে ঠেকিয়ে দিয়ে দলকে 'অসম্ভব' এক জয়ের স্বপ্নই দেখাচ্ছিলেন তিনি। ৮০ মিনিটের পর রাফিনহার সঙ্গে ইকার্দিকেও তুলে নিয়ে আরও রক্ষণাত্মক দিকেই গিয়েছিলেন লুসিয়ানো স্পেলেত্তি। ইন্টার কোচের সেই সিদ্ধানন্তটা অবশ্য ভুল প্রমাণিত হয়েছে কিছুক্ষণ পরই।

    ৮৬ মিনিটে হান্দানোভিচও আর পারলেন না, কুয়াদ্রাদোর নেওয়া শট নিজের ডিফেন্ডার মিলান স্ক্রিনিয়ারের গায়ে লেগে ঢুকে গেল তার জালে। তাকিয়ে তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না তখন হান্দানোভিচের।
     
    ওই গোলে আবারও বদলে গেল খেলার চেহারা। এতোক্ষণ যাদের ভয়ঙ্কর মনে হচ্ছিল না, তারাই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে থাকলেন ইন্টারের রক্ষণের জন্য। ভাগ্যের ছোঁয়া পেয়ে ম্যাচে ফিরে আসা জুভেন্টাসেরও সমীকরণ তখন বদলে গেল যেন! এতোক্ষণ হয়ত ড্র নিয়ে বাড়ি ফিরলেই খুশি হত তারা, কিন্তু এবার তাদের চাই জয়। কাঙ্ক্ষিত সেই জয়টা শেষ পর্যন্ত আসলো সাবেক সেই নাপোলি স্ট্রাইকারের কাছ থেকেই। দিবালাই ফ্রি কিক থেকে একেবারে মাপা শটটাই করেছিলেন, আর সময়মতো জ্বলে উঠে সেটা জায়গামতো হেড করেছিলেন হিগুয়াইন। 

    ওই গোলের পর উৎসবে মাতা জুভেন্টাস খেলোয়াড়দের থামাতে ডাগআউট থেকে মাঠেই ঢুকে গিয়েছিলেন আলেগ্রি।  হিগুয়াইনের গোলের পর যেন আরও একবার সমীরকরণ বদলে গেল জুভেন্টাসের। এটা তো একটা জয়ই মাত্র, এখনও বাকি তিন ম্যাচ! আলেগ্রি খেলোয়াড়দের ধমক দিয়েই উদযাপন থামিয়ে আবারও নিজেদের জায়গায় পাঠিয়েছেন, পরে রেফারির নির্দেশে মাঠও ছেড়েছেন। তিনি তো ভালো করেই জানেন, এই জয়টা এমন কিছুই না!  

    আগামীকাল ফিওরেন্টিনার বিপক্ষে মাঠে নামবে নাপোলি। তাদের চেয়ে এক ম্যাচ বেশি খেলে ৮৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষেই থাকল জুভেন্টাস।