• ইংল্যান্ড-ভারত সিরিজ
  • " />

     

    কোহলি ১৪৯, ভারত ২৭৪

    কোহলি ১৪৯, ভারত ২৭৪    

    প্রথম টেস্ট, এজবাস্টন, দ্বিতীয় দিনশেষে  
    টস- ইংল্যান্ড (ব্যাটিং)
    ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস ২৮৭ (রুট ৮০, বেইরস্টো ৭০, আশ্বিন ৪/৬২) ও ২য় ইনিংস ৯/১* 
    ভারত ১ম ইনিংস ২৭৪ (কোহলি ১৪৯, কারান ৪/৭৪)
    ইংল্যান্ড ৯ উইকেট নিয়ে ২২ রানে এগিয়ে 


    ভারতের ৩ উইকেট ছিল ৫৯ রানে। ৫ উইকেট ১০০ রানে। ১৮২ রানে ৮ উইকেট। ইংল্যান্ড তবুও প্রথম ইনিংসে লিড পেলো মাত্র ১৩ রানের। বিরাট কোহলির মহাকাব্যিক ইনিংসে এজবাস্টনে পিছিয়ে থেকেও দ্বিতীয় দিনশেষে স্বস্তিতে তাই ভারতেরই। কার্যত দিনের শেষ বলে আশ্বিনের বলে প্রথম ইনিংসের কার্বন-কপি ধরনে বোল্ড হয়ে ইংল্যান্ডের অস্বস্তি বাড়িয়ে দিয়েছেন অ্যালেস্টার কুক। দ্বিতীয় দিনশেষে ৯ উইকেট নিয়ে এখন ২২ রানের লিড ইংল্যান্ডের। 

    মাঠে নামার সময় এজবাস্টনের কাছ থেকে দুয়ো শুনেছিলেন ভারত অধিনায়ক কোহলি। সেই কোহলিই শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার সময় শুধু ইংল্যান্ড দল নয়, পুরো এজবাস্টনেরই অভিনন্দনে সিক্ত হলেন। ইংল্যান্ডের মাটিতে তার প্রথম ও ক্যারিয়ারের ২২তম সেঞ্চুরিটা ছিল এমনই দুর্দান্ত। অফস্টাম্পের বাইরের চ্যানেলে ভুগেছেন এদিনও, আউটসাইড-এজ, ইনসাইড-এজ হয়েছে কয়েকবার, ইংল্যান্ডকে সুযোগও দিয়েছেন, স্লিপেই দুইবার তার ক্যাচ ফেলেছেন ডেভিড মালান। তবে সেসব সুযোগ ইংল্যান্ড কাজে লাগাতে পারেনি, কোহলি বরং ভাগ্যের পরশকে ছাপিয়ে খেলেছেন মহাকাব্যিক ইনিংস। 

    শেষ উইকেটে উমেশ যাদবকে নিয়ে যোগ করেছেন ৫৭ রান, সেখানে কোহলির একারই রান ৫২! লড়াইটা অনেকাংশজুড়েই ছিল কোহলি বনাম ইংল্যান্ডের। ভারতের ২৭৪ রানের মধ্যে কোহলির ১৪৯, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শিখর ধাওয়ানের রান ২৬! ভারতের টপ অর্ডার ধসে গেছে স্যাম কারানের কারুকার্যে, মিডল অর্ডার ধসে গেছে স্টোকসের স্ট্রোকে, কিন্তু অ্যান্ডারসন-ব্রড-কারান-স্টোকস মিলে টলাতে পারেননি শুধু ওই কোহলিকেই! 

     

     

    ৫০ রানে মুরালি বিজয়কে ইনসুইংয়ে রিভিউ নিয়ে এলবিডব্লিউ করেছেন কারান। অফস্টাম্পের বাইরের বল স্টাম্পে ডেকে এনেছেন লোকেশ রাহুল, আর নড়বড়ে ধাওয়ান অফস্টাম্পের বাইরের ফুললেংথের আউটসুইংয়ে স্লিপে দিয়েছেন ক্যাচ। ৫০ রানে ০ উইকেট থেকে কারানের তোপে পড়েই ৭৬ রানে ৩ উইকেট নিয়ে লাঞ্চে গেছে ভারত। 

    এরপর রোমাঞ্চ ছড়িয়েছেন স্টোকস। অফস্টাম্পের বাইরের বলে কাট শটটা চেক করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন রাহানে, ফুললেংথে স্টোকসের সেট-আপে পড়ে লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন কার্তিক। এরপর হারদিক পান্ডিয়া ও কোহলি- পরপর দুই বলে দুজন বেঁচেছেন ইংল্যান্ডের পিচ্ছিল স্লিপ কর্ডনে। কোহলি জীবন পেয়েছেন ২১ রানে, পান্ডিয়া শূন্যতেই। কারানের বলে এলবিডব্লিউ হওয়ার আগে পান্ডিয়া করেছেন ২২, তবে ৫২ রানে কোহলিকে আরেকটি জীবন দিয়েছেন মালানই। 

    জেমস অ্যান্ডারসনের অফস্টাম্পের বাইরের বলে আউটসাইড-এজড হয়েও বেঁচেছেন কোহলি, আর ধীরে ধীরে ইংল্যান্ডকে বাধ্য করেছেন চরম ক্ষতিপূরণ দিতে। আশ্বিনকে দারুন ইনসুইংয়ে এলবিডব্লিউ করেছেন অ্যান্ডারসন, তার বলেই স্লিপে মোহাম্মদ শামির ক্যাচ নিয়ে দায়মোচনে ‘বৃথা’ চেষ্টা করেছেন মালান। আর দুইবার রিভিউ নিয়ে বেঁচে যাওয়া ইশান্ত শর্মা এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েছেন আদিল রশিদের স্ট্রেইটারে, অথচ এবারও রিভিউ নিলে বেঁচেই যেতেন তিনি। 

    শর্মা আউট হওয়ার সময় কোহলির রান ছিল ৯৭, আউটের পর শর্মার হতাশার অভিব্যক্তিটাই বলে দিচ্ছিল সব- এত কাছে এসেও কোহলির আরাধ্য সেঞ্চুরি যে তখন শঙ্কার মুখে! 

    সেটা হয়নি। কোহলি চার মেরে সেঞ্চুরি করেছেন, ১৭২ বলে। এরপর আরও ৪৮ রান করেছেন ৫৩ বলে। ইংল্যান্ডকে হতাশ করে গেছেন শুধু, কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে রশিদের বলে ক্যাচ দেওয়ার আগে। 

    আগের দিনের সঙ্গে আর ২ রান যোগ করেই শেষ উইকেটটা হারিয়েছিল ইংল্যান্ড, কারান উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছিলেন শামির বলে। তখনও এজবাস্টনের প্রায় ১৭ হাজার দর্শক জানতেন না, তারা দেখতে চলেছেন টেস্ট ক্রিকেটের রোমাঞ্চকর এক দিন। টেস্ট ক্রিকেটের আধুনিক সেরাদের একজনের অন্যতম সেরা এক ইনিংস!