• ইংল্যান্ড-ভারত সিরিজ
  • " />

     

    'কারান-শো' এর পর ইংল্যান্ড ও জয়ের মাঝে ব্যবধান কোহলি

    'কারান-শো' এর পর ইংল্যান্ড ও জয়ের মাঝে ব্যবধান কোহলি    

    প্রথম টেস্ট, এজবাস্টন, তৃতীয় দিনশেষে  
    টস- ইংল্যান্ড (ব্যাটিং)
    ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস ২৮৭ (রুট ৮০, বেইরস্টো ৭০, আশ্বিন ৪/৬২) ও ২য় ইনিংস ১৮০ (কারান ৬৩, ইশান্ত ৫/৫১)
    ভারত ১ম ইনিংস ২৭৪ (কোহলি ১৪৯, কারান ৪/৭৪) ও ২য় ইনিংস ১১০/৫* (কোহলি ৪৩*, ব্রড ২/২৯)
    জয়ের জন্য ৫ উইকেটে ৮৪ রান প্রয়োজন ভারতের 


    ভারতের প্রয়োজন ৮৪ রান, ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ৫ উইকেট। প্রথম ইনিংসের মতো এবারও ভারতের সবচেয়ে বড় অবলম্বন বিরাট কোহলি। এজবাস্টনে রোমাঞ্চকর টেস্টে ইংল্যান্ড ও জয়ের মাঝে ব্যবধান এখন তিনিই। প্রথম ইনিংসের চেয়ে আরও বেশি সংযত তিনি এবার, ইংলিশ বোলারদের পরীক্ষার সামনে আরও বেশি দৃঢ় তিনি। তবে চতুর্থ দিনে কোহলিকে টানতে হবে আরও অনেক্ষণ, সেটা করতে পারবেন কিনা, তার ওপরই নির্ভর করছে এজবাস্টনে শেষ হাসিটা হাসবে কারা। 

    এটা সেরকমই একটা টেস্ট, যেটা টেস্ট ক্রিকেটের ‘অনিশ্চিত’ ভবিষ্যতকে দেখায় বুড়ো আঙুল। এদিন প্রথমে আশ্বিন ছিলেন নায়ক। এরপর ইংলিশ মিডল অর্ডারে ‘অ্যাঙ্গেল’ করে ছুরি চালিয়েছেন ইশান্ত শর্মা। ৮৭ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ড অতল গহবরে হাবুডুবু খাচ্ছিল, সেখান থেকে তাদেরকে টানলেন ২০ বছর বয়সী স্যাম কারান। বোলিংয়ে তার পারফরম্যান্স যদি ইংল্যান্ডকে লাইফ-লাইন না দেয়, তাহলে নিশ্চিতভাবেই দিয়েছে ব্যাটিংয়ে আট নম্বরে নেমে তার করা ৬৫ বলে ৬৩ রানের ইনিংস। ইংল্যান্ডকে তখনই ‘আউট’ করে দিতে পারতো ভারত, সেটা হয়নি তারা ওই কারানকেই আউট করতে না পারায়। 

    আগেরদিনই কুককে বোল্ড করে ইঙ্গিতটা আরেকবার দিয়ে রেখেছিলেন আশ্বিন, দেশের বাইরে তিনি এখন ভিন্ন বোলার। বাঁহাতি শিকার করাটা যেন খুব সহজ বানিয়ে ফেলেছেন এই অফস্পিনার। কিটন জেনিংসকে সামনের পায়ে আসতে বাধ্য করলেন, এরপর তার টার্নে ধোঁকা খেলেন জেনিংস। আশ্বিনের স্পিনে ফ্লিককেই ভরসা করা রুটও দিলেন ক্ষতিপূরণ। লেগ স্লিপে লোকেশ রাহুলের দারুণ আরেকটি ক্যাচ, ইংল্যান্ড ইনিংসে তখন ধসের পূর্বাভাস। 

    সেটা সত্যি করলেন ইশান্ত শর্মা। বাঁহাতি হলে রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে, ডানহাতি ব্যাটসম্যান হলে ওভার দ্য উইকেট থেকে তার ভেতরের দিকে ঢোকা বলের জবাব দিতে পারল না ইংল্যান্ডের মিডল অর্ডার। ডেভিড মালান, জনি বেইরস্টো, বেন স্টোকস, জস বাটলার- উইকেটকিপার বা স্লিপেই ক্যাচ দিলেন সবাই। ইশান্তের আগুনে ছারখার ইংল্যান্ড, এজবাস্টনে তৃতীয় দিনই তাদের তখন চোখ রাঙাচ্ছে পরাজয়। 

    তবে কিছু বলার বাকি ছিল কারানের। স্লিপে ধাওয়ানকে একটা সুযোগ দিয়েছিলেন বটে, এছাড়া কারানের ব্যাটিংয়েই নতুন আশার আলো দেখলো ইংল্যান্ড। ইশান্ত, আশ্বিন, শামি- কেউই টলাতে পারলেন না কারানকে। প্রথমে আদিল রশিদ, পরে স্টুয়ার্ট ব্রডের সঙ্গ পেয়ে কারান করে ফেললেন ফিফটি, শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে উমেশ যাদবের বলে দীনেশ কার্তিককে ক্যাচ দেওয়ার আগে মেরেছেন ৯টি চার, ২টি ছয়। এজবাস্টনে চলেছে ‘কারান-শো’। 

    এর আগে রশিদকে বোল্ড করেছেন যাদব। আর ব্রডকে বাকি ডিসমিসালের মতো করেই করিডরে বল করে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেছেন ইশান্ত, সঙ্গে পূর্ণ করেছেন ক্যারিয়ারে ৮ম বার ৫ উইকেটও। ইংল্যান্ড ততক্ষণে পেয়ে গেছে ১৯৩ রানের লিড, দারুণ লড়াইয়ের স্কোর। 

    সেটাই উজ্জীবিত করলো ব্রডকে। এই ভারতীয় ব্যাটিং লাইন-আপে এক কোহলি ছাড়া সবাই যেন হারিয়ে খুঁজছেন ফর্ম। সিমিং কন্ডিশনে তো আরও খেই হারিয়ে ফেলছেন তারা। যেমন ব্রডের সিমে পড়ে ভেতরের দিকে ঢোকা বলে এলবিডব্লিউ হলেন মুরালি বিজয়। এর আগে স্লিপে বিভৎস সময় কাটানো ডেভিড মালান বিজয়কে একটা সুযোগও দিয়েছিলেন। এ নিয়ে এই টেস্টে স্লিপে তিনটি ক্যাচ ফেললেন মালান! 

    শিখর ধাওয়ানও ছিলেন নড়বড়ে, ব্রড তাকে ড্রাইভে প্রলোভন দেখিয়ে বাধ্য করেছেন পেছনে ক্যাচ দিতে। দিনের সেরা ডেলিভারিটা অবশ্য করেছেন বেন স্টোকস, লোকেশ রাহুলকে। প্রথমে বলে ঢুকেছে ভেতরের দিকে, এরপর সুইং করে গেছে বেরিয়ে। রাহুল শুধু ব্যাট দিয়ে একটু খোঁচাই দিতে পেরেছেন, বেইরস্টোর গ্লাভসে বন্দী হওয়ার আগে। 

    দৃশ্যপটে এরপর দিনের নায়ক- কারান। সামনে রাহানে, অফস্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে ভারতকে আরও বিপদে ফেললেন যিনি। কার্তিকের আগে আনা হলো আশ্বিনকে, অ্যান্ডারসনের বলে কুপোকাত তিনিও। 

    তবে ওপাশে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকলেন কোহলি। ইংল্যান্ডের সিম-সুইংয়ে আগুন সামলে, সতীর্থদের বেসামাল ডিসমিসাল দেখেও খেলে গেলেন নিজের সহজাত খেলাটা। কার্তিকের সঙ্গে তার জুটি এখন অবিচ্ছিন্ন ৩২ রানের। নিজে অপরাজিত ৪৩ রানে। 

    এজবাস্টনের চতুর্থ দিন অপেক্ষা করছে কী নিয়ে? আরেকটি কোহলি-মাস্টারক্লাস? ইংল্যান্ডের আরেকটি বোলিং মাস্টারক্লাস? নাকি আরও বড় কোনও রোমাঞ্চকর নাটক? 

    যেটাই অপেক্ষা করে থাকুক। এজবাস্টনে আপনি হতাশ হচ্ছেন না, হবেনও না!