অ্যান্ডারসন-সুইংয়ের ঘূর্ণিপাকে পড়ে ১০৭ রানেই অল-আউট ভারত
দ্বিতীয় টেস্ট, লর্ডস
ভারত ১০৭ অল-আউট, ৩৫.২ ওভার
লন্ডনের আবহাওয়া ছিল অনিশ্চিত। এই মেঘ, এই বৃষ্টি, এই রোদ। অবশ্য রোদ থাকলো খুব কম সময়ই। জিমি অ্যান্ডারসনের সুইং ছিল অনিশ্চিত। আউটসুইং, আউটসুইং, ইনসুইং। অথবা বিপরীত। তবে সবচেয়ে বেশি অনিশ্চিত ছিল ভারতের ব্যাটিং লাইন-আপের স্থায়িত্ব। উপযুক্ত কন্ডিশন পেয়ে তাদেরকে সেই অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিলেন প্রধানত অ্যান্ডারসন, সঙ্গে ক্রিস ওকস, স্যাম কারান, স্টুয়ার্ট ব্রড। ৩৫.২ ওভার খেলা হয়েছে দ্বিতীয় দিন, ভারত তাতেই অল-আউট হয়ে গেছে ১০৭ রানে। ২০ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন অ্যান্ডারসন, তার অভিষেকের মাঠে এটি ষষ্ঠ পাঁচ। অনার্স বোর্ডকে বেশ চাপে ফেলেছেন তিনি!
বাইরের দল ইংল্যান্ডে আসলে নিশ্চিতভাবেই তাদের জন্য অপেক্ষা করে এমন কন্ডিশন। লর্ডসের লাইব্রেরির রেকর্ড ভাঙল আজও, তবে লাইব্রেরির বাইরে যতক্ষণ থাকলেন দর্শকরা, সে সময়েই কন্ডিশন কিভাবে ব্যবহার করতে হয় এবং এই কন্ডিশনে কিভাবে ব্যাটিং না করতে হয়, তারা পেলেন সেই পাঠ। ইংল্যান্ড বোলাররা লেংথ দারুণভাবে নিয়ন্ত্রণ করে গেছেন, ভারত ব্যাটসম্যানরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি তাদের ফিট মুভমেন্ট। ফ্রন্টফুটে গিয়ে এমন ঘূর্ণি বল খেলার মাশুলটা গুণতে হয়েছে তাদের, চরমভাবেই। আটে নেমে রবি আশ্বিন ভারতের সর্বোচ্চ স্কোরার, ফর্মের চূড়ায় থাকা বিরাট কোহলিও ভুগেছেন এ কন্ডিশনে। ইংল্যান্ড আবার ক্যাচ মিস করেছে কোহলির, আজিঙ্কা রাহানের, হারদিক পান্ডিয়ার- সেসব ক্যাচ হাতে পুরতে পারলে ভারতের অবস্থা হতো আরও ভয়াবহ!
গুরুত্বপূর্ণ টসটা জিতেছিলেন রুট, বেন স্টোকসের জায়গায় তারা খেলাচ্ছেন ক্রিস ওকসকে। ভারত অবশ্য দুই স্পিনার নিয়েই নেমেছে, উমেশ যাদবের জায়গায় দলে এসেছেন কুলদীপ যাদব। তবে এমন সিদ্ধান্তটাও এখন ভারতের জন্য বুমেরাং হয়ে যেতে পারে!
ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের যাওয়া-আসার শুরুটা করেছিলেন মুরালি বিজয়। বৃষ্টির মতো করেই তারা যাওয়া-আসা করেছেন আজ। অ্যান্ডারসনের ভেতরের দিকে ঢুকে লেট-সুইংয়ে ‘স্কয়ারড আপ’ হয়ে দাঁড়ানো বিজয় হয়েছেন বোল্ড। অবিরাম অফস্টাম্পের বাইরে একই লেংথে বল করে গেছেন অ্যান্ডারসন, শেষ পর্যন্ত শট খেলা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে না পেরে রাহুল দিয়েছেন বেইরস্টোর কাছে ক্যাচ।
কোহলির সঙ্গে দলে ফেরা পুজারা কিছুক্ষণ টিকলেন, বৃষ্টি আসলো, খেলোয়াড়রা উঠেও গেলেন। তবে ড্রেসিংরুমে যাওয়ার আগেই ফিরতে হলো তাদের, আবার বৃষ্টিতে উঠে যাওয়ার আগে। এর মাঝেই পুজারার সঙ্গে কোহলির ভুল-বুঝাবুঝিটা হয়ে গেল, তার ডাকে সাড়া দিয়ে অনেকখানি গিয়েও ফিরলেন কোহলি, দুজন প্রায় একই প্রান্তে, অভিষিক্ত ওলি পোপ ছুটে এসে স্টাম্প ভেঙে পুজারার বিদায়ঘন্টা বাজিয়ে দিলেন।
১৬ রানে ৩ উইকেট, ভারত তখন হিমশিম খাচ্ছে। কোহলিও তাই। তাকে ভোগালেন অ্যান্ডারসন, শুধু উইকেটটাই পেলেন না! ভেতরের দিকে ঢোকা বলে ব্যাটের ফেস আগেই বন্ধ করে দিলেন কোহলি, আউটসাইড-এজটা গেল স্লিপে ‘অনিশ্চিত’ সময় কাটানো বাটলারের হাতে। আজ দুটি ক্যাচ নিয়েছেন বাটলার, ফেলেছেনও দুটিই!
পান্ডিয়া পড়লেন ওকসের কবলে, কার্তিককে বোল্ড করলেন কারান। ফিরতি স্পেলে এসে রাহানের রক্ষণও ভেঙে দিলেন অ্যান্ডারসন, স্লিপে তিনি দিলেন কুকের হাতে ক্যাচ।
ব্যাকফুটে গিয়ে ব্যাটিং করে গেলেন আশ্বিন, ‘প্রপার’ ব্যাটসম্যানদের যেন দেখালেন, এমন কন্ডিশনে এমন টেকনিকে টিকে থাকার সম্ভাবনা বেড়ে যায় কিভাবে। লড়াই করলেন, তবে ব্রডের বলে পড়লেন এলবিডাব্লিউর ফাঁদে। এর আগেই কুলদিপকে এলবিডাব্লিউ করেছেন অ্যান্ডারসন। দুজনই রিভিউ নিয়েছিলেন, দুটিই ব্যর্থ।
ইশান্তকে এলবিডব্লিউ করে পাঁচ পূর্ণ করেছেন অ্যান্ডারসন। এ মাঠেই ২০ বছর বয়সে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেক হয়েছিল তার। আজ ১৬ বছর পরও দেখিয়ে যাচ্ছেন সুইংয়ের অনুপম প্রদর্শনী। আর ভারতের মতো দলরা পড়ছে তার সুইংয়ের ঘূর্ণিপাকে!