• ট্রিবিউট
  • " />

     

    নামে নামে ফুটবলার

    নামে নামে ফুটবলার    

    উন্মাদনার বিচারে বিশ্বে বোধকরি ফুটবলের উপর কোন খেলা হয় না। ফুটবল তারকাদের অনুকরণ-অনুসরণের নানা অভিনব গল্পও তাই শোনা যায় হররোজ। প্রিয় ফুটবলারের নামে সন্তানের নামকরণ থেকে শুরু করে পোশাক-পরিচ্ছদে অনুকরণ, অনুরূপভাবে চুল কাটা সবই হয় দুনিয়াজুড়ে। কিন্তু খোদ ফুটবলারদের ক’জন নিজ সন্তানদের নাম রাখছেন অন্য ফুটবলারের নামে? কিংবা বাবা-মায়ের দেয়া তারকা নাম সার্থক করে নিজেদেরই ফুটবলার হয়ে ওঠার গল্প আছে ক’টি?

     

    ফ্রান্সের বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তী জিনেদিন জিদান তাঁর বড় ছেলে এনজো ফার্নান্দেজের নাম রেখেছিলেন সাবেক উরুগুইয়ান তারকা ফুটবলার এনজো ফ্রান্সেসকোলির নামে। কুড়ি বছরের এনজো ইতোমধ্যেই খেলে ফেলেছেন স্পেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে, বাবার পথ ধরে বর্তমানে খেলছেন রিয়াল মাদ্রিদের ‘সি’ দলে ১০ নম্বর জার্সিতে।

     

    এনজো ফার্নান্দেজ (মাঝে) খেলছেন রিয়াল মাদ্রিদের ‘সি’ দলে ১০ নম্বর জার্সিতে

     

    ফেলিপে মেলো চলতি মৌসুমে আছেন ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলানে। ৩২ বছর বয়সী এই ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার তাঁর এক ছেলের নাম রেখেছেন লিনিকার; ইংলিশ ফুটবলের সর্বকালের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার ও ইংল্যান্ডের হয়ে এ যাবতকালের তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা গ্যারি লিনেকারের নামে। বছর পাঁচেক আগে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নামকরণের কারণও ব্যাখ্যা করেছিলেন মেলো, “নামটা আমার কাছে ভারি সুন্দর আর খানিক আলাদা মনে হয়েছিল...আর সম্মানজনক তো বটেই। তিনি একজন অসাধারণ খেলোয়াড় ছিলেন। ইংল্যান্ড জাতীয় দল তথা ইংলিশ ফুটবলের ইতিহাসে এটি একটি বড় নাম।”

     

    ওয়েলস ও বার্মিংহাম সিটি উইঙ্গার ডেভিড কোট্টেরিলের নামের মধ্যে আছেন আরেক সাবেক উইঙ্গার। তাঁর পুরো নাম ডেভিড রাইস জর্জ বেস্ট কোট্টেরিল। ২৭ বছর বয়সী এই ফুটবলার ২০০৬ সালে ব্রিটিশ দৈনিক মিররের সাথে আলাপকালে জানিয়েছিলেন তাঁর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ভক্ত বাবা সাবেক ইউনাইটেড উইঙ্গার জর্জ বেস্টের প্রতি সম্মান প্রদর্শন পূর্বক নামের মাঝে তাঁকে জুড়ে দিয়েছিলেন।

     

     

    সাবেক ব্রাইটন মিডফিল্ডার চার্লি আউটওয়ের বাবা-মা ছিলেন কয়েক কাঠি সরেস! অ্যান্থনি ফিলিপ ডেভিড টেরি ফ্র্যাঙ্ক ডোনাল্ড স্ট্যানলি গ্যারি গর্ডন স্টিফেন জেমস আউটওয়ে...সাবেক এই ফুটবলারের নামকরণ করা হয়েছিল ইংলিশ ক্লাব কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্সের প্রথক স্কোয়াডের (১৯৭৩) পুরোটার নামে! তবে বেসরিক স্বজনেরা এতো বড় নাম মনে রাখতে ‘আপত্তি’ তোলায় শেষপর্যন্ত ডাকার সুবিধার্থে এই সুবিশাল নামের সিংহভাগ প্রতিস্থাপিত হয়ে দাঁড়ায় ‘চার্লি আউটওয়ে’।

     

     

    প্যাট্রুসিও স্যান্টোস কোন ফুটবলার নন। তবে পুত্রের নামকরণে এই ফ্রান্সভক্ত ব্রাজিলিয়ানের কীর্তি বর্ণনার দাবী রাখে! একবার ফ্রান্স ঘুরতে গিয়ে সেখানকার ফুটবলের পাঁড় ভক্ত বনে যান স্যান্টোস। ২০০৬ সালে যে বার প্রথম পুত্রের বাবা হলেন তখন চলছিল ফুটবল বিশ্বকাপ। সেবার কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের কাছে ১-০ গোলে হেরে বিদায় নেয় তাঁর নিজ দেশ ব্রাজিল।

     

    তাতে অবশ্য মোটেও ফ্রান্সের উপর চটেন নি স্যান্টোস। বরং বিশ্বকাপের ডামাডোলে জন্ম নেয়া ছেলের নাম রেখে দেন ফ্রান্সের সে সময়কার দলটির প্রায় সব তারকার নামে! ‘জিদান’ নামেই পরিচিত ওই শিশুকে জিগ্যেস করা হয়েছিল তার পুরো নাম, “জিনেদিন ইয়াজিদ জিদান থিয়েরি হেনরি বার্থেজ এরিক ফেলিপে সিলভা স্যান্টোস…” ভাবছেন কোন মানে হয় এতো বড় নামের? কিন্তু নাম তো এখানেই শেষ নয়! তবে? শুনুন জিদানের বয়ানেই, “বাকিটা এখনও জানি না। পুরো নামটা কখনও মুখস্ত করার চেষ্টা করি নি!”

     

    ফুটবল অনুরাগী বাবার নামকরণ সার্থক করে কি ফুটবলার হতে পারবে ছোট্ট জিদান?

     

    বুঝুন অবস্থা! জুনিয়র জিদানের নামে অবশ্য সম্মানসূচক অন্তর্ভুক্তি আছে ব্রাজিলের তৎকালীন কোচ লুইস ফেলিপে স্কোলারি ও সাবেক ফ্রেঞ্চ ফুটবলার এরিক কান্তোনারও। বাড়ির লোকে জিম, জো বিভিন্ন নামে ডাকলেও সাত বছরের এই ব্রাজিলিয়ান শিশু নিজেকে 'জিদান' নামে পরিচয় দিতেই পছন্দ করে! ফুটবলতীর্থের দেশে চাইলে সত্যিকারের জিদান হয়ে ওঠাও তো অসম্ভব কিছু নয়!