• দক্ষিণ আফ্রিকা-পাকিস্তান সিরিজ
  • " />

     

    অলিভিয়ার-আমলায় জোহানেসবার্গে ধুঁকছে পাকিস্তান

    অলিভিয়ার-আমলায় জোহানেসবার্গে ধুঁকছে পাকিস্তান    

    জোহানেসবার্গ টেস্ট
    প্রথম দিন, স্টাম্পস
    দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস ২৬২ (মার্করাম ৯০, ডি ব্রুইন ৪৯, আমলা ৪১, হামজা ৪১, ফাহিম ৩/৫৭, আমির ২/৩৬, আব্বাস ২/৪৪) ও ২য় ইনিংস* ১৩৫/৫ (আমলা ৪২*, ডি কক ৩৪*, ফাহিম ২/১৯)
    পাকিস্তান ১ম ইনিংস ১৮৫ অল-আউট (সরফরাজ ৫০, বাবর ৪৯, অলিভিয়ার ৫/৫১, ফিল্যান্ডার ৩/৪৩) 
    দক্ষিণ আফ্রিকা ৮ উইকেট নিয়ে ২১২ রানে এগিয়ে 


    পোকা উড়লো জোহানেসবার্গে। খেলা বিরতি নিল একটু পরপরই। সারাদিন একটু পর পর করে পড়লো মোট ১৩ উইকেট। প্রথম ঘন্টায় পাঁচটি ক্যাচ ও স্টাম্পিংয়ের সুযোগ মিস করার পরও দক্ষিণ আফ্রিকা নিল ৭৭ রানের লিড। ডুয়ান অলিভিয়ার আরেকবার নিলেন ৫ উইকেট। পাকিস্তানী বোলাররা ম্যাচে ফেরানোর চেষ্টা করলেন দলকে, তবে বাধা হয়ে দাঁড়ালেন হাশিম আমলা ও কুইন্টন ডি কক। দুজনই অপরাজিত দিনশেষে, আর দক্ষিণ আফ্রিকার লিড ছাড়িয়ে গেছে ২০০। সিরিজে একবার ২০০ পেরুনো পাকিস্তান, প্রথম ইনিংসে প্রতিপক্ষকে ২৬২ রানে অল-আউট করেও ৭৭ রানের লিড গোণা পাকিস্তানের কাছে হোয়াইটওয়াশ আটকানো তাই এখন মিরাকলের মতো। 

    তবে সব মিলিয়ে প্রথম দিনের মতো এদিনও জোহানেসবার্গ ছিল জমজমাট। আর প্রথম ঘন্টা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বাজে ফিল্ডিংয়ের প্রদর্শনীর। দুইবার ইমাম-উল-হকের ক্যাচ পড়েছে, বেঁচে গেছেন নাইটওয়াচম্যান মোহাম্মদ আব্বাসও। ক্যাচ মিসের সঙ্গে যোগ হয়েছে রান-আউটের সুযোগও। দুজনের জুটি শেষ পর্যন্ত গেছে ৪৭ রান পর্যন্ত। ৫১ বলে খেলে ১১ রান করেছিলেন আব্বাস, তবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে এ সময়ে ভুগিয়েছেন বেশ। 

    চার বলের ব্যবধানে এরপর অলিভিয়ার নিয়েছেন দুই উইকেট। প্রথমে ভেতরের দিকে ঢুকে সোজা হওয়া বলে অবশেষে আউট হয়েছেন আব্বাস, অবশেষে দক্ষিণ আফ্রিকা নিয়েছে ক্যাচ! শর্ট বলে ডাক করতে যাওয়া আসাদ শফিকের কোনও একভাবে গ্লাভসে লেগেছে বল, পেছনে লাফিয়ে ভাল ক্যাচই নিয়েছেন কুইন্টন ডি কক। 

    ফিল্যান্ডারের বাড়তি বাউন্সে ধোঁকা খেয়েছেন ইমাম, এলগারের হাতে ধরা পড়ার আগে তিনি করেছেন ৪৩, বাবর আজমের সঙ্গে তার জুটি ৩৮ রানের। লাঞ্চের আগে দুই ওভারে স্টেইনকে পাঁচ চার মেরে দ্বৈরথটাকে বেশ একপেশে বানিইয়ে ফেলেছেন বাবর আজম। এর আগে ফিল্ডিং মিসে হতাশ স্টেইন ভুগেছেন চোটেও, তার হতাশাটাই আরেকদফা বাড়িয়েছেন বাবর। 

    লাঞ্চের আগে ফিল্যান্ডারকে দুই চারে ইনিংস শুরু করেছিলেন সরফরাজ, বিরতির পরও চালিয়ে গেছেন আক্রমণ। বাবরের সঙ্গে তার জুটি ফিফটি ছুঁয়েছে মাত্র ৩৬ বলে, নিজে ফিফটি করেছেন ৩৮ বলে। তবে অতি আক্রমণাত্মক ইনিংসের ঝুঁকিটা সত্যি হয়েছে ফিফটি ছোঁয়ার এক বল পরই, রাবাদার শর্ট অফ আ লেংথে জ্যাবের চেষ্টায় স্লিপে দিয়েছেন ক্যাচ, আমলা যেটা ধরেছেন দ্বিতীয় দফায়। 

    এরপরের গল্প অলিভিয়ার আর তার শর্ট বলের। প্রথমে হুক করতে গিয়ে ফাইন লেগ পেরুতে পারেননি বাবর আজম। সিরিজে দারুণ সম্ভাবনাময় ইনিংসের এমন শেষ টানা অবশ্য এটাই প্রথম নয় তার। ফাহিম আশরাফ ও মোহাম্মদ আমির অলিভিয়ারের শর্ট বল সামলাতে পারেননি, ক্লোজ-ইনে করেছেন অসহায় আত্মসমর্পণ। আরেকবার ৫ উইকেট পূর্ণ করেছেন অলিভিয়ার। শাদাব খানকে ক্যাচ বানিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ৭৭ রানের লিড এরপর নিশ্চিত করেছেন রাবাদা। 

    পাকিস্তানকে এরপর শুরুতেই আশা জুগিয়েছেন বোলাররা। 

    মোহাম্মদ আমিরের ইনসুইংয়ে কট-বিহাইন্ড হয়েছেন ডিন এলগার, পাকিস্তান সে উইকেট পেয়েছে রিভিউ নিয়ে। ২৫ বলে ২১ রানের ইনিংসে দারুণ দেখাচ্ছিল এইডেন মার্করামকে, আব্বাসের বেরিয়ে যাওয়া লেংথ বলে ব্যাট লাগিয়ে ঘটিয়েছেন বিপত্তি, ডানদিকে ঝাঁপিয়ে দারুণ ক্যাচ নিয়েছেন সরফরাজ। 

    এরপর ফাহিম-ঝলক। তিন বলের ব্যবধানে নেই থিউনিস ডি ব্রুইন ও জুবাইর হামজা। প্রথম জন অফস্টাম্পের বাইরে লেংথ বল আগবাড়িয়ে খেলতে গিয়ে স্লিপে শফিকের দারুণ ক্যাচে পরিণত হয়েছেন, তবে পরেরজনের অবশ্য তেমন কিছু করার ছিল না নীচু হওয়া বলটিতে। ব্যাট নামিয়েও রক্ষা পাননি হয়েছেন এলবিডব্লিউ। 

    পাকিস্তানের উইকেট-রথের রেশ টেনে ধরেছেন এরপর হাশিম আমলা ও টেমবা বাভুমা। দুজনের ৪৫ রানের জুটি শেষ হয়েছে শাদাবের বলে বাভুমা কট-বিহাইন্ড হওয়ায়। তবে আমলার সঙ্গে এরপর যোগ দিয়েছেন কুইন্টন ডি কক, যিনি খেলেছেন ঝড়ো ইনিংস। ওয়াইড বা ফুল যা-ই পেয়েছেন, ডি কক তুলেছেন সেগুলোর পুরো সুবিধা। ছয় চারে করেছেন ৩৫ বলে ৩৪ রান। 

    আর আমলা অপরাজিত ৪২ রানে, ৯০ বলে। ছিলেন সুস্থির, বল খেলার মতো ছেড়েছেনও বেশ সতর্কভাবে, সেসবেও ছিল আধিপত্য বিস্তারের ইঙ্গিত। 

    জোহানেসবার্গ টেস্টে দ্বিতীয় দিনশেষেই আধিপত্য তো দক্ষিণ আফ্রিকারও।