• " />

     

    বীরুর ‘আনন্দ’ স্কুল

    বীরুর ‘আনন্দ’ স্কুল    

    ১.

    ঝাজ্জর, হরিয়ানা, ভারত। দিল্লী থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটারের পথ। সেখানে গেলে একটা স্থাপনা আলাদা করে নজরে পড়তে পারে আপনার। শেওয়াগ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। বীরেন্দর শেওয়াগের স্বপ্ন। যে স্বপ্নপূরণে তিনি বাবার একটা উপদেশ পূরণ করেছিলেন। একটা সময় ছিল, এ একাডেমি থেকে সে একাডেমি করতে করতেই শেওয়াগের দিনের প্রায় ঘন্টা পাঁচেক সময় লেগে যেত। তাঁর বাবা বলেছিলেন, ‘যদি বড় হয়ে ক্রিকেটার হও, টাকা কামাও কিছু, তাহলে এমন একটা প্রতিষ্ঠান খুলো, যেখানে বাচ্চারা খেলতে পারবে, পড়তে পারবে, থাকতে পারবে।’ শেওয়াগ বাবার কথাটা মনে রেখেছিলেন। ২০১১ সালে তাঁর মা যখন স্কুলটা উদ্বোধন করলেন, তখন অবশ্য বাবা নেই। শেওয়াগের বিশ্বাস, বাবা তাঁকে দেখছেন, তাঁর স্কুলটাকে দেখছেন, ওপরের কোথাও থেকে। কৃষ্ণ শেওয়াগ কি ছেলের টুইটটা দেখেছেন, গতকাল?

    ২.

    স্কুলের জমিটা শেওয়াগ পেয়েছিলেন হরিয়ানার প্রধানমন্ত্রীর কাছে। দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে যেবার ৩১৯ করলেন, মুলতানের পর দ্বিতীয়বারের মত ত্রিশতক করলেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁকে জমিটা দিয়ে বলেছিলেন একটা ক্রিকেট একাডেমি করতে। শেওয়াগ বাবার কথাটা মনে রেখেছিলেন, একাডেমির সঙ্গে স্কুল করার অনুমতিটাও নিয়েছিলেন তখনই।

    চিদাম্বরমের ফ্ল্যাট উইকেটে শেওয়াগের সামনে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, টানা ছয় সিরিজ জয়ী আফ্রিকা। আর ছিলেন ডেল স্টেইন, ওই ৬ সিরিজে ১২ টেস্টে যিনি নিয়েছিলেন ৭২টি উইকেট! শেওয়াগ মুলতানে ক্যারিয়ারের প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরি করতে নিয়েছিলেন ৩৬৪ বল, এবার নিলেন ২৭৮। টেস্টের দ্রুততম ট্রিপলের রেকর্ডটা নিজের করে নিলেন এবার। ইতিহাস!
     


    বুম! মুলতানে শেওয়াগের বিস্ফোরণ। সে ইনিংসে সেঞ্চুরি ও ট্রিপল সেঞ্চুরিতে শেওয়াগ পৌঁছেছিলেন ছয় মেরে। যেন এসব কোনও ব্যাপারই নয়!/ক্রিকইনফো


    ৩.

    শেওয়াগের সেই স্কুলের সাতটি মূলমন্ত্র আছে। ‘পাওয়ার অব সেভেন’।

    সেই মূলমন্ত্রের শেষে আছে আশাবাদ। শেওয়াগ ১৯৯৯ সালের এপ্রিলে একটি ওয়ানডে খেলেছিলেন পাকিস্তানের সঙ্গে। দ্বিতীয়টি খেলেছিলেন পরের বছর ডিসেম্বরে। শেওয়াগের আশা নিশ্চয়ই টিকে ছিল। এরও পরের বছর নভেম্বরে যখন দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে টেস্ট অভিষেকও হয়ে গেল, ব্লুমফন্টেইনে বীরু করলেন সেঞ্চুরি। ছয় নম্বরে নেমে।

    ২০০১ সালে ব্যাংগালোরে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে একটা ওয়ানডেতে ছয় নম্বরে নেমে ৫৮ করেছিলেন বীরু। ৫৪ বলে, আট চারে। আত্মবিশ্বাসে ভরপুর স্ট্রোকময় এক ইনিংস। ভারতের ওপেনিং সমস্যা আর বীরুর মাঝের ওভারগুলোতে স্পিনারদের স্লগ করতে গিয়ে আউট হওয়ার সমস্যা- দুইয়েরই সমাধান পেলেন ভারতের কোচ জন রাইট। বীরেন্দর শেওয়াগ উঠে এলেন ওপেনিংয়ে। মন্ত্রটা কিন্তু একই থাকলো, বল ব্যাটসম্যানের কাছে আসেই মারার জন্য! ওয়ানডেতে নাহয় হলো, কিন্তু টেস্ট! জন রাইট আর সৌরভ গাংগুলি বাজিটা ধরলেন। নিজের ষষ্ঠ টেস্টে ওপেনিংয়ে নামলেন শেওয়াগ, লর্ডসে করলেন ৮৪, দলের সর্বোচ্চ স্কোর। পরের টেস্টে ট্রেন্টব্রিজের সবুজ উইকেটে করলেন দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি। বীরেন্দর শেওয়াগ হয়ে গেলেন ওপেনার। যাওয়ার বেলাতেও নিশ্চয়ই সেই বাজিটার জন্য প্রিয় কোচ আর ‘দাদা’কে কৃতজ্ঞতা জানান শেওয়াগ! কৃতজ্ঞতা- শেওয়াগের স্কুলের ষষ্ঠ মূলমন্ত্র!

    শেওয়াগ ওপেনিংয়ে এলেন। খেলার ধরন বদলালো না, ওপেনিংয়ের ধরনই যেন বদলে গেল! মিডল অর্ডারে থাকতেও বোলারদের প্রতি সহানুভূতি ছিল না, ওপেনিংয়েও রইলো না। রেকর্ড রাখা আছে, এমন টেস্ট ব্যাটসম্যানদের মধ্যে শেওয়াগের স্ট্রাইক রেটই তাই সবচেয়ে বেশী, ৮২.২৩। চল্লিশের ওপর গড়, সঙ্গে ৮০ এর ওপরে স্ট্রাইক রেট, ইতিহাসে শেওয়াগ ছাড়া এমন ব্যাটসম্যান আছেন মাত্র চারজন। তাঁর দুটি ট্রিপল সেঞ্চুরি আছে, ডন ব্র্যাডম্যান, ব্রায়ান লারা ও ক্রিস গেইলের সঙ্গে। সবাইকে ছাড়িয়ে একাই হতে পারতেন ‘ট্রিপল’ ট্রিপলের অনন্য মালিক। গলে একদিনেই করেছিলেন ২৮৪ রান, মুরালিধরনের বলে কট এন্ড বোল্ড হওয়ার সময় আরেকটি ট্রিপল সেঞ্চুরি থেকে সাত রান দূরে দাঁড়িয়ে তিনি! তিনটি ট্রিপল না হোক, কুমার সাংগাকারা (১৯টি) ও ডন ব্র্যাডম্যানের (১৮টি) পর সবচেয়ে বেশী ১৪টি ‘ড্যাডি হান্ড্রেড’ (১৫০ পেরোনো ইনিংস) আছে তাঁর। টেস্টের প্রথম পাঁচটি দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরির তিনটি তাঁর, প্রথম দশটিতে পাঁচটি। ওয়ানডেতে আবার আছে ডাবল সেঞ্চুরিও। যে রেকর্ডটা তাঁরই হওয়ার কথা ছিল আরও আগেই, সেটিই করেছিলেন ২০১১ সালে। ৬৯ বলে প্রথম সেঞ্চুরি, ৭১ বলে দ্বিতীয়টি। শুধু সেদিনের ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের কেন, ক্যারিয়ারজুড়েই বোলারদের ‘সহানুভূতি’ দেখানোতে খুব একটা আগ্রহ ছিল না বীরুর! সহানুভূতি- নিজের স্কুলের এই মন্ত্রটা শেওয়াগ নিজেই ভেংগেছেন এক অর্থে, অসংখ্যবার!
     


    ২৭৮ বলে ট্রিপল সেঞ্চুরি। ওকে।/ক্রিকইনফো


    ৪.

    শেওয়াগের টেকনিক কী ছিল আসলে! পা চলতো না তেমন, তাঁর ‘দুর্বলতা’ হিসেবে অনেকেই এটিই বলবেন। তবে টেকনিকের কিংবদন্তি রাহুল দ্রাবিড় কিন্তু বলেন ভিন্ন কথা। ‘টেকনিক হলো হাত আর চোখের “কম্বিনেশন”, যেটা শেওয়াগের অসাধারণ ছিল। শেওয়াগের ব্যাকলিফট উঁচু, ব্যাটও সোজা রাখতে পারতো, বল মারার সময় তাই “ফুল-ফ্লো” আনতে পারতো সহজেই। আর পা নড়াচড়া মানেই ডাউন দ্য গ্রাউন্ড বা এদিক থেকে সেদিকে যাওয়া নয়, বল খেলার জন্য সবচেয়ে ভাল পজিশনে যাওয়া। শেওয়াগ যা খুব ভাল পারতো!’ হাত আর চোখের সমন্বয়ের সঙ্গে শেওয়াগের ‘হেড পজিশনও’ ছিল অসাধারণ!

    আর নিজে কী বলেন! প্রথম যখন নামতেন, তখন নাকি একটি কথাই মাথায় থাকতো তাঁর, ‘প্রথম বলটাকেই চার বা ছয় মারো’, সঙ্গে সঙ্গে এটাও মাথায় ঢুকতো, ‘কিছু রক্ষণাত্মক শটও খেলা উচিৎ’! যেন একটা গান ধরেছেন, ছন্দ খুঁজছেন। যখন পেতেন, ধরতে পারতেন বলের সুর, বলটিকে কী করতে হবে, বুঝে যেতেন সহজেই! রাহুল দ্রাবিড় যখন ওপাশে দাঁড়িয়ে শেওয়াগের ব্যাটিং দেখতেন, তাঁর মনে হতো, আহা, ব্যাটিং না কতোই সোজা! বীরুর ব্যাটিং দেখে ‘দ্য ওয়াল’ও ছন্দ খুঁজে পেয়েছেন কতবার! শেওয়াগের প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা ছিল এতটাই প্রবল। কার্যকরী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা, যা প্রভাব ফেলবে অন্যের জীবনেও। শেওয়াগের স্কুলের আরেকটি মূলমন্ত্র!

    ৫.

    ‘শেওয়াগকে বোঝার সবচেয়ে ভাল উপায় ড্রেসিংরুমে তার পাশে বসে ভারতের ব্যাটিং দেখা। কেউ একটা বলের সুবিধা অনুযায়ী খেলতে না পারলে সে প্রায়ই মাথায় হাত দিবে। প্রত্যেক বার বলবে, ‘চারটা মিস হয়ে গেল’, ‘ছয়টা মিস হয়ে গেল’! মারার মতো একটা বল মিস হয়ে গেলে শেওয়াগের হতাশা প্রকাশের এটিই ছিল উপায়, যা প্রকাশ পেত চার বা ছয় দিয়ে!’ শেওয়াগ চার ছয় মারতে ভালবাসতেন। ২৯৫ রানে দাঁড়িয়ে, সামনে সাকলাইন মুশতাক। নিজের প্রথম, ভারতের প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরির সামনে দাঁড়িয়ে শেওয়াগ মারলেন ছয়! ‘স্নায়ুচাপ’ এর বাধাটা টপকে গেলেন কত সহজেই, একটি ছয়ে! প্রত্যেকবারই যে এমন হয়েছে তাও কিন্তু নয়। এমসিজিতে ছয় মারতে গিয়ে মিস করেছিলেন ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি। তবুও তার আফসোস ছিল না, কেন আরেকটু দেখেশুনে খেলতে গেলেন না। বরং আফসোস ছিল, ‘বলটা বাউন্ডারির মাত্র তিন গজ ভেতরে পড়লো!’ কত কঠিন বাধাকে শেওয়াগ কত সহজেই টপকানোর উপায় বের করেছিলেন! শেওয়াগ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ছাত্রদের শেখানো হয় এটিই, বাধা কিভাবে পেরোতে হয়!

    ৬.

    ২০১০ সাল। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়াম। কনফারেন্স রুম। অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির চোটের কারণে প্রথম টেস্টে অধিনায়ক শেওয়াগ, সংবাদ সম্মেলনে এসেছেন তিনিই। বাংলাদেশের এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলেন, বাংলাদেশ কি পারবে ভারতকে চমকে দিতে? ‘না, তারা টেস্টে আমাদের হারাতে পারবে না। ওয়ানডেতে চমকে দিতে পারবে, টেস্টে নয়।’ কারণ? ‘কারণ তারা ভারতের ২০টি উইকেট নিতে পারবে না। শ্রীলঙ্কার জন্যই এটি কঠিন হয়ে যায়। আর বাংলাদেশ তো ‘অর্ডিনারি’ একটা দল!’ অর্ডিনারি কোন অর্থে, ব্যাটিং নাকি বোলিং? ‘ডাজনট মেটার’ মানে কিছু যায় আসে না তাতে!

    বাংলাদেশের সাংবাদিকরা বেশ অবাক হয়েছিলেন সেদিন। এ লোক বলে কী! সবাই তো ‘আমরা তাদেরকে হালকাভাবে নিচ্ছি না, তারা উন্নতি করছে’ টাইপের কথা বলে, আর এ কিনা মুখের ওপর ‘অর্ডিনারি’ বলে দিল! তবে ভারতীয় সাংবাদিকরা শেওয়াগের প্রেস কনফারেন্স রুমেও এমন ব্যাট চালানোতে অভ্যস্ত ছিলেন। চাঁছাছোলা ব্যাটিংয়ের মতো শেওয়াগের কথাও তো তাই! যা মুখে আসে বলে দেন। জিওফ বয়কট একবার তাকে ‘বুদ্ধিহীন মেধাবি’ বলেছিলেন। শেওয়াগ উত্তর দিয়েছিলেন, ‘বয়কট যা খুশি বলতে পারেন। তিনি একবার পুরো দিন ব্যাটিং করে একটি বাউন্ডারি মেরেছিলেন’।
     


    'আই ডিড ইট মাই ওয়ে'


    লাহোরে রাহুল দ্রাবিড়ের সঙ্গে ওপেনিংয়ে নেমে প্রায় ভেঙ্গে দিয়েছিলেন পঞ্চাশ বছরের পুরোনো ভিনু ম্যানক্যাড ও পঙ্কজ রায়ের রেকর্ড। শেওয়াগকে দুই পূর্বসূরী সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। শেওয়াগ সরাসরি বলেছিলেন, ‘নাহ, আমি তাদের নাম কখনও শুনিনি’!

    সেবার পাকিস্তান সফরে শোয়েব আখতার বাউন্সার দিচ্ছিলেন অনেক। আর প্রত্যেকবারই শেওয়াগের সামনে এসে বলছিলেন, ‘পারলে হুক করে দেখাও!’ কয়েকবার এমন হওয়ার পর ওপাশে দাঁড়ানো শচীনকে দেখিয়ে বলেছিলেন, ‘ওদিকে আমার বাবা দাঁড়িয়ে আছে, তাকে বলো’!

    অনেকেই ভাবতে পারেন, এসব কথা হয়তো চট করে বলে ফেলেছিলেন শেওয়াগ, হয়তো এসব ওভাবে বোঝাতে চান নি। হয়তো সুযোগ পেলে কথাগুলো বদলিয়ে নিতেন। তবে শেওয়াগ কিন্তু তেমন নন। তাঁর স্থিতিস্থাপকতা অন্যরকম! ২০১২-১৩ সালে আহমেদাবাদে ইংল্যান্ডের সঙ্গে টেস্টের আগে তাই আবার বললেন, ‘ইংল্যান্ডের ২০টি উইকেট নিতে আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। তারা বাংলাদেশী নয়!’

    মানে দুই বছর আগের সে কথাতেই অটল ছিলেন তিনি, বাংলাদেশ যে তখনও ভারতের ২০টি উইকেট নিতে পারেনি, টেস্টে টলাতে পারেনি! শেওয়াগের স্কুলে একটা মূলমন্ত্র আগের অবস্থানে ফিরে যাওয়া, ঝড়-ঝঞ্চার পরও! শেওয়াগ অন্তত কথার দিক দিয়ে তাঁর স্থিতিস্থাপকতা বজায় রেখেছিলেন!

    ৭.

    নজফগরের ছেলেটা হতে চাইতো শচীন টেন্ডুলকার। অনূর্ধ্ব-১৯ এ যখন খেলতেন, অথবা ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে, সবাই ভাবতো, শেওয়াগ হবেন ওয়ানডে স্পেশালিস্ট! সেই শেওয়াগেরই ওয়ানডের চেয়ে টেস্টে রান বেশী, সেঞ্চুরি বেশী! শেওয়াগ সেই না হওয়া ওয়ানডে স্পেশালিস্ট, যিনি টেস্ট ক্রিকেটের ধারাকে বদলে দিয়েছিলেন ওপেনিংয়ে নেমে। ভয়ডরহীন ব্যাটিংকে দিয়েছিলেন নতুন মাত্রা, অন্তত এ প্রজন্মে! শুরুর দিকে শচীনের ছায়া দেখতেন অনেকেই, তাঁর প্যাডজোড়ায়, তাঁর ফ্লিকে, তাঁর বোলারস ব্যাকড্রাইভে। তাঁকে হাজারবার প্রশ্নটা করা হয়েছেন, শচীনের সঙ্গে তাঁর পার্থক্যটা কোথায়! তিনি উত্তর দিয়েছিলেন একবার, ‘আমাদের টাকা-পয়সায়’! তবে পার্থক্য আছে।
     


    নিজের স্কুলে ছাত্রদের সামনে বীরেন্দর শেওয়াগ


    শচীন ধাপে ধাপে নিজেকে বদলিয়েছেন, বয়সকে বুড়ো আংগুল দেখিয়েছেন। শেওয়াগেরও বয়স বেড়েছে, নিজেকে বদলাতে চাননি তিনি! রিফ্লেক্স কমে এসেছে, কিন্তু মানসিকতায় পরিবর্তন আনেন নি, টেকনিকেও নয়! অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো কন্ডিশনে ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে খেলেছিলেন নিজের মতো করেই। তবে শেষ চার-পাঁচ বছরের রেকর্ড শেওয়াগকে সমর্থন করে না কোনোমতেই! শচীন তাই ‘স্পেশাল টেস্ট’ দিয়ে বিদায় বলেন। আর শেওয়াগ বিদায় বলেন টুইটারে! যখন দলের অভিজ্ঞতম হয়ে কান্ডারি হওয়ার কথা, শেওয়াগ বাদ পড়লেন তখনই! শেষের দিকে দৃষ্টিশক্তি কমে আসছিল, চশমা পরে খেলতেন। ব্যাটে রানও কমে এলো, ফুরিয়ে এলো সময়ও! আরব আমিরাতের এক টি-টোয়েন্টি লিগ খেলার জন্য অবসর নেয়াটা বাধ্যতামূলক, প্রায় বছর দুয়েক ধরে দলে ব্রাত্য শেওয়াগ তাই ঘোষণাটা দিয়েই দিলেন। তাও আবার নিজের ৩৭তম জন্মদিনে। এমন দিনে এমন ঘোষণা, শেওয়াগের পক্ষেই সম্ভব। নিজের ‘মাস্টারি’ নিজেই করার, নিজের কাছেই নিজে জবাবদিহিতা করার ধারা শেওয়াগ তৈরী করেছিলেন। ৮০০০ বা ১০০০০ রানে তাই তিনি পার্থক্য দেখেন না। নিজে সন্তুষ্ট থাকতে পারলেই তো হলো!

    শেওয়াগ তাই বিদায়বেলায় বলে যেতে পারেন, অনেকেই পরামর্শ দিয়েছিলেন তাঁকে অনেক ব্যাপারে। তিনি শোনেননি। তিনি করেছিলেন নিজের মতো করে, ‘ডিড ইট মাই ওয়ে!’

    বীরেন্দর শেওয়াগ একটা প্রজন্মকে আনন্দ ফেরি করে গেছেন। বলকে মারার নিজের মতো চিন্তাধারা তৈরী করে, নিজের কাছেই জবাবদিহিতা করে।

    হ্যাঁ, শেওয়াগ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রথম মূলমন্ত্র, আত্মনির্ভরশীলতা ও নিজের কাছেই জবাবদিহিতা।