'ফাইভ স্টার' বায়ার্নে উড়ে গেল ডর্টমুন্ড
ঘড়ির কাঁটা ৯০ মিনিট ছুঁতেই শেষ বাঁশি বাজালেন রেফারি। মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের কয়েকজন। অন্যপাশে বায়ার্ন মিউনিখের ফুটবলারদের উদযাপনের ঠিক মাঝে থেকে বের হলেন রবার্ট লেভানডফস্কি। আজকের 'ডের ক্লাসিকার'-এ পোলিশ স্ট্রাইকার যেন মার্ভেলের ‘থানোস’, আর ডর্টমুন্ডের ফুটবলাররা অ্যাভেঞ্জার্সের পরাজিত সুপারহিরোরা। ডর্টমুন্ডের কাউকে নিশ্চিহ্ন করে দেননি, তবে তার এক পারফরম্যান্সেই হয়ত নিঃশেষ হয়ে গেল ‘হলুদ কালো’দের বুন্দেসলিগা জেতার সম্ভাবনা। ডর্টমুন্ডকে ৫-০ গোলে হারিয়ে ‘ডের ক্লাসিকার’ জিতল বায়ার্ন। ২৮ ম্যাচে শেষে ৬৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে উঠে এল বাভারিয়ানরা, ৬৩ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে থাকল ডর্টমুন্ড।
বড় ব্যবধানে হারলেও আলিয়াঞ্জ অ্যারেনাতে প্রথম সুযোগটা পেয়েছিল ডর্টমুন্ডই। ‘ট্রেডমার্ক’ প্রতি-আক্রমণে ৬ মিনিটে মার্কো রয়েসের মাইনাস ডিবক্সে সামনে পেয়েও শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি মিডফিল্ডার মাহমুদ দাহুদ। প্রতিপক্ষ যখন বায়ার্ন, তখন সুযোগ হাতছাড়া করার মাশুল ঠিক কতটা চড়া হতে পারে; সেটিই যেন জানান দিল বাভারিয়ানরা। প্রথমার্ধের বাকিটা সময় নিকো কোভাচের দল রীতিমত ঝড় বইয়ে ডর্টমুন্ডের ওপর। দাহুদের মিসটিকে ম্যাচের ‘টার্নিং পয়েন্ট’ বললেও হয়ত ভুল হবে না খুব একটা।
শুরুটা করেছিলেন ডর্টমুন্ডেরই সাবেক ডিফেন্ডার ম্যাটস হামেলস। ১০ মিনিটে থিয়াগো আলকান্তারার কর্নারে হেড করে দলকে লিড এনে দেন তিনি। সাবেক দলের প্রতি শ্রদ্ধা থেকেই হয়ত উদযাপন করেননি, নিশ্চুপ থেকেই ছিলেন সতীর্থদের উদযাপনের মধ্যমণি। ব্যবধান দ্বিগুণ করতেও সময় নেয়নি তারা। ১৯ মিনিটে ডর্টমুন্ড সেন্টারব্যাক জাগাদুর ভুলে বল পেয়ে যান রবার্ট লেভানডফস্কি, সামনে শুধু গোলরক্ষক রোমান বুর্কি। ডর্টমুন্ডের গোলরক্ষক এগিয়ে আসলেও বল জালে পাঠাতে ভুল করেননি ‘লেউই’, গোল করে ছুঁয়েছেন বুন্দেসলিগার প্রথম বিদেশী হিসেবে ২০০ গোলের মাইলফলক। ২০ মিনিটেই ২ গোলের লিড নিয়েও থেমে থাকেনি বায়ার্ন।
মুলার-লেভানডফস্কিদের সামনে রীতিমত তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়েছে ডর্টমুন্ড। প্রথমার্ধে ব্যবধানটা আরও বড় হতে পারত। প্রথমার্ধে অন্তত নিশ্চিত তিনটি গোল ফিরিয়ে দেন বুর্কি। কিন্তু নিজেদের মাঠে বায়ার্ন যখন এমন খুনে মেজাজে, তখন বুর্কির দক্ষতাও প্রতিরোধ গড়তে পারেনি খুব একটা। ৪১ মিনিটে ডর্টমুন্ডের ডিফেন্ডারেরা কর্নার ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হলে ডিবক্সের বাইরে বল পান হাভি মার্টিনেজ। ডানপায়ের বাঁকানো শটে বুর্কিকে পরাস্ত করেন তিনি। প্রথমার্ধে বায়ার্নের ‘ধ্বংসযজ্ঞ’ শেষ হয়নি তখনও। ৪৩ মিনিটে মুলারের ক্রস থেকে ব্যবধান ৪-০ করেন সার্জ গ্নাব্রি।
প্রথমার্ধের নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল ম্যাচের ফলাফল। দ্বিতীয়ার্ধে তাই বায়ার্নও খেলেছে কিছুটা গা বাঁচিয়েই, আর হামেলসদের সামনে বারবার খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে রয়েসদের। বিধ্বংসী এক প্রথমার্ধের তুলনায় দ্বিতীয়ার্ধ হয়েছে কিছুটা ‘ম্যাড়ম্যাড়ে’ই। গোলের তেমন সুযোগ পায়নি ডর্টমুন্ড। বল দখলেও এগিয়ে ছিল বায়ার্ন।
ম্যাচের কোনও কিছুই নিজেদের অনুকূলে আসেনি, শেষদিকে তাই মেজাজ হারিয়েছেন ডর্টমুন্ডের অনেকেই। বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে হলুদ কার্ড দেখেছেন ডেলানি এবং রয়েস। ডর্টমুন্ডের ফুটবলার বা কোচ লুচিয়ান ফাভ্রে, সবার চোখেই শূন্যদৃষ্টি। ম্যাচ শেষ হলেই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচবেন। আক্ষরিক অর্থেই একপেশে ‘ডের ক্লাসিকার’-এ অবশ্য তখনও শেষ হয়নি বায়ার্নের গোলোৎসব। পারফরম্যান্স ছিল ‘ফাইভ স্টার’, ৮৯ মিনিটে ৫ম গোল করে যেন সেই জানানটাই দিলেন লেভানডফস্কি। শেষ সাথে হয়ত শেষ করে দিলেন ডর্টমুন্ডের বুন্দেসলিগা জেতার স্বপ্নও।