• " />

     

    জিহবা ভয়ঙ্কর!

    জিহবা ভয়ঙ্কর!    

    শোয়েব আখতারের শেষ ম্যাচ। নাহ্‌, রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস তখনও জানতেন না, সেটিই হতে যাচ্ছে তাঁর বিদায়! ৮ ওভারে ৪২ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ১ উইকেট, এ পর্যন্ত ঠিকই ছিল সব। শোয়েবের এই ফিগারটাই বদলে হয়ে গেল ৯-০-৭০-১! এই রুপান্তরের পেছনে মূল ভূমিকাটা ছিল রস টেইলরের। পাল্লেকেলেতে  ২০১১ বিশ্বকাপের ২৪তম ম্যাচে রস টেইলরের ইনিংসটিও ছিল রুপান্তরের অনন্য এক উদাহরণ! প্রথম ১০৮ বলে টেইলর করেছিলেন ৬৯ রান, শেষ ১৬ বলে ৬২! ছয় মেরে করেছিলেন সেঞ্চুরি, নিজের জন্মদিনে। সেই সেঞ্চুরির পর জিহবা কি বের করেছিলেন টেইলর? করারই কথা, সেই ২০০৭ সাল থেকেই যে এই অভ্যাস তাঁর!

    সে ম্যাচের অধিনায়ক ড্যানিয়েল ভেট্টোরি অধিনায়কত্ব ছাড়ার পর কিউইদের নেতৃত্ব পেয়েছিলেন এই অর্ধ সামোয়ান নিউজিল্যান্ডার রস টেইলরই। তবে কোচ মাইক হেসনের সঙ্গে সম্পর্কটা ঠিক সুবিধার ছিলনা টপ অর্ডারের এই আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যানের! অধিনায়কত্ব অধ্যায় তাই শেষ ১৩ টেস্ট আর ২০ ওয়ানডেতেই। দক্ষিণ আফ্রিকার এক সফর থেকে নিজেকে প্রত্যাহারও করে নিয়েছিলেন এরপর। ফিরে আসেন ইংল্যান্ডের সঙ্গে দেশের মাটির সিরিজে, বলেছিলেন, হেসনের সঙ্গে সম্পর্কটা তখনও ‘উন্নতির পথে’!

    টেইলরের ক্যারিয়ারটা অবশ্য সবসময় এত উন্নতির পথে ছিল না। এমনিতে আক্রমণাত্মক, নিজের দিনে খেলতে পারেন অসাধারণ সব স্ট্রোকসমৃদ্ধ ইনিংস। মিডউইকেটের প্রতি আলাদা দূর্বলতা আছে যেন, আরও বেশী দূর্বলতা স্লগ সুইপ শটটার প্রতি! মাঝে মাঝে স্ট্রোক খেলার আগে ব্যাটটাকে খুঁটির মতো করে ঢোঁকা দেন, বোঝা যায়, সেই ‘ফ্ল্যাশি’ ব্যাট থেকে বের হতে যাচ্ছে অনন্য এক শট!
     


    টেইলরের ট্রেডমার্ক উদযাপন


    তবে বেশ কয়েকদিন যাবত যেন সেই স্ট্রোকমেকার টেইলরকে খুঁজে ফিরছিলেন তিনি নিজেই! সময়টা ভাল যাচ্ছিলনা প্রায় বছরখানেক ধরেই! শেষ সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন প্রায় এক বছর ও ১১ ইনিংস আগে। এ সময়ে ফিফটি ছিল মোটে দুটি। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে চলতি সিরিজের প্রথম টেস্টে করেছিলেন ০ ও ২৬। অনেকেই বলছিলেন, টেইলর ওয়াকায় নেমেছেন জায়গা ধরে রাখার লড়াইয়ে! কিউইদের ভরসা শুধু কেন উইলিয়ামসনই যেন! উইলিয়ামসন তাঁর তরুণ কাঁধে এ টেস্টেও দায়িত্ব তুলে নিয়েছিলেন, অস্ট্রেলিয়ার ৫৫৯ রানের পাহাড়ে চাপা পড়া থেকে নিউজিল্যান্ডকে রক্ষা করতে লড়াই করছিলেন। তবে এবার সঙ্গে ছিলেন আরেকজন। আরেকটা অভিজ্ঞ কাঁধ। দলে জায়গা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা সেই টেইলর!

    উইলিয়ামসন ১৬৬ করে যখন আউট হন, টেইলরের রান তখন ১৩৪। মিচেল স্টার্ক আগুন ঝড়াচ্ছেন। একটা বলের গতি তো উঠে গেল ঘন্টায় ১৬০.৪ কিলোমিটারে! স্টার্ক নাম লেখালেন শোয়েবদের ‘এলিট ক্লাব’ এ। সেই স্টার্ককে চার মেরেই করলেন ডাবল সেঞ্চুরি, প্রথম কিউই ব্যাটসম্যান হিসেবে তাসমান প্রতিবেশীদের সঙ্গে। বের করলেন তাঁর সেই বিখ্যাত জিহবা!

    প্রথম বের করেছিলেন ২০০৭ সালে। আগের বছর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে জায়গা হয়নি, নির্বাচকদের কিছু একটা করে দেখানোর তাড়না ছিল। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সেঞ্চুরির পর তাই জিহবা বের করে যেন বললেন, ‘কী করলাম!’ সেই জিহবা বের করা ব্যাপারটা নাকি পছন্দ হয়েছিল তাঁর মেয়ের। সেই থেকেই, প্রত্যেক সেঞ্চুরির পর বের করেন জিহবা। ওয়াকার রেকর্ডভাংগার ইনিংসে করলেন দুইবার। তিনবার করতে পারতেন, ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ২৯০ রান করে আউট হওয়াতে সে সুযোগটা পাননি।

     

                  বাপকা বেটা!


    সামনে হয়তো সুযোগ পাবেন আবার, কন্যার পছন্দের সে উদযাপনের। অবশ্য ছেলেও বাবার জিহবা বের করাটা পছন্দ করছে মনে হয়, গত বছর টুইটারে একটা ছবি দিয়েছিলেন ছেলের, বাবার মতোই জিহবা বের করে রাখা!

    অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে দ্বিতীয় টেস্টটা শেষ পর্যন্ত কী হবে, টা বলবে সময়। ওয়াকার ফ্ল্যাট উইকেট, স্টার্কের ১৬০ কিলোমিটারের জন্য মনে থাকবে হয়তো অনেকদিন এ টেস্ট। আর টেইলরের ইনিংসটি?

    সেটি তো মনে রাখতেই হবে!

    শোয়েব আখতারের শেষ ম্যাচটির ওই ইনিংসটির মতো!