• অ্যাশেজ ২০১৯
  • " />

     

    স্মিথের প্রত্যাবর্তনের দিনে ঘুরে দাঁড়াল অস্ট্রেলিয়া

    স্মিথের প্রত্যাবর্তনের দিনে ঘুরে দাঁড়াল অস্ট্রেলিয়া    

    আইসিসি ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ, দ্য অ্যাশেজ, প্রথম টেস্ট, এজবাস্টন
    অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস ২৮৪ অল-আউট (স্মিথ ১৪৪, সিডল ৪৪, হেড ৩৫, ব্রড ৫/৮৬, ওকস ৩/৫৮)
    ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস ১০/০*


    কে লেখেন এমন প্রত্যাবর্তনের গল্প? স্টিভেন স্মিথ লেখেন। শেষ অ্যাশেজের দুর্দান্ত ফর্মটা তিনি টেনে আনলেন এজবাস্টনে। ১২২ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলা অস্ট্রেলিয়াকে স্মিথ নিয়ে গেলেন টেইল-এন্ডে পিটার সিডল ও ন্যাথান লায়নের সহায়তায় ২৮৪ রান পর্যন্ত, নিজে করলেন ১৪৪। যেন এই ১৬ মাসে কিছুই ঘটেনি, যেন ঠিক কদিন আগেই টেস্ট খেলেছেন তিনি! অ্যাশেজের প্রথম টেস্টের প্রথম দিনটা তাই স্টিভ স্মিথের, ৫ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে আরেকটি বিভীষিকাময় ইনিংস উপহার দেওয়ার প্রায় সব আয়োজন সম্পন্ন করা স্টুয়ার্ট ব্রডের নয়। 

    টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নামা অস্ট্রেলিয়া খেই হারিয়ে ফেলেছিল ব্রড ও ক্রিস ওকসের তোপে। আরেকবার মুখে হাত দিয়ে ব্রডের বিস্ময়ভরা ছবিটা আরেকটু হলেই ঘুরে ফিরত সবখানে, ২০১৫ সালের নটিংহামের একটু দীর্ঘায়িত সংস্করণ ফিরে এসেছিল প্রায়। বাধা হয়ে দাঁড়ালেন ওই স্মিথ। মইন আলিকে ছয় মেরে ৯৮-এ পৌঁছালেন, এরপর সিঙ্গেল, এরপর বেন স্টোকসকে ড্রাইভ করে পৌঁছে গেলেন তিন অঙ্কে। প্রথমে আকাশপানে চাইলেন, এরপর জোরে একটা শ্বাস। যেন বের করে দিলেন এতদিন ধরে এত অপেক্ষার যন্ত্রণাটুকু। এরপর মুখে হাসি। ব্যাটটা ঘুরিয়ে উল্লাস এরপর। অস্ট্রেলিয়ার ড্রেসিংরুম ততক্ষণে দাঁড়িয়ে পড়েছে, যেন ম্যাচ জয় হয়ে গেছে তাদের! স্মিথের ইনিংস যে ছিল এমনই! 

    চতুর্থ ওভারেই ডেভিড ওয়ার্নারকে হারিয়ে ডুবতে বসার শুরুটা করেছিল অস্ট্রেলিয়া। ওয়ার্নার এর আগেই ফিরতে পারতেন, ইংল্যান্ড কট-বিহাইন্ডের রিভিউটা নেয়নি। ব্রডের বলে এলবিডব্লিউ হওয়া ওয়ার্নার বাঁচতে পারেন, তিনি রিভিউটা নেননি। ব্রডের লেংথ বলেই খোঁচা মেরে প্রথম স্লিপে ধরা পড়লেন কেপটাউন কেলঙ্কারির পর নিষিদ্ধ হওয়া আরেকজন ক্যামেরন ব্যানক্রফট। ওকসের বলে রিভিউ নিয়ে উসমান খাওয়াজার কট-বিহাইন্ডটা পেল ইংল্যান্ড। 
     


    ছবি কথা কয়


    নড়বড়ে অস্ট্রেলিয়াকে একটু এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেন স্মিথ, সঙ্গে ছিলেন ট্রাভিস হেড। দুজনের ৬৪ রানের জুটি ভেঙেছেন ক্রিস ওকস, করেছেন জোড়া আঘাত। হেড ও ম্যাথু ওয়েড- দুজনই হয়েছেন এলবিডব্লিউ, হেড রিভিউ নিয়েও বাঁচেননি, ওয়েডের উইকেটটি রিভিউ নিয়ে পেয়েছে ইংল্যান্ড। এরপর ব্রডের জোড়া আঘাত- শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ধরা পড়েছেন এজবাস্টনকে 'খুব একটা ভয় না পাওয়া' পেইন, জেমস প্যাটিনসন হয়েছেন এলবিডব্লিউ, যিনিও রিভিউ নিলে বাঁচতে পারতেন! শট অফার না করে স্টোকসের ভেতরের দিকে ঢোকা বলে এলবিডব্লিউ প্যাট কামিন্সও। ১১ ওভারের ভেতর ২৩ রানের ব্যবধানে ৫ উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম ইনিংসে উড়িয়ে দেওয়ার আয়োজন প্রায় সম্পন্ন তখন ইংল্যান্ডের। স্মিথের তখনও ফিফটিও হয়নি। 

    প্রথম দিকে ব্রড তাকে বিট করেছেন বেশ কয়েকবার, তবে তাতে টলেননি স্মিথ। ৩৪ রানে ব্রডের বলেই শট অফার না করায় আম্পায়ার এলবিডব্লিউ দিয়েছিলেন তাকে, রিভিউ নিয়ে বেঁচেছিলেন। এরপর থেকেই হয়তো ইংল্যান্ড আক্ষেপ করে গেছে, সেই বলটা যদি স্টাম্পে ক্লিপও করতো একটু! স্মিথ ফিফটিতে গেলেন, প্রত্যাবর্তনের দিনে হয়তো অনেককেই সন্তুষ্ট করতে পারতো সেটিই। তবে স্মিথ ঘুরে দাঁড়ালেন, দারুণ সঙ্গ পেলেন পিটার সিডলের কাছ থেকে। 

    এ দুজনের জুটিতে শুরুর দিকে অবশ্য বেশি আধিপত্য ছিল সিডলেরই। ৪৪ রান করলেন ৪ চারে, খেললেন ‘প্রপার’ ব্যাটসম্যানের মতো করেই। মইন আলির বলে শর্ট লেগে ধরা পড়লেন যখন তিনি, স্মিথের সেঞ্চুরি তখনও ১৫ রান দূরে। তবে লায়ন ইঙ্গিত দিলেন, স্মিথের সেঞ্চুরি পর্যন্ত যা করার তিনি করবেন। স্মিথ সেঞ্চুরি পেলেন। এরপর শুরু করলেন আক্রমণ। 

    সেঞ্চুরির পর ৩৫ বলে করলেন ৪১ রান। ব্রডের বলে বোল্ড হলেন শেষ পর্যন্ত, ব্রড পেলেন আরেকবার ৫ উইকেট। তবে ততক্ষণে অস্ট্রেলিয়া মানসিকভাবে প্রথম দিনে এগিয়ে গেছে অনেকখানি। ৪ ওভার করেই উঠে যাওয়া জেমস অ্যান্ডারসনকে নিয়ে দুশ্চিন্তা আছে আবার ইংল্যান্ডের, তার অভাব তো টের পেয়েছে তারা এদিনই-- অন্তত টেইল-এন্ডারদের নিয়ে যখন ছুটছিলেন স্মিথ। দিনের বাকি দুই ওভার ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার নিরাপদে কাটালেও তাই এজবাস্টনে অস্ট্রেলিয়ার প্রত্যাবর্তনের গল্পের ভূমিকাটা স্বস্তিতে থাকতে দিচ্ছেনা তাদের। 

    যে ভূমিকায় নিজের প্রত্যাবর্তনের দারুণ গল্পটা লিখলেন স্মিথ।