এজবাস্টনে এ শুধু স্মিথের (সঙ্গে ওয়েডও) দিন...
চতুর্থ দিন শেষে
অস্ট্রেলিয়া ২৮৪ ও ৪৮৭/৭ ডিক্লে
ইংল্যান্ড ৩৭৪ ও ১৩/০ (লক্ষ্য ৩৯৮)
কী বলবেন স্টিভ স্মিথকে? অতিমানব? নাহ, কম হয়ে যাচ্ছে। অবিশ্বাস্য, অভাবনীয় এসব শব্দও তো কম হয়ে যাচ্ছে। এমন নয়, অ্যাশেজ এর আগে জোড়া সেঞ্চুরি দেখেনি। এমন নয়, দেশের বাইরেও কেউ তা করেনি। কিন্তু ১৬ মাসের মধ্যে নিজের প্রথম টেস্ট, ভুল হলো, নিজের প্রথম শ্রেণির ম্যাচে নেমে জোড়া সেঞ্চুরি করার জন্য আসলে বিশেষণ খুঁজে পাওয়া একটু মুশকিল। তার চেয়ে বড় কথা, স্মিথের জন্যই এজবাস্টন টেস্টে এখন ড্রাইভিং সিটে অস্ট্রেলিয়া। শেষ দিনে পরাজয় বাঁচানোর জন্য ইংল্যান্ডকেই করতে হবে দারুণ কিছু। প্রথম দিনের পর কে ভেবেছিল তা?
দিনের শুরুটা করেছিলেন স্মিথ আর ট্রাভিস হেড। দলের ১২৪ রান নিয়ে নেমেছিলেন দুজন, সকালের সেশনে অনেকটা সময় ইংলিশ বোলারদের হতাশ করে গেলেন। স্মিথের ফিফটি হয়ে গিয়েছে আগেই, হেডও সেই পথে এগুলেন। ফিফটি করার পর স্টোকসের স্লোয়ারে বোকা বনলেন, শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে; ৫১ রানে। ম্যাথু ওয়েডকে নিয়ে এরপর জুটি বাঁধলেন স্মিথ, তাদের সবচেয়ে সোনালী সময়ের শুরুও তখন।
এর মধ্যে স্মিথ প্রথম ইনিংসের মতোই চার পেয়েছেন সেঞ্চুরি, এবারের উদযাপনটা একটু শান্তই হলো। তবে দর্শক স্টিভ ওয়াহর হাততালি বলে দিচ্ছিল, প্রথম ইনিংসের মতো এটাও ভেরি ভেরি স্পেশাল। এজবাস্টনে জোড়া সেঞ্চুরি ছিল এর আগে শুধু মার্কাস ট্রেসকোথিকের, আর অ্যাশেজে কোনো অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান হিসেবে সর্বশেষ সেটি করেছিলেন ২০০২ সালে ম্যাথু হেইডেন। ওয়াহর হাততালির অবশ্য আলাদা একটা তাৎপর্য আছে। স্মিথের আগে সর্বশেষ বড় স্টিভই যে ইংল্যান্ডের মাঠে জোড়া সেঞ্চুরি করেছিলেন।
তবে সংখ্যা বা রেকর্ড খানিকটা বোঝাতে পারে এই ইনিংসের মাহাত্ম্য, পুরোটা নয়। দুই ইনিংসেই নিখুঁত ব্যাট করেছেন প্রায়। যেন কেপটাউনের ওই কেলেংকারির আগে যেখান থেকে শেষ করেছিলেন, শুরু করলেন সেখান থেকেই। প্রথম ইনিংসে সেভাবে কাউকে না পেলে আজ একজনকে পেয়েছিলেন দোসর হিসেবে, ম্যাথু ওয়েড।
এতক্ষণ পর ওয়েডের নাম আসাটা হয়তো একটু অসম্মানই করা হবে তাকে। স্মিথ আজ যদি ট্রয়যুদ্ধে একিলিস হন, তাহলে ওয়েড ওডিসিয়াস হতেই পারেন। দুজন মিলে পঞ্চম উইকেটে যোগ করেছেন ১২৬ রান, সেটিও মাত্র ৩৩ ওভারের কিছু বেশি বল খেলে। শেষ পর্যন্ত ২০৭ বলে ১৪২ রান করে আউট হয়েছেন স্মিথ।
তবে ইংলিশ বোলারদের শাসন করার মন্ত্রটা অস্ট্রেলিয়া পেয়ে গেছে তখন। স্মিথের পর ওয়েড আর টিম পেইন ব্যাটনটা তুলে নিয়েছেন। এর মধ্যে ওয়েড পেয়ে গেছেন নিজের প্রথম অ্যাশেজ সেঞ্চুরি, চা বিরতির পরেই। সেটাও মাত্র ১৩১ বলে। শেষ পর্যন ১১০ রান করে আউট হয়েছেন স্টোকসের বলে। ও হ্যাঁ, আউট হতে পারতেন আরও আগে। তবে রিভিয়ের সদ্ব্যবহার করে বেঁচে গেছেন একবার। পেইনও ৪৪ বলে ৩৪ রান করে মঈন আলীর বলে আউট, বিশাল টার্ন করা যে বল থেকে শেষ দিনে নিশ্চিতভাবে চোখ চকচক করবে লায়নের। তবে জেমস প্যাটিনসন আর প্যাট কামিন্স এরপর জবুথবু ইংলিশ বোলারদের নাকের জল চোখের জল এক করেই ছেড়েছেন। দুই চার ও চার ছয়ে ৪৮ বলে ৪৭ রান করে ফেলেছিলেন প্যাটিনসন, আর কামিন্স করে ফেলেছেন ৩৩ বলে ২৬। ৪৮৭ রান করার পর শেষ পর্যন্ত ৩৯৮ রানের বিশাল লিড নিয়ে ইনিংস ঘোষণা করেছে অস্ট্রেলিয়া।
ইংল্যান্ড শেষ বিকেলে ব্যাট করে কোনো উইকেট হারায়নি। বার্নস অপরাজিত ছিলেন, আর তাতেই হয়ে গেছে বিশেষ একটা কীর্তি। টেস্ট ক্রিকেটের পাঁচ দিনই ব্যাট করা চতুর্থ ইংলিশ ব্যাটসম্যান হয়ে গেছে বার্নস, তবে কাল তার চেয়েও বেশি কিছু করতে হবে তাকে।