আর্চারের আঘাতে আহত অস্ট্রেলিয়া
হেডিংলি টেস্ট
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস ১৭৯ অল-আউট (লাবুশেন ৭৪, ওয়ার্নার ৬১, ব্রড ২/৩২, আর্চার ৬/৪৫)
এই মেঘ, এই বৃষ্টি... এই অন্ধকার, এই আলোর রেখা। হেডিংলির আবহাওয়া দিনভর এমন রঙ বদলালো কিশোরী মেয়ের মনের মতোন। অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস খানিকটা প্রতিফলিত করলো সেটা। শুরুতে মেঘ ছিল, এরপর আলো, এরপর নিকষ কালো আঁধারে ছেয়ে গেল সব। আর ইংল্যান্ডের হয়ে জ্বলে উঠলেন জফরা আর্চার। নিজের দ্বিতীয় টেস্ট ও তৃতীয় ইনিংসে প্রথমবার পাঁচ উইকেট পেলেন তিনি, যেটিকে নিয়ে গেলেন ছয়ে। বৃষ্টিবিঘ্নিত দিনে ১৩৬ রানে দুই উইকেটের স্কোর থেকে ৫২.১ ওভারে ১৭৯ রানেই প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়া। স্টিভ স্মিথের জায়গায় আসা মারনাস লাবুশেনের দুর্দান্ত এক ইনিংসের সঙ্গে ডেভিড ওয়ার্নারের ফিফটিকে সে অর্থে সমর্থন যোগাতে পারেননি আর কোনও অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান।
বৃষ্টি বাগড়া বাধিয়েছিল শুরুতেই, বিলম্বিত টসের পরও পিছিয়ে গিয়েছিল খেলা। তবে মেঘাচ্ছন্ন আকাশের নিচে কন্ডিশন ব্যাটিংয়ের জন্য হয়ে উঠেছিল কঠিন। ক্রিকভিজের ডাটা অনুযায়ী, বলের ল্যাটারাল মুভমেন্টে এই পিচ ১১তম কঠিন ছিল প্রথম ১৫ ওভার ব্যাটিংয়ের জন্য। টসে জিতে জো রুট এ কন্ডিশনকে কাজে লাগানোর সুযোগ হাতছাড়া করেননি, বৃষ্টির কবলে প্রায় হারিয়ে যাওয়া প্রথম সেশনের আগে পরে ২৫ রানের ভেতরই ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়েছিল অস্ট্রেলিয়াও। তবে চা-বিরতির আগে-পরে ওয়ার্নার-লাবুশেনের জুটি হতাশ করছিল ইংল্যান্ডকে।
শেষ সেশনের প্রথম ১৩ ওভারে ৮৯ রান তুলে উলটো ইংল্যান্ডের ওপরই চড়াও হয়েছিলেন দুজন। তবে হাজির হলেন আর্চার। ঘন্টায় প্রায় ৯০ মাইল গতির বলটা ওয়ার্নারকে স্কয়ারড-আপ করলো, ফর্ম খুঁজে পাওয়ার ইঙ্গিতপূর্ণ ৬১ রান করে ফিরলেন ওয়ার্নার। খুলে গেল বাঁধ।
অস্ট্রেলিয়াকে শুরুতে নড়বড়ে করে দিয়েছিলেন আর্চারই। নিখুঁত লেংথের বলে স্কয়ারড-আপ হয়ে কট-বিহাইন্ড হয়েছিলেন ক্যামেরন ব্যানক্রফটের বদলে আসা মার্কাস হ্যারিস। আর শুরুতে ইংলিশ কন্ডিশনকে কাজে লাগানোর পারফেক্ট উদাহরণ তৈরি করা ব্রডের লেগস্টাম্পের ওপরের বলে ফ্লিক করতে গিয়ে সর্বনাশ হয়েছিল উসমান খাওয়াজারও। এরপরই ওয়ার্নার-লাবুশেনের প্রত্যাবর্তনের গল্প।
বিরুদ্ধ কন্ডিশনে লাবুশেন খেলে গেছেন দুর্দান্ত এক ইনিংস। সুযোগের অপেক্ষায় থেকেছেন, ফুললেংথের বল পেলেই করেছেন সদ্ব্যবহার। আবার লেংথটা মনমতো পেলে করেছেন কাট। বেন স্টোকসের নামতে থাকা ফুলটস মিস করে এলবিডব্লিউ হয়েছেন অদ্ভুতভাবে, ১২৯ বলে ১০ চারে ৭৪ রান করে। অবশ্য ততক্ষণে লাবুশেন হয়ে গেছেন অস্ট্রেলিয়ার নিকষ আঁধারে টিমটিমে প্রদিপ।
ওয়ার্নারের উইকেট ইংল্যান্ডকে ম্যাচে ফিরিয়েছিল দারুণভাবে। প্রথম দুই উইকেটের মতো এবারও আর্চারের পর ব্রডের আঘাত, এবার স্টাম্প হারিয়েছেন ট্রাভিস হেড। স্টাম্প গেছে ম্যাথু ওয়েডেরও, আর্চারের বলটা তার স্টাম্প ভাঙার আগে অবশ্য ছুঁয়ে গেছে থাই-গার্ড, গ্লাভস।
টিম পেইনকে নিয়ে লাবুশেনের লড়াইটা স্থায়ী হয়নি বেশিক্ষণ। লেগস্টাম্প বরাবর ক্রিস ওকসের করা আড়াআড়ি বলটা মিস করে পেইন হয়েছেন এলবিডব্লিউ। খোলা চোখে এটিকে মনে হচ্ছিল নট-আউটই, তবে জো রুটের নেওয়া রিভিউ কাজে এসেছে দারুণভাবে। এর আগে ওকস অবশ্য ছিলেন এলোমেলো, ঠিক লেংথটা হিট করতে পারছিলেন না যেন, ফলে মুভমেন্টও বুমেরাং হয়ে যাচ্ছিল তার।
পেইনের উইকেটের পর অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের পতন ও ইংল্যান্ডের উল্লাসের মাঝে দাঁড়িয়ে ছিলেন লাবুশেন। প্যাটিনসনের রক্ষণ বরাবর ছোঁড়া গোলা গিয়ে ঠেকেছে রুটের হাতে, আর্চার পেয়েছেন চার নম্বর। প্যাট কামিন্স হয়েছেন কট-বিহাইন্ড, রিভিউ নিয়েও বাঁচেননি তিনি। আর্চারের পাঁচ নম্বর এ উইকেটটি অবশ্য সৃষ্টি করেছে একটু বিতর্ক, আল্ট্রা-এজে কামিন্সের ব্যাটের কাছে বল যাওয়ার আগে থেকেই ছিল স্পাইক। তবে সেসব দেখতে বয়েই গেছে আর্চারের। ন্যাথান লায়নকে এলবিডব্লিউ করে নিজের প্রথম পাঁচকে ছয় বানিয়েছেন তিনি।