• অ্যাশেজ ২০১৯
  • " />

     

    হ্যাজলউডদের স্বপ্নের দিনে শুধু দুঃস্বপ্নই সঙ্গী ইংল্যান্ডের

    হ্যাজলউডদের স্বপ্নের দিনে শুধু দুঃস্বপ্নই সঙ্গী ইংল্যান্ডের    

    দ্বিতীয় দিনশেষে, অস্ট্রেলিয়া ১৭৯ ও ১৭১/৬*; ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস ৬৭ 
    অস্ট্রেলিয়া ২৮৩ রানে এগিয়ে 


    হেডিংলির প্রথম দিনটা যদি ইংল্যান্ডের জন্য স্বপ্নময় হয়, দ্বিতীয় দিনটা তবে বিভৎস। অস্ট্রেলিয়ার জন্য বিশেষণগুলি অদল-বদল করে নিতে হবে সেক্ষেত্রে। জশ হ্যাজলউডের বিধ্বংসী পাঁচ উইকেটের সঙ্গে জেমস প্যাটিনসন ও প্যাট কামিন্সের তোপে প্রথম ইনিংসে ৬৭ রানেই গুটিয়ে গিয়ে নিজেদের অ্যাশেজ ফিরে পাওয়ার স্বপ্নটা মিরাকলের হাতে ছেড়ে দিয়েছে ইংল্যান্ড। হেডিংলিতে আগের দিন ১৭৯ রানে অল-আউট হয়ে যাওয়া অস্ট্রেলিয়া এদিন ইংল্যান্ডের ধসের ওপর দাঁড়িয়ে লিড নিয়েছে প্রায় ৩০০ ছুঁইছুঁই, বাকি আছে এখনও ৪ উইকেট, আছেন মারনাস লাবুশেন। ১৬ উইকেটের এ দিনের পর হেডিংলি টেস্টে বাকি এখনও তিন দিন, এরপর ২ টেস্ট বাকি রেখেও ১-০ লিডটা ২-০ বানিয়ে অ্যাশেজ ধরে রাখতে অস্ট্রেলিয়ার হাতে তাই সময়ের অভাব নেই। 

    প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ রান জো ডেনলির, ১২। একমাত্র ইংলিশ ব্যাটসম্যান হিসেবেও দুই অঙ্ক ছুঁয়েছেন তিনি। অথচ এদিন হাসছিল রোদ, আগের দিনের মতো মুখ গোমড়া করে ছিল না আকাশ। তবে উজ্জ্বল দিনে চকচকে ধারালো ছুরি নিয়ে যেন হাজির হ্যাজলউডরা, ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা কিছু বুঝে উঠার আগেই শিকার সেই ছুরির। বড় বড় সুইং বা সিম মুভমেন্টের দরকার পড়েনি, অস্ট্রেলিয়ান পেসাররা পিচ আর কন্ডিশন থেকে আদায় করে নিয়েছেন তাদের যতটুকু প্রয়োজন, ততখানিই। ক্যাচিংয়েও অস্ট্রেলিয়ানরা ছিলেন নিঁখুত। অবশ্য বলা বেশি উপযুক্ত-- ক্যাচিংয়ে নিখুঁত ছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার ও টিম পেইন। পেইনের মতো ওয়ার্নারও নিয়েছেন ৪টি ক্যাচ, সবগুলিই স্লিপে। 


    শুরুটা হয়েছিল হ্যাজলউড-ওয়ার্নারের কম্বিনেশনের জোড়া আঘাতে। জেসন রয় বাইরের বলে ব্যাট ছুঁড়েছেন, ওয়ার্নার ডানদিকে নিয়েছেন ভাল ক্যাচ। ওয়ানডের বিধ্বংসী রয় টেস্টে এসে ধ্বংসস্তুপের অতলেই হারিয়ে যাচ্ছেন শুধু। জো রুট এসেছেন, হ্যাজলউডের লেংথ আর সিম মুভমেন্টের জবাব খুঁজে পাননি, ওয়ার্নার এবার বাঁদিকে ঝুঁকে নিয়েছেন আরেকটি ভাল ক্যাচ। টানা দ্বিতীয় ইনিংসে রানের কলামে শূন্য নিয়েই ফিরেছেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক। 

    ররি বার্নস ও ডেনলি ঝুলে ছিলেন, তবে সে পর্যন্তই। প্যাট কামিন্সের বাউন্সারকে দূরে ঠেলতে গিয়ে গ্লাভড হয়েছেন বার্নস, ২০ রানেই তৃতীয় উইকেট হারিয়েছে ইংল্যান্ড। বেন স্টোকস এরপর কী করতে চেয়েছিলেন, সেটা এক রহস্য বটে। সীমিত ওভার হলে জেমস প্যাটিনসনের বলটা ওয়াইডই হতো, সেটিই তাড়া করতে গেলেন তিনি। স্লিপে ওয়ার্নার এদিন ভুল করার কোনো মুডেই ছিলেন না। ৪৫ রানে দাঁড়িয়ে ইংল্যান্ড হারিয়েছে জোড়া উইকেট। ২৪ বলে দারুণ এক ড্রাইভে রানের কলাম পূর্ণ করা ডেনলি এবার আলগা ড্রাইভ করেছিলেন প্যাটিনসনকে, পেইন ছিলেন প্রস্তুত। জনি বেইরস্টো ধোঁকা খেয়েছেন হ্যাজলউডের লাইন আর লেংথ দুটিতেই, ব্যাট আগবাড়িয়ে রেখে শুধু দেখেছেন ওয়ার্নারের আরেকটি দুর্দান্ত ক্যাচ। যেন স্প্রিং সেট করা ছিল ওয়ার্নারের সঙ্গে, ত্বরিত গতিতে বাঁদিকে ঝাঁপ দিয়ে নিয়েছেন দিনের সেরা ক্যাচটি। 

     


    ৬ উইকেট হারিয়ে, স্কোরবোর্ডে ৪৫ রানের রুগ্ন একটা অংক নিয়ে লাঞ্চে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। এরপর নতুন শুরু হয়নি তাদের আর, বরং ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাওয়াটা হয়েছে দ্রুতই। কামিন্স আরেকটি বাউন্সারে ফিরিয়েছেন ক্রিস ওকসকে, কিছুটা বার্নসের মতো করেই তিনি ধরা পড়েছেন পেইনের হাতে। জস বাটলারের জন্য শর্ট এক্সট্রা কাভারকে এনে ফাঁদ পেতেছিলেন পেইন, হ্যাজলউডকে ড্রাইভ করতে গিয়ে বাটলার ধরা পড়েছেন সেখানেই। আর্চার কামিন্সকে ডাক করতে গিয়ে সফল হননি, তার ব্যাট ছুঁয়ে গেছে বাউন্সারটা। আর লেগস্টাম্প হারিয়েছেন জ্যাক লিচ। লিচের উইকেট দিয়ে পাঁচ উইকেট পূর্ণ হয়েছে হ্যাজলউডের, আবারও ১০০-এর নিচে অল-আউট হয়ে যাওয়া হয়ে গেছে ইংল্যান্ডের। 

    দ্বিতীয় সেশনে অস্ট্রেলিয়ার তিন উইকেট নিতে পেরেছে ইংল্যান্ড, তবে অস্ট্রেলিয়ার লিড হয়ে গেছে প্রায় ২০০ ততক্ষণে। ব্রডের ভেতরের দিকে ঢোকা বলে এলবিডব্লিউ হয়েছেন ওয়ার্নার, সিরিজে এ নিয়ে চতুর্থবার ব্রডের শিকার হলেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার। লিচ ম্যাচে নিজের প্রথম বলেই সফল, মার্কাস হ্যারিস ব্যাট আর প্যাডে ফাঁক রেখে বোল্ড হয়েছেন পিচের রাফে পড়ে ঘোরা বলে। অবশ্য লিচের সে উইকেটটা ইংল্যান্ডকে মনে করিয়ে দিতে পারে, ন্যাথান লায়নের সামনে তাদের মিরাকল-স্বপ্নটা হতে পারে একটু বেশিই কঠিন! ৭ উইকেটময় দ্বিতীয় সেশনের শেষ উইকেটটি ওকসের, খাওয়াজাকে স্লিপে ক্যাচ দিতে বাধ্য করে তিনি দিয়েছিলেন ব্রেকথ্রু। 

    চা-বিরতির পর একদিকে স্টোকস করে গেছেন দুর্দান্ত এক স্পেল, আরেকদিকে টিকে থেকেছেন লাবুশেন। তিনবার স্টোকসের হাত থেকে অল্পর জন্য বেঁচে গেছেন তিনি। প্রথমে রুট ছেড়েছেন সহজ ক্যাচ, এরপর কট-বিহাইন্ড হয়েও বেঁচেছেন স্টোকস নো করায়, আর বেইরস্টো হাতে ধরেও রাখতে পারেননি কঠিন একটি সুযোগ। লাবুশেনকে ফেরাতে না পারলেও ট্রাভিস হেডকে ফিরিয়েছে ইংল্যান্ড, ব্রডের দারুণ ইয়র্কারে। 

    ম্যাথু ওয়েডকে কট-বিহাইন্ড করে দারুণ স্পেলের পুরষ্কারটা পেয়েছেন স্টোকস, তার বাম্পারে ব্যাট সরিয়ে নিলেও গ্লাভড হয়েছেন ওয়েড। এরপর ব্রড ফিরিয়েছেন পেইনকে। শুরুতে এলবিডব্লিউয়ের আবেদন করলেও পরে রুটের ক্যাচের আবেদনে সাড়া দিয়েছিলেন আম্পায়ার জোয়েল উইলসন, আল্ট্রা-এজে ধরা পড়েছেন অসন্তুষ্ট পেইন। তবে এমন একটি দিনের পর পেইনের আদতে অসন্তোষের কারণ নেই কোনও।