রুট-ডেনলিতে অ্যাশেজ স্বপ্ন নিয়ে ঝুলে থাকল ইংল্যান্ড
তৃতীয় দিনশেষে, অস্ট্রেলিয়া ১৭৯ ও ২৪৬; ইংল্যান্ড ৬৭ ও ১৫৬/৩*
জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের ৭ উইকেট বাকি রেখে ২০৩ রান প্রয়োজন
ঘটবে মিরাকল? নাকি জশ হ্যাজলউডের মতো কেউ ইংল্যান্ডের স্বপ্ন ভেঙেচূড়ে দেবেন আরেকবার? চতুর্থদিনে অপেক্ষা করে আছে কোনও নাটক? নাকি আবার নামবে ইংল্যান্ড ইনিংসে কোনও নাটকীয় ধস?
আগেরদিন অ্যাশেজ ধরে রাখার ব্যাপারটা মিরাকলসম ছিল ইংল্যান্ডের কাছে। হেডিংলিতে এদিনও প্রায় দেড় সেশন ধরে ব্যাপারটা থাকলো তেমনই। ৩৫৯ রানতাড়ায় ১৫ রানেই ২ উইকেট হারিয়ে ফেলা ইংল্যান্ডের জন্য সেই মিরাকল ব্যাপারটা এখন কয়েক ধাপ নিচে নেমে স্বপ্নের দিকে এগিয়েছে দুই জো- রুট ও ডেনলির ব্যাটিংয়ে। তৃতীয় উইকেটে তাদের ১২৬ রানের জুটিতে ইংল্যান্ড টানেলের ওপাশে আলোর রেখা দেখতে পাচ্ছে, তবে এ টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার আধিপত্য রয়েছে এখনও। চতুর্থ দিন ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ২০৩ রান, ৭ উইকেট প্রয়োজন অস্ট্রেলিয়ার।
ডেনলি ফিরলেও ইংল্যান্ডকে স্টাম্পসের দিকে আর কোনও উইকেট না হারিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজটা করেছেন বেন স্টোকস। ৫০ বল খেলে ২ রানে অপরাজিত তিনি, শেষ ২১ ওভারে ২২ রান তুলেছে ইংল্যান্ড। স্টোকসের দৃঢ়তার সঙ্গে এই পরিসংখ্যান এটাও বলছে, অস্ট্রেলিয়া বোলিংয়ে ছিল কতোখানি নিখুঁত। তার ওপর দ্বিতীয় নতুন বল পেতে আর মাত্র ৮ ওভারের অপেক্ষা অস্ট্রেলিয়ার, এ সময়ে এমন আঁটসাঁট বোলিং মানসিক দিক দিয়েও এগিয়ে রাখতে পারে তাদের।
শেষ দিকে ওভারের শুরুতে রুট সিঙ্গেল নিয়ে স্টোকসকে দিয়েছেন, তিনি বাকি বলগুলি করেছেন ডিফেন্ড। ম্যাচের এই পর্যায়টা বাদ দিলে ইংল্যান্ডের ইনিংসে আগের গল্পটা রুটেরই, সঙ্গে ডেনলির। টানা দুই ইনিংসে ডাক মেরে ডেকে আনা চাপ সঙ্গী করে নেমেছিলেন রুট। এরপর খেললেন দুর্দান্ত এক ইনিংস, দিনশেষে তিনি অপরাজিত ৭৫ রানে।
লাঞ্চের পরপরই নামতে হয়েছিল রুটকে। হ্যাজলউডের ব্যাক অফ লেংথ থেকে লাফিয়ে ওঠা বলে ব্যাট চেক করে স্লিপে পরিচিত শিকারি হয়ে ওঠা ওয়ার্নারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছিলেন ররি বার্নস। শীঘ্রই রুটের সঙ্গে যোগ দিতে হলো ডেনলিকে, কামিন্সের বলে রীতিমতো নাকানিচুবানি খেয়ে বোল্ড হয়ে নিজের জায়গাটা আরও বেশি নড়বড়ে করে ফেললেন জেসন রয়।
এজ দিয়ে চার মেরে শুরুটা হয়েছিল ডেনলির। ইনিংসজুড়ে যে খুব দৃঢ় ছিলেন, সেটা বলার উপায় নেই। তবে রুটের সঙ্গে তার জুটি ইংল্যান্ডকে দিয়েছে লাইফলাইন, ঝুলে ছিলেন তিনি। পরের ধাপে অবশ্য আক্রমণে জুত করতে পেরেছিলেন বেশ। এখন পর্যন্ত রুটের চেয়ে একটি বেশি বাউন্ডারি মেরেছেন তিনি, ফিফটি পূর্ণ করেছেন ১৩৪ বলে। হ্যাজলউডের বাউন্সারে হুক আর ডাকের মাঝে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে হয়েছেন গ্লাভড, ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটিটা থেমে গেছে ওই পঞ্চাশেই।
রুটের ক্ষেত্রে চিত্রটা অবশ্য একটু ভিন্ন। শুধু অ্যাশেজ নয়, নিজের অধিনায়কত্ব বাঁচানোরও একটা লড়াই করেছেন তিনি। ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন, হ্যাজলউড-লায়নদের হুমকি কাটিয়ে টিকে আছেন এখনও। ৫৯ রানে বেঁচেছেন এলবিডব্লিউয়ের হাত থেকে, আম্পায়ার ক্রিস গ্যাফানি তাকে আউট দিলেও আল্ট্রা-এজ দেখিয়েছে বড়সড় ইনসাইড-এজ। পেয়েছেন স্বস্তি।
সকালের শুরুটা অবশ্য খুব একটা স্বস্তির ছিল না ইংল্যান্ডের। স্টিভ স্মিথের জায়গায় এসে তার মতো করেই লড়াই করে যাওয়া মারনাস লাবুশেন ও জেমস প্যাটিনসন অস্ট্রেলিয়ার লিডকে বাড়িয়ে নিচ্ছিলেন ভালই। দিনের ১১তম ওভারে গিয়ে ব্রেকথ্রু পেয়েছে ইংল্যান্ড, অবশেষে ঠিক লাইনটা খুঁজে পেয়ে প্যাটিনসকে খোঁচা দেওয়াতে পেরেছেন আর্চার। পরের দুই ওভারে দুই বাউন্ডারির পর এসেছে আরেকটি উইকেট, স্টোকসের বলে স্কয়াড-আপ হয়ে গালিতে ক্যাচ দিয়েছেন কামিন্স। আবার দুই ওভারের বিরতি, আবার আরেকটি উইকেট। থার্ডম্যানে ডেনলির মিসফিল্ডে ডাবলস নিতে গিয়ে রান-আউট হয়েছেন লাবুশেন, সেঞ্চুরি থেকে ২০ রান দূরে। এ টেস্টে তার জোড়া ফিফটি শেষ পর্যন্ত কতোখানি পার্থক্য গড়ে দেবে, চতুর্থ দিন হয়তো উত্তর পাওয়া যাবে সেটারও।
আর্চারের বলে লায়ন বোল্ড হওয়ায় শেষ হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস, ৩৬০ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য দিয়ে। এরপর দ্রুত দুই উইকেটে সে লক্ষ্যটা পাহাড় ছাড়িয়ে প্রায় আকাশে গিয়ে ঠেকেছিল ইংল্যান্ডের কাছে।
রুট-ডেনলি টেনে নামিয়েছেন সেটি।
ঘটবে মিরাকল? নাকি জশ হেজলউডের মতো কেউ ইংল্যান্ডের স্বপ্ন ভেঙেচূড়ে দেবেন আরেকবার?