• অ্যাশেজ ২০১৯
  • " />

     

    স্টোকসের হেডিংলি রূপকথায় ইংল্যান্ডের অবিশ্বাস্য জয়

    স্টোকসের হেডিংলি রূপকথায় ইংল্যান্ডের অবিশ্বাস্য জয়    

    হেডিংলি টেস্ট
    অস্ট্রেলিয়া ১৭৯ ও ২৪৬; ইংল্যান্ড ৬৭ ও ৩৬২/৯
    ইংল্যান্ড ১ উইকেটে জয়ী


    রূপকথা। 

    শব্দটা কি পারবে এ ইনিংসের যথার্থতা প্রমাণ করতে? পারবে, বেঞ্জামিন অ্যান্ড্রিউ স্টোকসের এ ইনিংসে ভর করে ইংল্যান্ডের এই প্রত্যাবর্তনের গল্পের শিরোনাম হতে? হয়তো। হয়তো নয়। হয়তো রূপকথাকে ছাপিয়ে গেছে এটি। শেষ উইকেটে ৭৬ রানের জুটিতে- যেখানে জ্যাক লিচের অবদান ১ রান- স্টোকস ছাপিয়ে গেছেন অতিমানবের সীমানাও হয়তো। প্রথম ইনিংসে ৬৭ রানে অল-আউট হয়ে যাওয়া ইংল্যান্ড তাড়া করেছে ৩৬০ রান, বাঁচিয়ে রেখেছে অ্যাশেজের আশা। ২-০ এর লিডটা হাতছোঁয়া দূরত্বে থেকেও ঠেলে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ৩ ম্যাচ পর এখন ১-১ এর সমতা। 

    শেষটা চিন্তা করুন। ২ রান যখন প্রয়োজন ইংল্যান্ডের, নিশ্চিত রান-আউট থেকে বেঁচে গেলেন জ্যাক লিচ, থ্রো-টা মুঠোবন্দী করতে পারলেন না ন্যাথান লায়ন। ঠিক পরের বলেই এলবিডব্লিউ থেকে বেঁচে গেলেন বেন স্টোকস, অথচ এর আগে লিচের বিপক্ষে লেগস্টাম্পের বেশ বাইরে পড়া বলে রিভিউ নিয়ে সেটি হেলায় হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। সেই লিচই সিঙ্গেল নিয়ে ম্যাচ করলেন টাই, প্যাট কামিন্সকে কাভার দিয়ে মেরে বুনো উল্লাসে মেতে উঠলেন স্টোকস। এমন ইনিংসের পর হয়তো সমর্থন ভুলে বুনো এক উল্লাসে মেতেছেন আপনিও! 

    ২৮৬ রানে দাঁড়িয়ে জফরা আর্চার ও স্টুয়ার্ট ব্রড- দুজনকেই যখন হারিয়ে ফেলল ইংল্যান্ড, অ্যাশেজ বাঁচানোর স্বপ্নটা তখন মিলিয়ে গেছে প্রায়। এর আগে ১৬ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ড ফিরিয়ে এনেছিল পুরোনো ধসের স্মৃতি, যে ধসে হুমড়ি খেয়ে পড়বে সব আশা। বাধা হয়ে দাঁড়ালেন ওই স্টোকস। লায়নের পরপর দুই ওভারে তিন ছয়ে, প্যাট কামিন্সকে ছয়ের পর জশ হ্যাজলউডকে চার, ছয়, ছয়ের ক্রমে স্টোকস ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন ভিন্ন কিছুর। হ্যাজলউডের এ ওভারের প্রথম বাউন্ডারিতে সেঞ্চুরি পূর্ণ হয়েছিল তার। আর স্টোকসের এসব শট মনে করিয়ে দিচ্ছিল বিশ্বকাপকে, ইঙ্গিত দিচ্ছিল হয়তো ১৯৮১ সালে ইয়ান বোথামের রূপকথার সেই হেডিংলি। 
     


    হ্যাজলউডের সেই খরুচে ওভার তাকে আক্রমণ থেকে সরিয়ে নিল, তবে ইংল্যান্ডের সামনে তখনও অথৈ পাথার। কামিন্সের বলে দুই চারে সে দূরত্ব কমে এলো, স্টোকস ক্যাচ তুলেও বেঁচে গেলেন অল্পর জন্য থার্ডম্যানে। লাইনে চলে যাওয়া সব ফিল্ডার, স্টোকস তবুও এরপর ঝুঁকি নিলেন তুলে মারার। লায়নের সেই নাটকীয় ওভারে, যে ওভারে দুইবার উইকেট নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিল ইংল্যান্ড- স্টোকস মারলেন আরেকটি ছয়। আর পরের ওভারে তিনি ঢুকে গেলেন রূপকথায়। 

    ইংল্যান্ডের দিনটা শুরু হয়েছিল একরাশ আশা নিয়ে, যে আশার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন জো রুট। তবে আগের দিনের সঙ্গে নিজের স্কোরে আর ২ রান শুধু যোগ করতে পারলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক। লায়নকে ঘুরিয়ে খেলতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছিলেন তিনি ওয়ার্নারের হাতে। অবশ্য দায়িত্বটা এরপর তুলে নিলেন স্টোকস, সঙ্গী হিসেবে পেলেন জনি বেইরস্টোকে। লাঞ্চের আগে আর উইকেট হারায়নি ইংল্যান্ড। 

    তবে হ্যাজলউডকে কাট করতে গিয়ে স্লিপে বেইরস্টো ক্যাচ দেওয়ার পর ধসের দিকে এগিয়ে গেছে ইংল্যান্ড। ধস নামলে রান-আউট থাকবে, এই নীতি মেনে স্টোকসের সঙ্গে ভুল বুঝাবুঝিতে ফিরেছেন জস বাটলার। ক্রিস ওকস শর্ট এক্সট্রা কাভারে ক্যাচ দিয়েছেন ম্যাথু ওয়েডের হাতে, সেই হ্যাজলউডের বলেই। তিন বাউন্ডারিতে আর্চার স্টোকসকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন ভালই, তবে ১৫ রান করে তার স্লগ ধরা পড়েছে ডিপ স্কয়ার লেগে। এক বল পর প্যাটিনসনের বলে এলবিডব্লিউ স্টুয়ার্ট ব্রড। 

    ইংল্যান্ড অথৈ পাথারে। এরপর? 

    বেন স্টোকস অপরাজিত ১৩৫, জ্যাক লিচ অপরাজিত ১। আর রূপকথায় ইংল্যান্ডের আরেকটি হেডিংলি জয়।