• অ্যাশেজ ২০১৯
  • " />

     

    ওল্ড ট্রাফোর্ডে স্মিথের রক-শো, কাঁপছে ইংল্যান্ড

    ওল্ড ট্রাফোর্ডে স্মিথের রক-শো, কাঁপছে ইংল্যান্ড    

    ২য় দিনশেষে
    অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস ৪৯৭/৮ ডিক্লে. (স্মিথ ২১১, লাবুশেন ৬৭, পেইন ৫৮, স্টার্ক ৫৪*, ব্রড ৩/৯৭, লিচ ২/৮৩, ওভারটন ২/৮৫) ; ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস ২৩/১* (বার্নস ১৫*, কামিন্স ১/১০) 
    ইংল্যান্ড ৪৭৪ রানে পিছিয়ে 


    স্টিভ স্মিথ মাথাটা ঝাঁকাচ্ছেন, ওপর-নিচ করে। নিজের রক মিউজিকের সঙ্গে নিজেই তাল দিচ্ছেন যেন। তার ব্যাটটা অদ্ভুত এক গিটারে পরিণত হয়েছে তখন, ওল্ড ট্রাফোর্ডে দুয়ো মিলিয়ে গেছে তখন করতালিতে, স্মিথ হেলমেট খুলে ফেলেছেন সে অভিবাদনের জবাব দিতে। ক্যারিয়ারের তৃতীয়, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরি হয়ে গেছে। অ্যাশেজে ১১তম, ক্যারিয়ারে ২৬তম সেঞ্চুরি পেরিয়ে এসেছেন আগেই। স্মিথের নামের আগে-পরে ব্যবহার করা যায় এমন নতুন বিশেষণের তালিকা শেষ হয়ে যাচ্ছে। আরেকবার ইংল্যান্ডের অ্যাশেজ-আশা শেষ হয়ে যাচ্ছে। স্মিথ-ধাঁধার সমাধান করতে পারেনি ইংল্যান্ড, দ্বিতীয় দিনশেষে তারা পিছিয়ে ৪৭৪ রানে, নতুন ওপেনার জো ডেনলি ফিরে গেছেন। অ্যাশেজে আরেকটি দিন, স্মিথ আরেকবার সেটির শিরোনাম। নতুন কিছু নেই তাই আপনার জন্য। 

    আগেরদিন কন্ডিশন আর পিচের ঠিক সুবিধা আদায় করতে পারেনি বলে হতাশ হয়েছিল ইংল্যান্ড, এদিন সবকিছুই প্রায় বিপক্ষে গেছে তাদের। ক্যাচ হাতছাড়া হয়েছে, স্মিথকে আউট করেও করা হয়নি তাদের স্পিনার ওভারস্টেপিং করায়। টিম পেইন ১১ টেস্ট পর ফিফটি পেয়েছেন, মিচেল স্টার্ক বোলিংয়ে ঝলক দেখানোর আগেই আগুনে ফিফটি পেয়েছেন। অস্ট্রেলিয়া ইনিংস ঘোষণা করে দিয়েছে। আরেকবার তাই সুতোয় ঝুলছে ইংল্যান্ডের অ্যাশেজ-স্বপ্ন, সেটি ধরে রাখতে অতিমানবীয় স্মিথের ইংলিশ সংস্করণ ধরনের কিছু তাই প্রয়োজন এখন তাদের। 

     

     

    দিনের শুরুতে অবশ্য স্টুয়ার্ট ব্রড আশা জুগিয়েছিলেন, আগেরদিন মার্কাস হ্যারিসের মতো করেই রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে ভেতরের দিকে ঢোকা বলে ট্রাভিস হেডকে এলবিডব্লিউ করে। ম্যাথু ওয়েড স্মিথকে সঙ্গ দেওয়ার চেয়ে নিজে ভুগেছেন বেশি, চাপ কমাতে জ্যাক লিচকে তুলে মারতে গিয়ে ওয়াইড মিড-অনে জো রুটের হাতে ধরা পড়েছেন। বৃষ্টি এসেছে এর মাঝে, স্মিথের সেঞ্চুরি হয়ে গেছে এর মাঝে। 

    পেইন নড়বড়ে ছিলেন, আউট হতে পারতেন অন্তত দুইবার। ৯ রানে ব্রডের বলে স্লিপে লোপ্পা ক্যাচ ফেলেছেন জেসন রয়, ৪৯ রানে গিয়ে স্যাম কারান আরেকটি ক্যাচ। পেইন-স্মিথের ব্যাটিং অবশ্য ‘পেইন’ দিয়েই গেছে তাদের। ১১৮ রানে লিচের পারফেক্ট বাঁহাতি স্পিনিং ডেলিভারিতে স্লিপে স্টোকসের হাতে ধরা পড়েছিলেন স্মিথ। স্টোকস আনন্দের চোটে বল সজোরে ছুঁড়ে মেরেছিলেন মাটিতে, স্মিথ হতাশায় ক্রিজ ছেড়েছিলেন প্রায়। 
     

    স্মিথ- কামিং ব্যাক টু লাইফ, ইংল্যান্ড গোয়িং ব্যাক টু...


    সব বদলে দিল টেলিভিশন আম্পায়ারের দেখা রিপ্লে। লিচের পা লাইনের ভেতরে ছিল না, দ্বিতীয় জীবনের স্মিথের ভেতরের দানব যেন এরপর জেগে উঠলো আরও ভয়ানক রূপ নিয়ে। দ্বিতীয় সেশনে কোনও উইকেট হারালো না অস্ট্রেলিয়া, পেইন পেয়ে গেলেন ফিফটি, স্মিথ ছাড়িয়ে গেলেন ১৫০। বিরতির ঠিক পরের বলেই ওভারটনের পারফেক্ট পিচিংয়ে ফিরলেন পেইন, বেইরস্টোর হাতে ক্যাচ দিয়ে। স্মিথকে ১৮৬ রানে রেখে ফিরলেন প্যাট কামিন্সও, লিচের বলে স্টোকসের হাতে স্লিপে ধরা পড়ে। 

    গল্পটা শেষ হলো না। স্মিথ থাকলে গল্প শেষ হয়ও না। চার মেরে ১৯০-এ গেলেন, ছয় মেরে ১৯৭-এ। ব্রডের বলে বিহাইন্ড দ্য স্কয়ারে টাক করে পূর্ণ করলেন ডাবল সেঞ্চুরি। জো রুটের লেগস্পিনে রিভার্স সুইপে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ধরা পড়ে থামলেন ৩১৯ বলে ২১১ রান করে। এর আগেই ব্রডকে টানা চার চারে পার্টি শুরু করেছেন স্টার্ক। স্মিথের পর ন্যাথান লায়নকে সঙ্গে নিয়ে সেটি চালিয়ে গেলেন। ৪৯ বলে পূর্ণ করলেন ফিফটি, লায়নের সঙ্গে জুটিতে ৫১ রান তোলার পর ফিরতে হলো পেইন ইনিংস ঘোষণা করে দেওয়ায়। 

    ইনিংস ঘোষণা কাজে দিল অস্ট্রেলিয়ার। জশ হ্যাজলউডের দুর্দান্ত বোলিংয়ের ফাঁকে সাফল্য পেয়ে গেলেন প্যাট কামিন্স। ফ্লিক করতে গিয়ে প্যাডে লেগে শর্ট লেগে উঠলো জো ডেনলির ক্যাচ, ছোঁ মেরে সেটি থামালেন যেন শুরুতে ওয়েড। বুকে লেগে পেছন দিকে গেল, এবার ঝাঁপিয়ে পড়ে ধরলেন সেটা। ডেনলি অন্য কোনও দিন হয়তো জীবন পেতে পারতেন, তবে এদিন ইংল্যান্ডের পক্ষে কিছু ছিল না। 

    স্মিথ নামের একজন অতিমানবের শো-তে বোধহয় ভাগ্য-টাগ্যর খাতাতেও গুবলেট পাকিয়ে ফেলেছে কেউ। অ্যাশেজ তাই সুতোয় ঝুলছে, আরেকবার তাতে একহাত দিয়ে রেখেছে অস্ট্রেলিয়া। 

    ওল্ড ট্রাফোর্ড কাঁপছিল এদিন স্মিথের রক-শোতে। আর অ্যাশেজ কাঁপছে স্মিথের বিশেষণ-ফুরিয়ে-যাওয়া কাজকারবারে।