অতিমানব স্মিথ ও বিধ্বংসী কামিন্সে অ্যাশেজের আরও কাছে অস্ট্রেলিয়া
৪র্থ দিনশেষে
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস ৪৯৭/৮ ডিক্লে. (স্মিথ ২১১, লাবুশেন ৬৭, পেইন ৫৮, স্টার্ক ৫৪*, ব্রড ৩/৯৭, লিচ ২/৮৩, ওভারটন ২/৮৫) ও ২য় ইনিংস ১৮৬/৬ ডিক্লে. (স্মিথ ৮২, ওয়েড ৩৪, আর্চার ৩/৪৫, ব্রড ২/৫৪) ; ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস ৩০১ অল-আউট (বার্নস ৮১, রুট ৬১, বাটলার ৪১, হ্যাজলউড ৪/৫৭, স্টার্ক ৩/৮০, কামিন্স ৩/৬০) ও ২য় ইনিংস ১৮/২* (ডেনলি ১০*, রয় ৮*, কামিন্স ২/৮)
জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের ৮ উইকেটে ৩৬৫ রান প্রয়োজন
হিসাবটা আরও সরল এখন। অ্যাশেজ জিততে অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন ৮ উইকেট, অ্যাশেজ স্বপ্ন টিকিয়ে রাখতে ইংল্যান্ডের প্রয়োজন শেষদিনে ৩৬৫ রান, অথবা পুরো দিন ব্যাটিং করে কাটিয়ে দেওয়া। ফলো-অন আটকে আবার স্টিভ স্মিথের আটকে যাওয়া ইংল্যান্ড শেষ বিকেলে পড়েছে প্যাট কামিন্সের তোপে। কামিন্সের পরপর দুই বলে আগের ইনিংসকে ইংল্যান্ডকে আশা জোগানো ররি বার্নস ও জো রুটের ফেরা অস্ট্রেলিয়াকে আরও কাছে নিয়ে গিয়েছে অ্যাশেজের, বিপরীতে ওই ছোট্ট ভস্মাধারের সঙ্গে দূরত্বটা আরও বেড়েছে ইংল্যান্ডের।
৩৮৩ রানের লক্ষ্য নিয়ে ব্যাটিং করতে নেমে ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্য অবশ্যই থাকার কথা ছিল দিনের বাকি অংশটা নিরাপদে পার করে দেওয়া। তবে সেটার জন্য খুব একটা সময় পেলেন না ররি বার্নস, ইনিংসের তৃতীয় বলেই ফুল অফ আ লেংথের ডেলিভারিতে ভড়কে গেলেন, ফ্লিক করতে গিয়ে হলেন লিডিং-এজড। শর্ট কাভারে ক্যাচ দিলেন শূন্য রানেই। জো রুট ঠিক পরের বলেই পেলেন প্যাট কামিন্সের স্বপ্নালু এক ডেলিভারি, যে ডেলিভারি হয়তো প্রকাশ করে টেস্টের এক নম্বর বোলারকে, সে ডেলিভারি হয়তো প্রকাশ করে এ অ্যাশেজের অস্ট্রেলিয়াকে। অফস্টাম্প লাইনে ব্যাক অফ আ লেংথে পড়া বলটা রুটকে কোনও সময় না দিয়েই ঢুকে পড়ল, একটু মুভমেন্টে এরপর ভাঙলো অফস্টাম্প। ইংল্যান্ডের স্কোরবোর্ডে তখনও ০ রান, নেই ২ উইকেট!
জেসন রয় কোনোরকমে হ্যাটট্রিক বলটা ঠেকালেন, ওপাশে জো ডেনলিকে নিয়ে এরপর পার করলেন বাকি সময়টাও, জশ হ্যাজলউড, ন্যাথান লায়নের পর মিচেল স্টার্ককে সামলে। তবে ওল্ড ট্রাফোর্ডে শেষ দিনে নিজেদের সামনে এখন হেডিংলি-রূপকথা পুনর্গঠন ধরনের কাজ বাকি থেকে গেল ইংল্যান্ডের।
দিনের শুরুতে বেন স্টোকস ও জনি বেইরস্টোর প্রথম লক্ষ্য ছিল ফলো-অন আটকানো। দ্বিতীয় নতুন বলেও কিছুটা সময় পার করেছিলেন তারা, তবে পুরোনো স্টার্ককে মনে করে দেওয়া এক ডেলিভারিতে ভাঙলো বেইরস্টোর স্টাম্প- ফুললেংথে পড়ে সুইং করে ভেতরের দিকে ঢোকা বলে বেইরস্টো খেলতে গিয়ে উচ্চাভিলাষী ড্রাইভ। স্টোকসকেও ছাড়েননি স্টার্ক, ওভার দ্য উইকেট থেকে লেংথে পড়ে সিম মুভমেন্টে বেরিয়ে যাওয়া বলটা ছুঁয়ে গেল হেডিংলির নায়কের ব্যাট, স্লিপে গেল ক্যাচ।
জস বাটলারকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য বাকি রইল ইংল্যান্ডের লেজ। আর্চার শিকার কামিন্সের, স্টুয়ার্ট ব্রড স্টার্কের। দুজন মিলে করলেন ৬ রান, এ দুজনের সঙ্গে জুটিতে বাটলার তুললেন ৪০। ব্রডের উইকেটের পরও ফলো-অন আটকাতে আরও ১৪ রান প্রয়োজন ছিল ইংল্যান্ডের, জ্যাক লিচকে নিয়ে সেটা পেরুলেন বাটলার নিজে কামিন্সের বলে বোল্ড হওয়ার আগে, ৭ চারে ৪১ রান করে।
অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করলো ১৯৬ রানে এগিয়ে থেকে, এরপর পড়লো ব্রডের তোপে। ডেভিড ওয়ার্নার এ অ্যাশেজে ৮ম ইনিংসে এসে ৬ষ্ঠ বারের মতো ব্রডের শিকার, সিমে পড়ে ভেতরের দিকে ঢোকা বল আছড়ে পড়লো তার প্যাডে। ব্রডের বলে অস্ট্রেলিয়ান এই ওপেনারের আউট হওয়া যেন নিয়তি হয়ে গেছে এখন, রিভিউ নেওয়ার বদলে মুখে কাষ্ঠ হাসি এনে সেটির পক্ষেই মত দিলেন ওয়ার্নার নিজেই। মার্কাস হ্যারিসও প্রথম ইনিংসের কার্বন-কপি করে হলেন ব্রডের বলেই এলবিডব্লিউ, রিভিউ নিয়েও বাঁচেননি তিনি।
এরপর আর্চারের পালা। অস্ট্রেলিয়ার নতুন তিন নম্বর মারনাস ল্যাবুশেন এলবিডব্লিউ, ট্রাভিস হেডের সঙ্গে খন্ডযুদ্ধ জিতে তাকে বোল্ড করলেন ইংল্যান্ডের পেস-তারকা। ৪৪ রানে ৪ উইকেট নেই অস্ট্রেলিয়ার, ইংল্যান্ড হয়তো তখন স্বপ্ন দেখছে অসম্ভবের। তবে আছেন যে একজন স্টিভেন স্মিথ! যাকে ক্রিজে দেখলে এখন যে কারোরই মনে হওয়া স্বাভাবিক, এ ব্যাটসম্যানকে আদতে আউট করা সম্ভব নয়। ওল্ড ট্রাফোর্ডের চতুর্থ দিনের উইকেটেও তিনি খেলে গেলেন নিজের খেলাটা, যে খেলা রহস্য বাড়িয়ে তুলছে শুধু!
যতক্ষণে লিচকে ক্রিজে ছেড়ে বেরিয়ে এসে তুলে মারতে গিয়ে মিসটাইমিং করে ক্যাচ তুললেন, ততক্ষণে ম্যাথু ওয়েডের সঙ্গে তার জুটি হয়ে গেছে ১০৫ রানের। স্মিথ হয়তো এ শটটাও খেলতেন না, ইনিংস ঘোষণার তাড়া না থাকলে! তা যাই হোক, তিনি এ দফা করলেন ৮২ রান। ৯২ বলে, ১১ চারে। এ সিরিজে এটি ছিল তার ৫ম ইনিংস, তার রান হয়ে গেছে ৬৭১, গড় ১৩৪.২০! এসব সংখ্যা বারবার যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে, স্মিথ আদতে মানব-কাতার ছেড়ে উর্ধ্বে চলে যাচ্ছেন!
স্মিথের পর ফিরলেন ওয়েডও, স্মিথকে যিনি দিচ্ছিলেন দারুণ সঙ্গ। আর্চারের বলে বেইরস্টোর বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে একহাতের দারুণ ক্যাচে পরিণত হলেন তিনি ৭৬ বলে ৩৪ রান করার পর। নিজের ১৮ বলে ২৩ রানের ক্যামিওর পর, ইংল্যান্ডের জন্য ৩৮৩ রানের লক্ষ্য নির্ধারণের পর ইনিংস ঘোষণা করলেন টিম পেইন।
এরপর হাজির হলেন কামিন্স। অ্যাশেজের দিকে এগিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া। পিছিয়ে গেল ইংল্যান্ড। আর ওল্ড ট্রাফোর্ডকে রাখলো অপেক্ষায়।