'লজ্জা' শব্দটায় আপত্তি সাকিবের, ভুল থেকে শিখবে কবে জানেন না
‘এই টেস্টে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সকে কত দেবেন?’
‘জিরো।’
সাকিব আল হাসানের সংবাদ সম্মেলনের শুরুটাই ছিল এরকম। এই টেস্টে আসলে শুন্যের কমে কিছু থাকলে সেটাই হয়তো পাওনা বাংলাদেশ দলের। প্রথম চার দিন তাও যেমন-তেমন, শেষ দিনে বৃষ্টির সহায়তা পেয়েও তো মাত্র ১৮ ওভারও খেলতে পারল না বাংলাদেশ। সেজন্য আগে অধিনায়ক নিজের ওপর দায় নিচ্ছেন। তবে আজ অন্যরাও যেভাবে ব্যাট করেছেন, তাতে বাংলাদেশের টেস্ট মানসিকতায় সমস্যা আছে বলেও মনে করছেন অধিনায়ক।
নিজের কথাটা অবশ্যই আগে আসবে। দ্বিতীয় দফায় বৃষ্টি বাধার পর শুরুতেই অবিশ্বাস্যরকম আত্মঘাতী একটা শট খেলে উইকেট দিয়ে এলেন সাকিব। শুরুতেই সেজন্য নিজের ওপর দায় নিলেন, ‘আমার আমারটা বলতে পারি, বাকিদের বলা আমার জন্য কঠিন। আমি প্রথম বলেই আউট হয়ে গেছি, এরপর বাকিদের কাজটা আরও অনেক কঠিন হয়ে গেছে। দায়িত্ব অনেকটা আমার ওপরেই পড়ে, প্রথমে আমার ওই কাট না মারলেও হতো। আসলে না মারার মতই ছিল। কিন্তু শট খেলে ফেলেছি, দল অনেক বেশি চাপে পড়ে গেছে। আমি যেহেতু উইকেটে ছিলাম আমারই দায়িত্ব ছিল মূল ভূমিকাটা পালন করার। যেহেতু প্রথম বলে আউট হয়েছি, দলের জন্য কাজটা কঠিন হয়ে গেছে।’
কিন্তু ওই মুহূর্তে সাকিব অমন শট খেলতে গেলেন কেন? তার ব্যাখ্যা, ‘মানসিকতা ওই সময় যেটা ছিল, স্বাভাবিকভাবে ওই সময় আমার কাছে নার্ভাসনেস অনেক বেশি কাজ করছিল। যেহেতু আমাদের হাতে মাত্র ১ ঘণ্টা ১০ মিনিটের মতো সময় ছিল। দুপুরে কিন্তু অতটা নার্ভাস লাগেনি। আমি চেয়েছিলাম প্রথম বলটা ভালোভাবে ফেস করি। কিন্তু সেটা হয়নি, শট খেলতে গিয়ে আউট হয়ে গেছি। তাই আমারই দোষ।’
কিন্তু এরপরও কথা থাকে। মিরাজ যেভাবে রিভিউ নিয়ে নষ্ট করেছেন, সেটার জন্য নিশ্চিতভাবে অধিনায়কের কঠিন বকুনি খেতে হয়েছে। সাকিবের কথায় সেটাই বোঝা গেল, ‘তাইজুলেরটা ধরেন ব্যাট প্যাড ছিল। কিন্তু মিরাজ এর আগেই রিভিউ নিয়ে নিয়েছে। ওটা যে একদিন ক্রিকেট খেলেছে তারও বোঝা উচিত যে ওটা প্লাম্ব আউট। স্বভাবিকভাবেই রিভিউ থাকলে ও সেটা পরে নিতে পারত, সেটা আমাদের হেল্প করত। তাইজুল আগের ইনিংসেও ভালো ব্যাট করেছিল। অনেকক্ষণ ডিফেন্স করে রেখেছিল।’
সৌম্য অনেকক্ষণ টিকেছেন বটে, কিন্তু মাঝে জাহির খানের বলে সিঙ্গেল নিয়ে মাথায় হাত দিয়ে দিয়েছিলেন। অন্যদিকে তখন শেষ ব্যাটসম্যান নাঈম। সাকিব সেটার উদাহরণও দিলেন, ‘সৌম্য যখন রান মাথায় নিয়ে মাথায় হাত দিচ্ছে ও বুঝতে পারছে না ওর রোলটা কী। ওর কী করা উচিত। তো এখানে অনেক কিছু শেখার আছে আর বোঝার আছে। তো কতদিন যে এটা শিখতে কতদিন লাগবে সেটাই বড় ব্যাপার।’
সব মিলে আজ দল যেভাবে খেলেছে তাতে তাদের কোনোরকম পরিকল্পনা বা প্রস্তুতি ছিল কি না সেই প্রশ্নও উঠবে। সাকিব সেটা মেনেও নিলেন, ‘রেজাল্ট যদি দেখেন আমি বলব অবশ্যই নাই। সেটা থাকলে আমরা বেটার কিছু শো করতে পারতাম।। এই ধরনের ভুল ভ্রান্তিগুলো প্রায়ই হয়। এখানে অনেক কিছু শেখার আছে আর বোঝার আছে। তো কতদিন যে এটা শিখতে কতদিন লাগবে সেটাই বড় ব্যাপার।’
সব মিলে এই ম্যাচে পরাজয়ের এক শব্দে বর্ণনা করার মতো কোনো ভাষা নেই সাকিবের হাতে, 'অধিনায়কত্ব যদি না করতে হয় তাহলে আমার মনে হয় সবথেকে ভালো হবে আমার জন্য। আমার কাছে মনে হয় ক্রিকেটের জন্য ভালো হবে ব্যক্তিগত দিক থেকে চিন্তা করলে। আর নেতৃত্ব যদি দিতেই হয় তাহলে অবশ্যই অনেক কিছু নিয়ে আলোচনা করার ব্যাপার আছে। '
তবে আর যাই হোক, সাকিব এটা লজ্জাজনক মনে করেন না, 'খুবই খারাপ, এভাবে হারাটা খুবই খারাপ এবং এর থেকে বেশি......খারাপের থেকে নিচে কোনো শব্দ আছে, থাকলে সেটি বলতে পারেন। খুবই খারাপ, হতাশাজনক। যত কিছু আছে নেতিবাচক কথা সবই বলে দিতে পারেন।'
কিন্তু এই হার কি লজ্জাজনক? সাকিব অবশ্য বললেন, কষ্টদায়ক হতে পারে, তবে হার যন্ত্রণার নয়।
সাকিবদের জন্য লজ্জাজনক না হতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে অদূরদর্শী নীতিনির্ধারকদের জন্য লজ্জার কি না, সেই প্রশ্ন উঠতেই পারে।