'অধিনায়কত্ব না করতে হলেই সবচেয়ে ভালো'
মাত্র দুই মাসে কত কিছুই না বদলে যায়! বিশ্বকাপে অমন অতিমানবীয় পারফরম্যান্সের পর সাকিব আল হাসানকে নিয়ে কত স্তুতি আর প্রশংসা হয়েছে। আর আফগানিস্তানের সাথে প্রথম টেস্টে অমন শোচনীয় হারের পর এখন দেখতে হচ্ছে মুদ্রার উলটো পিঠ। সাকিব অবশ্য বলছেন যেখানে ছিলেন সেখানেই আছেন। তবে সংবাদ সম্মেলনে একটা কথায় বুঝিয়ে দিলেন, এই দলের অধিনায়কত্ব করতে চান না তিনি।আফগানদের কাছে ২২৪ রানে হারের পর সাকিবকে আজকে জবাব দিতে হলো অনেক অপ্রিয় প্রশ্নের। এই হারের পর বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট কোথায় দাঁড়িয়ে আছে সেই প্রশ্ন উঠল স্বাভাবিকভাবেই। সাকিব সোজাসাপটাই বলে দিলেন, ‘ আমরা যদি ধারাবাহিক ভাবে ভালো খেলতে চাই আমাদের প্লেয়ারদের কোয়ালিটি আরও বাড়াতে হবে। তা না হলে সুবিধা বা ফেভার এই জিনিসগুলো নিয়ে আসলে রেজাল্ট করতে পারবো না।’
কিন্তু এই পরাজয় কি বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে অন্ধকার দিনগুলোর একটি? এক যুগেরও তো বেশি সময় হয়ে গেছে, কম তো দেখেননি সাকিব। তবে এই প্রশ্নটা কিছুটা এড়িয়েই গেলেন, ‘আমার স্মৃতি খুব ভালো না। বলতে পারবো না ভালো সময় খারাপ সময়। খারাপ খেলেছি ম্যাচ হেরেছি। এমন না যে এর আগে কখনও আমরা হারিনি বা জিতিনি। রিসেন্ট যা কিছু হয় আমরা এগুলো নিয়ে নাড়ানাড়ি করি।’
কালও প্রশ্নটা হয়েছিল, আজ আবার উঠল, ঘরোয়া বিশেষ করে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের দৈন্যদশা এর কারণ কি না? সাকিব বললেন, টেস্ট ক্রিকেটের এত বছর পর এ ধরনের প্রশ্ন ওঠাটাই অপ্রাসঙ্গিক, ‘এটা তো ২০ বছর আগের কথা হওয়া উচিত ছিল আমাদের ডমেস্টিক ক্রিকেটে গুরুত্ব দেয়া উচিত। ২০ টেস্ট ক্রিকেট খেলার পর এই বিষয়টি নিয়ে আলাপ করার সাবজেক্ট হওয়া উচিত না।’
সাকিব অবশ্য অনেক কিছুই বলতে চাইলেন না বা এড়িয়ে গেলেন। ঘরের মাঠে পেসাররা কেন ভালো করতে পারে না সেই প্রশ্ন উঠেছিল কাল। তখনও সাকিব বলেছিলেন, অনেক কিছু খোলচনলচে বদলাতে হবে। পাইপলাইন নিয়েও প্রশ্ন হলো। সাকিব আগের কথাটাই আবার বললেন, ‘আমার কাছে আগেও যেটি বলেছি যে তিন ফরম্যাটে আসলে আমাদের বুঝতে হবে যে কে কোন ফরম্যাটের জন্য ভালো অপশন হবে। আর সেটাতেই লেগে থাকতে হবে আসলে। খুব বেশি বাছাই করার আমাদের জায়গা নেই কারণ আপনি আমাদের প্রিমিয়ার লিগ যদি দেখেন, একটি সেট আপে হয় যেখানে মাত্র কয়েকটি ম্যাচ হয়, ১০-১১টি ম্যাচ হয়। এগুলো দেখেই আমাদের খেলোয়াড় বাছাই করতে হয়। একটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট হয় যেটি বিপিএল, সেখান থেকে আমাদের খেলোয়াড় বাছাই করতে হয়। একটি হয় আমাদের এনসিএল। এই তিন ফরম্যাট থেকে আমাদের তিন ধরণের খেলোয়াড় বাছাই করতে হয় আসলে। তাই খুব বেশি অপশন আছে বলে আমার মনে হয় না। সত্যি কথা বলতে ঐ জিনিসটি ডিসার্ভও করতে হবে যে ঐ খেলোয়াড়টি ঐ ফরম্যাট ডিসার্ভ করে তার ঐ ফরম্যাটে ভালো করার সম্ভাবনা আছে। এটি আসলে আমার কাছে মনে হচ্ছে সামগ্রিক একটি বড় প্ল্যানিং করে এগোতে হবে। তানাহলে হয়তো এমন ফলাফল মাঝে মাঝেই চলে আসবে।’
নিজের কথা চিন্তা করলেও এই টেস্টটা কি আকাশ থেকে মাটিতে নেমে আসার মতো নয়? বিশেষ করে বিশ্বকাপে অমন পারফরম্যান্সের পর? সাকিব তা মনে করেন না, ‘না, বিশ্বকাপে ভালো খেলার পর আমি খুব যে মনে করেছি আকাশে ছিলাম এবং এই ম্যাচ খারাপ খেলার পর আমি মনে করেছি যে আমি মাটির তলে চলে গেছি- বিষয়টি এমন না। আমি যেখানে ছিলাম সেখানেই আছি। এখন এটা কে কিভাবে নিবে বা কে কিভাবে চিন্তা করবে এটা তাদের ব্যাপার।’
কিন্তু এমন একটা ফলাফলের পর একজন অধিনায়ক হিসেবে সাকিবের তো বেশ কিছু আত্মসমালোচনা বা আত্মশুদ্ধির জায়গা আছে। একজন অধিনায়ক হিসেবে কি এই টেস্টের পর বিসিবির কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে নিজের এই পর্যবেক্ষণগুলো জানাবেন? সাকিব যা বললেন, তাতে বোঝা গেল এই দলের অধিনায়কত্বটা একরকম জোর করেই করতে হচ্ছে তাকে, ‘অধিনায়কত্ব যদি না করতে হয় তাহলে আমার মনে হয় সবথেকে ভালো হবে আমার জন্য। আমার কাছে মনে হয় ক্রিকেটের জন্য ভালো হবে ব্যক্তিগত দিক থেকে চিন্তা করলে। আর নেতৃত্ব যদি দিতেই হয় তাহলে অবশ্যই অনেক কিছু নিয়ে আলোচনা করার ব্যাপার আছে।’
সেই আলোচনা সাকিব যত তাড়াতাড়ি করবেন ততই বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য ভালো। আপাতত সামনে টি-টোয়েন্টি, সাকিব শুধু চান দ্রুত কয়েকটা জয়। নইলে এই পরিস্থিতি থেকে বের আসা কঠিন বলে মনে করেন। ২০১৪ সালে যেরকম একটা হতাশার বছর গিয়েছিল, এই বছর নইলে সেটিকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।