• অ্যাশেজ ২০১৯
  • " />

     

    দিনটা শুধুই মার্শের হতে দিলেন না বাটলার

    দিনটা শুধুই মার্শের হতে দিলেন না বাটলার    

    ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস ২৭১/৮* (রুট ৫৭, বার্নস ৪৭, বাটলার ৬৪*; মার্শ ৪/৩৫, কামিন্স ২/৭৩, হ্যাজলউড ২/৭৬)


    পুরো সফরে মিচেল মার্শ ছিলেনে একটা সুযোগের অপেক্ষায়। ওভালে অ্যাশেজের শেষ টেস্টে এসে পেলেন সেটি, মঞ্চটা করে নিলেন নিজের। এদিন অন্য সব অস্ট্রেলিয়ান পেসারের চেয়ে বেশি মুভমেন্ট পেলেন তিনি, অন্য সব অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের তুলনায় ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের বেশি ভোগালেন তিনি। আর ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা? শুরু করলেন, ইনিংস বড় করে আসা হলো না আর তাদের। বার তিনেক জীবন পেয়েও ফিফটিকে তিন অঙ্কে নিয়ে যেতে পারেননি জো রুট। এতোকিছুর ভীড়েও ইংল্যান্ড প্রথম দিন শেষেই লড়াই থেকে ছিটকে যায়নি জস বাটলারের ওয়ানডে-স্টাইলের ব্যাটিংয়ে। জ্যাক লিচকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত ৯ম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন আছেন বাটলার, ২৭১ রানে দিন শেষ করেছে ইংল্যান্ড। 

    ওভালে টসে জিতে অস্ট্রেলিয়ার নেওয়া বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত একটু অবাকই করেছিল, রুটও বলেছিলেন টসে জিতলে ব্যাটিং নিতেন তিনি। বার্নসকে শুরুতে আম্পায়ার এলবিডব্লিউ দিলেও রিভিউ নিয়ে সেটি ওভারটার্ন করাতে পারলেন তিনি, অস্ট্রেলিয়ার শুরুটা হলো আরেকটু বেশি তিক্ত। শুরুতে একটু অনিয়মিত বাউন্স আর হালকা মুভমেন্ট পেলেন অস্ট্রলিয়ার পেসাররা, সঙ্গে জো ডেনলির উইকেট। অফস্টাম্পের বাইরের গুডলেংথের বলটায় বিশাল ড্রাইভ করতে গিয়ে এজড হয়েছিলেন ডেনলি, দ্বিতীয় স্লিপে বারতিনেকের চেষ্টায় সেটি ধরেছেন স্টিভ স্মিথ। ফিল্ডিংয়ে আজ বেশ বাজে একটা দিন গেছে অস্ট্রেলিয়ার, হয়তো সেই ক্যাচ ছিল তারই ইঙ্গিত। 

    রুট শুরু থেকেই দেখিয়েছেন ইতিবাচক মানসিকতা, সঙ্গে পেয়েছিলেন ভাগ্যের সহায়তা।  ২৪ থেকে ৩০ রানের মাঝে তিনি পেয়েছেন তিনবার জীবন-- পিটার সিডল স্কয়ার লেগে ছেড়েছেন লোপ্পা ক্যাচ, প্রথম স্লিপের ক্যাচ আগবাড়িয়ে নিতে গিয়ে ফেলেছেন টিম পেইন, তৃতীয় স্লিপের শূন্যস্থান পূরণে দ্বিতীয় স্লিপ থেকে চেষ্টা করা স্মিথের প্রয়াস হয়েছে ব্যর্থ। লাঞ্চের আগে তাই ১ উইকেট নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে। 

     

     

    রুট লাঞ্চের পর ছুঁয়েছেন ক্যারিয়ারের ৭০০০ রানের মাইলফলক, অ্যালেস্টার কুক ও শচীন টেন্ডুলকারের পর সবচেয়ে কম বয়সে। বার্নস এ সিরিজে স্মিথের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের মালিক হয়ে গেছেন, তবে ফিফটিটা এদিন করা হয়নি তার জশ হ্যাজলউডের বলে মিসহিটে শর্ট মিড-উইকেটে ধরা পড়ে, তিনি করেছেন ৪৮। প্রমোশন পেয়ে চারে উঠে এসেছিলেন স্টোকস, কামিন্সকে পরপর দুই চারে আক্রমণের ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন। মার্শের শর্ট অফ আ লেংথের বলটাকে বাউন্সার ভেবে পুল করতে গিয়ে হলেন আউটসাইড-এজড, চারে সময়টা খুব একটা সুখকর হলো না ইংল্যান্ডের গ্রীষ্মের নায়কের। 


    বুম! দিনটা শুধুই মার্শের হতে দেননি বাটলার। 


    দ্বিতীয় সেশনে অস্ট্রেলিয়ার বোলিং কাটিয়েছে প্রথম সেশনের তুলনায় ভাল সময়, মার্শ পেয়েছেন দারুণ বোলিংয়ের পুরষ্কার। তবে চা-বিরতির পর ইংল্যান্ডকে রীতিমতো চেপে ধরেছে অস্ট্রেলিয়া, ১৭০ রানে ৩ উইকেট থেকে তারা পরিণত হয়েছে ৮ উইকেটে ২২৬ রানে। ডট বলের চাপ সামলাতে পারেননি জো রুট, জনি বেইরস্টোরা। রুট ৫৭ রান করে কামিন্সের গুডলেংথ থেকে অ্যাঙ্গেল করে ভেতরের দিকে ঢোকা বলে হারিয়েছেন স্টাম্প, বেইরস্টো শিকার হয়েছেন মার্শের ভয়ঙ্কর ইনসুইঙ্গারের। প্যাডে সরাসরি গিয়ে আঘাত করেছে সেটি, রিভিউ নিয়েও এলবিডব্লিউর হাত থেকে বাঁচেননি বেইরস্টো। 

    স্যাম কারান, ক্রিস ওকস-- এ টেস্ট দিয়ে ইংল্যান্ড দলে ফেরা দুজনের সঙ্গে জফরা আর্চারও ফিরেছেন দ্রুতই। ছয় মেরে শুরু করে নিজের উপস্থিতি জানান দিয়েছিলেন কারান, কামিন্সের নো-বলে প্লাম্ব হয়ে দিনটা নিজের করে নেওয়ারও সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে একজন মার্শে এলোমেলো হয়ে গেল সব। পা-টা না নড়িয়েই ড্রাইভ করতে গিয়ে আউটসাইড-এজড হয়ে স্লিপে ক্যাচ দিলেন তিনি, আর ওকস পরে পেলেন মোটামুটি বেইরস্টো-ধরনের ইনসুইঙ্গার। তিনিও হলেন এলবিডব্লিউ। আর্চারের ব্যাটিং-প্রতিভা এ অ্যাশেজে রয়ে গেল অদেখাই, এদিন তিনি শিকার জশ হ্যাজলউডের দুর্দান্ত পারফেকশনে-- অফস্টাম্পে পড়ে একটু ভেতরের দিকে ঢুকতে ঢুকতেই বেরিয়ে যাওয়া বলে খোঁচা মারা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না যেন আর্চারের! এর আগে হ্যাজলউডকেই দুই চার মেরেছিলেন, তবে সে পর্যন্তই!

    ৮ উইকেট চলে গেছে, দিন ফুরোবার আগেই ইংল্যান্ড অল-আউট হয়ে যাবে বলেও মনে হচ্ছিল তখন। হুট করেই যেন হাজির বাটলার, তার আক্রমণাত্মক ব্যাটিং নিয়ে। আর্চারের উইকেট যাওয়ার আগেই হ্যাজলউডকে মেরেছিলেন টানা দুই চার, আর্চারের উইকেট তার অস্থিরতা বাড়িয়ে দিল যেন আরও। এরপর হ্যাজলউডকেই মারলেন টানা দুই ছয়-- প্রথমে লং-অফ দিয়ে, নিজেকে বলের লাইন থেকে সরিয়ে নিয়ে। এরপর গলফের ক্লাব ঘোরানোর মতো করে ব্যাট ঘুরিয়ে ফুললেংথ থেকে তুলে লং-অন দিয়ে। 

    সেই বোলারকেই পুল করে ছয় মেরে পূর্ণ করলেন ফিফটি। তাকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে গেলেন লিচ, দিনশেষে এই বাঁহাতি অপরাজিত ৩১ বল খেলে। দ্বিতীয় নতুন বল সঙ্গে সঙ্গেই নিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া, তবে সেটি দিয়ে আর ২ ওভার মাত্র করতে পেরেছে তারা। লায়ন ও লাবুশেন মিলে মাত্র ৫ ওভার করেছেন এদিন, পেসারদের বেশি বোলিং মানেই বেশি সময়ের ব্যাপার। নির্ধারিত ৮ ওভার বাকি থাকতেই তাই শেষ হয়ে গেছে অ্যাশেজের শেষ টেস্টের প্রথম দিনের খেলা।