• জাতীয় ক্রিকেট লিগ
  • " />

     

    হাসপাতাল-যুদ্ধের পর ইমরুলের লড়াই এবার ২২ গজে

    হাসপাতাল-যুদ্ধের পর ইমরুলের লড়াই এবার ২২ গজে    

    হঠাৎ করে দেখলে একটু চমকে যেতে পারেন। অনেকটা শুকিয়ে গেছেন। নিজেই বললেন, ওজন কমে গেছে অন্তত ছয়-সাত কেজি। অথচ গত দুই মাস কোনো প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলেননি। তবে ক্রিকেটের প্রতি নিবেদন বা কঠোর পরিশ্রম নয়, ইমরুল কায়েসের জীবনীশক্তি শুষে নিয়েছে মাঠের বাইরে অন্য এক লড়াই। এক বছর বয়সী শিশুসন্তান শোয়াইবের জন্য গত মাসখানেকের বেশি সময় ধরে ক্রিকেট থেকে বলতে গেলে দূরে ছিলেন। জাতীয় ক্রিকেট লিগে কাল ফিরেছেন অনুশীলনে, আজ মিরপুর একাডেমিতে জানালেন নিজের এই সংগ্রামের গল্প।

    মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার খবরটা পেয়েছিলেন আগস্টের শেষ সপ্তাহ। ছেলে অসুস্থ, নিয়ে যেতে হয়েছিল হাসপাতালে। শুরুতে ধারণা করা হয়েছিল ডেঙ্গু, সেরকম অনুযায়ীই চিকিৎসা ছিল। কিন্তু অবস্থা ক্রমেই জটিলতার দিকে মোড় নিতে থাকে। দেশের চিকিৎসকেরা কিছু বুঝতে পারছিলেন না, ছেলেও ঠিক ভালো হচ্ছিল না। সারা শরীরে হামের মতো র‍্যাশ উঠতে থাকে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে ইমরুল ও তার স্ত্রী ঠিক করেন, ছেলেকে বাইরে নিয়ে যাওয়া হবে। সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয় দ্রুত, ভিসার ব্যাপারে সাহায্য করেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। সেখানে নিতেই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল ইমরুল দম্পতির। কাওয়াসাকি নামে একটা জটিল রোগ হয়েছে, বাংলাদেশে যে রোগ অনেকটা বিরল। ইমরুলদের ভাগ্য ভালো, ঠিক সময়েই সিঙ্গাপুরে পৌঁছেছিলেন। এই রোগ আক্রান্ত হওয়ার সাত দিনের মধ্যে একটা ইনজেকশন দিতে হয়, ইমরুলরা পৌঁছেছিলেন শেষ দিনে। আর এক দিন দেরি হলেই শিশুর অঙ্গহানির মতো বড় বিপদ হতে পারত।

    এরপর ওখানে রেখে চিকিৎসা করা হলো। গত মাসে ঢাকায় নিয়ে আসা হলো। কিন্তু জটিলতা কমেনি এরপরও। আবার নিয়ে যেতে হয়েছে সিঙ্গাপুরে। এরপর জানা গেছে, কাওয়াসাকি রোগটা আরেক দিকে মোড় নিয়েছে। নতুন একটা রোগে আক্রান্ত হয়েছে শোয়াইব। সেটারও চিকিৎসা চলতে থাকল। ইমরুল স্বস্তিভরা কন্ঠে জানালেন, এরপর আস্তে আস্তে বিপদ কেটে গেছে। এখন ছেলে মোটামুটি সুস্থ, নিজেও তাই আবার ফিরেছেন অনুশীলনে।  ইমরুল নিজেই কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলছিলেন, এ রকম বিপদ কোনো বাবা মার হোক সেটা তিনি চান না। যার ওপর দিয়ে যায়, সেই সবচেয়ে ভালো বুঝতে পারে। সন্তানের জন্য দোয়াও চেয়েছেন সবার কাছে।

    গত মাসেই আফগানিস্তানের সঙ্গে টেস্ট সিরিজের আগে ইমরুলের কাছে ফোন এসেছিল প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীনের। তামিম না থাকায় ওপেনার হিসেবে বিকল্প খুঁজে পাচ্ছিল না বিসিবি, সেজন্যই ইমরুলকে মনে করেছিলেন। কিন্তু সন্তানের অসুস্থতায় সেই প্রস্তাবে সাড়া দেওয়ার মতো অবস্থা তখন ছিল না ইমরুলের।

    আপাতত অবশ্য বিপদ কেটে গেছে। ইমরুল আবার ফিরেছেন অনুশীলনে, সামনে জাতীয় লিগের চ্যালেঞ্জ। গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলার আর সুযোগ পাননি জাতীয় দলে। এবার আরও ফিট, আরও একাগ্র হয়ে আবার ফিরতে চান।

    আর ইমরুল যে ‘কামব্যাক’ করতে ভালোবাসেন, সেটা তো আপনি জানেনই!