• " />

     

    সেলুলয়েডে বাংলাদেশের ২০১৫ : অনেক প্রাপ্তির এক বছর

    সেলুলয়েডে বাংলাদেশের ২০১৫ : অনেক প্রাপ্তির এক বছর    

     

    রূপকথার বিশ্বকাপ!


    ‘গোজ ফর হিরো, বোল্ড’ইম! ফুল এন্ড স্ট্রেইট... দ্য বাংলাডেশ(বাংলাদেশ) টাইগারস হ্যাভ নকড দ্য ইংলিশ লায়নস আউট অব দ্য ওয়ার্ল্ড কাপ...
    ....ওয়ান অব দ্য হাইয়েস্ট পয়েন্ট ইন দ্য হিস্টোরি অব বাংলাডেশ(বাংলাদেশ) ক্রিকেট...’

     

    নাসের হুসেইনের ধারাভাষ্যেই যেন বাংলাদেশের এক ইতিহাসের বার্তা! একটা নতুন ইতিহাস! আর অনেক নতুন গল্প!

     

     প্যাঁচেভরা প্রস্তুতি!


    কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে ক'টা দিন আগেই অস্ট্রেলিয়া গিয়েছিল বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ান একাদশের সঙ্গে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলেছিল। সে দলে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা ক্রিকেটার ছিলেন হাতে গোণা, ব্রিসবেনের অ্যালান বোর্ডার মাঠে ওই দলের কাছে দুটি ম্যাচই হেরেছিল বাংলাদেশ! এরপর বিশ্বকাপের ‘অফিশিয়াল’ প্রস্তুতি ম্যাচ। পাকিস্তানের সঙ্গে নাহয় হারটা ‘অনুমিত’ই, চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে বাংলাদেশ হেরে বসলো আইরিশদের কাছেও!


    কোয়ার্টার ফাইনাল বা পরের রাউন্ডে খেলার স্বপ্নটা কি তখনও বুকপকেটে লুকিয়ে রেখেছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা?

     

    টপ অর্ডারে টপ রিয়াদ!


    সেই ২০১১ সালের এপ্রিলে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে চার নম্বরে একবার ব্যাট করেছিলেন মাহমুদুল্লাহ। সে বছরের ডিসেম্বরে পাকিস্তানের সঙ্গে তিনে নেমেছিলেন একবার। এরপর ৬ আর ৭ নম্বরেই খেলেছেন, ছিলেন ‘মিনি অলরাউন্ডার’ হয়েই! ২০১৪ সালের শেষের দিকে ঘরের মাটিতে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ওপরের দিকে সুযোগ পেলেন, তিন ম্যাচে করলেন ১, ৮২*, ৫১*। বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের সঙ্গে নামলেন চারে, ২৩ রানের বেশী করতে পারলেন না। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে নেমে গেলেন পাঁচে, এবার করলেন ২৮। স্কটল্যান্ডের সঙ্গে উঠে এলেন তিনে, এবার করলেন ৬২। আভাস দিলেন কি কিছুর?

     

    ইংল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রায় বাঁচামরার ম্যাচে মাহমুদুল্লাহ এলেন চারে। রানআউট হয়ে যখন ফিরলেন, তখন নামের পাশে নিজের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি(১০৩), বাংলাদেশের বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরি। যে ইনিংসটিই পরে তাঁকে বানিয়েছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা এক ম্যাচের নায়ক! মাহমুদুল্লাহ অ্যাডিলেড থেকে ‘ফর্ম’টা বয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন হ্যামিল্টন পর্যন্ত। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চারে নেমেই করেছিলেন ১২৮। মার্টিন গাপটিলের সেঞ্চুরিতে যা ফিকে হয়ে গিয়েছিল পরে, তবে মাহমুদুল্লাহর ব্যাট রঙ ছড়িয়েছে ঠিকই, টপ অর্ডারে!

     

     ‘হ্যাপি’ রুবেল, ‘স্যাড’ শাহাদাত!

     


    ইংল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচের পর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। নিক নাইটের এক প্রশ্নের জবাবে মাশরাফি বললেন, ‘আমাকে রুবেলের নামটা বলতে হবে। আমার মনে হয় রুবেল এখন অনেক “হ্যাপি”!’ হ্যাঁ, ‘হ্যাপি’ শব্দটাতে আলাদা একটু জোর দিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। কেন, সে প্রসঙ্গ আলাদা করে টানার দরকার নেই বোধহয়। তবে প্রসঙ্গ আসতে পারে শাহাদাত হোসেনের। ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ এক ঘটনায় জড়িয়ে মাসকয়েক কারাভোগ করেছেন এই পেসার! নতুন বছর কি শাহাদাতের জন্য কোনো ‘স্বস্তি’র বাতাস আনবে আদৌ!

     

    ‘নো’ নো

     


    বাংলাদেশী ফিল্ডাররা জানতেন। জানতেন রোহিত শর্মা। এমসিজির হাজার পঞ্চাশেক দর্শক যখন জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখলেন, জানতেন তারাও। অথবা হাজার মাইল দূরে কোনো পান দোকানের টেলিভিশন স্ক্রিনে ‘স্লো মোশনে’ রিপ্লে দেখে ক্রিকেটে জানাশোনা এক দর্শকও হয়তো জানতেন। রুবেল হোসাইনের বলটা নো বল ছিল না! শুধু জানলেন না দুই আম্পায়ার, আলীম দার আর ইয়ান গৌল্ড! রোহিত ‘বেঁচে’ গেলেন। করলেন সেঞ্চুরি। ম্যাচসেরার পুরস্কারও নিলেন। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ যাত্রার সমাপ্তি ওখানেই। সে ম্যাচের ব্যাটিং ব্যার্থতা বা আরও ‘অনেক শোধনযোগ্য ভুল’ এর বিশ্লেষণ ছাপিয়ে গেল ওই ‘নো’ বল!

     

    কতদিন পর!

     

    ৩১ মে ১৯৯৯ থেকে ১৭ এপ্রিল ২০১৫। ব্যবধানটা প্রায় ১৬ বছরের। নর্দাম্পটনের সেই স্মৃতিটাই বয়ে নিয়ে বেড়াতে হয়েছে এতদিন, টেস্ট যুগে প্রবেশ করার পর যে বাংলাদেশ কখনোই হারায়নি পাকিস্তানকে! সে ‘আক্ষেপ’টা ঘুচলো, তামিম আর মুশফিকের সেঞ্চুরিতে। একদিনের ব্যবধানে ১৬ বছর পর পাওয়া ‘স্বাদ’টা আবার পেলো বাংলাদেশ, এবার তামিম করলেন সেঞ্চুরি, মুশফিক ফিফটি। ২২ এপ্রিল, মিরপুরে তৈরী হলো আরেক ইতিহাস! এবার সৌম্য সরকারের সেঞ্চুরি, তামিমের ফিফটি আর মুশফিকের ৪৯-এ পাকিস্তান হারলো আবার! যে পাকিস্তানকে হারানোর কাহিনী বলতে ফিরে যেতে হতো সেই নর্দাম্পটনে, গত শতাব্দীতে, সেই পাকিস্তানই হলো হোয়াইটওয়াশ!

     

    খুলনায় খুনেরা!

     

    ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ, টি-টোয়েন্টিতে জয়ের পর অপেক্ষায় ছিল খুলনা, টেস্টের রোমাঞ্চ নিয়ে। সে রোমাঞ্চ দিলেন বটে, বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে, তামিম ইকবাল আর ইমরুল কায়েস। প্রায় পঞ্চাশ বছরের পুরোনো রেকর্ড ভেঙ্গে দ্বিতীয় ইনিংসে সর্বোচ্চ ওপেনিং জুটি গড়লেন দুজন। তামিম দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি পেলেন, হলেন দেশের সর্বোচ্চ টেস্ট ইনিংসের মালিক। দুজন যখন ওপেনিংয়ে নামেন, বাংলাদেশ পিছিয়ে ২৯৬ রানে। এর আগে কোনো দলের লিড ওপেনিং জুটিই শেষ করে দিয়েছেন, এমন রেকর্ড ছিল ২৬৪ রানের। তামিম-ইমরুল করেছিলেন ৩১২,পাকিস্তানের লিডের চেয়েও ১৬ রান বেশী! ইমরুল আবার আগের ইনিংসে প্রায় ৮৩ ওভার উইকেটকিপিংও করেছিলেন! দ্বিতীয় টেস্টে অবশ্য বড়সড় হারই অপেক্ষা করছিলো টাইগারদের জন্য। 

     

    প্রতীক্ষার টেস্টে বৃষ্টির বাগড়া

     

    ভারতের সঙ্গে টেস্টের শিডিউল যখন পাওয়া গেল, তখন বাংলাদেশে যাকে বলে ‘ঘোর বরষা’! প্রতিপক্ষ যখন ভারত, উপায় তো নেই আর! কিন্তু বৃষ্টি কি আর ‘ভারত’ মানে! ফতুল্লাহর খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে তাই পাঁচদিনই চললো বৃষ্টিরাজত্ব, খেলা হলো মোটে ১৮৪.২ ওভার! পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিতীয় টেস্টের জীর্ণদশা (পাকিস্তান জিতেছিল ৩২৮ রানে) যেন ফুটে উঠলো এই কয়েক ওভারেই! ভারতের ৪৬২ এর বিপরীতে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস শেষ ২৫৬ রানেই, দ্বিতীয় ইনিংসে ‘সাবধানী’ ব্যাটিংয়ে ১৫ ওভারে ২৩ রান তোলার পরই শেষ অবশ্য অনেক প্রতীক্ষার ওই টেস্ট। কারণ ওই ঘোর বরষা!

     

    মুস্তাফিজ আর মারণাস্ত্র

     

     

    পাকিস্তানের সঙ্গে টি-টোয়েন্টিতে পেয়েছিলেন মোহাম্মদ হাফিজ ও শহীদ আফ্রিদির উইকেট। মাসদুয়েক পর সাতক্ষীরার সেই তরুণকেই ভারতের সঙ্গে ওয়ানডেতে নামিয়ে দিলেন নির্বাচকরা! মুস্তাফিজ যা করলেন, তা কি আশা করেছিলেন খোদ নির্বাচকেরাই! অভিষেকেই মুস্তাফিজ পেলেন পাঁচ উইকেট! দ্বিতীয় ম্যাচে যেন ছাড়িয়ে গেলেন নিজেকেই, এবার পেলেন ছয়টি! ওয়ানডে ইতিহাসে ক্যারিয়ারের প্রথম দুই ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশী উইকেটের রেকর্ড (আগেরটি ছিল ব্রায়ান ভিটরির, ১০টি) হয়ে গেল তাঁর। শেষ ম্যাচে নিলেন ‘মাত্র’ দুইটি, বাংলাদেশও হারলো! তাতে কী, ভারতকে সিরিজ হারানো হয়ে গেছে তো মুস্তাফিজের ওই ইতিহাস গড়ার ম্যাচেই! তাঁর স্লোয়ার আর কাটারের যেন কোনোই জবাব ছিল না ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের! রবিচন্দ্রন আশ্বিন বলেছিলেন, ‘তাঁকে সামলানোর যদি কোনো উপায় না থাকে তবে আমরা কী করবো! আমরা কী তাঁকে কিডন্যাপ করতে পারি?’

     

    দক্ষিণ আফ্রিকা, তাতে কী!

     

    মুস্তাফিজ অভিষেকে ভারতকে চমকে দিয়েছিলেন, এবার কাগিসো রাবাদা চমকে দিলেন বাংলাদেশকে! দক্ষিণ আফ্রিকানদের হয়ে সেরা ওয়ানডে বোলিংয়ের রেকর্ড নয় শুধু, ওয়ানডে অভিষেকেরই সেরা বোলিং করলেন এই ডানহাতি! তবে কি বাংলাদেশের কোনো এক অস্ত্রই ফিরে এলো বুমেরাং হয়ে! নাহ্‌, প্রথম ম্যাচে পাত্তা না পাওয়া মাশরাফির দলই পরের দুই ম্যাচে পাত্তা দিলো না আফ্রিকাকে! সাত উইকেট আর নয় উইকেটে জিতলো ঢাকা ও চট্টগ্রামে! মূলত সৌম্যের ব্যাটে ভর করেই। জিতলো সিরিজ। বৃষ্টি হানা দিয়েছিল এ ওয়ানডে সিরিজেও, তবে তার চেয়েও বড় হানাটা তো দিয়েছিল আসলে বাংলাদেশই, দক্ষিণ আফ্রিকাকে!

     

    আবারও ঘোর বরষা!


    ভারতের সঙ্গে প্রথম টেস্টের চেয়ে খেলা একটু বেশীই হলো এবার। তবে চট্টগ্রামে প্রথম ইনিংসে পাওয়া লিডটা আর কাজে লাগানো গেল কই! টেস্টের অর্ধেকের বেশীই যে হারিয়ে গেল ওই ‘ঘোর বরষা’ই! ২২১ ওভার খেলা হলো, এর মধ্যে প্রাপ্তি ছিল অবশ্য মুস্তাফিজের টেস্ট অভিষেকে চার উইকেট। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে এলো দুইদল, প্রথম দিন খেলাও হলো ৮৮.১ ওভার। ওই শেষ, বাকী চারদিন যে মিরপুরে থইথই অবস্থা! তিনদিন দেখার পরই তাই টেস্টের সমাপ্তি টানলেন আম্পায়াররা, দুই দলকে ছাপিয়ে তাই আবারও জয়ী হলো ওই বৃষ্টিই!

     

    চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ‘জট’

     
    ভারতের সঙ্গে দ্বিতীয় ওয়ানডে জয়ের পর ২০০৬ সালের পর প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির টিকেট পেয়েছিল বাংলাদেশ। পেয়েছিল, কারণ, জট বেঁধেছিল ‘হতে পারে’ এমন এক ত্রিদেশীয় সিরিজ! প্রথমে সমীকরণ ছিল, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা, দুই সিরিজের একটি করে ম্যাচ জিতলেই ২০১৭ সালে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস যাত্রা নিশ্চিত বাংলাদেশের। ভারতের সঙ্গেই প্রথম দুই ওয়ানডে জিতে তাই বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা নিয়ে সংশয় ছিল না। তবে আগস্টে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে পাকিস্তান সিরিজে তৃতীয় দল হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের আগমনের ‘ইচ্ছা’ বাগড়া বাধাল! যদি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলে, তবে ভারতের সঙ্গে দুটি ম্যাচ জেতার পরেও দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে জিততে হতো একটি ম্যাচ। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জিতে বাংলাদেশ সেই জটের শেষ পাকটা খুলেই ফেলে! আর যে সিরিজ নিয়ে এত জট, সে সিরিজটা শেষ পর্যন্ত হয়েছে পাকিস্তান আর জিম্বাবুয়ের মাঝেই!

     

    নিরাপত্তা তুমি কার!

     

    কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে কটা দিন আগেই আসতে চেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া! ২০১১ সালের এক ‘পাওনা’ সিরিজের দুইটি টেস্ট খেলতে আসার কথা ছিল স্টিভেন স্মিথের দলের! নতুন অজি অধিনায়ক, ঘরের মাটিতে অদম্য বাংলাদেশ, রোমাঞ্চের আকাঙ্ক্ষা যখন ডালপালা মেলে চলেছে, তখনোই হাজির হলো বেরসিক ‘নিরাপত্তা’! জল ঢেলে দিল ক্রিকেট রোমাঞ্চে! অস্ট্রেলিয়া আসলো না, রেখে গেল অনেক প্রশ্ন। বিদায়ী বছরের সে প্রশ্নগুলোর জবাব নিশ্চয়ই মিলবে সামনের কোনো বছরে!

     

    ও বন্ধু আমার...

     

    অস্ট্রেলিয়া এলো না! বাংলাদেশ কি ক্রিকেটের জন্য নিরাপদ নয় তাহলে! জিম্বাবুয়েকে গিয়ে একবার এ কথা বলুন, আপনি আশাহত হবেন! অনেকদিনের চেনা ‘বন্ধু’তেই মিললো আশ্রয়। জিম্বাবুয়ে এলো তিন ওয়ানডে আর দুইটি টি-টোয়েন্টি খেলতে! খেলার মাঠে অবশ্য বন্ধুত্বের ‘ছাপ’ রাখেনি বাংলাদেশ, ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ হতে হলো তাই জিম্বাবুইয়ানদের। দুই টি-টোয়েন্টির একটি জিতেই যা সান্ত্বনা জুটলো তাদের!

     

    সৌম্য- দ্য ওপেনার!
     

    ওয়ানডেতে তামিম ইকবালের ‘নিয়মিত’ ওপেনিং সঙ্গীর দীর্ঘদিনের খরাটা বোধহয় ঘুচলো এবার! বিশ্বকাপে সৌম্য তিন নম্বরে খেলেছিলেন পাঁচটি ম্যাচ, ওপেনিংয়ে নেমেছিলেন স্কটল্যান্ডের সঙ্গে। পাকিস্তান সিরিজে পাকাপাকি চলে এলেন ওপেনিংয়ে। ১০ ইনিংস এ পজিশনে খেলে সৌম্যর গড় ৬২.৩৭, স্ট্রাইক রেটটাও চোখে পড়ার মতো, ১০৭.৫৪! অনেক প্রাপ্তির বছরে বোধহয় সৌম্য সরকারও একটা প্রাপ্তির নাম, এরকম স্ট্রোকমেকিং ওপেনার কি মিলে সহসাই!

     

    খুলনার ‘ক্রাউন’

     

    আন্তর্জাতিকের আলোকচ্ছটা নেই। নেই দিগ্বিদিক আলোচনার ফোয়ারা! নীরবে, নিভৃতেই তাই হয়ে যায় জাতীয় লিগ! এমনই হয়, এমনই তো হবে! ‘নিরপেক্ষ’ ভেন্যুর আজব নিয়মেই অটল ছিল বিসিবি, সেই জাতীয় লিগেই শিরোপা জিতলো খুলনা। দুই ‘টিয়ার’ এর লিগে ৫০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে ছিল খুলনা, সর্বনিম্ন ৩৮ পয়েন্ট নিয়ে আবার দ্বিতীয় ‘টিয়ার’ এ নেমে গেছে গতবারের চ্যাম্পিয়ন রংপুর। টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ রান ছিল শাহরিয়ার নাফিসের, বরিশাল ওপেনার ৭৯.৪৪ গড়ে করেছিলেন ৭১৫ রান। রাজশাহীর সানজামুল ইসলাম বাঁহাতি স্পিনে ২০.১৫ গড়ে নিয়েছিলেন ৩৯ উইকেট।

     

    আহা, প্রিমিয়ার লিগ!


    ঢাকা ফার্স্ট ডিভিশন ক্রিকেট লিগে মোসাদ্দেক ইফতেখার রাহি ১৬ ম্যাচে করেছেন ৬৫৮ রান। গড় ৫০.৬১। নুরুজ্জামান মাসুম ১৬ ম্যাচে নিয়েছেন ৪৩ উইকেট, ১০.৬৭ গড়ে। তবে খেলাঘরের ব্যাটসম্যান বা পারটেক্স স্পোর্টিংয়ের বোলার- দুজনের কেউই নিশ্চিত নন, সামনের প্রিমিয়ার লিগে দল পাবেন কিনা কেউ! পেলেও একটা ‘সুবিধাজনক’ অঙ্কের টাকা পাবেন কিনা! বিসিবি যে অটল আছে 'প্লেয়ারস বাই চয়েজ' পদ্ধতিতেই। বিসিবিই ঠিক করে দিবে, কে কোন 'ক্যাটাগরি'র, কার 'দাম' হবে কেমন। গতবার বলা হয়েছিল, এমন নিয়ম শুধু সেই মৌসুমের জন্যই। তবে আবার ক্লাবের বেড়াজালে বন্দি হলো বিসিবি, যেমন ঢাকাকেন্দ্রিক প্রিমিয়ার লিগেই বন্দি হয়ে আছে এদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট!

     

    বিপিএলের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি!

     

    মাহমুদুল্লাহর অধিনায়কত্ব, মাশরাফির অদম্য উদ্যম নাকি আবু হায়দার রনি! নাকি শেষে এসে অলক কাপালি ‘বুড়ো’ হাড়ের ভেলকি! বিপিএলের প্রাপ্তি আসলে কোনটি! নাকি সব ছাপিয়ে ‘সস্তা’ বিতর্ক, পাড়ার টুর্নামেন্ট আর দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের টুর্নামেন্টের পার্থক্য করার কষ্ট! তবে সামনের বিশ্ব টি-টোয়েন্টি যদি বিপিএল একটু হলেও কাজে লাগে বাংলাদেশের, সেটাই হবে হয়তো এর সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি!

     

    তরুণের পদধ্বনি!

     

    শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সিরিজ জিতে বছর শুরু করেছিল বাংলাদেশের যুবারা। দক্ষিণ আফ্রিকাকে ঘরের মাটিতে হারিয়েছিল ৬-১ এ। দক্ষিণ আফ্রিকাতে গিয়েও জিতেছিল ৫-২ এ। এরপর জিম্বাবুয়েকে ঘরের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ, তবে বছরের শেষে ভারতে তিনজাতির টুর্নামেন্টে ভারতের সঙ্গেই ফাইনালে হেরেছে বাংলাদেশ। যা বাদ দিলে যুবাদের জন্য সফল এক বছরই কেটেছে। তবে এই দলটার সবচেয়ে বড় পরীক্ষা সামনের বছরের শুরুতেই, ঘরের মাটির বিশ্বকাপ! ‘ছোটদের’ বড় ‘চোকার’রা কি এবার পারবে, আক্ষেপটা ঘোচাতে! সুযোগটাকে সুবর্ণ কিন্তু বলাই যায়!

     

    টি-টোয়েন্টিতে বাজিমাৎ

     

    পাকিস্তান সফরটা রীতিমত বিভীষিকা উপহার দিয়েছিল বাংলাদেশের নারীদের। জিম্বাবুয়েকে ঘরের মাটিতে হারানোর পর মূল লক্ষ্যটা আসলে ছিল থাইল্যান্ডের দিকে। সেখানেই যে হয়েছে বিশ্ব টি-টোয়েন্টির বাছাইপর্ব। ফাইনালে আইরিশদের সঙ্গে শেষ বলে গিয়ে হেরেছে বাংলাদেশ, তবে জাহানারা আলমের দল ঠিকই পেয়েছে আগামী বছর ভারতে অনুষ্ঠিতব্য দশ দলের টুর্নামেন্টের টিকেট!

     

    তোমায় নিয়েই গল্প হোক...

     

     

    ওদিকে রিভার্স সুইংটা মিস করলেন জিমি অ্যান্ডারসন, এদিকে সেখানেই শুয়ে পড়লেন তিনি, মাঠের ভেতরেই! পুরো দল গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো তাঁর ওপর! ভারটা সামলালেন কী অনায়াসেই! পুরস্কার বিতরণীতে গেলেন লাল সবুজের পতাকাটা স্কার্ফ বানিয়ে! জয়টা উৎসর্গ করলেন মুক্তিযোদ্ধাদের, আবার রুবেলকে নিয়ে মজা করতেও ভুললেন না! তাসকিনের সঙ্গে তাঁর বুকে বুক মিলিয়ে উদযাপনটা ‘ট্রেডমার্ক’ হয়ে গেছে! নাসির হোসেনকে অফস্পিনার বলে ঘোষণা দিয়েছেন, অভিষিক্ত মুস্তাফিজকেই আবার তুলে দিয়েছেন নতুন বল! কখনও কারও কপালে স্নেহের চুম্বন দিচ্ছেন, কখনওবা করছেন খুনসুটি বা মেকি রাগের ভান! তাঁকে নিয়ে গল্পের আসলে শেষ নেই! বাংলাদেশ এখন শুধু একজনের পারফরম্যান্সের ওপর নির্ভর করে না, কথাটাও ক্লিশে এখন! তবে সবাইকে এক সুতোয় বাঁধার মূল কৃতিত্বটা অবশ্যই তাঁর! তবে তাঁকে কৃতিত্ব দিতে চান, তিনি নিবেন না নিশ্চিতই!
     

    সে কারণেই তাঁকে নিয়ে হয়তো লিখতে হবে আলাদা গল্প! সে কারণেই হয়তো ২০১৫ সালের দিকে ফিরে তাকালে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা মনে মনে বলে উঠবেন, ‘আমাদের যে একজন নেতা ছিল!’

     

    হ্যাঁ, বাংলাদেশের মাশরাফি ছিল।


    ২০১৫ সালের গল্পের অনেকখানি জুড়েই থাকবেন তাই মাশরাফি বিন মুর্তজা নামের ওই মানুষটা!

     


    আরো পড়ুনঃ

    যে আগুন ছড়িয়ে গেলো সবখানে