সেই আরাফাত সানি, আবারও...
ময়মনসিংহ ক্রিকেট স্টেডিয়াম। জাতীয় লিগে ঢাকা-রাজশাহীর ম্যাচ। ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারি। প্রথম শ্রেণিতে সেবার অভিষেক হলো আরাফাত সানির। সে বছরেরই শেষে জাতীয় লিগের আরেকটি আসর, এবার ঢাকার মুখোমুখি বরিশাল। প্রথম ইনিংসে ৩২ রানে ২ উইকেট নেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৫ রানে ৫ উইকেট নিলেন সানি, বরিশালের হয়ে।
এর ১৭ বছরেরও বেশি সময় পর মিরপুরের শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে জাতীয় লিগের আরেকটি ম্যাচে তিনি খেলছেন ঢাকা মেট্রোর হয়ে, প্রতিপক্ষ চট্টগ্রাম। আরেকবার পাঁচ উইকেট পেলেন, ক্যারিয়ারের ১৮তম। সানি এদিন নিলেন ৬টি। প্রতিপক্ষ চট্টগ্রামের হয়ে প্রথমে যে চারজন বোলার এলেন- নোমান চৌধুরি, রনি চৌধুরি, মেহেদি হাসান, মিনহাজুল আবেদিন- তাদের এ ম্যাচে খেলতে নামার আগে সমম্বিত অভিজ্ঞতা ১ ম্যাচ। রনি বাদ দিয়ে তিনজনেরই অভিষেক এ ম্যাচ দিয়েই। দিনে দিনে সময়টা কম যায়নি, তবে সানি এখনও উজ্জ্বল প্রায়।
এই ১৭ বছর মিলিয়ে সানি খেলেছেন ৭৮টি ম্যাচ, সংখ্যাটা যে খুব বেশি, তা নয়। সানির মতোই সে মৌসুমে অভিষেক হওয়া আরেক বাঁহাতি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক যেমন খেলে ফেলেছেন ১২৮টি ম্যাচ, বাংলাদেশের হয়ে প্রথম শ্রেণিতে সর্বোচ্চ উইকেট তার, সেটাও প্রায় সানির ২৯৭টি উইকেটের প্রায় দ্বিগুণ। আবার দুজনেরই অ্যাকশনজনিত সমস্যাও ছিল ক্যারিয়ারের কোনও না কোনও পর্যায়ে। রাজ্জাক তবুও ১৩টি টেস্ট খেলেছেন, গত বছর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এক টেস্টের জন্য ফেরানোও হয়েছিল তাকে। সানির অভিষেক হয়নি এখনও, অদূর ভবিষ্যতে হওয়ার সম্ভাবনাও নেই খুব একটা।
তবে ঘরোয়া মৌসুমের আগে লক্ষ্য ঠিক করে নেন ঠিকই। সেরা তিন উইকেটশিকারির তালিকায় যাতে থাকতে পারেন, এমন লক্ষ্য। গতবার ৫ ম্যাচ খেলে নিয়েছিলেন ২৩ উইকেট, ছিলেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। গত মৌসুমে একবারই পেয়েছিলেন পাঁচ উইকেট বা এর বেশি, ৫৭ রানে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন ঢাকার বিপক্ষে। এর আগে শেষ ৫ উইকেট পেয়েছিলেন তিন মৌসুম আগে।
৫ উইকেট পাওয়াকে গর্বের ব্যাপার ভাবেন সানি, এবারও তার লক্ষ্য শীর্ষ তিনে থাকা, “আলহামদুলিল্লাহ, ৫ উইকেট পাওয়া গর্বের ব্যাপার। অবশ্যই খুশি আমি।”
“লক্ষ্য মৌসুম শেষে যাতে শীর্ষ তিনে থাকতে পারি, এমন লক্ষ্যই থাকে। সবচেয়ে বেশি থাকলে তো সেটি গর্বের ব্যাপার। আর বোলিংয়ের ক্ষেত্রে সেটা টি-টোয়েন্টি হোক, পঞ্চাশ ওভারের ম্যাচে হোক, দীর্ঘ সংস্করণের হোক, পরিকল্পনা থাকে। সে অনুযায়ী এগুতে চাই আরকি।”
জানালেন নিজের বোলিং পরিকল্পনার কথাও। সেটা যে অপরিচিতি বা খুব মৌলিক কিছু তাও নয়, তবে সানির সাফল্য সেখানেই, “পরিকল্পনা তো থাকে উইকেট-টু-উইকেট বোলিং করা। চারদিনের ম্যাচে বোলিং করলে আসলে অ্যাকুরেসিটা অনেক ভাল হয়। চেষ্টা করছি উইকেট-টু-উইকেট করার জন্য, হয়তো তারই ফল এই সাফল্য।”
“সবসময় অনুভব করি, চেষ্টা করি পরিকল্পনার মধ্যে থাকতে, নিজের সেরাটা দেওয়ার। দীর্ঘ সংস্করণের বাড়তি সুবিধা হচ্ছে-- এটি (সুযোগ দেয়) অ্যাকুরেসি ঠিক করার। ব্যাটসম্যানকে সামনে খেলানোর পরিকল্পনা থাকে। দীর্ঘ সংস্করণে যত বোলিং করব, ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি যেটাই বলেন, সেটা একই করছি। কিন্তু এখানে উন্নতির সুযোগ বেশি।”
সানি সেই উন্নতিটাই করতে চাচ্ছেন, আর থাকতে চাচ্ছেন মৌসুম শেষে গতবারের মতো শীর্ষ তিনে থাকতে। পারবেন তিনি? মিরপুরে এদিন প্রথম ধাপটা পেরুলেন নিশ্চিতভাবেই।