• বুন্দেসলিগা
  • " />

     

    কিক অফের আগে: ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে অস্তিত্বের খোঁজে বায়ার্ন

    কিক অফের আগে: ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে অস্তিত্বের খোঁজে বায়ার্ন    

    কবে, কখন

    বায়ার্ন মিউনিখ-বরুশিয়া ডর্টমুন্ড

    বুন্দেসলিগা ২০১৯-২০

    আলিয়াঞ্জ অ্যারেনা

    ৯ নভেম্বর; রাত ১১.৩০


    গত দশ বছরে নিজেদের সবচেয়ে বড় হার, বুন্দেসলিগা টেবিলের চার-এ নেমে যাওয়া, ম্যানেজার নিকো কোভাচকে বরখাস্ত করা- সব মিলিয়ে খুব একটা স্বস্তিতে নেই বায়ার্ন মিউনিখ। অন্যদিকে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের অবস্থা একেবারেই ভিন্ন। বুন্দেসলিগার টেবিলের দুইয়ে আছে তারা, গত সপ্তাহে দুর্দান্ত এক প্রত্যাবর্তনে হারিয়ে দিয়েছে ইন্টার মিলানকে। এই মৌসুমের প্রথম ডের ক্লাসিকোতে তাই ফেভারিট হয়তো লুসিয়ান ফাভ্রের দলই। ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে আলিয়াঞ্জ অ্যারেনাতে স্বস্তি এবং অস্তিস্ত্বের খোঁজে নামবে বায়ার্নই।

    খুব সম্ভবত গত দশকে আলিয়াঞ্জ অ্যারেনাতে এবারই সবচেয়ে ভঙ্গুর বায়ার্নকে পাচ্ছে ডর্টমুন্ড। এই মৌসুমে একেবারেই গড়পড়তা বায়ার্নের বিপরীতে চিরপরিচিত দুর্ধর্ষ ডর্টমুন্ডকে হাতছানি দিচ্ছে ৬ বছর পর আলিয়াঞ্জ অ্যারেনা থেকে জয় নিয়ে ফেরার সম্ভাবনা। ২-১, ৫-১, ৪-১, ৬-০, ৫-০। ২০১৩-১৪ মৌসুমের পর থেকে বায়ার্নের মাঠে জিততে পারেনি ডর্টমুন্ড। অস্থায়ী ম্যানেজার, ধারাবাহিকতার অভাব, নিজেদের মাঠে পয়েন্ট হারানো- সব মিলিয়ে আলিয়াঞ্জ জয়ের খরা কাটানোর এর চেয়ে দারুণ সুযোগ হয়তো পাবে না ডর্টমুন্ড।

     

     

    গত মৌসুমে ম্যাচডে ২৮-এ বায়ার্নের মাঠে ৫-০ গোলে বড় পরাজয়ে বাভারিয়ানদের কাছে শীর্ষস্থান হারায় ডর্টমুন্ড। শেষ ম্যাচের আগে ডর্টমুন্ডের চেয়ে ২ পয়েন্টে এগিয়ে ছিল বায়ার্ন, ডর্টমুন্ডের শিরোপা জিততে হলে হারতে হত বায়ার্নকে। কিন্তু আরিয়েন রোবেন-ফ্র্যাঙ্ক রিবেরির বিদায়ী ম্যাচে ফ্র্যাঙ্কফুর্টকে ৫-১ গোলে উড়িয়ে দেয় বায়ার্ন, আবারও রানার্স-আপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় ডর্টমুন্ডকে। মজার ব্যাপার হল, এই মৌসুমে সেই ফ্র্যাঙ্কফুর্টের মাঠে ৫-১ ব্যবধানে হেরেই চাকরি হারাতে হয়েছে কোভাচকে।

    লুসিয়ান ফাভ্রের দল যেখানে মার্কো রয়েসদের ছাড়াও রীতিমত উড়ছে, সেখানে এই মৌসুমের সব ম্যাচে গোল পাওয়া রবার্ট লেভানডফস্কিকে নিয়েও ধুঁকতে হচ্ছে বাভারিয়ানদের। আক্রমণ তো বটেই, অচেনা বায়ার্নের বিপক্ষে অর্ধযুগ পর ডর্টমুন্ডকে জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছে তাদের রক্ষণ। ‘ব্ল্যাক অ্যান্ড ইয়েলো’দের আক্রমণভাগের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন ছিল না কখনোই, কিন্তু ফাভ্রে সাম্প্রতিক সময়ে ডর্টমুন্ডের ‘অ্যাকিলিস হিল’কে পরিণত করেছেন দলের অন্যতম শক্তিতে। তার অধীনে গত দুই মৌসুমে লিগে খেলা প্রথম ১০ ম্যাচে ডর্টমুন্ড গোল হজম করেছে যথাক্রমে ১০টি (২০১৮-১৯) এবং ১১টি (২০১৯-২০)। গত দশ বছরে প্রথম ১০ ম্যাচে তারা এত কম গোল হজম করেনি কোনোবারই।

    শুধু ট্যাকটিক্স নয়, ডর্টমুন্ডের রক্ষণের ফর্মের পেছনে ফাভ্রের দলবদলের কৃতিত্বও কম নয় কোনো অংশে। গত দুই বছরে ডর্টমুন্ডের তিন সেন্টারব্যাক ম্যানুয়েল আকাঞ্জি, আব্দু দিয়ালো, ম্যাটস হামেলসকে দলে এনেছেন তিনিই। এই মৌসুমে ডর্টমুন্ডের হয়ে মাঠ কাঁপানো রাইটব্যাক আশরাফ হাকিমিকেও রিয়াল মাদ্রিদ থেকে ধারে এনেছিলেন ফাভ্রেই।

    পেছনে অভিজ্ঞ হামেলস-আকাঞ্জিদের অভিজ্ঞতা, এবং আক্রমণে থরগান হ্যাজার্ড-জেডন সানচোদের দুর্দান্ত ফর্ম; সব মিলিয়ে অপয়া আলিয়াঞ্জে জয়ের সব রসদই প্রস্তুত ডর্টমুন্ডের। সাথে আছে মৌসুমের শুরুতে বায়ার্নকে জার্মান সুপারকাপে হারানোর সুখস্মৃতিও।

     

     

    মৌসুমের প্রথম ডের ক্লাসিকোর আগে যখন ডর্টমুন্ডের ফুটবলাররা আছেন আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে, তখন রীতিমত নিজেদের হারিয়ে খুঁজছে বায়ার্ন। মাসখানেক আগেও টটেনহামের মাঠে ৭-২ গোলের বিশাল জয়ের পরও হয়তো এত দ্রুত চাকরি হারানোর কথা মাথায়ও আনেননি কোভাচ। কিন্তু এই মৌসুমে বায়ার্নের পারফরম্যান্স গ্রাফ যে আসলে কতটা উঁচু-নিচু, সেটা বুঝতে স্পার্সকে উড়িয়ে দেওয়ার তিন দিন পরই নিজেদের মাঠে হফেনহেইমের কাছে বায়ার্নের হারই যথেষ্ট।

    ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে ম্যাচের আগে কোভাচকে নিয়ে যত কথাই হোক, খুব সম্ভবত ডের ক্লাসিকোর আগে সবচেয়ে চাপে থাকা মানুষটির নাম হ্যান্স-ডিয়েটার ফ্লিক। ছিলেন কোভাচের সহকারী, বায়ার্নের দায়িত্বটা পেয়েছেন অস্থায়ীভাবে। কোভাচকে বরখাস্ত করার পর থেকেই নতুন ম্যানেজারের খোঁজে নেমেছে বায়ার্ন, শোনা যাচ্ছে হোসে মরিনহো, আর্সেন ওয়েঙ্গার, মাসিমিলিয়ানো আলেগ্রির মত নাম। ফ্লিক নিজেও জানেন, অল্প যে সময়টুকু বায়ার্নের অস্থায়ী ম্যানেজার হিসেবে পাচ্ছেন; তাতে সব ম্যাচ জিতলেও হয়তো পাকাপাকিভাবে হটসিটটা পাওয়া হবে না তার।

    তবে ফ্লিকের থেকে বায়ার্ন সমর্থকদের প্রত্যাশার অভাবটাই হয়তো হতে পারে তার অনুপ্রেরণার সবচেয়ে বড় উৎস। তবে যে ডর্টমুন্ডকে গত ৬ বছর ঘরের মাঠে রীতিমত দুমড়েমুচড়ে ফেলছে বায়ার্ন; সেই দলের কাছে হারলে কোভাচের চেয়ে হয়তো বেশি সমালোচনা সইতে হবে তাকে। আর ডর্টমুন্ডের সাথে ম্যাচটির গুরুত্ব-তাৎপর্য যে শুধুমাত্র তিন পয়েন্টে সীমাবদ্ধ নয়, সেটা তো পেশাদারি ফুটবলার হিসেবে বায়ার্নে পাঁচ বছর কাটানো ফ্লিকের জানা আছে ভালমতই।

     

     

    ফর্ম, ফেভারিটের তকমা- সবকিছুই ডর্টমুন্ডের পক্ষে থাকলেও ইনজুরি নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় থাকতে হচ্ছে ফাভ্রেকে। গোলরক্ষক মার্ভিন হিটজ এবং লেফটব্যাক মার্সেল স্মেলজারকে নিশ্চিতভাবে পাচ্ছেন না ডর্টমুন্ড। একই কারণে রয়েস, সানচো, হ্যাজার্ডদের প্রত্যেকের খেলা নিয়ে আছে সংশয়।

    নিকোলাস সুলে এবং নিজেদের রেকর্ড সাইনিং লুকাস হার্নান্দেজকে পাচ্ছেন না ফ্লিক। ফ্রাঙ্কফুর্টের বিপক্ষে লাল কার্ড দেখা জেরোম বোয়াটেংও না থাকায় সেন্টারব্যাক নিয়ে তাই বেশ দুশ্চিন্তায় আছেন ফ্লিক। রক্ষণের সমস্যার কারণে অলিম্পিয়াকোসের বিপক্ষে ডেভিড আলাবাকে সেন্টারব্যাক খেলিয়েছিলেন ফ্লিক, লেফটব্যাক ছিলেন তরুন আলফন্সো ডেভিস। ডর্টমুন্ডের বিপক্ষেও হয়তো একই ট্যাকটিক্স কাজে লাগাবেন বায়ার্নের অস্থায়ী ম্যানেজার। 

     

    সম্ভাব্য একাদশ

    বায়ার্ন মিউনিখ (৪-২-৩-১): নয়্যার; পাভার্ড, মার্টিনেজ, আলাবা, ডেভিস; গোরেৎস্কা, কিমিচ; কোমান, কুতিনিয়ো, গ্যানাব্রি; লেভানডফস্কি

    বরুশিয়া ডর্টমুন্ড (৪-২-৩-১): বুর্কি; পিজচেক, আকাঞ্জি, হামেলস, গুরেরো; উইটসেল, ওয়াইগেল; হাকিমি, ব্রান্ডট, হ্যাজার্ড; আলকাসের

     

    সংখ্যায় সংখ্যায়

    • ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে জোড়া গোল করলে বুন্দেসলিগার এক মৌসুমে ১১ ম্যাচ শেষে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড (জার্ড মুলার, ১৫ গোল, ১৯৬৮-৬৯) নিজের করে নেবেন রবার্ট লেভানডফস্কি

    • ২০১৭ সালের পর এবারই প্রথম বুন্দেসলিগায় টানা তিন ম্যাচে ক্লিনশিট রেখেছে ডর্টমুন্ড

    • আলিয়াঞ্জ অ্যারেনাতে শেষ চার ডের ক্লাসিকোর প্রতিটিতে ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে অন্তত চার গোল করেছে বায়ার্ন