বাংলাদেশকে মাটিতে নামিয়ে আনল ভুটান
ফুলটাইম
বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-২৩ ০-১ ভুটান অনুর্ধ্ব-২৩
এই ভুটানকেই অক্টোবরে দুইটি প্রীতি ম্যাচে মোট ৬ গোল দিয়েছিলেন বাংলাদেশ। ভুটান তখন ঢাকায় এসেছিল এসএ গেমসের প্রস্তুতি নিতে। আর বাংলাদেশ নিচ্ছিল কাতার ও ভারতের বিপক্ষে বিশ্বকাপ প্রস্তুতি। বাংলাদেশের কাছে হারের পর ভুটান কোচ মাঠের দুরবস্থাকে দায়ী করে বলেছিলেন তার দল এর চেয়ে ভালো খেলতে পারে। দুই মাসের মাথায় নিজের কথার প্রমাণ রাখলেন ভদ্রলোক। তাতে ডাগ আউটের অন্যপাশের ব্রিটিশ ভদ্রলোক পেলেন তার বাংলাদেশ ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে ফল।
বাংলাদেশকে মাটিতে নামিয়ে এনেছে ভুটান। এসএ গেমসের শুরুটা এর চেয়ে বাজেভাবে আর হতে পারত না বাংলাদেশের জন্য। ভুটানের কাছে প্রথম ম্যাচ হেরেই বাংলাদেশের ফুটবলে সোনা জয়ের স্বপ্নে বড় আঘাত লাগল। তার চেয়েও বড় ক্ষত সৃষ্টি হলো ভুটানের কাছে হারে। জেমি ডে নিশ্চয়ই এমন কিছুর ভয় করেননি।
বাংলাদেশের সর্বনাশ ডেকে এনেছেন সেই চেনচো গেইলশেন। ৬৪ মিনিটে তার করা গোলেই নির্ধারণ হয়েছে ম্যাচের ভাগ্য। এর আগে ২০১৬ সালে বাংলাদেশেকে ৩-১ গোলে হারানোর ম্যাচেও চেনচো করেছিলেন জোড়া গোল। পুরনো ঘাতকের হাতেই তাই আরও একবার আহত বাংলাদেশ।
নেপালের দশরথ স্টেডিয়ামে শুরু থেকে শেষ- এক মুহুর্তের জন্যও স্বস্তি পায়নি বাংলাদেশ। ভুটান খুব যে বেশি আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছে তাও নয়। অবশ্য বাংলাদেশের অবস্থা আরও দৃষ্টিকটু। ভুটানের বিপক্ষে বল পজেশন ধরে রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল বাংলাদেশকে। অথচ বাংলাদেশ এসএ গেমসে খেলতে গেছে প্রায় জাতীয় দল নিয়েই।
রবিউল হাসান এদিন একাদশে ছিলেন শুরু থেকেই। ভুটানের গোলে প্রথম শটটা করেছিলেন তিনি। অবশ্য ১৫ মিনিটে করা তার শট চলে যায় অনেক ওপর দিয়ে। চেনচো শুরু থেকেই বাংলাদেশের ডিফেন্ডারদের অস্থির করে রেখেছিলেন। যদিও প্রথমার্ধে বাংলাদেশের রক্ষণে সেভাবে আর ভীতি সঞ্চার করতে পারেনি ভুটান।
ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আফসোস হবে সাদ উদ্দিনের মিসটা। ৩৮ মিনিটে সাদ ভুল না করলে লিড চলে যেত বাংলাদেশই। কে জানে, তাহলে হয়ত ভুটানের আর ফেরার সুযোগটাই থাকত না! ডান দিক থেকে আসা ক্রস থেকে হেডটা লক্ষ্যে রাখতে পারলেই গোল পেয়ে যেতেন সাদ। বক্সের ভেতর একেবারে ফাঁকায় ছিলেন তিনি, কিন্তু এবার আর পারলেন না। হেড মারলেন বাইরে দিয়ে।
বিরতির সময় তাই বাংলাদেশের সঙ্গী হলো এক রাশ হতাশা। সেটা অবশ্য কয়েক গুণ বেড়েছে পরের অর্ধ শেষে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই সতর্কবার্তা দিয়ে রেখেছিল ভুটান। সাজানো এক আক্রমণের পর ভুটানের ফুব থিনলে তখন বল মেরেছিলেন বাইরে দিয়ে। গোল করার এক মিনিট আগেও আরেকবার বার্তা পাঠিয়েছিলেন চেনচো। তখন ভুটান অধিনায়কের দারুণ প্রচেষ্টা ঠেকিয়ে দেন আনিসুর রহমান জিকো।
৬৪ মিনিটে চেনচো সেই জিকোর দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে বল মেরেই গোল করেছেন। এর পর বাংলাদেশের ওপর চাপ বেড়েছে দ্বিগুণ। এমনিতেও পুরো ম্যাচে নড়বড়ে ছিলেন জামালরা, বাকি সময়েও তাই অবস্থা বদলায়নি বাংলাদেশের। ৬৯ মিনিটে অবশ্য দারুণ একটু সুযোগও হাতছাড়া হয়, শেষদিকে বদলি নামা রাকিব হোসেনও সমতায় ফেরাতে পারতেন- কোনোবারই সুযোগ কাজে লাগানো হয়নি বাংলাদেশের। উলটো বাংলাদেশের গ্লানি আরও বাড়তে পারত শেষদিকে। বিশ্বনাথ ঘোষ গোল ঠেকাতে গিয়ে প্রায় নিজের জালেই বল ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। অল্পের জন্য তখন বাইরে দিয়ে গেছে বিশ্বনাথের ক্লিয়ার করা বল।
এমন হারের পরও অবশ্য দম ফেলার সময় নেই বাংলাদেশের। আগামীকাল বিকাল ৫.১৫ তে একই মাঠে মালদ্বীপের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে ভুটানের কাছে হারের পর দলের কাছ থেকে আপনি কী প্রত্যাশা করবেন সেটা নিয়ে নতুন করে সংশয় সৃষ্টি হওয়ার কথা আপনার মনে। সোনা জয় দূরে থাক, আপাতত পদক পাওয়াও তো অনেক দূরের পথ বাংলাদেশের জন্য।
বাংলাদেশ একাদশ
আনিসুর রহমান, বিশ্বনাথ ঘোষ, ইয়াসিন খান, রিয়াদুল হাসান, রহমত মিয়া, জামাল ভূঁইয়া, বিপলু আহমেদ, সাদ উদ্দিন, রবিউল হাসান, বিপলু আহমেদ, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, নাবিব নেওয়াজ জীবন