• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    হতাশার রেকর্ড এড়াতে পারলেন না মরিনহো

    হতাশার রেকর্ড এড়াতে পারলেন না মরিনহো    

    ফুলটাইম

    লাইপজিগ ৩ - ০ টটেনহাম


    টানা তৃতীয়বার চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোল থেকে বিদায় নিলেন হোসে মরিনহো। আর  লাইপজিগ কোচ তাতে বনে গেলেন চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে তরুণতম কোচ হিসেবে নক আউট পর্বের টাই জয়ী কোচ। ৩২ বছর বয়সে জুলিয়েন নাইগেলসমান গড়েছেন এই রেকর্ড। মাঠে রীতিমত তার দলের কাছে নাজেহাল হয়ে হেরেছে টটেনহাম হটস্পার। স্বাগতিক অধিনায়ক মার্সেল সাবিটজারের প্রথমার্ধে জোড়া গোল এবং শেষ দিকে এমিল ফর্সবার্গের গোলে টটেনহামকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে লাইপজিগ। দুই লেগে মিলিয়ে টাইয়ে ৪-০ তে হেরে গত বারের ফাইনালিস্ট টটেনহামের যাত্রা এবার শেষ হয়েছে দ্বিতীয় রাউন্ডেই।

    রাতের অন্য ম্যাচে ভ্যালেন্সিয়াকে তাদের মাঠে ৪-৩ গোলে হারিয়ে দুই লেগ মিলে ৮-৪ গোলে এগিয়ে থেকে আটালান্টাও প্রথমবারের মতো উঠে গেছে চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে। তাদের রেকর্ডটা অবশ্য আরেকটু চটকদার। প্রথমবার চ্যাম্পিয়নস লিগে অংশ নিয়েই শেষ ৮ নিশ্চিত করেছে তারা। সবশেষ লেস্টার সিটি ২০১৬-১৭ মৌসুমে করেছিল এমনটা।  

    চোট জর্জর দল নিয়ে লাইপজিগের বিমানে উঠেছিলেন মরিনহো। মূল দুই ফরোয়ার্ড হ্যারি কেইন এবং সন হিউন মিন তো আগেই হারিয়েছিলেন, রেড বুল অ্যারেনায় মাঠে নামার আগে আরেক ফরোয়ার্ড স্টিভেন বার্গউইন এবং ডিফেন্ডার ডাভিনসন সানচেজও চোটের কারণে ছিটকে গেছেন। দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের চোট সমস্যার কারণে প্রথম লেগের পরই মরিনহো বলেছিলেন, টটেনহামের অবস্থা এখন অনেকটা ‘গুলি বিহীন বন্দুকে’র মতো। 

    লাইপজিগের বিপক্ষে দ্বিতীয় লেগে মাঠেও তাই দেখা গেল। মাঝে মাঝে ভালো জায়গায় বল পেলেও তা কাজে লাগিয়ে গোল করার মতো খেলোয়াড় ছিল না মরিনহোর কাছে। নিথর আক্রমনভাগের কারণে রক্ষণের উপর স্বাভাবিকভাবেই চাপ বেড়ে গিয়েছে। সেই চাপের মুখে ভেঙ্গে পড়তে বেশি সময় লাগেনি রক্ষণের। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে শেষ ছয় ম্যাচে মরিনহোর টটেনহাম কোনও জয় পায়নি। ম্যানেজার হিসেবে এর আগে টানা ছয় ম্যাচে কখনও জয় বঞ্চিত ছিলেন না মরিনহো। তবে লাইপজিগ ম্যানেজার ইউলিয়ান নাগেলসমানের জন্য দিনটি ছিল বিশেষ। সবচেয়ে কম বয়সী ম্যানেজার হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগ নকআউট টাই জিতে পরের রাউন্ডে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি।


    ম্যাচের প্রথম কয়েক মিনিটেই অবশ্য কিছুটা ঝলক দেখা গিয়েছিল টটেনহামের, দ্রুত ক্লোজিং ডাউন করে লাইপজিগকে প্রথম সাত-আট মিনিট তাদের অর্ধেই আটকে রাখে টটেনহাম। তবে এরপর থেকে ম্যাচের গল্প লিখেছে শুধুই লাইপজিগ। শুরুর কিছুক্ষণ টটেনহামের আড়ালে থাকার পর ম্যাচের গতি-প্রকৃতি বুঝে নিতে খুব বেশি সময় প্রয়োজন হয়নি নাগেলসমানের দলের। দ্রুত প্রতি আক্রমণে উঠে এবং মধ্যমাঠে সূক্ষ্ম পাসিং দিয়ে প্রথমার্ধের বাকিটা সময় শুধুই টটেনহামের বক্সে আতঙ্ক ছড়িয়েছে স্বাগতিকরা।

    ম্যাচে সফরকারীরা প্রথম দুটি গোলই হজম করেছে গোলরক্ষক উগো লরিসের ভুলে। ম্যাচের ১০ মিনিটে ভের্নারের শট পাঞ্চ করে আবারও তার পায়েই তুলে দেন লরিস। সেখান থেকে বক্সের বাইরে সাবিটজারের দিকে স্কয়ার পাস করেন ভের্নার। ডান পায়ের সরাসরি শটে বটম কর্নারে বল পাঠিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন সাবিটজার। মাঝারিমানের সেই শট ঠেকানো উচিৎ ছিল লরিসের, তবে ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়লেও তার হাত গলে বল জালে জড়িয়ে যায়। 

    দ্বিতীয় গোলে লরিসের ভুলটা ছিল আরও দৃষ্টিকটু। বাম দিক থেকে অ্যাঞ্জেলিনো নিখুঁত ক্রস করেন ছয় মিটার বক্সের ভেতর, সেই ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে কাছের পোস্টে রাখেন সাবিটজার। আবারও ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে হাত দিয়ে পোস্টের দিকে বল ঠেলে দেন লরিস, তবে পোস্টে লেগে বল আশ্রয় নেয় জালের ভেতরে। প্রথমার্ধের ২১ মিনিটের মাঝে ২ গোল হজম করে টাই থেকে টটেনহাম তখনই ছিটকে গেছে। এই দুই গোলের মাঝে অবশ্য আরও একবার বল জালে পাঠিয়েছিল লাইপজিগ, তবে ভের্নার অফসাইড পজিশনে থাকায় বাতিল হয় সেই গোল।

    দ্বিতীয়ার্ধে বল দখলের দিক দিয়ে লাইপজিগের চেয়ে কিছুটা এগিয়ে ছিল টটেনহাম। তবে ফাইনাল থার্ডে গিয়ে এলোমেলো পাসিং আর একজন জাত গোল স্কোরারের অভাব ভুগিয়েছে তাদের। ম্যাচের দুই অর্ধে একটি করে মোটে ২ টি শট লক্ষ্যে রাখতে পেরেছে। টটেনহাম গোলমুখ খুলতে না পারলেও লাইপজিগ কিন্তু থেমে থাকেনি। ৮৭ মিনিটে বক্সের ভেতর জটলা থেকে ট্যাপ ইন ফিনিশে টটেনহামের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকেছেন বদলি হিসেবে নামা ফর্সবার্গ। প্রথমাবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা লাইপজিগ এখন লক্ষ্যটা আরও বড় করতেই পারে।

    লাইপজিগ

    গুলাকসি, ক্লস্টারমান, উপামেকানো, হলস্টেনবার্গ, মুকিয়েলে, লাইমার, সাবিটজার, টাসেন্দে, এনকুনকু, শিক, ভের্নার

    টটেনহাম

    লরিস, টাঙ্গাঙ্গা, অল্ডারভেইরেল্ড, সেসেনয়োন, অরিয়ের, উইঙ্কস, ডায়ার, লো সেলসো, লুকাস, ডেলে, লামেলা