• " />

     

    ছেচল্লিশ পেরিয়েও!

    ছেচল্লিশ পেরিয়েও!    

    বয়স কী অদ্ভুত একটি ব্যাপার! আজ থেকে দশ বছর আগে আপনি যে কাজ করতেন, এখন কি করতে পারেন তার সবগুলোই? শৈশব, কৈশোর, যৌবন, বার্ধক্য- বয়সের কত রুপ! বাংলায় একটা কথা আছে, ‘চল্লিশে চালশে’! মানে চল্লিশ হয়ে গেছে, গুটিয়ে নাও। একবার গিয়ে ব্র্যাড হগকে বলুন না এ কথা!

    ৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১ সালে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়াতে জন্মেছিলেন স্লো লেফট আর্ম চায়নাম্যান এই বোলার। আজ ৪৬ পূর্ণ করছেন, কিন্তু ক্রিকেটটা খেলে যাচ্ছেন এখনও! 

     

    বাবার সাথে, ছেলের সাথে

    ফেব্রুয়ারি ২,১৯৯৪। ব্র্যাড হগের প্রথম শ্রেণির অভিষেক। ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ছয় নম্বরে স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে। সে ম্যাচে তাঁর সতীর্থ ছিলেন জাস্টিন ল্যাঙ্গার, ড্যামিয়েন মার্টিন, টম মুডি, স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল। ছিলেন আরও একজন, জিওফ মার্শ। এরও ২১ বছর পর। বিগ ব্যাশ লিগের ফাইনাল। ব্র্যাড হগের সতীর্থ অ্যাডাম ভোজেস, অ্যাশটন অ্যাগার, ন্যাথান কোলটার নাইল। ছিলেন আরেকজন। জিওফ মার্শের ছেলে, শন মার্শ!

     

    সবাই যখন

    ১৯৯৬ সালে দিল্লী টেস্টে হগের অভিষেক। সেই টেস্টের বাকী দশ সতীর্থের পাঁচজন এখন ধারাভাষ্যকার, একজন আইসিসির এলিট প্যানেল আম্পায়ার, একজন জাতীয় নির্বাচক, বাকি দুইজন দাতব্য সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। আর হগি?

    আহা, টি-টোয়েন্টি খেলতে হবে যে!

     

    বয়স যখন রেকর্ড

    উইলফ্রেড রোডস টেস্ট খেলেছিলেন ৫২ বছর ১৬৫ দিন বয়সে। নোলান ক্লার্ক ওয়ানডে খেলতে নেমেছিলেন ৪৭ বছর ২৫৭ দিন বয়সে। টি-টোয়েন্টিতে রেকর্ডটা ছিল একসময় ব্র্যাড হগের। ২০১৪ সালে বাংলাদেশে আইসিসি ওয়ার্ল্ড টি-২০ তে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতে নামার সময় তাঁর বয়স ছিল পাক্কা ৪৩ বছর ৪৫ দিন! পরে অবশ্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের মোহাম্মদ তৌকির ভেঙ্গে দিয়েছেন সে রেকর্ড।

     

    'কিস' ব্যান্ডের গায়ক জেনে ডেমনের আদলে সাজ! 

     

     

    হগি উবাচ...

    ২০০৮ সালের নিউজিল্যান্ড সফর। মাইকেল হাসির সঙ্গে ব্র্যাড হগ গাড়িতে করে যাচ্ছেন টিম হোটেলে। মাঠের পর মাঠ শুধু ভেড়ার পাল। হগ বলে উঠলেন, “খোদা, এরা পোর্ক (শুকরের মাংস) নিশ্চয়ই অনেক ভালবাসে (মানে,এত ভেড়া কেন? খালি বোধহয় পোর্কই খায় এরা!)”

    ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলছেন হগ। দলের সময়টা ভাল যাচ্ছে না। চুপচাপ বসে আছে সবাই। কেউ একজন বলে উঠলেন, “হোয়েন দি গোইং গেটস টাফ, দি টাফ গেটস গোয়িং।“

    হগ উত্তর দিলেন, ‘ইফ ইউ ক্যান্ট হ্যান্ডল দ্য ইচ, গেট আউট অফ দ্য হে স্ট্যাক।’ 'সঙ্গত' কারণেই বাক্য দুটির অনুবাদ করা হয়নি! 

     

    এ শুধু টি-টোয়েন্টি

    ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়াকে যদি পার্থ স্কর্চারস থেকে আলাদা করা হয়, তাহলে হগ আটটি ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগে খেলেছেন, সাতটি দেশে। ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়াল লিগ, ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ, শ্রীলঙ্কা প্রিমিয়ার লিগ, ফ্রেইন্ডস লাইফ টি-২০, র‍্যাম স্ল্যাম, বিগ ব্যাশ।

     

    অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি জার্সিতে

     

    বিদায় বলার আর জায়গা পেলেন না!

    ২০০৮ সালে অ্যালান বোর্ডার মেডেলের অনুষ্ঠান। হগ অস্ট্রেলিয়ান কর্মকর্তাদের বলে বসলেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আর নয়। এরপর অবশ্য চালিয়ে গেছেন ঘরোয়া ক্রিকেট, গত ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টিতে তো আন্তর্জাতিকেও ফিরে এলেন। এ বিশ্বকাপ? নামটা ব্র্যাড হগ বলেই আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন না, কখনোই!

     

    এখনই বিদায় নয়!

    ‘পার্থ স্কোর্চার্স ও বিবিএল এর পঞ্চম আসরকে বিদায় বলার সময় এসেছে। অসাধারণ কিছু মানুষকে নিয়ে গড়া একটা দলের সঙ্গে আরও একটা আসর কাটলো। আপনি কিছু জিতবেন, কিছু হারবেন। যা করতে পারেন তা হলো, পরিশ্রম করে যাওয়া আর আশা করে যাওয়া, পরের বছর এর চেয়ে ভাল কিছু হবে!’

    ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন ব্র্যাড হগ, পার্থ বিগ ব্যাশ থেকে বিদায় নেয়ার পর। তবে কি ক্রিকেটকে একেবারেই বিদায় বলে দিলেন এবার?

    ‘নিশ্চিত করার জন্য বলছি, আমি অবসর নিইনি। বিবিএলের এবারের আসরকেই শুধু বিদায় জানিয়েছি আর মাস্টার্স চ্যাম্পিয়ন্স লিগকে স্বাগত জানিয়েছি। সঙ্গে থাকুন, আরও ক্রিকেট আসছে!’

    পরের পোস্টেই হগ খোলাসা করেছেন সব! খেলছেনও মাস্টার্স টি-টোয়েন্টি লিগে।

     

    তবে আর কত?

    হগ কি থামবেন? নাকি খেলবেন পরের মৌসুমের বিগ-ব্যাশেও? হগের আগে বলা কথাটাই আরেকবার জেনে রাখতে পারেন, ‘আমার ক্যারিয়ারটা অসাধারণ। মার্শদের দুই প্রজন্মের সঙ্গে আমি খেলেছি। পঞ্চাশ পূর্ণ করা পর্যন্ত খেলার জন্য আমি প্রস্তুত। আর পারফরম্যান্স তেমন হলে কে জানে, ষাট পর্যন্তও খেলতে পারি!

    ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে অভিষেক হয়েছিল স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে। পার্থে এসে হয়ে গিয়েছিলেন পেসার, আর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলেছেন বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার হিসেবে। ক্রিকেটের বাইরেও বিচিত্র রকমের কাজ করেছেন তিনি। কখনও কৃষক, কখনও আবার পোস্টম্যান। কখনো হয়ে গেছেন গ্রাউন্ডসম্যান, কখনো কমেন্ট্রেটর। কখনো আবার ব্যাবসার ‘ডেভলপমেন্ট ম্যানেজার’!

    তা যত কাজই করুন না কেন, ক্রিকেট খেলাটা এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন।

    ব্র্যাড হগকে দেখেই হয়তো বয়সকে ভেংচি কাটার সাহস পান অনেকজন!