• ফুটবল, অন্যান্য
  • " />

     

    ফুটবলের বিখ্যাত '১০ ব্রাদারহুড'

    ফুটবলের বিখ্যাত '১০ ব্রাদারহুড'    

    ফুটবলে বিভিন্ন সময়ে বেশকিছু সহোদর জুটি এসেছে। কখনো তারা একই ক্লাবে, একেই দেশের হয়ে খেলেছেন। কখনো আবার একে অপরের বিপক্ষে খেলতে হয়েছে তাদের। প্রতিভা আর ভাগ্যের মিশ্রণে এক ভাই হয়ত অন্যজনকে ছাড়িয়ে গেছেন সাফল্যের দিক দিয়ে, কখনো আবার সাফল্যের শিখর ছুঁয়ে দেখেছেন একে অন্যের কাঁধে হাত রেখে। তেমন ১০ ফুটবলীয় ভাইদের কাহিনী দিয়েই সাজানো হয়েছে  এই লেখা।

     

    ইডেন হ্যাজার্ড - থরগান হ্যাজার্ড

    হ্যাজার্ড ভাইদের গল্পের শুরুটা তাদের বাবা-মার পায়ে। ইডেন এবং থরয়ান হ্যাজার্ডের মা ক্যারিন বেলজিয়ামে মেয়েদের ফুটবলে প্রথম বিভাগে স্ট্রাইকার হিসেবে খেলতেন, আর বাবা থিয়েরি বেলজিয়ান দ্বিতীয় বিভাগ ক্লাব লা লুভিয়েরের হয়ে ২০০৯ সালে অবসর নেওয়ার আগ পর্যন্ত ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে খেলেছেন।


    স্বাভাবিকভাবেই তাই চার ছেলের সবাইকেই ফুটবলার বানিয়েছেন থিয়েরি এবং ক্যারিন দম্পতি। বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার হিসেবে এখন রিয়াল মাদ্রিদে খেলছেন ইডেন হ্যাজার্ড, আর বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে নিয়মিত আলো ছড়াচ্ছেন থরয়ান হ্যাজার্ড। ছোট দুই ভাই কিলিয়ান এবং ইথানও ফুটবলের সঙ্গে যুক্ত। একসাথে চেলসিতে ইডেন হ্যাজার্ডের সঙ্গে থাকা কিলিয়ান পরবর্তীতে বেলজিয়ান ক্লাব সার্কেল ব্রুজের হয়েও খেলেছেন।

     

    মাইকেল লাউড্রপ - ব্রায়ান লাউড্রপ

    ভাইদের মধ্যে প্রায় সমানতালে পাল্লা দেওয়াদের সংখ্যা বেশি নয়। তবে লাউড্রপ ভাইদের দুজনকে ধরা যায় ব্যতিক্রম হিসেবে।


    গোল্ডেন প্লেয়ার অফ ডেনমার্ক পুরস্কার জিতেছেন এবং গত ৫০ বছর সেরা ড্যানিশ ফুটবলার হয়েছেন মাইকেল । আর ব্রায়ান  রেকর্ড চারবার ড্যানিশ প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ারের পুরস্কার জিতেছেন। দুই ভাইয়ের যৌথ ট্রফি ক্যাবিনেটও বেশ ঈর্ষণীয়। দুটি চ্যাম্পিয়নস লিগ, দুটি সিরি আ শিরোপা এবং পাঁচটি লা লিগা শিরোপা জিতেছেন তারা দুজন। জাতীয় দলের হয়েও সমানভাবে আলো ছড়িয়েছেন লাউড্রপ ভ্রাতৃদ্বয়। ব্রায়ান ১৯৯২ সালের ইউরোজয়ী ডেনমার্ক দলের সদস্য ছিলেন আর দুই ভাই মিলে ১৯৯৫ সালে ডেনমার্কের কনফেডারেশনস কাপ জয়ে ভূমিকা রেখেছিলেন।

     

    রোনাল্ড কোম্যান - আরউইন কোম্যান

    ‘কোম্যান ব্রাদার্সে’র মাঝে ছোট ভাই রোনাল্ড কোম্যান সাফল্যের দিক দিয়ে আরউইনের চেয়ে বেশ এগিয়ে ছিলেন। ইউরোপের বেশ কিছু নামকরা ক্লাবের হয়ে মাঠ মাতিয়েছেন রোনাল্ড, অপরদিকে আরউইন পেশাদার ক্যারিয়ারের পুরোটাই কাটিয়েছেন নেদারল্যান্ডসে। তবে ১৯৮৮ সালে নেদারল্যান্ডসের ইউরোজয়ী দলে দুই ভাই একসঙ্গে খেলেছেন। কোম্যানদের বাবা মার্টিন কোম্যানও ফুটবল খেলতেন, ডিফেন্ডার হিসেবে ডাচ লিগে খেলেছেন দীর্ঘদিন, জাতীয় দলের হয়েও একটি ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি।


    গ্যারি নেভিল - ফিল নেভিল

    ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিখ্যাত অ্যাকাডেমি থেকে উঠে আসা নেভিল ভ্রাতৃদ্বয় ছিলেন ক্লাস অফ ‘৯২-র অন্যতম দুই সদস্য। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের আমলে দুজনেই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন তারা।


    দুই ভাই মিলে ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের অধিকাংশ নিজেদের নাম করেছেন। দুই ভাই মিলে প্রিমিয়ার লিগ জিতেছেন মোট আটটি, তিনটি এফএ কাপ এবং দুটি লিগ কাপও জিতেছেন (লিগ কাপ দুটিই গ্যারি নেভিলের জয় করা), সঙ্গে দুজনই একবার করে চ্যাম্পিয়নস লিগও জিতেছেন। গ্যারি ক্যারিয়ারের পুরোটা ইউনাইটেডে কাটালেও ফিল ক্যারিয়ারের প্রায় অর্ধেকটা সময় খেলেছেন এভারটনের হয়ে।

     

    ইয়ায়া তৌরে - কোলো তৌরে

    ইয়ায়া তৌরে এবং কোলো তৌরেকে আফ্রিকান ফুটবলের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভাইয়ের খেতাব দেওয়া যায় নির্দ্বিধায়। নিজেদের সময়ে ইউরোপীয় ফুটবল দাপিয়ে বেড়িয়েছেন দুজনই। ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে দুজন একসঙ্গেও খেলেছেন। বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে খেলে দুজন সাফল্যও পেয়েছেন বেশ, তবে ছোট ভাই ইয়ায়া তৌরে কিছুটা এগিয়ে থাকবেন। চারবার আফ্রিকার বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কারের সঙ্গে ম্যানচেস্টার সিটি এবং বার্সেলোনা পাঁচটি লিগ শিরোপাও জিতেছেন তিনি। 


    তবে কোলো তৌরেও খুব বেশি পিছিয়ে ছিলেন না। আর্সেন ওয়েঙ্গারের বিখ্যাত ইনভিন্সিবলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি, আর ২০১২ সালে ম্যান সিটির হয়ে লিগও জিতেছেন। দুই ভাই মিলে ২০১৫ সালে আইভরি কোস্টকে আফ্রিকান ন্যাশনস কাপের শিরোপাও এনে দিয়েছেন।

     

    ফিলিপো ইনযাঘি - সিমোন ইনযাঘি

    ফিলিপো এবং সিমোন ইনযাঘির দুজনই বেশ প্রতিভাবান ফুটবলার ছিলেন। কিন্তু ক্যারিয়ারের হিসেবে সিমোনের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে ছিলেন ফিলিপো। ফিনিশার হিসেবে এবং ‘পোচার’ স্ট্রাইকার হিসেবে নিজের সময়ে সেরার তকমা হরহামেশাই পেতেন ফিলিপো ইনযাঘি, চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতাদের তালিকার চারে আছেন এখনো। ক্লাব এবং দেশের হয়ে ৩০০ গোল করা ফিলিপো ইনযাঘি তিনবার সিরি আ, দুবার চ্যাম্পিয়নস লিগ এবং একবার বিশ্বকাপও জয় করেছেন।


    ২৩ বছর বয়সে লাৎসিও-তে যোগ দেওয়ার পর ইউরোপীয় ফুটবলে রীতিমত শোরগোল তুলেছিলেন সিমোন ইনযাঘি। মার্শেইর বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের এক ম্যাচে ৪ গোল করে মার্কো ফন বাস্তেনের রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছিলেন তিনি। লাৎসিও-তে শুরুর দিকে তার উড়ন্ত ফর্মের বদৌলতে জাতীয় দলেও ডাক পেয়েছিলেন, তবে কিনা এরপরে আর জ্বলে উঠতে পারেননি সিমোন। ক্যারিয়ার গ্রাফ এরপর শুধুই নিচের দিকে নেমেছে, ১৪ বছরের ক্যারিয়ারে মাত্র ২৪০ বার মাঠে নামার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি।

     

    ডিয়েগো মিলিতো - গ্যাব্রিয়েল মিলিতো

    ডিয়েগো এবং গ্যাব্রিয়েল মিলিতো দুজনই ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন রিয়াল জারাগোজার হয়ে। এরপর দুই বড় ক্লাবের উদ্দেশ্যে জারাগোজা ছেড়েছেন। ২০০৯ সালে ইন্টার মিলানে যোগ দিয়েছিলেন ডিয়েগো। ইন্টারের বিখ্যাত ‘ট্রেবল’ জেতা মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে জোড়া গোল করেছিলেন ডিয়েগো মিলিতো। ২০১০ সালে ইউয়েফা ক্লাব ফুটবলার অফ দ্য ইয়ারের পুরস্কার জিতেছিলেন তিনি। আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়েও স্ট্রাইকার হিসেবে ২৫ ম্যাচ খেলেছেন ডিয়েগো মিলিতো, তবে অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক ফ্রন্টলাইনে খেলে খুব একটা আলো ছড়াতে পারেননি তিনি।


    গ্যাব্রিয়েল মিলিতো জারাগোজা থেকে আরেক স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনায় পাড়ি জমিয়েছিলেন। কাতালান ক্লাবটির হয়ে ৭৫ ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি, তবে নিয়মিত না খেললেও দুটি লা লিগা এবং দুটি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ঠিকই নামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল তার। আর্জেন্টিনার হয়ে ডিয়েগোর চেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন গ্যাব্রিয়েল মিলিতো, ৪২ ম্যাচে লা আলবিসেলেস্তেদের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। ২০০২ সালে আর্জেন্টাইন প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ারের পুরস্কারও জিতেছিলেন তিনি।

     

    ফ্র্যাঙ্ক ডি বোর - রোনাল্ড ডি বোর

    ফুটবলের সবচেয়ে জনপ্রিয় সহোদর জুটির একটি ‘ডি বোর ব্রাদার্স’। জমজ দুই ভাই ফ্র্যাঙ্ক এবং রোনাল্ড ক্যারিয়ারের বড় একটি সময় একসঙ্গে খেলেছেন। আয়াক্স, বার্সেলোনা, রেঞ্জার্স, আল-রাইয়ান এবং আল-শামালের হয়ে একসাথে খেলেছেন তারা। আর সেই সুবাদে দুই ভাই ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ ট্রফিও একসাথেই জিতেছেন, যার মাঝে রয়েছে ৫ টি এরেডিভিসি লিগ শিরোপা, ১ টি লা লিগা, ১ টি চ্যাম্পিয়নস লিগ, ৩ টি ইয়োহান ক্রুইফ কাপ, আয়াক্সের হয়ে একটি ইন্টার কন্টিনেন্টাল কাপ এবং আল-শামালের হয়ে আমির অফ কাতার কাপ।


    আর পৃথকভাবে ফ্র্যাঙ্ক ১৯৯৩ সালে আয়াক্সের হয়ে কেএনভিবি কাপ এবং ১৯৯৫ সালে ইউয়েফা কাপ জিতেছিলেন। আর রোনাল্ড রেঞ্জার্সের হয়ে স্কটিশ লিগ, স্কটিশ কাপ এবং স্কটিশ লিগ কাপ জয়ে করেছিলেন।

     

    জেরোম বোয়াটেং - কেভিন প্রিন্স বোয়াটেং

    জেরোম বোয়াটেং এবং কেভিন প্রিন্স বোয়াটেং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দুটি ভিন্ন দেশের হয়ে খেলেন। জেরোম জার্মানির হয়ে এবং কেভিন ঘানার হয়ে ২০১০ বিশ্বকাপে একে অপরের বিপক্ষে খেলেছেন। জেরোমের জার্মানি সেই বিশ্বকাপ ম্যাচে কেভিনের ঘানার কাছে ১-০ গোলে হেরে গিয়েছিল।


    জাতীয় দলের মতো ফুটবলে মাঠে তাদের পজিশনও একেবারে ভিন্ন। কেভিন মূলত আক্রমণভাগে অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে খেলে থাকেন, প্রয়োজনে বক্স-টু-বক্স মিডফিল্ডার হিসেবেও খেলতে পারেন তিনি। অপরদিকে জেরোম বোয়াটেং একজন পুরোদস্তর সেন্টার ব্যাক, তবে দলের অতি প্রয়োজনে রাইটব্যাক পজিশনেও খেলেছেন বেশ কয়েকবার।

    ট্রফির দিকে দিয়ে পরিষ্কারভাবে কেভিনের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছেন জেরোম বোয়াটেং। জার্মানির হয়ে ২০১৪ সালে বিশ্বকাপ জিতেছেন তিনি, আর বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে ১ টি ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ, ১ টি করে চ্যাম্পিয়নস লিগ এবং ইউয়েফা সুপার কাপের সঙ্গে ৭ টি বুন্দেসলিগা শিরোপাও শোভা পাচ্ছে তার ট্রফি ক্যাবিনেটে। অপরপক্ষে, কেভিন প্রিন্স বোয়াটেং এসি মিলানের হয়ে ১ টি সিরি আ এবং বার্সেলোনার হয়ে ১ টি লা লিগার শিরোপা জয় করেছেন।

     

    ববি চার্লটন - জ্যাক চার্লটন

    ফুটবলের জনক ইংল্যান্ড একমাত্র বিশ্বকাপ জয় করেছিল ১৯৬৬ সালে। কিংবদন্তি সেই ইংলিশ দলের সদস্য ছিলেন ববি এবং জ্যাক চার্লটন। ফুটবল ইতিহাসে দুই ভাইয়ের একসাথে বিশ্বকাপ জয়ের ঘটনা এই একটিই মাত্র। ক্লাব পর্যায়ে অবশ্য ববি এবং জ্যাক চার্লটন দুজনই একে অপরের বিপক্ষে খেলেছেন ক্যারিয়ারজুড়ে। পুরো পেশাদার ক্যারিয়ার লিডস ইউনাইটেডের হয়ে খেলেছিলেন জ্যাক চার্লটন আর ববি চার্লটন পেশাদার ক্যারিয়ারে শুরুর ১৮ বছর খেলেছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে।


    প্রথম ইংলিশ খেলোয়াড় হিসেবে ব্যালন ডি’অর জয় করেছিলেন ববি চার্লটন, প্রথম ইংলিশ ক্লাব হিসেবে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ইউরোপিয়ান কাপ জয়েও বড় ভূমিকা ছিল তার। অপরদিকে লিডসের হয়ে প্রথম বিভাগ লিগ শিরোপা, এফএ কাপ, লিগ কাপ এবং চ্যারিটি শিল্ড জিতেছিলেন জ্যাক চার্লটন।