• ক্রিকেটারদের আলাপ
  • " />

     

    একটি আধপড়া মেইল, বিশ্বকাপ না খেলা ও মাশরাফির 'পরিবার ফিরে পাওয়া'

    একটি আধপড়া মেইল, বিশ্বকাপ না খেলা ও মাশরাফির 'পরিবার ফিরে পাওয়া'    

    দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তার মতে মাশরাফি বিন মুর্তজা আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিলেন দুই বার। এক- ২০১১ বিশ্বকাপ খেলতে না পেরে মিডিয়ার সামনে। দুই- ওয়ানডে অধিনায়কত্ব ছাড়ার পর। তবে প্রথমটিতে যেমন খারাপ লাগা আর আফসোস আছে তার, বিপরীতে আছে ভাল লাগাও। তার মতে, সে বিশ্বকাপ না খেলার কারণেই হয়তো বেশ বিপজ্জনক অবস্থা থেকে নিজের স্ত্রী-পরিবারকে ফিরে পেয়েছিলেন তিনি। 

    তামিম ইকবালের ফেসবুক শো-র শেষ পর্বে ২০১১ বিশ্বকাপে তার সুযোগ না পাওয়ার গল্প শুনিয়েছেন মাশরাফি। জানিয়েছেন, ডাক্তারের পাঠানো মেইলের পুরোটা তখনকার ফিজিও না পড়ার ফলে শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়া হয়নি তার। তবে সেই বিশ্বকাপ না খেলা তাকে ‘রক্ষা’ করেছিল ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি থেকে। 

    “যখন শুনেছিলাম ২০১১ সালে বিশ্বকাপ বাংলাদেশে হবে, তখন থেকেই স্বপ্ন ছিল খেলার”, বলেছেন মাশরাফি, “একটা বিশ্বকাপ খেলাই ক্রিকেটারের স্বপ্ন থাকে, সেখানে দেশের মাটির বিশ্বকাপ। কয়েকদিন আগে চোট থেকে উঠে এসে আবার চোটে পড়লাম। তখন লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায়নি, নড়ে গিয়েছিল। শ্রীলঙ্কায় ডাক্তার বলেছিল, একটাই ঝুঁকি থাকতে পারে, খেলতে গিয়ে ওটা ছিঁড়ে যেতে পারে। ওটা সহ্য করে খেলতে পারলে সমস্যা নাই।”

    মাশরাফি সে ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত ছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত স্কোয়াডে রাখা হয়নি মাশরাফিকে, “এরপরও যখন নেয়নি, আফসোস অবশ্যই আছে। এটা বলবো না যে আফসোস নেই, খারাপ লাগা নেই। তবে আসলেই খারাপ লাগা যেটা বললি, দুটি সময়ে আমি আবেগী হয়ে পড়েছি, একটা হচ্ছে, যেটা আমার করা উচিৎ হয়নি বলে মনে হয়, বিশ্বকাপের ওই সময়ে। আরেকটা হচ্ছে শেষ যখন অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিলাম। তোরা সবাই ছিলি। কারণটা বলেছিলাম তোদেরকে, এখন বলতে চাচ্ছি না।” 

    “আকরাম ভাইয়ের সাথে আমার কথা হচ্ছিল। তখন আমাদের ফিজিও কে ছিল, মাইকেল হেনরি। তো ডেভিড ইয়াং তাকে যে মেইলটা পাঠিয়েছিল, সে পুরোটা দেখেনি। নীচে ‘রিড মোর’ অপশন থাকে, সেটা সে খেয়াল করেনি। ওপরেরটুকুই নির্বাচকদের কাছে জমা দিয়েছিল। আমি ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলেছিলাম, কারণ সে বলেছিল যে আমি খেলতে পারব, তবে লিগামেন্টের কিছু হলে সে দায় আমার। তারপর হেনরির ফোনে দেখেছিলাম, সে মেইলের পুরোটুকু দেখেনি। আমাকে স্যরি বলেছিল। কিন্তু তখন আমি কি তার সাথে গ্যাঞ্জাম (গন্ডগোল) করবো?”
     


    ২০১৯ বিশ্বকাপে অধিনায়কদের ফটোসেশনে মাশরাফি, ডান থেকে দ্বিতীয়/আইসিসি


    মাহমুদউল্লাহর মতে, স্কোয়াড ঘোষণার পর টুর্নামেন্ট শুরু হতে যেহেতু বেশ একটা সময় বিরতি ছিল, সেহেতু মাশরাফির সুযোগটা প্রাপ্য ছিল বলে মনে করেন তিনি, “আমার যেটা মনে হয়েছিল- মাশরাফি ভাইকে বলা হয়নি- আমি দেখেছিলাম মাশরাফি ভাইয়ের চোখ লাল। আমার খারাপ লাগতো, উনি যখন অনুশীলনে আসতেন, ফিজিওর কাছে আসতেন, আমি এটা বেশ কয়েকবার দেখেছি। 

    “তবে আমার মনে হয় ম্যাশের এই সুযোগটা প্রাপ্য ছিল। কারণ স্কোয়াড ঘোষণার পর থেকে এক মাস ( দেড় মাস) সময় ছিল। এই সুযোগ উনার প্রাপ্য ছিল, আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়। দেশের এতো বড় মেগা ইভেন্ট শীর্ষ পারফরমার হয়ে কে মিস করতে চায়।”

    একই রকম মত মুশফিকেরও, “মাশরাফি ভাই এমন একজন নেতা, অধিনায়ক না থাকলেও, সবাইকে এমনভাবে উৎসাহিত করেন। দেশের মাটিতে এতো বড় টুর্নামেন্টে তার না থাকাটা শকিং ছিল। যদিও আমি শুরুর দিকে শুনেছিলাম, আমি যতদূর জেনেছিলাম চোটের কারণে নেওয়া হয়নি। তবে মাশরাফি ভাই যেটা বললো যে উনি দৃঢ় পরিকর ছিল যে উনি খেলবেন, সেটা শোনার পর খারাপ লেগেছিল।”

    অবশ্য মাশরাফির সে বিশ্বকাপ ঘিরে আছে আরেকটি গল্পও, “২০১১ বিশ্বকাপে আমি যদি খেলতাম, শেষ যে ম্যাচ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে, সে ম্যাচের সময় আমার স্ত্রীকে ক্লিনিক্যালি ডেড ঘোষণা করা হয়েছিল। আমার মেয়ে হলো, হাসপাতালে ভর্তি করার পর। গর্ভকালীন জটিলতার ফলে তখন ডাক্তাররা বললো, ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে মানুষ বাঁচে না। রাত পার করেই পরদিন অপারেশন করাতে হলো। তখন খেললে হয়তো ম্যাচে থাকতাম, বউকে হাসপাতালে নিতে পারতাম না। আল্লাহই জানে কী হতো।” 

    “খারাপ লাগার চেয়ে এখন ভাল লাগাই বেশি কাজ করে তাই। কারণ হয়তো আল্লাহ তায়ালা চাননি যে আমি বিশ্বকাপটা খেলি। আল্লাহ যা করেন, ভালর জন্যই করেন। আমি হয়তো এ কারণেই আমার পরিবারকেই ফিরে পেয়েছি।” 

    এরপরের দুই বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মাশরাফি। ২০১৫ অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো নক-আউট পর্বে খেলেছিল বাংলাদেশ। ২০২০ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে অধিনায়কত্বকে বিদায় বলেছেন তিনি।