• ক্রিকেট, অন্যান্য
  • " />

     

    শচীনকে ভয়ডরহীন বানিয়েছিল ওয়াকারের বাউন্সার

    শচীনকে ভয়ডরহীন বানিয়েছিল ওয়াকারের বাউন্সার    

    ইংল্যান্ড-ভারত টেস্ট সিরিজ, ১৯৯০। স্বাগতিকদের কাছে লর্ডসে প্রথম টেস্ট হেরে ধুঁকছে ভারত। ওল্ড ট্রাফোর্ডে দ্বিতীয় টেস্ট কোনোমতেই হারা যাবে না। নয়ত শেষ টেস্টের আগেই সিরিজ থেকে ছিটকে পড়বে তারা। আর এই মুহূর্তটিকেই শচীন টেন্ডুলকার নিজের ব্যাটিং প্রতিভার জানান দেওয়ার জন্য বেছে নিলেন। ওল্ড ট্রাফোর্ডে প্রথম ইনিংসে ৬৮ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ছয়ে নেমে খেললেন অপরাজিত ১১৯ রানের ইনিংস। জিততে না পারলেও টেস্ট ড্র করল ভারত। আর ম্যাচ বাঁচানোর সঙ্গে ক্যারিয়ারের অভিষেক সেঞ্চুরিটাও পেয়ে গেলেন তিনি। গত ১৪ আগস্ট ১০০ সেঞ্চুরির মালিক শচীনের সেই প্রথম সেঞ্চুরির ৩০ বছর পূর্তি হয়েছে।

    আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের প্রথম সিরিজে পাকিস্তানের ওয়াকার ইউনুসের ভয়ংকর বাউন্সারের মুখোমুখি হয়েছিলেন শচীন। পাকিস্তান পেসারের একটি বাউন্সারে নাকে মারাত্মক আঘাতও পেয়েছিলেন তিনি। আর সেই সিরিজে ওয়াকারের বাউন্সারের অভিজ্ঞতাই ওল্ড ট্রাফোর্ডে ইংল্যান্ডের ডেভন ম্যালকমদের খেলতে তাকে সাহায্য করেছিল বলে জানিয়েছেন টেন্ডুলকার। ওল্ড ট্রাফোর্ডেও প্রথম ইনিংসে ম্যালকমের বাউন্সারে মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন তিনি, তবে এবার আর দমে যাননি। পুরনো অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত থেকে ম্যাচ বাঁচিয়েছেন।


    প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়ার সঙ্গে সেই ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টের স্মৃতিচারণ করলেন শচীন, “আমি ১৪ আগস্ট ওই সেঞ্চুরি করেছিলাম, পরের দিনই ছিল স্বাধীনতা দিবস। তাই সেটা বিশেষ ছিল। সেই সেঞ্চুরির কারণে অন্তত ওভালে শেষ টেস্টের আগ পর্যন্ত আমরা সিরিজে টিকে ছিলাম। টেস্ট ম্যাচ বাঁচানোটা আমার জন্য তখন নতুন অভিজ্ঞতা ছিল।” 

    ১৬ বছর বয়সী শচীনের টেস্ট অভিষেক হয়েছিল ১৯৮৯ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে। সেই সিরিজের শেষ টেস্টে ওয়াসিম আকরাম-ওয়াকার ইউনুসের আগুনে পেস বোলিংয়ে নাজেহাল হয়ে পড়েছিলেন তিনি, বেশ কয়েকবার তাদের বাউন্সারে আঘাতও পেয়েছিলেন। সেই টেস্ট সিরিজে পাকিস্তানের গতি তারকাদের খেলার অভিজ্ঞতা তাকে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে সাহায্য করেছে বলে মত শচীনের, “শিয়ালকোটে ( সিরিজের শেষ টেস্টে) পাকিস্তানের বিপক্ষে আমাদের ৩৮ রানে ৪ উইকেট পড়ে গিয়েছিল, আমি ৫৭ রান করেছিলাম আর আঘাতও পেয়েছিলাম। সেই সিরিজে ওয়াকারের বাউন্সার আর ব্যথা সয়ে খেলে যাওয়া আমাকে তৈরি করেছিল। ওই ধরনের আঘাতের পর হয় আপনি আরও শক্তিশালী হবেন নয়ত হারিয়ে যাবেন।”

    “ডেভন আর ওয়াকার তখন তখন বিশ্বের সবচেয়ে গতিময় বোলার, ৯০ মাইল গতিতে বোলিং করত তারা। হ্যাঁ, আমি (ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টে ডেভনের বাউন্সারে) আঘাত পাওয়ার পর ফিজিওকেও ডাকিনি। আমি তাদের (ইংলিশ বোলারদের) দেখাতে চাইনি যে আমি ব্যথায় আছি। আমি ভালোই ব্যথা সহ্য করতে পারতাম। আঘাত পেয়েছি তো কী হয়েছে? বোলারকে কখনো আপনার ব্যথার বিষয়ে বুঝতে দেওয়া উচিৎ নয়।”

    শৈশবের কোচ রমাকান্ত আচরেকারের অধীনে মুম্বাইয়ের শিভাজি পার্ক জিমখানাতে খেলার সময়ই বলের আঘাতে ব্যথা সয়ে গিয়েছিল শচীনের। টানা ২৫ দিন একই পিচে খেলার ফলে পিচের গতি-প্রকৃতি ক্রমেই অস্বাভাবিক হয়ে যেত। বল লাফিয়ে উঠে প্রায়ই নাক অথবা মাথায় আঘাত করত। আর সেই অভিজ্ঞতাও পরবর্তীতে তার ক্যারিয়ারে বেশ কাজে লেগেছে বলে জানিয়েছেন শচীন। 

    ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ছয় নম্বরে শচীন যখন ব্যাট করতে নামেন ১০৯ রানে তখন ভারতের ৪ উইকেট নেই। ৪০৮ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করছিল ভারত। শচীন ব্যাটিংয়ে থাকা অবস্থায় আরও উইকেট পতন হয় সফরকারীদের। মোহাম্মদ আজহারউদ্দীন ১১ এবং কপিল দেব ২৬ রানে ফিরে যান। এরপর জয়ের লক্ষ্যে ছোটার চেয়ে বরং ম্যাচ বাঁচানোটাই অপরিহার্য হয়ে দেখা দেয়। আট নম্বরে নামা মনোজ প্রভাকরের সঙ্গে মিলে এরপর রয়েসয়ে খেলেন শচীন। শেষ পর্যন্ত সপ্তম উইকেটে মনোজের সঙ্গে ১৬০ রানের জুটি গড়ে ভারতের মান বাঁচান তিনি। আর সাথে নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরিরও স্বাদ পান।