• অস্ট্রেলিয়ার ইংল্যান্ড সফর ২০২০
  • " />

     

    ৩৬ বলে ৩৯, অস্ট্রেলিয়ার বাকি ৯ উইকেট, এরপর যেভাবে 'অসম্ভব' জয় পেল ইংল্যান্ড

    ৩৬ বলে ৩৯, অস্ট্রেলিয়ার বাকি ৯ উইকেট, এরপর যেভাবে 'অসম্ভব' জয় পেল ইংল্যান্ড    

    ৩৬ বল, ৩৯ রান প্রয়োজন। বাকি ৯ উইকেট। সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে এমন অবস্থা থেকেও ইংল্যান্ডের কাছে হেরে বসেছে এ ফরম্যাটের এক নম্বর দল অস্ট্রেলিয়া। 

    ১৬৩ রানতাড়ায় অ্যারন ফিঞ্চ ও ডেভিড ওয়ার্নারের ৯৮ রানের ওপেনিং জুটি অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে নিয়েছিল অনেকটা পথ, তবে শেষ ২৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ল্যান্ডিংয়ে গিয়ে গোলমাল করে ফেলেছে তারা। অবশ্য এর আগে থেকেই চাপ তৈরি করতে পেরেছিল ইংল্যান্ড, সে চাপ বাউন্ডারিহীনতার। ১৪তম ওভারের তৃতীয় বলে মইন আলিকে ছয় মেরেছিলেন স্টিভ স্মিথ, আরেকটি বাউন্ডারির জন্য অস্ট্রেলিয়াকে অপেক্ষা করতে হয়েছে শেষ ওভারের ২য় বল পর্যন্ত। টি-টোয়েন্টিতে স্ট্রাইক রোটেটিং বড় একটা ব্যাপার, তবে বাউন্ডারি না আসলে হুট করেই যে বেড়ে যেতে পারে চাপ, সেটিও প্রমাণিত আরেকবার। 

    ১৫তম ওভার ছিল আদিল রশিদের শেষ, সেটিতে তার ওপর চড়াও হতে গিয়ে উইকেট হারিয়েছেন স্টিভ স্মিথ ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, অস্ট্রেলিয়ার বাঁধ ভেঙেছে তাতেই। তাড়াহুড়া করতে গিয়ে উলটো নিজেদের বিপদ ডেকে এনেছে তারা। ইংল্যান্ডের জয়ের পেছনের গেমপ্ল্যানের বড় একটা অংশজুড়ে ছিল নিজেদের শক্তিমত্তায় বিশ্বাস রাখা, সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার মিডল-অর্ডারের একটা শূন্যতা। এজিয়েস বোউলে পার্থক্য গড়েছে আরও কিছু ব্যাপার… 


    ফিঞ্চের বাজি বুমেরাং 

    ৬ষ্ঠ বোলার হিসেবে দারুণ কাজ করেছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। অইন মরগান ও মইন আলির গুরুত্বপূর্ণ ২ উইকেট নেওয়ার সঙ্গে ছিলেন ইকোনমিক্যাল। ম্যাক্সওয়েল-টোটকা কাজে লাগার পর অপশন বেড়ে গিয়েছিল ফিঞ্চের হাতে। মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স, কেন রিচার্ডসনদের যে কোনও ২ জন অথবা ৩ জনেরই এক ওভার করে দিয়ে শেষ করতে পারতেন তিনি। তবে ফিঞ্চ একটা জুয়া খেললেন অ্যাডাম জ্যাম্পাকে এনে। ব্যাকফায়ার করলো সেটাই। ১৮তম ওভারে জ্যাম্পা দিলেন ২২ রান। 

    ফিফটি করা মালানের উইকেট নিতে হয়তো জ্যাম্পা-জুয়াটা খেলেছিলেন ফিঞ্চ, সে মালান ফিরলেন রিচার্ডসনের বলে, ১৯তম ওভারের প্রথম ডেলিভারিতে। তবে তার আগেই ইংল্যান্ডকে একলাফে লড়াই করার মতো একটা স্কোরের দিকে এগিয়ে নিয়েছেন মালান, জ্যাম্পার ওই ওভারে।




    আর্চার-উড : ‘পেস লাইক ফায়ার’ 

    প্রথম ৩ ওভারে দুজন মিলে দিয়েছিলেন ৩১ রান। জফরা আর্চার ও মার্ক উডের পেসকে তেমন পাত্তা দিচ্ছিলেন না ফিঞ্চ-ওয়ার্নার, মনে হবে এমন। তবে এ দুজনের বিপক্ষে কিছুটা মিলমিশ ছিল ফিঞ্চ-ওয়ার্নারের আধিপত্যের-- পুরোটা দাপুটে ছিলেন না তারা, তবে রান এসেছে ঠিকই। স্মিথ এসে আবার পরপর দুই চারে স্বাগত জানিয়েছিলেন উডকে। 

    তবে ঘন্টায় ৯০ মাইলঘেঁষা গতিতে বোলিং করা দুজনই নিজেদের শক্তিমত্তায় আস্থা রেখেছিলেন। ফিঞ্চ ও ওয়ার্নার আর্চারের, আর অ্যালেক্স ক্যারি উডের পেস সামলাতে না পেরেই গড়বড় করে ফেলেছিলেন। 


    গভীরে যাও, আরও গভীরে যাও… 

    মরগান বলছেন, প্রয়োজনে ১৬ ওভারের মাঝে ম্যাচ শেষ করতে রাজি ছিলেন তিনি, তবে তার উইকেট দরকার ছিল। শুরুতেই দুই স্লিপ এনেছিলেন তিনি। উইকেট পেতে বেশ অপেক্ষা করতে হলো ইংল্যান্ডকে। যখন পেল, এরপর তাদেরকে যেতে হলো ম্যাচের বেশ গভীরে। যে গভীরে অস্ট্রেলিয়ার জন্য ছিল ফাঁদ। 

    ১৪তম ওভারের পর থেকে বাউন্ডারিশূন্যতা ছিল, রশিদের জোড়া ব্রেকথ্রুর পর ম্যাচে ফিরেছিল ইংল্যান্ড। তবুও শেষ ৩০ বলে প্রয়োজন ছিল মাত্র ৩৬ রানের, পার্থক্য যেখানে শুধু একটি বাউন্ডারির। 

    ওয়ার্নার লম্বা ইনিংস খেললেন, তবে শেষে গিয়ে নিজের পেস গুলিয়ে ফেললেন। আর্চারের পর উডকে লেলিয়ে দিলেন মরগান। কারান ও জর্ডান-- এ দুজনের একজনকে দিয়ে শেষ ৩ ওভারের ২টি করাতে হতো মরগানকে, তিনি ভরসা রাখলেন কারানের ওপর। 

    অবশ্য জর্ডানের ফিল্ডিং একটু এগিয়ে রাখলো ইংল্যান্ডকে, ১৯তম ওভারের শেষ বলে ছুটে গিয়ে সিঙ্গেল নিতে চাওয়া অ্যাশটন অ্যাগারকে মিলিমিটার ব্যবধানে রান-আউট করলেন তিনি। স্টোইনিস স্ট্রাইক পেলেন, তবে রানটা পেলেন না।

    শেষ ৬ বলে ১৫ রান, ২য় বলে স্টোইনিস ছয় মারলেন কারানকে। কারান স্নায়ু ধরে রাখলেন। প্রায় অসম্ভব মনে হওয়া ম্যাচে ঝুলে থাকার ফল পেল ইংল্যান্ড। আর হুট করেই খেই হারিয়ে ফেললো অস্ট্রেলিয়া।