কীভাবে বদলে গেল ক্রিকেট ব্যাট?

ক্রিকেট খেলতে গেলে যে কয়টি উপকরণ আপনার লাগবেই, তার একটি ক্রিকেট ব্যাট। বলা যায় একটি ক্রিকেট ব্যাট আর বল থাকলে আর কী লাগে? আর তাই তো ক্রিকেটকে অনেকে ব্যাট-বল খেলা বলেও ডাকে।
এই যে ব্যাট-বল খেলার ব্যাট, সেটা এখন যেমন দেখছেন তা আগে কিন্তু এমন ছিল না। ৭০০ বছর আগে জন্ম নেয়ার সময় ক্রিকেট ব্যাট এখনকার চেয়ে ছিল সম্পূর্ণই আলাদা। বলা যায় তখন ক্রিকেট ব্যাট দেখতে অনেকটা বর্তমানের হকিস্টিকের মতো ছিল।
ইংল্যান্ডের রাখালরা ছাগল চড়ানোর মাঝের সময়টা হাতের লাঠি দিয়ে ক্রিকেট খেলা শুরু করে। এরপর ধীরে ধীরে খেলার ব্যাপ্তি বেড়েছে, জনপ্রিয়তা বেড়েছে। সেই সঙ্গে প্রযুক্তি এবং খেলার গতি অনুযায়ী বদলে গেছে ব্যাটের আকার-আকৃতিও।
ক্রিকেট ব্যাট ব্যবহারের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ১৬২৪ সালে। সবচেয়ে পুরোনো হিসেবে স্বীকৃত ব্যাটটি লন্ডনের ওভালের একটি সংগ্রহশালায় প্রদর্শিত হয়। যা ১৭২৯ সালে ব্যবহার করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। সে সময় সাধারণত উইলো কাঠ দিয়ে তৈরি হতো ক্রিকেট ব্যাট।
১৮০০ শতকের আগেও ক্রিকেট ব্যাটের আকার ছিল অনেকটা এখনকার হকিস্টিকের মতো। ১৮৩০ সালের দিকেও ব্যাটের হাতল ছিল না। পরে ব্যবহারের সুবিধার্থে হাতলসহ ব্যাট তৈরির চল শুরু হয়।
শুরুতে ব্যাটের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ নিয়েও নানা মজার কাণ্ডকারখানা ঘটেছে। সেসব বন্ধ করতেই ১৮৩৫ সালে ক্রিকেট ব্যাটের সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ঠিক করা হয় ৩৮ ইঞ্চি। এখন আর হাতে নয়, পেশাদার ক্রিকেট ব্যাট তৈরি হয় মূলত যন্ত্রের সহায়তায়। তবে খুব অল্প কিছু সুদক্ষ কারিগর এখনো হাত দিয়েই ব্যাট তৈরি করেন।
ব্যাটের বিবর্তনের সময়কে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেগুলো…
১. প্রাথমিক ব্যাট (১৬০০-১৭০০)
ক্রিকেটের শুরুতে ব্যাট ছিল মূলত একটি বড় কাঠের খণ্ড যা পুরু এবং শক্তিশালী ছিল। এর গঠন ছিল বেশ বড় এবং চওড়া আর আকারে অনেকটা ছোট তক্তার মতো। ১৬০০ শতকে খেলা হওয়া প্রথম ক্রিকেট ম্যাচগুলোতে ব্যাট মূলত সোজা কাঠের টুকরা ছিল। সে সময় ব্যাটে শট খেলা ছিল বেশ কঠিন।
২. আধুনিক ব্যাটের আদি যুগ (১৮০০ শতক)
১৮০০ শতকে ক্রিকেট খেলার নিয়মে আরও পরিবর্তন আসতে শুরু করে এবং ব্যাটের আকারে সামান্য পরিবর্তন দেখা যায়। এই সময় ব্যাটে কিছু নমনীয়তা আনা হয়েছিল। তবে এরপর ব্যাট আরও শক্ত এবং প্রাকৃতিক কাঠ দিয়ে তৈরি করা শুরু হয়।
৩. ইংল্যান্ডে ব্যাটের উন্নতি (১৮৫০-১৯০০)
১৮৫০ সালে ইংল্যান্ডের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাট তৈরি হতে থাকে। এই সময় ব্যাটের গঠন আরো উন্নত হয় এবং মসৃণ কাঠের ব্যবহার শুরু হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটে ১৮৭০ সালে যখন ক্রিকেটের জন্য বিশেষ ধরনের ব্যাটের ডিজাইন তৈরি হতে শুরু করে। এই সময়ে ব্যাটের আকৃতি বেশ সরু হতে শুরু কর। ব্যাটের একপ্রান্তে কোণ যুক্ত হয়, যা আধুনিক ব্যাটের বৈশিষ্ট্য।
৪. আধুনিক ব্যাট (১৯০০-১৯৫০)
১৯০০ সালের পর থেকে ব্যাটের ডিজাইন দ্রুত পরিবর্তন হতে থাকে। উইকেটের আকারে পরিবর্তন আসার সাথে সাথে ব্যাটের আকারও ছোট হতে শুরু করে। ১৯০০ সালের মাঝামাঝি সময় বিভিন্ন ধরনের ব্যাট তৈরি হতে থাকে। এ সময় ভারী এবং শক্তিশালী ব্যাট বেশ জনপ্রিয় হয়। যা দিয়ে বড় শট খেলা সহজ হতো।
৫. আধুনিক ক্রিকেটের ব্যাট (১৯৫০-বর্তমান)
বর্তমানে ক্রিকেটের ব্যাটে অনেক প্রযুক্তিগত উন্নতি ঘটেছে। আধুনিক ব্যাটগুলো আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে চওড়া এবং পাতলা। আবার ব্যাটের গঠনেও আছে বৈচিত্র্য। সোজা এবং বাঁকানো নানা শেপ ব্যাটম্যানদের আরো বড় শট খেলতে সাহায্য করে।
এখনকার ব্যাটগুলোতে বিভিন্ন ধরনের মেটাল এবং লেগার প্লেট যুক্ত করা হয়েছে। যার ফলে ব্যাটগুলো আরও শক্তিশালী এবং টেকসই হয়ে উঠেছে। এখানেই শেষ নয়। ব্যাটের পেছনে বা মাঝখানে ভিন্ন ধরনের কাঠের ব্যবহার করা হয়। এর পাশাপাশি বিশেষ ধরনের প্রলেপ ব্যবহার করা হয় যাতে ব্যাটটি শক্তিশালী, হালকা এবং টেকসই হয়।
বর্তমান সময়ের ব্যাটে নানারকম প্রযুক্তিগত পরীক্ষার মাধ্যমেও উন্নতি সাধন করা হয়েছে। যেমন উইন্ড টানেল টেস্ট। যা ব্যাটের শটের গতি এবং এর প্রতিক্রিয়া পরীক্ষা করে।
মূলত খেলোয়াড়দের খেলার ধরন এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতির কারণেই ক্রিকেট ব্যাটের বিবর্তন হয়েছে। আধুনিক ক্রিকেটে ব্যাটের আকার, শক্তি সহ নানা দিকগুলো খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর তাই সামনে ব্যাটের ধরনে আরো পরিবর্তন এলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।