রাহির মতো পেসারদের সঙ্কুচিত সুযোগ ও সেসবের পূর্ণ সদ্ব্যবহারের 'ভার'
![রাহির মতো পেসারদের সঙ্কুচিত সুযোগ ও সেসবের পূর্ণ সদ্ব্যবহারের 'ভার'](https://pavilion.com.bd/pavupload/post/19189/thumbnail/21591-1613052792856-ss.jpg)
আবু জায়েদ রাহির অভিষেকের পর থেকে মিরপুরেরটি বাংলাদেশের ১৯তম টেস্ট, তার নিজের এটি ১০ম, তবে দেশের মাটিতে ৩য়। সৌম্য সরকারকে বাদ দিলে এ সময়ে পেসার খেলেছেন রাহিসহ ৮ জন, তবে রাহির পর এ সময়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন এবাদত হোসেন-- ৬টি, অন্য কেউ খেলেননি ৪টির বেশি, একটিতে সৌম্য ছাড়া ছিলেনই না কেউ। নিশ্চিতভাবেই সাম্প্রতিক সময়ে রাহি পেসে বাংলাদেশের প্রথম পছন্দ, তবুও চট্টগ্রামে ছিলেন না তিনি। মোস্তাফিজুর রহমান টেস্টে ফিরেছিলেন প্রায় দুই বছর পর, তবে মিরপুরে আবার বাদ দেওয়া হয়েছে তাকে। এবার ফিরেছেন রাহি। টিম ম্যানেজমেন্টের মতে, মিরপুরে চট্টগ্রামের থেকে ‘একটু বেশি সুইং’ থাকা, মোস্তাফিজের রানিং বিটুইন দ্য উইকেটের সমস্যা আর রান চেক দেওয়ার সামর্থ্যের কারণে খেলানো হচ্ছে রাহিকে।*
তবে বাংলাদেশের মতো কন্ডিশন, এবং এখনকার দলীয় সংস্কৃতিতে রাহির মতো বোলারকে সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে হবে, সেটি নিশ্চিতই।
ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের ক্ষেত্রে ভেতরের দিকে বল ঢুকানোয় মোস্তাফিজের সীমাবদ্ধতা-- মানে টেস্টে স্কিলের অভাব-- তাকে এতদিন বাইরে রাখার মূল কারণ, টিম ম্যানেজমেন্টের কথা অনুযায়ী ব্যাপারটা ছিল এমনই। মোস্তাফিজ সেসব নিয়ে কাজ করেছেন, সেসব করে দেখিয়েছেনও। চট্টগ্রামে প্রথম ইনিংসে বেশ ভাল বোলিং করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে সুবিধা করতে পারেননি। সঙ্গে হয়তো তার ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টেরও কোনও ব্যাপার আছে, সামনে যখন বেশ কয়েকটি সীমিত ওভারের সিরিজ আছে। মাশরাফি বিন মুর্তজার বাদ পড়ার পর টি-টোয়েন্টির সঙ্গে ওয়ানডেতেও মোস্তাফিজের ওপর থাকবে বেশ খানিকটা ভার।
সেক্ষেত্রে ২০১৮ সালে শেষ টি-টোয়েন্টি ও ২০১৯ সালে শেষ ওয়ানডে খেলা রাহির ওপরই টেস্টের ওয়ার্কলোডের ভার। সুযোগ পেয়ে রাহি সেটি সামলালেন, শুরুতে এলোমেলো থাকলেও পরে লাইন-লেংথের ধারাবাহিকতায় চাপ তৈরির পুরস্কারও পেলেন। রাহি এদিন করেছেন ১৮ ওভার (পার্ট-টাইম পেসার সৌম্যও করেছেন ৮টি), তবে খুব বেশি হলে ১৫ ওভার করতে হবে, তিনি ভেবেছিলেন এমন। প্রথম স্পেলে ২টি মেইডেন নিলেও বাকি ৪ ওভারে দিয়েছিলেন ১৮ রান। মূলত লাঞ্চের পর থেকে আরেকটু আঁটসাঁট হয়েছেন, বিরতির পর তৃতীয় ওভারে গিয়ে পেয়েছেন উইকেটের দেখাও।
শেইন মোসলি বেশ বাইরের বলে আউট হলেও চট্টগ্রামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রূপকথার নায়ক কাইল মেয়ার্সের উইকেট ছিল রাহির দারুণ বোলিংয়ের প্রতিচ্ছবি। অফস্টাম্পের বাইরে ফুললেংথে ড্রাইভে প্রলুব্ধ করা বলটা এমন উইকেট থেকেও আদায় করলো একটু ‘বাইট’, তাতেই এজড হলেন মেয়ার্স। রাহি জানেন, তার সীমাবদ্ধতা উৎরে যেতে লাইন-লেংথে এমন ধারাবাহিকতা আনার চেষ্টা করা ছাড়া উপায় নেই, “আমি যে পেসে (বোলিং) করি, আমার পেসটা একটু কম। আমাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টিকে থাকতে হলে (হবে) আমার লেংথ এবং লাইন (দিয়ে)। এবং আমি যখন বোলিং করি, তখন আমার মাথায় থাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভালো করতে হলে আমাকে এটাই করতে হবে। এছাড়া আমার কাছে কোনো দ্বিতীয় অপশন নেই। আমি এটাই মাথার মধ্যে রেখে বোলিং করি।”
লাইন-লেংথের সঙ্গে মেয়ার্সের ওই উইকেটের মতো একটু মুভমেন্ট পাওয়াও জরুরি রাহির জন্য, তবে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বলে লালা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা থাকায় একটা বাড়তি চ্যালেঞ্জ পেসারদের জন্য থাকেই। রাহি বলছেন, বলের শাইন-ম্যানেজমেন্ট করা হয়েছে বেশ সতর্কতার সঙ্গে, “এজন্য ধন্যবাদ জানাবো (মুমিনুল হক) সৌরভ ভাই, (নাজমুল হোসেন) শান্তকে। কারণ ওরা বলটা খুব ভালো পরিচর্যা করেছে। এছাড়া আমাদের স্পিনারদের (ধন্যবাদ দিতে হবে), কারণ ওদের বলগুলো খুব কমই পড়েছে ‘শাইন পার্টে’।”
মিরপুরের উইকেট প্রথম দিন ছিল বেশ মন্থর, তেমন টার্নের দেখাও মেলেনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ স্কোরার এনক্রুমাহ বনারের মতে, চট্টগ্রামের মতোই ফ্ল্যাট উইকেট এটি। রাহি বলছেন, তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী এখনও আচরণ করেনি এ উইকেট। অবশ্য সে প্রত্যাশা যে টার্ন, সেটি তার কথাতেই স্পষ্ট, “যেরকম আশা করেছিলাম, ওরকম ছিল না। উইকেট এখনও ফ্ল্যাট আছে। আমার কাছে মনে হয় আমরা যেরকম আশা করেছিলাম উইকেট ওই রকম না। উইকেটটা আরও ফ্ল্যাট এবং আরও সময় লাগবে উইকেটে টার্ন এবং আমরা যেটা আশা করছি সেটা পেতে।”
তেমন টার্ন মিললে রাহিকে পাশ কাটিয়ে আবারও স্পিনে বাড়বে নির্ভরতা, ২য় নতুন বলেও তিনি করেছেন প্রথম ১.৫ ওভার। ফলে এক্ষেত্রে রাহিকে আবারও অপেক্ষা করতে হবে নতুন সুযোগের। এবং সেসবের সদ্ব্যবহারের। রাহির মতো বোলারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে আপাতত ‘পরিস্থিতি’ এমনই। সেক্ষেত্রে ‘অনুপ্রেরণা’ খুঁজতে হবে এমনকি অনুশীলনের ভেন্যু থেকেও। রাহি যেমন বলছেন, “অনুপ্রেরণা বলতে গেলে-- নিজের অনুপ্রেরণা-- হ্যাঁ, সিলেটের কথা বলতে হবে। কারণ ওই মাঠে অনুশীলন করতে আলাদা আনন্দ লাগে আমার। আমি প্রায় সময়ই সিলেটে থাকলে ওখানে স্থানীয় কোচের সঙ্গে অনুশীলন করি। সিলেটের মাঠে অনুশীলনে আমার বাড়তি আগ্রহ তৈরি হয়-- আমি সিলেটের মাঠে যাব, অনুশীলন করব। সুন্দর মাঠ-- আমার কাছে আকর্ষণটা একটু বেশি।”
*শুরুতে মোস্তাফিজের বদলে রাহিকে খেলানোর ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ না করা হলেও পরে বোলিং কোচ ওটিস গিবসনের কথার পর এটি আপডেট করা হয়েছে।