• নিউজিল্যান্ডের বাংলাদেশ সফর
  • " />

     

    সাকিব-মুশফিকে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে আরেকটি প্রথমের দেখা পেল বাংলাদেশ

    সাকিব-মুশফিকে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে আরেকটি প্রথমের দেখা পেল বাংলাদেশ    

    বাংলাদেশ বনাম নিউজিল্যান্ড, মিরপুর (টস- নিউজিল্যান্ড/ ব্যাটিং)

    নিউজিল্যান্ড ৬০, ১৭ ওভার ( ল্যাথাম ১৮, নিকোলস ১৮, মোস্তাফিজুর ৩/১৩, নাসুম ২/৫, সাকিব ২/১০, সাইফ উদ্দিন ২/৭)


     

    টি-টোয়েন্টিতে নিউজিল্যান্ডের সাথে জয়টা অধরা ছিল বাংলাদেশের। সেটাও হয়ে গেল আজ। অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে যেখানে শেষ করেছিল বাংলাদেশ, আজ শুরু করল সেখান থেকেই। ৬১ রানের লক্ষ্য তাড়া করে ৭ উইকেটের সহজ জয়ে সিরিজের শুরুটা দারুণ হয়েছে বাংলাদেশের।

    নিউজিল্যান্ডের সাথে এর আগের দশ বারের দেখায় একবারও জয় পায়নি বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে এবার দ্বিতীয় সারির নিউজিল্যান্ড দলের সাথে তাই বাংলাদেশের সামনে হাতছানি সেই রেকর্ড ভেঙে প্রথম জয় তুলে নেওয়ার। সেই লক্ষেই নিউজিল্যান্ডকে মাত্র ৬০ রানেই আটকে ফেলেছিল বাংলাদেশ, যা মিরপুরে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ। বাংলাদেশের বিপক্ষে আগের ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়ার গড়া টি-টোয়েন্টিতে সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড নতুন করে লিখেছে নিউজিল্যান্ড।

    মাত্র ৬১ রানের লক্ষে দুই ওপেনার মোহাম্মদ নাইম ও লিটন দাসের শুরুটা হয় সাবধানী। তবে দ্বিতীয় ওভারেই ফেরেন নাইম। অভিষেকেই শূন্য রানে ফিরতে হলেও নিজের করা প্রথম বলেই উইকেটের দেখা পান কোল ম্যাককঞ্চি। পরের ওভারেই আজাজ পাটেলের ভাসিয়ে দেওয়া বলে পরাস্ত হয়ে স্টাম্পড হয়ে ফিরে যান লিটন দাস। দলে ফেরার দিনে মাত্র ১ রান করেই ফিরে যেতে হয়েছে তাকে। 

    কিউই স্পিনার এরপর চেপে বসে বাংলাদেশের ওপর। ষষ্ঠ ওভারের দ্বিতীয় বলে গিয়ে সাকিব আল হাসানের ব্যাট থেকে আসে বাংলাদেশের প্রথম বাউন্ডারি। রানের চাকা সচল করতে বেগ পেতে হলেও উইকেটের মূল্য বুঝেই খেলছিলেন বাংলাদেশের অভিজ্ঞ দুই ব্যাটসম্যান। পাওয়ারপ্লে শেষে তাই ওঠে ২২ রান। 

    ১০ম ওভারের প্রথম বলেই ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে মিড অফের মাথার ওপর দিয়ে উড়িয়ে চার মারেন সাকিব। রচীনের ওপর যে চড়াও হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সেটা ছিল স্পষ্ট। সেটা বুঝেই পঞ্চম বলে দ্রুত গতির স্লাইডার দিলে সেই বলে কাট করতে গেলে উইকেটের পিছে ল্যাথামের দারুণ ক্যাচের স্বীকার হয়ে ৩৩ বলে ২৫ রান করে ফিরতে হয় সাকিবকে। অভিষেকেই গোল্ডেন ডাক পেলেও প্রথম আন্তর্জাতিক উইকেট হিসেবে সাকিবের নাম দেখে তাই হয়ত কিছুটা খুশিই হবেন রচীন। 

    রচীন ছাড়া বাকি দুই স্পিনারের সাথে অবশ্য সুবিধা করে উঠতে পারছিল না বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা। দুর্দান্ত বল করে চার ওভারের কোটা পূর্ণ করে মাত্র ৭ রান দিয়েছেন আজাজ, সাথে নিয়েছেন লিটনের উইকেট। নিউজিল্যান্ডের হয়ে এটি টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় সেরা খরুচে স্পেল, সেরাটাও এসেছিল বাংলাদেশের বিপক্ষেই, ড্যানিয়েল ভেট্টরির কাছ থেকে। তবে দ্রুত গতিতে রান তুলতে না পারলেও মুশফিক আর অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ম্যাচ শেষ করে তবেই ফিরেছে। ৭ উইকেটের বড় জয় দিয়ে বাংলাদেশ পেয়েছে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের প্রথম জয়।

    এর আগে টসে হেরে ফিল্ডিংয়ে নামতে হলেও শুরুটা দারুণ হয় বাংলাদেশের। নতুন বল হাতে নিয়ে প্রথম ওভারেই উইকেট পান মাহেদি হাসান। গুড লেংথে পড়া স্লাইডার পড়তে না পেরে আগেই ব্যাট চালালে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে মাত্র ৪র্থ কিউই হিসেবে অভিষেকেই গোল্ডেন ডাকের স্বীকার হয়ে ফিরে যান রচীন রবিন্দ্র। তৃতীয় ওভারে আক্রমণে এসেই সাকিব ফেরান উইল ইয়াংকে। কিছুটা নিচু হয়ে আসা আর্ম বল পড়তে না পেরে স্টাম্পে বল ডেকে এনে ১১ বলে মাত্র ৫ রান করে ফেরেন তিনি। 

    এরপরে আসা কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম এই দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞদের একজন। তবে যে ভঙ্গিতে তিনি আউট হলেন তা কোনোভাবেই তার অভিজ্ঞতার সাথে যায় না। পুরো লেগ স্লাইডে ডিপ স্কোয়ার লেগে ছিলেন একজন ফিল্ডার। নাসুম আহমেদের নিরীহ একটি বল সুইপ করে সরাসরি সেখানে থাকা মোহাম্মদ নাইমের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি ১ রান করেই। ঐ ওভারেই নাসুমের আর্ম বলে জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে স্টাম্প খুইয়ে ফিরে যান টম ব্লান্ডেলও। মাত্র ৯ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বসেন। উইকেটে এসে থিতু হতে অধিনায়ক টম ল্যাথাম ও হেনরি নিকোলস কিছুটা সময় নিলে পাওয়ারপ্লে শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে নিউজিল্যান্ড তোলে মাত্র ১৮ রান। 

    জাতীয় দলের হয়ে এই ফরম্যাটে নিয়মিত না হলেও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বিপদ সামলে উঠছিলেন অভিজ্ঞ এই দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। তবে পুরো ইনিংসেই অবিবেচক ব্যাটিংয়ের ধারা অব্যাহত রেখে সাইফ উদ্দিনের বাউন্সারে ফাইন লেগে নাসুমের তালুবন্দি হয়ে ২৫ বলে ১৮ রান করে ফিরে যান ল্যাথাম। পরের ওভারেই কোনও রান না করে ফিরে যান আরও এক অভিষিক্ত কোল ম্যাককঞ্চি। সাকিবের বলে শর্ট মিডউইকেটে মুশফিকুর রহিমকে ক্যাচ অনুশিলনের সুযোগ করে দিয়ে ৮ম কিউই হিসেবে অভিষেকেই শূন্য রানে ফেরেন তিনি।  

    স্বীকৃত সকল ব্যাটসম্যানের বিদায়ে নিকোলসকে হাত খুলতে হতই। সেটাই করতে গেলে সাইফ উদ্দিনের বলে লং অনে মুশফিকের তালুবন্দি হয়ে ২৪ বলে ১৭ রান করে ফেরেন তিনি। এরপরে বাকি ছিল শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। আজাজ পাটেল ও জ্যাকব ডাফিকে ফিরিয়ে সেই আনুষ্ঠানিকতা সারেন মোস্তাফিজ। মাত্র ৬০ রানেই গুটিয়ে যাওয়া নিউজিল্যান্ডের এটিই সর্বনিম্ন টি-টোয়েন্টি স্কোর। এর আগে চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই ৬০ রানেই অল আউট হয়েছিল কিউইরা। 

    তার আগে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে টসে জিতে ব্যাটিং নিয়েছে নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশের একাদশে অস্ট্রেলিয়া সিরিজের স্কোয়াড থেকে দুইটি পরিবর্তন এসেছে। মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাসকে জায়গা করে দিতে গিয়ে সরে যেতে হয়েছে শামীম হোসেন ও সৌম্য সরকারকে। শরিফুল ইসলামও নেই একাদশে, আছেন সাইফ উদ্দিন। 

    নিউজিল্যান্ড দলে অভিষেক হচ্ছে কোল ম্যাককঞ্চি ও রাচিন রাবীন্দ্রর।