• নিউজিল্যান্ডের বাংলাদেশ সফর
  • " />

     

    নাসুম-মোস্তাফিজের পর মাহমুদউল্লাহর শেষ টানে কিউইদের বিপক্ষে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক প্রথম

    নাসুম-মোস্তাফিজের পর মাহমুদউল্লাহর শেষ টানে কিউইদের বিপক্ষে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক প্রথম    

    বাংলাদেশ বনাম নিউজিল্যান্ড, ৪র্থ টি-টোয়েন্টি, মিরপুর (টস- নিউজিল্যান্ড/ ব্যাটিং)

    নিউজিল্যান্ড ৯৩, ১৯.৩ ওভার (ইয়াং ৪৬, ল্যাথাম ২১, অ্যালেন ১২, নাসুম ৪/১০, মোস্তাফিজ ৪/১২, সাইফউদ্দিন ১/১৬)

    বাংলাদেশ ৯৬/৪, ১৯.১ ওভার (মাহমুদউল্লাহ ৪৩*, নাইম ২৯, আফিফ ৬*, আজাজ ২/৯, ম্যাককঙ্কি ১/৩৪)

    বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী


    আগের ম্যাচের পরাজয়ের গ্লানি মুছে শক্তভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ, সেই সাথে নিশ্চিত করেছে সিরিজ জয়। নাসুম আহমেদের স্পিন-বিষে নীল নিউজিল্যান্ডের ইনিংস এরপর ছারখার হয়ে গিয়েছে মোস্তাফিজুর রহমানের কাটারে। দুজনের চার উইকেটের পর ৯৪ রানের লক্ষ্যে আজাজ পাটেলের এক ওভারে খেই হারালেও মাহমুদউল্লাহর ৪৩* রানে ভর করে ৬ উইকেটের জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে এসে নিশ্চিত হল আরেকটি প্রথম, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে প্রথম দ্বিপাক্ষিক সিরিজ জয়। 

    লক্ষ্য ছোট হলেও মন্থর উইকেটে সেটাকে পুঁজি করে ঘুরে দাঁড়ানোর নজির ইতিহাসে কম নেই। ৯৪ রানের লক্ষে বাংলাদেশের শুরুটাও তাই হয় বেশ সাবধানী। প্রথম দুই ওভার থেকে আসে মাত্র ৪ রান।

    তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই চার মেরে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেন লিটন দাস। কোল ম্যাককঙ্কির পরের বলেই হাটু গেড়ে স্লগ সুইপ করেন তিনি। ডিপ স্কয়ারে থাকা ফিন অ্যালেন অনেকটুকু দৌড়ে এসে দারুণ ক্যাচ নিয়ে সেই যাত্রায় থামান ১১ বলে ৬ রান করা লিটনকে। সাকিব আল হাসান উইকেটে এসে কিছুটা মারমুখি হলে অপরা প্রান্তে থাকা মোহাম্মদ নাইমও হাত খোলার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে বিপদ ঘটে পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারেই। শুরু থেকেই দারুণ বল করতে থাকা আজাজ পাটেলকে বেরিয়ে এসে খেলতে যান সাকিব। স্লাইডার পুরোপুরি মিস করে ৮ বলে ৮ রান করে আরও একবার আজাজের শিকার হয়ে ফিরতে হয় সাকিবকে। এক বল পরে আজাজের বলের লেংথ পড়তে ভুল করে সুইপ করার সিদ্ধান্ত নেন উইকেটে নবাগত মুশফিকুর রহিম। ফলাফল বল পুরোপুরি মিস করে রানের খাতা খোলার আগেই বোল্ড। পাওয়ারপ্লেতে ৩২ রান আসলেও ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচে নিজেদের সম্ভাবনা বাচিয়ে রাখে কিউইরা। 

    দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান হারানোর পর একেবারেই খোলসে ঢুকে যান নাইম ও উইকেটে আসা অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বাউন্ডারি তো পাচ্ছিলেনই না, প্রান্ত বদল করতেও বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল। সেই শেষ ম্যাককঙ্কিকে ছয় মেরেছিলেন নাইম। ৩৯ বল পর এরপর প্রথম বাউন্ডারির দেখা পায় বাংলাদেশ, সেই ম্যাককঙ্কির বলেই ছয় দিয়েই। ব্যাটসম্যান এবার অবশ্য মাহমুদউল্লাহ। এই ১২তম ওভারেই কিউইদের ঘুরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা বানচাল করে দিয়ে ডাবল উইকেট মেইডেন নিয়েছিলেন নাসুম। আর সেই ১২তম ওভারে এসেই বাংলাদেশ তোলে ততক্ষণ পর্যন্ত ইনিংসে তাদের সর্বোচ্চ ১২ রান। ঘুরে দাঁড়ানোর যে ক্ষীণ আসা কিউইদের ছিল এই ওভারের সাথে সাথে সেই আশার প্রদীপ একেবারেই নিভুনিভু হয়ে যায়। 

    রনের চাকা সচল করতে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের অবশ্য বেশ কাঠখড় তবুও পোড়াতে হচ্ছিল। ১৫তম ওভারে বদলি ফিল্ডার ডগ ব্রেসওয়েলের দারুণ থ্রোতে রান আউট হয়ে শেষ হয় নাইমের ৩৫ বলে ২৯ রানের ইনিংস। কিউইরাও আবার আশান্বিত হয়, চেপে বসে বাংলাদেশের ওপর। উইকেট না মিললেও রান গুণতে বোলাররা ছিল কিপটে। পুরো সিরিজে অসাধারণ বোলিং করা আজাজ ১৭তম ওভারে এসে দেন মাত্র ১ রান। চার ওভারের কোটা শেষে তার বোলিং ফিগার হয়ে দাঁড়ায় ৪-০-৯-২। পাটেলের প্রচেষ্টা ভেস্তে দিয়ে হ্যামিশ বেনেটের করা পরের ওভারে ঠাণ্ডা মাথায় ৮ রান তোলে মাহমুদউল্লাহ-আফিফ জুটি। ১৯তম ওভারে টিকনারের প্রথম বলেই ছয় মেরে মাহমুদউল্লাহ বার্তা দিয়ে রাখেন, এই ম্যাচ তিনি না জিতিয়ে ফিরছেন না। ম্যাককঙ্কির করা শেষ ওভারের প্রথম বলেই চার মেরে ৪৮ বলে ৪৮ রানে অপরাজিত থেকে তুলির শেষ আঁচড়টাও তিনিই দেন। আর কোনও উইকেট না হারিয়ে বাংলাদেশ নিশ্চিত করে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের প্রথম টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়।  

    তার আগে টসে জিতে নিউজিল্যান্ডের শুরুটা একেবারেই মনমত হয়নি। প্রথম ওভারেই তারা হারান রচীন রবিন্দ্রকে। প্রথম ওভারটা নাসুমের হাত ধরে হয় উইকেট মেইডেন। পরের ওভারে সাকিবকে ছয় মেরে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেন ফিন অ্যালেন। তবে নাসুম ফিরে এলে আবারও তার শিকার কিউইরা, এবার সেই অ্যালেন। রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে পয়েন্টে  সাইফউদ্দিনের কাচের শিকার হয়ে ৮ বলে ১২ রানেই শেষ হয় তার ইনিংস। উইল ইয়াংকে নিয়ে অধিনায়ক টম ল্যাথাম এরপর পাওয়ারপ্লেতে আর কোনও ঝুঁকি নেননি। রানের খোঁজে হন্যে হয়ে ফেরা নিউজিল্যান্ড তাই আর কোনও উইকেট না হারালেও পাওয়ারপ্লেতে তোলে মোটে ২২ রান। 

     

    পাওয়ারপ্লের পরের ওভারেই বাউন্ডারির দেখা পান ল্যাথাম। তবে স্পিনারদের সামলাতে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছিল ঐ দুইজনকে, বিশেষ করা প্রান্ত বদল করার সুযোগই তেমন পাননি তারা। সেই চাপেই ১১তম ওভারে মাহেদিকে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়েই স্টাম্পড হন ল্যাথাম। বেশ কিছুক্ষণ উইকেটে থেকেও রানের গতি বাড়াতে ব্যর্থ ল্যাথাম ফিরে যান ২৬ বলে ২১ রান করে। ১২তম ওভারে নিজের চার ওভারের কোটা পূর্ণ করতে আসা নাসুম কিউইদের দেন আরও বড় ধাক্কা। ঐ ওভারেই হেনরি নিকোলস আর কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমকে তে ফেরানই, সাথে নেন আরও একটি মেইডেন। নাসুমের বরাদ্দ কোটা পূর্ণ হবার পর তার বোলিং ফিগার বলছিল ৪-২-১০-৪!

     

    এক প্রান্ত ইয়াং আগলে রাখলেও অন্য প্রান্তে শুরু হয়ে যায় আসা যাওয়ার মিছিল। ১৬ তম ওভারে এসে আবারও জোড়া আঘাতের শিকার কিউইরা, হন্তারকের ভুমিকায় এবার মোস্তাফিজ। উইকেটে এসে ধুঁকতে থাকা টম ব্লান্ডেলের ভোগান্তির অবসান ঘটে নাইমের দুর্দান্ত ক্যাচে। মোস্তাফিজের স্লোয়ারে পরাস্ত হয়ে ব্লান্ডেল ফেরেন ১০ বলে ৪ রান করে। এরপর কাটার ভ্রমে পর্যুদস্ত করে কোল ম্যাককঙ্কিকে সেই চিরচেনা উপায়ে ফেরান মোস্তাফিজ, ফিরতি ক্যাচটাও নিজেই নিয়ে তাকে আর রানের খাতা খোলার সুযোগই দেননি।     

    রানের জন্য হাতড়ে মরা কিউইদের হাত খোলার সুযোগ দেননি কোনও বাংলাদেশি বোলারই। ১৯তম ওভারে মাত্র ৩ রান দিয়ে সাইফউদ্দিন নেন আজাজ পাটেলের উইকেট। আর উইকেটে একাই লড়াই চালিয়ে যাওয়া ইয়াংকে শেষ ওভারে বল হাতে নিয়ে আবারও সেই কাটারে বোকা বানান মোস্তাফিজ। মাহমুদউল্লাহর কাছে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ৪৮ বলে তিনি করতে পেরেছেন ৪৬ রান। পরের বলেই ব্লেয়ার টিকনারকেও ফিরিয়ে নিউজিল্যান্ডকে ৯৩ রানেই গুঁটিয়ে দেন মোস্তাফিজ। নিজেও মাত্র ১২ রান দিয়ে নেন ৪ উইকেট।