• নিউজিল্যান্ডের বাংলাদেশ সফর
  • " />

     

    ল্যাথাম-বীরত্বের পরও শেষ ওভারের রোমাঞ্চ শেষে মাহমুদউল্লাহদের হাসি

    ল্যাথাম-বীরত্বের পরও শেষ ওভারের রোমাঞ্চ শেষে মাহমুদউল্লাহদের হাসি    

    বাংলাদেশ বনাম নিউজিল্যান্ড, মিরপুর (টস- বাংলাদেশ/ ব্যাটিং)

    বাংলাদেশ ১৪১/৫, ২০ ওভার ( নাইম ৩৯, মাহমুদউল্লাহ ৩৭*, লিটন ৩৩, রচীন ৩/২২,আজাজ ১/২০, ম্যাককঞ্চি ১/২৪

    নিউজিল্যান্ড ১৩৭/৫, ২০ ওভার ( ল্যাথাম ৬৭*, ইয়াং ২২, ম্যাককঞ্চি ১৫*, মাহেদি ২/১২, সাকিব ২/২৯, নাসুম ১/১৭)

    বাংলাদেশ ৪ রানে জয়ী


    শেষ ওভারে দরকার হলো ২০ রান। মোস্তাফিজ এলেন বল করতে। প্রথম চার বল শেষে বাংলাদেশের মঠোয় ছিল ম্যাচ। শেষ ২ বলে দরকার ১৩ রান। কিন্তু এরপরেই নো বলে চার খেয়ে ম্যাচ জমিয়ে দেন মোস্তাফিজ। শেষ বলে দরকার হলো ৬, কিন্তু সেটা নিতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। রোমাঞ্চকর এক ম্যাচে ৪ রানের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।

    লিটন দাস ও মোহাম্মদ নাইমের গড়া  নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ওপেনিং জুটির পর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ৩৭* রানে লড়াকু সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। জবাবে নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক টম ল্যাথাম একাই লড়ে গেলেও বিফলে গেছে তার অপরাজিত ৬৭ রানের ইনিংস। শেষ বলে গড়ানো ম্যাচে বাংলাদেশ পেয়েছে ৪ রানের জয়, ৫ ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গিয়েছে ২-০ ব্যবধানে।  

    ১৪২ রানের লক্ষে শুরু থেকেই আত্মবিশ্বাসী মনে হয় রচীন রবিন্দ্র ও টম ব্লান্ডেলকে। সাকিব আল হাসানকে দারুণ এক ছয়ও মারেন রচীন। তবে অভিজ্ঞতার কাছে হার মানতে হয় পরের বলেই। আবারও হাটু গেড়ে বাউন্ডারির খোঁজ করতে সাকিবের পরিবর্তিত লেংথে পরাস্ত হন তিনি। ১০ রানে রচীন ফিরে যাওয়ার পরের ওভারেই বেরিয়ে এসে নাসুমকে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হয়ে ফেরেন ব্লান্ডেলও। এরপর উইল ইয়াংকে সাথে নিয়ে অধিনায়ক টম ল্যাথাম উইকেটের মন্থরতা বুঝেই খেলতে থাকেন। আর কোনও উইকেট না হারিয়ে পাওয়ারপ্লেতে কিউইরা তোলে ২৮ রান। 

    ইয়াং আর ল্যাথাম বেশ ভালোভাবেই বিপদ সামলে ওঠেন এরপর। বাউন্ডারি বের করতে বেগ পেতে হলেও নিয়মিত প্রান্ত বদল করেন দুজন। বাংলাদেশি স্পিনারদের চেপে বসার সুযোগ দেননি।  ১০ ওভার শেষে যেখানে বাংলাদেশের স্কোরকার্ড বলছিল ৬০-২ সেখানে খুব একটা পিছিয়ে ছিল না নিউজিল্যান্ডও, ২ উইকেট হারিয়ে তারা তুলেছিলেন ৫৭ রান। তবে অভিজ্ঞতার কাছে আবারও হার মানতে হয় কিউইদের। জায়গা বানিয়ে খেলতে গিয়ে সাকিবের পরের ওভারে বড় টার্নে ব্যাটের কানায় লেগে শর্ট থার্ড ম্যানে সাইফ উদ্দিনের দারুণ ক্যাচের শিকার হয়ে ২২ রানে শেষ হয় ইয়াংয়ের ইনিংস। 

    বাউন্ডারি বের করতে না পারায় প্রয়োজনীয় রান রেটও তরতর করে বাড়তে থাকে, চলে যায় ১০ এর ওপরে। ম্যাচে থাকতে হাত খুলতেই হত কিউই ব্যাটসম্যানদের। সেই লক্ষ্যেই নাসুম আহমেদের ফুল লেংথের বলে সপাটে ব্যাট চালিয়ে সরাসরি ডিপ স্কোয়ার লেগে মুশফিকুর রহিমের তালুবন্দি হয়ে ফিরে যান কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম। পরের ওভারে মাহেদি হাসানকে সুইপ করতে গিয়ে একই পরিণতি হয় হেনরি নিকোলসের। শেষ চার ওভারে তাই কিউইদের জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রান হয়ে দাঁড়ায় ৪৮। 

    অধিনায়ক ল্যাথাম একাই লড়ে গেলেও নেমেই ম্যাককঞ্চি খুব একটা সুবিধাও করতে পারছিলেন না। সেই ল্যাথামকে ফেরানোর সুযোগও এসেছিল। বাউন্ডারি থেকে দারুণ থ্রোয়ের পর স্টাম্প ভেঙে দেন নুরুল হাসান। তবে রিপ্লেতে দেখা যায় বল হাতে আসার আগেই স্টাম্প ভাঙেন তিনি। ঐ যাত্রায় বেঁচে ল্যাথাম বেঁচে গেলে তাই কিউইদের ম্যাচ জয়ের ক্ষীণ সম্ভাবনা বেঁচে থাকে। শেষ ওভারে ২০ রান দরকার- এই সমীকরণে মোস্তাফিজুর রহমানের হাতে বল তুলে দেওয়া হলে তিনি সমীকরণ নামিয়ে আনেন শেষ দুই বলে ১৩ রানে। তবে নাটক আরও বাকি ছিল! ঐ বলেই তিনি দিয়ে বসেন কোমরের ওপরে ফুল টস, কোনমতে ব্যাট লাগিয়ে ল্যাথাম তুলে নেন চার রান। সেখান থেকে শেষ বলে ছয় রানের প্রয়োজন হলে সিঙ্গেল নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় ল্যাথামকে। ল্যাথামের লড়াকু ৬৭* রানের ইনিংস ভেস্তে দিয়ে নাটকীয় ম্যাচে ৪ রানের জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ।   

    তার আগে টসে জিতে ব্যাটিং নেওয়া বাংলাদেশের শুরুটা ছিল সাবধানী। লিটন দাস তো রানের খাতা খোলার আগেই কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের হাতে সহজ ক্যাচ তুলে দিয়েও বেঁচে যান। তবে এরপর নিজেদের গুছিয়ে নেন দুই ওপেনার। স্পিনারদের সামলে দেখেশুনেই খেলতে থাকেন। তবে উইকেটের মন্থরতায় ব্যাটে-বলে করতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল দুজনকেই। উইকেটের মূল্য বুঝে খেলার কারণে অবশ্য পাওয়ারপ্লেতে কোনও উইকেট না খুইয়েই বাংলাদেশ তোলে ৩৬ রান।

    এরপরে লিটনকে আরেকটু স্বচ্ছন্দ মনে হচ্ছিল। গত ম্যাচে কোনও ছয় না হওয়ার পরে সিরিজে প্রথম ছয়ও আসে লিটনের ব্যাট থেকে। তবে রচীনের ঐ ওভারেই স্টাম্পে বল ডেকে এনে শেষ হয় লিটনের ২৯ বলে ৩৩ রানের ইনিংস। এদিন তিনে নামা মুশফিকুর রহিম ফিরে যান প্রথম বলেই, রচীনের ভাসানো বলে স্টাম্পড হয়ে নামার সাথে সাথেই ফিরে যান তিনি। ভাল শুরু করেও দুই ওভারেই এলোমেলো হয়ে যায় বাংলাদেশের প্রচেষ্টা। নেমেই পরের ওভারে কোল ম্যাককঞ্চির ওপর চড়াও হন সাকিব, তুলে নেন দুটি চার। ওভারের শেষ বলে বেরিয়ে এসে উড়িয়ে মারতে গেলে লং অফে অভিষিক্ত সিয়ার্সের তালুবন্দি হয়ে ১২ রানে ফিরে যান তিনি। সিয়ার্স নিজের প্রথম ওভারেই পেতে পারতেন উইকেট। তবে নাইমের সজোরে হাঁকানো শটে ব্যাটের কানায় লেগে বল ঝাঁপিয়ে পড়া উইকেটকিপারের হাতের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। 

    নাইমকে নিয়ে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ বিপদ কিছুটা সামলে উঠেছিলেন। এদিন তীক্ষ্ণ টার্ন আদায় করা রচীন অবশ্য নিজের শেষ ওভারে ফেরান নাইমকেও। ফুল লেংথের বলে সপাটে ব্যাট চালিয়েও লং অনে ব্লান্ডেলের তালুবন্দি হয়ে সমানসংখ্যক বলে ৩৯ রান করেই শেষ হয় নাইমের ইনিংস। আজাজ পাটেলের করা পরের ওভারে প্রায় একই ভঙ্গিতে ফিরে যান আফিফ হোসেনও।  

    তবে অন্য প্রান্তে উইকেটের পতনে ছন্দপতন হয়নি অধিনায়কের। প্রান্ত বদল করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় বাউন্ডারিও বের করতে থাকেন তিনি। শেষ বলে উইল ইয়াংয়ের দুর্দান্ত ক্যাচে শেষ হয় নুরুল হাসানের ৯ বলে ১৩ রানের ক্যামিও। মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত থাকেন ৩২ বলে ৩৭ রান করে।