• নিউজিল্যান্ডের বাংলাদেশ সফর
  • " />

     

    কিউইদের স্পিন-বিষে ৭৬ রানেই গুটিয়ে মাটিতে নেমে আসল বাংলাদেশ

    কিউইদের স্পিন-বিষে ৭৬ রানেই গুটিয়ে মাটিতে নেমে আসল বাংলাদেশ    

    বাংলাদেশ বনাম নিউজিল্যান্ড, ৩য় টি-টোয়েন্টি, মিরপুর (টস- নিউজিল্যান্ড/ ব্যাটিং)

    নিউজিল্যান্ড ১২৮/৫, ২০ ওভার ( নিকোলস ৩৬*, ব্লান্ডেল ৩০*, রচীন ২০, সাইফউদ্দিন ২/২৮, মাহমুদউল্লাহ ১/১০, মাহেদি ১/২৭)

    বাংলাদেশ ৭৬, ১৯.৪ ওভার ( মুশফিক ২০*, লিটন ১৫, নাইম ১৩, আজাজ ৪/১৬, ম্যাককঙ্কি ৩/১৫, রচীন ১/১৩)

    নিউজিল্যান্ড ৫২ রানে জয়ী


    আগের ম্যাচেই ইঙ্গিত দিয়েছিল ঘুরে দাঁড়ানোর, সেই প্রতিশ্রুতিকে বাস্তবে রুপ দিয়ে বাংলাদেশকে উড়িয়ে দিয়ে সিরিজে প্রথম জয় পেল নিউজিল্যান্ড। ষষ্ঠ উইকেটে হেনরি নিকোলস ও টম ব্লান্ডেলের অপরাজিত ৬৬ রানের জুটিতে ভর করে বাংলাদেশের সামনে ১২৯ রানের লক্ষ্য বেঁধে দেওয়ার পর আজাজ পাটেলের ৪ আর কলিন ম্যাককঙ্কির ৩ উইকেটে রানের বিশাল জয় পেয়েছে নিউজিল্যান্ড। হেরে গেলেও সিরিজে এখনো ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে বাংলাদেশ। 

    ১২৯ রানের লক্ষ্যে বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছিল আক্রমণাত্মক। তবে ৮ বলের ঝড়ে মুহূর্তেই এলোমেলো হয়ে যায় সেসব। ম্যাককঙ্কির করা তৃতীয় ওভারের প্রথম দুই বলেই চার মারেন লিটন দাস। পঞ্চম বলেই সুইপ করতে গেলে বল মিস করে হন এলবিডব্লিউ, থামেন ১১ বলে ১৫ রান করে। পরের ওভারে আক্রমণে এসে আজাজ পাটেল ফেরান এদিন তিনে নামা মাহেদি হাসানকে। এক বল পরেই বেরিয়ে এসে বাউন্ডারির জন্য লং অনে ম্যাককঙ্কির তালুবন্দি হয়ে রানের খাতা খোলার আগেই ফিরে যান সাকিব আল হাসান। এরপর আর কোনও ঝুঁকি না নেওয়ায় পাওয়ারপ্লেতে আর উইকেট না হারিয়ে বাংলাদেশ তোলে ৩০ রান।

    তবে পাওয়ারপ্লের পরের ওভারেই ঘটে বিপদ। রচীন রবিন্দ্রর অফ স্টাম্পের বাইরের বল স্টাম্পে ডেকে এনে ১৯ বলে ১৩ রান করে ফিরে যান মোহাম্মদ নাইম। নিজের বিশেষ দিনে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সামনে সুযোগ ছিল বিশেষ কিছু করার। তবে দলকে নিরাশ করে আজাজের নিরীহ একটি বলে এক্সট্রা কাভারে থাকা নিকোলসের হাতে সরাসরি ক্যাচ তুলে দিয়ে মাত্র ৩ রান করেই ফিরে যান তিনি। বাংলাদেশীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ আরও প্রসারিত করে আজাজের পরের বলেই ফিরে যান আফিফ হোসেনও। ১০ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর হয়ে দাঁড়ায় ৪৪/৬!

    ম্যাচ বাংলাদেশের মুঠো থেকে পুরোপুরি ছিনিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিল নিউজিল্যান্ড পরের ওভারেই। দুই ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম ও নুরুল হাসানের ভুল বুঝাবুঝির সুযোগ নিয়ে বোলিং প্রান্তে স্টাম্প ভেঙে দিয়েছিলেন রচীন। তবে সেবার কয়েক সেন্টিমিটার ব্যবধানে বেঁচে যান নুরুল। জীবন ফিরে পাওয়া নুরুল অবশ্য সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি, ম্যাককঙ্কির বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অনে ব্লান্ডেলের তালুবন্দি হয়ে শেষ হয় তার ১১ বলে ৮ রানের ইনিংস। কিউই স্পিনারদের ছেলেখেলার পাত্র হয়ে তাসের ঘরের মত লুটিয়ে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ। সেই আসা যাওয়ার মিছিলে এরপর নাম লেখান সাইফউদ্দিন, ম্যাককঙ্কির স্লাইডারে সপাটে ব্যাট হাকিয়ে মিস করে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যান ৮ রান করেই। আজাজ পাটেলের কিউইদের হয়ে পঞ্চম সেরা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি বোলিং ফিগারের অর্জনের দিনে ১৫ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাককঙ্কিও নিজের চার ওভারের কোটা পূর্ণ করেন নিজের ক্যারিয়ার সেরা ফিগার নিয়েই। 

    মুশফিক এক প্রান্ত আগলে রাখলেও এরপর নিউজিল্যান্ডের জয় ছিল শুধুই সময়ের ব্যাপার। দুই পেসার স্কট কুগেলাইন আর কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম সেই আনুষ্ঠানিকতা পূর্ণ করেন নাসুম আহমেদ আর মোস্তাফিজুর রহমানকে ফিরিয়ে। ৩৭ বলে ২০ রানে অপরাজিত মুশফিককে এক প্রান্তে আটকে রেখে বাংলাদেশকে তাদের মাঠে তাদের কৌশলেই পরাস্ত করে তাই বিশাল জয় তুলে নিয়েছে কিউইরা।

     

    তার আগে টসে জিতে ব্যাটিং নিয়ে ফিন অ্যালেনের কল্যাণে নিউজিল্যান্ডের শুরুটা হয়েছিল আক্রমণাত্মক। গত দুই মাচেই খরুচে প্রথম ওভার করা মাহেদি হাসানকে দুটি চার মেরে ১১ রান নেন অ্যালেন। তবে অ্যালেনের আক্রমণ বেশিক্ষণ টেকেনি। তৃতীয় ওভারেই অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আক্রমণে মোস্তাফিজুর রহমানকে আনলে থামতে হয় অ্যালেনকে। আউটের ধরনটাও সেই চিরচেনা- মোস্তাফিজের কব্জির মোচড়ে দেওয়া অফ কাটার, ধরতে না পেরে আগেই শটের জন্য ব্যাটসম্যানের ব্যাট এগিয়ে নেওয়া, ফলাফল ফিল্ডারের জন্য ক্যাচের অনুশীলন। ১০০তম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা মাহমুদউল্লাহর তালুবন্দি হয়ে এভাবেই শেষ হয় অ্যালেনের ১০ বলে ১৫ রানের ইনিংস। নিজের প্রথম ওভারেই উইকেট মেইডেন দেন মোস্তাফিজ। উইকেট পতনে খোলসবন্দী হতে এদিন অবশ্য কিউই ব্যাটসম্যানরা ছিলেন নারাজ। সাকিবের পরের ওভারেই উইকেটে নবাগত উইল ইয়াং মারেন দুই চার। হাত খুলে খেলার প্রত্যয়ে নামা নিউজিল্যান্ড ঐ এক উইকেট হারিয়েই পাওয়ারপ্লেতে সিরিজে তাদের সর্বোচ্চ ৪১ রান তোলে।

    তবে পাওয়ারপ্লের পরেই দৃশ্যপটে আসে পরিবর্তন। সাইফউদ্দিনের করা ৭ম ওভারে ফ্লিক করতে গিয়ে পুরোপুরি মিস করে এলবিডব্লিউ হয়ে শেষ হয় ইয়াংয়ের ২০ রানের ইনিংস। দুই বল পরেই একই ভঙ্গিতে রানের খাতা খোলার আগেই সাইফউদ্দিনের স্লোয়ারে পরাস্ত হয়ে ফিরে যান কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম। এরপর থেকে রানের খোঁজে হন্যে হয়ে ফেরা কিউই ব্যাটসম্যানদের ওপর চেপে বসে বাংলাদেশ।  সেই চাপেই দশম ওভারে মাহমুদউল্লাহর সোজা বল বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে পুরোপুরি মিস করে বোল্ড হয়ে ২০ রানে ফেরেন রচীন রবিন্দ্র। প্রথম দুই ওভারে এদিন বেশ রান দিলেও এগারতম ওভারে এসে সবচেয়ে বড় উইকেটটি পান সেই মাহেদিই। মাহেদির বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ৫ রানেই শেষ হয় আগের দিন একাই লড়ে যাওয়া কিউই অধিনায়ক টম ল্যাথামের ইনিংস। পাওয়ারপ্লেতে যেই নিউজিল্যান্ড তুলেছিল ৪১ রান সেই তারাই পরের ছয় ওভারে একদম মুখ থুবড়ে পড়ে, ৪ উইকেট খুইয়ে তোলে ২৬ রান।

    তবে এরপর নিজেদের গুছিয়ে নেয় দুই ব্যাটসম্যান হেনরি নিকোলস ও টম ব্লান্ডেল। মাঝের সময়টুকু ধরে খেলে পরে তারা হাত খোলে। মোস্তাফিজের ১৮তম ওভার থেকে তো দুই চারে নিকোলস নিয়ে বসেন ১৩ রান। নিকোলসের সাথে যোগ দিয়ে বাউন্ডারি বের করার দিকে মন দেন ব্লান্ডেলও। তবে মোস্তাফিজের করা শেষ ওভারে আউট হতে পারতেন দুইবার। প্রথম বলেই চার মারার পরের বলেই তার সহজ ক্যাচ ফেলে দেয় সাকিব। এরপর পঞ্চম বলে আম্পায়ার তাকে দেখিয়েছিলেন প্যাভিলিয়নের পথ। তবে রিভিউ নিয়ে সেই যাত্রায় বেঁচে যান তিনি। ব্লান্ডেল তাই অপরাজিত থাকেন সমানসংখ্যক বলে ৩০ রান করে, আর নিকোলস অপরাজিত থাকে ২৯ বলে ৩৬ রান করে। আর কোনও উইকেট না হারিয়ে শেষ পাঁচ ওভারে ৪৬ রান তুলে নিউজিল্যান্ড গিয়ে থামে ১২৮ রানে।