ক্রাইস্টচার্চে দুঃস্বপ্নের আরেক দিনে ইনিংস পরাজয়ের সামনে বাংলাদেশ
২য় টেস্ট, ক্রাইস্টচার্চ (টস- বাংলাদেশ/বোলিং)
নিউজিল্যান্ড- ৫২১/৬ ডি. (ল্যাথাম ২৫২, কনওয়ে ১০৯, ব্লান্ডেল ৫৭*, শরিফুল ২/৭৯, এবাদত ২/১৪৩, মুমিনুল ১/৩৪)
বাংলাদেশ- ১২৬ ( ইয়াসির ৫৫, নুরুল ৪১, লিটন ৮, বোল্ট ৫/৪৩, সাউদি ৩/২৮, জেমিসন ২/৩২)
২য় দিন, স্টাম্পস
হ্যাগলি ওভালের ২২ গজে সবুজ গালিচা বিছিয়ে বাংলাদেশকে কাবু করার যেই প্রত্যাশা নিউজিল্যান্ডের ছিল তা টস হারায় প্রথম দিনে পূরণ না হলেও দ্বিতীয় দিনে সুযোগ মিলতে ঠিকই করে দেখিয়েছেন তাদের পেসাররা। টম ল্যাথামের ম্যারাথন ২৫২ রানের ইনিংসের পর দুই ইনিংসেই বাংলাদেশকে ১২৬ রানে গুটিয়ে ফেলে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে এখন চালকের আসনে কিউইরা।
ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশের এরকম ভরাডুবি হবে তা আঁচ করা কঠিন ছিল; মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের সেই ব্যাটিং পারফর্ম্যান্স এখন মনে হচ্ছে বহুদুরের কোনও এক সুখস্মৃতি। এই উইকেটেই দেড় দিন কিউইদের ব্যাট করতে দেখার পর বাংলাদেশ তেমন কোনও শিক্ষাগ্রহণ করেছে বলে মনে হল না। সবুজের আস্তরণ কিছুটা হলেও কমে এসেছিল দেড় দিনে। যেটুকুই অবশিষ্ট ছিল তাই শেষমেশ যথেষ্ট হয়ে দাঁড়াল ট্রেন্ট বোল্ট-টিম সাউদিদের জন্য।
বোল্ট তার চিরচেনা সুইংয়ে বাংলাদেশীদের ব্যতিব্যস্ত করে রেখেছিলেন শুরু থেকেই। শুরুতেই সাদমান ইসলামকে ফেরান স্লিপে তালুবন্দি করে। অভিষিক্ত মোহাম্মদ নাঈম এরপর সাউদির বল স্টাম্পে ডেকে এনে ফেরেন রানের খাতা খোলার আগেই। কিছুক্ষণ পর বোল্টের আউটসুইঙ্গারে সাদমানের পরিনতি বরণ করতে হয় নাজমুল হোসেন শান্তকেও। পরের ওভারে প্রথম বলেই বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হকের স্টাম্প উপড়ে ফেলেন সাউদি; ১১ রান তুলতেই তখন বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলেছে ৪ উইকেট! চা-বিরতিতে যাওয়ার সময় বাংলাদেশের স্কোরবোর্ড বলছিল: ২৭/৪।
চা-বিরতি থেকে ফিরেই দ্বিতীয় বলেই লিটন দাসকে উইকেটের পিছনে তালুবন্দি করেন বোল্ট। পরিসংখ্যানবিদরা ততক্ষণে হয়ত সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহের বিভিন্ন রেকর্ড ঘাটতে শুরু করে দিয়েছিল। ঘোরতর অপমানের হাত থেকে তখন বাংলাদেশকে উদ্ধার করেন ইয়াসির আলী ও নুরুল হাসান। পঞ্চাশ রানের জুটি গড়ার পরে নুরুল খেলছিলেন যথেষ্ট স্বাচ্ছন্দ্যে; আর অন্য প্রান্ত আগলে ছিলেন ইয়াসির। দৃশ্যপটে তখনই প্রত্যাবর্তন ঘটে সাউদির; ৪১ রানে থাকা নুরলকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তিনি। শিকারের ঘ্রাণ পেয়ে বোল্টও যোগ দেন উইকেট শিকারের মিছিলে। মেহেদী হাসান মিরাজের স্টাম্প উপড়ে ৪র্থ কিউই হিসেবে ৩০০ টেস্ট উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি।
বোল্ট-সাউদিদের মিছিলে এরপর কাইল জেমিসন যোগ দেন তাসকিন আহমেদকে ফিরিয়ে। তার পরের বলেই অবশ্য নিজের প্রথম টেস্ট ফিফটি পূর্ণ করেন ইয়াসির। সেই ইয়াসিরের প্রতিরোধও ভেঙে যায় শেষদিকে কিছু রান তুলে নেওয়ার তাড়ায়। জেমিসনের খাটো লেংথের বলে পুল করতে গিয়ে মিড উইকেটে ড্যারিল মিচেলের কাছে ক্যাচ দিয়ে তিনি ফেরেন ৫৫ রানে। তবে কিউইদের উইকেটের উৎসব যার হাত ধরে শেষ হয়েছিল, শরিফুল ইসলামের স্টাম্প উপড়ে শেষটাও করেন সেই বোল্ট; পূর্ণ করেন ৫ উইকেট। দিনের শেষ ওভারে বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ১২৬ রানেই।
অথচ দিনের প্রথম সেশনে ঘুরে দাঁড়ানো বাংলাদেশ যে নতুন উদ্যমে এই টেস্টেও আশাব্যাঞ্জক কিছু করবে সেরকমটাই প্রত্যাশা ছিল হয়ত। আগের দিনে ৯৯ রানে থাকা ডেভন কনওয়ে দিনের প্রথম বলেই নিজের ৩য় সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। তবে মেহেদী হাসান মিরাজের দারুণ সরাসরি থ্রোতে ১০৯ রানেই ফিরে যান তিনি। নিজের শেষ টেস্টে ব্যাট করতে নামা রস টেইলর ছিলেন সপ্রতিভ। তবে ২৮ রানেই তিনি এবাদত হোসেনের বল শরিফুলের হাতে তুলে দিয়ে ফিরে যান। কিছুক্ষণ পরেই এবাদতের বলে স্টাম্পের পেচনে ক্যাচ দিয়ে আরও একবার শূন্য রানে ফিরে যান হেনরি নিকোলস। শরিফুলের বলে নুরুলের তালুবন্দি হয়ে এরপর ফিরে যান ড্যারিল মিচেলও।
দ্রুত ৪ উইকেট তুলে নিয়ে দারুণভাবে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়ালেও পরের সেশনে আরও একবার বাংলাদেশকে ব্যাটিং প্রশিক্ষণ দেন ল্যাথাম, সঙ্গী এবার টম ব্লান্ডেল। ব্লান্ডেল তো পুরো সময়ই খেলে গিয়েছেন ওয়ানডে মেজাজে। এদিন প্রথম সেশনে তাসকিন আহমেদকে সুযোগ দিয়ে বেঁচে যাওয়ার পর দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি পূর্ণ করে ল্যাথামও ছিলেন মারমুখী মেজাজে। দ্রুত রান তুলতে গিয়েই অবশ্য শেষ হয় তার ইনিংস। মুমিনুল হককে ছয়,চার, ছয় মারার পরের বলেও বল মাঠছাড়া করতে গিয়ে বল আকাশে ভাসিয়ে দেন; ইয়াসিরের ক্যাচে ২৫২ রান করে ফেরার সময় হ্যাগলি ওভালে যেকোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ রানের ইনিংসের রেকর্ড গড়ে তবেই ফেরেন। ল্যাথাম ফিরলেও ফিফটি পূর্ণ করেন ব্লান্ডেল। ৫২১ রানে ইনিংস ঘোষণা করার আগে ল্যাথাম-ব্লান্ডেলরা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন এই উইকেটে কীভাবে ব্যাট করতে হবে। ক্লান্তি বা প্রায়োগিক জ্ঞানের অভাব-কারণ যাই হোক, বাংলাদেশ তা ধরতে পারেনি। আগামীকাল ভুলভ্রান্তি সংশোধন করে কিউই পেসারদের সামলাতে না পারলে ৩৯৫ রানে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশের সামনে তাই অপেক্ষা করছে ইনিংস হার।