• বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ড সফর
  • " />

     

    ইনিংস পরাজয়ের পরিচিত দিনে সান্ত্বনা লিটনের ব্যাটিং

    ইনিংস পরাজয়ের পরিচিত দিনে সান্ত্বনা লিটনের ব্যাটিং    

    ২য় টেস্ট, ক্রাইস্টচার্চ (টস- বাংলাদেশ/বোলিং)

    নিউজিল্যান্ড- ৫২১/৬ ডি.

    বাংলাদেশ- ১২৬ ও ২৭৮(ফ/অন) ( লিটন ১০২, মুমিনুল ৩৭, নুরুল ৩৬, জেমিসন৪/৮২, ওয়্যাগনার ৩/৭৭, টেইলর ১/০)

    নিউজিল্যান্ড ইনিংস ও ১১৭ রানে জয়ী


    ঐতিহাসিক এক টেস্ট জয়ের পরের টেস্টেই সেই বহুল পরিচিত রুপে বাংলাদেশ। টেস্টের তৃতীয় দিনেই ইনিংস ব্যবধানে হেরে বসল তারা। লিটন দাসের দুর্দান্ত ১০২ রানের ইনিংস গ্লানির এই পরাজয়ে হয়ে থেকেছে কেবলই বিনোদন হয়েই। বাকি ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় লড়াই করার রসদও তাই জোগাতে পারেনি স্রোতের বিপরীতে খেলা লিটনের এই  ইনিংস। 

    দিনের শুরুতেই যখন নিউজিল্যান্ড ফলোঅন চাপিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায় তখন বোধহয় লিটন ভাবেননি তাকে এরকম একটা ইনিংস খেলেও ইনিংস ব্যবধানে পরাজয়ের আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়তে হবে। মোহাম্মদ নাঈম ও সাদমান ইসলামের ওপেনিং জুটি দিনের শুরুটা দেখেশুনেই খেলে। তবে মনোযোগ হারিয়ে বসা সাদমান কাইল জেমিসনের লেগ সাইডের এক বলে টোকা দিয়ে বসলে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন টম ব্লান্ডেল। এরপর উইকেটে এসে নিল ওয়্যাগনারের সাথে বেশ মনস্তাত্ত্বিক লড়াই হয় নাজমুল হোসেন শান্তর। লাগাতার বাউন্সার সামলানোর বদলে শান্ত তাকে আক্রমণ করতে থাকেন, এমনকি একবার বল মাঠছাড়াও করেন। তবে শেষ হাসি হাসেন ওই ওয়্যাগনারই; কোমরের ওপরে দেওয়া বাউন্সার শান্ত পুল করলে ডিপ ফাইন লেগে থাকা বোল্ট দারুণ ক্যাচ ধরেন। সেই সত্ত্বেও প্রথম সেশনে ৭৪ রান তুলে বাংলাদেশের শুরুটা আশাব্যঞ্জক ছিল বলতে হয়। 

    তৃতীয় দিনে ঘাসের প্রলেপ একেবারেই কমে আসায় সেই প্রথম সেশনের শুরুর ওপর ভর করে বাংলাদেশ ইনিংস পরাজয় এড়াতে পারবে সেরকম আশায় হয়তো অনেকেই ছিলেন। অভিষিক্ত মোহাম্মদ নাঈমের দৃঢ় ইনিংস যে আরও লম্বা হবে সেটা হয়তো তিনিও ভাবছিলেন। হলো না ল্যাথামের দুর্দান্ত ক্যাচে। নাঈমের ১৬০ মিনিটের ইনিংসের অবসানের পর উইকেট দিয়ে বসেন অধিনায়ক মুমিনুল হক। বেশ বাইরের বল তাড়া করে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় তার ৩৭ রানের ইনিংস। বিপদের গন্ধ পেয়েই আরো চেপে বসেন ওয়াগনার। বিষাক্ত এক বাউন্সারে ইয়াসির আলীকে কাবু করে দারুণ এক স্পেল দিয়ে মুহূর্তেই ম্যাচ নিয়ে আসেন নিউজিল্যান্ডের দিকে।

    তবে নিউজিল্যান্ডের বিজয়োৎসবকে প্রলম্বিত করে লিটন দাস ও নুরুল হাসানের দ্রুতগতির জুটি। দুজনের শতরানের সেই জুটিতে আগ্রাসী ভূমিকায় অবশ্য ছিলেন নুরুল। জেমিসনকে মিড অফের ওপর দিয়ে মারতে গিয়েই আউট হন নুরুল, ৩৬ রান করে। বোল্ট- জেমিসন দের লাইন ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া লিটন এরপরে আরো আগ্রাসী হয়ে ওঠেন। মাঝে মেহেদী হাসান মিরাজ ফিরে গেলে লিটনের আক্রমণ ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না বললেই চলে। শেষ ৯ বলে ৩১ রান করে মাত্র ১০৬ বলে পূর্ণ করেন তার দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি। পুরো মাঠ জুড়ে খেলা লিটন যোগ্য সঙ্গ পেলে হয়ত দারুণ এক ইনিংস দিয়েই ইনিংস পরাজয় এড়াতে পারতেন। তবে দ্রুত রান তোলার চাপ মাথায় নিয়েই জেমিসনের সামান্য ভেতরে ঢোকা বল মিস করে বসেন; ১০২ রানে ফেরেন এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে। জেমিসনকে মারতে গিয়ে শরিফুলও ফিরলে বাকি ছিল শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। ওভার শেষে তাসকিনের বদলে এবাদত হোসেন যখন স্ট্রাইকিং প্রান্তে তখনই বিদায়ী উপহার দেওয়ার জন্যই রস টেইলরের হাতেই বল তুলে দেন ল্যাথাম। ব্যাট হাতে তেমন কিছু করতে না পারলেও টেইলর টেস্ট অঙ্গন থেকে তার বিদায়কে ঠিকই স্মরণীয় করে রাখলেন। এবাদতের উইকেট নিয়েই টানলেন ম্যাচ ও টেস্ট ক্যারিয়ারের ইতি।  

    টেইলরের বিদায় যতটা সুখকর হল বাংলাদেশের হল ততটাই লজ্জাজনক। লিটনের এই ইনিংস ছাড়া বলার মত কিছুই পায়নি তারা এই হ্যাগলি ওভালের সবুজ চাদর থেকে। প্রাপ্তি বলতে ওই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে মুমিনুলের ট্রফি তুলে ধরাই। তিন দিনেই টেস্ট হেরে বসলেও সামনের দিনগুলোতে এই ছবিটাই তাই হতে পারে তাদের টেস্ট অঙ্গনে ঘুরে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা।