• অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ ২০২২
  • " />

     

    ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন থেকে অষ্টম বাংলাদেশ: প্রত্যাশা পূরণের হতাশার বিপরীতে প্রাপ্তি আরিফুল

    ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন থেকে অষ্টম বাংলাদেশ: প্রত্যাশা পূরণের হতাশার বিপরীতে প্রাপ্তি আরিফুল    

    আগেরবারের চ্যাম্পিয়ন। অথচ এবার অষ্টম হয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করা । বিশ্বকাপের গত আসরে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব ১৯। কোয়ার্টার ফাইনালে এবার প্রতিপক্ষ ছিল সেই ভারতই। কিন্তু তাদের হারাতে পারেননি রাকিবুল হাসান-তানজিম সাকিবরা। বিদায় নিতে হয়েছে সুপার লিগ থেকে। আসর ঘুরতে না ঘুরতেই কেন এই ছন্দ পতন?

    এর নেপথ্যে আছে পর্যাপ্ত ম্যাচ খেলার অভাব এবং অভিজ্ঞতা। বাংলাদেশের বিশ্বজয়ী ব্যাচটার আকবর-শামীমরা একসাথে ছিলেন প্রায় দুই বছর। বিশ্বকাপের আগে দুই বছরে ৩০টি যুব ওয়ানডে খেলেছিলেন তারা। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়াটাও ছিল তাই দারুণ। যার ফলাফল দেখা গেছে গত বিশ্বকাপের মাঠেই। 

    এবারের ব্যাচের আইচ মোল্লা-মেহেরব হাসানরা বিশ্বকাপে গেছেন ১২ ম্যাচের অভিজ্ঞতা নিয়ে। বড় মঞ্চে নিজেদের  শক্তি-দুর্বলতা আর সক্ষমতা প্রমাণের অভাবটাও তাই রয়েই গেছে। মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণেই এই পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে বাংলাদেশের যুবাদের। নিজেদের মধ্যে অনুশীলন ম্যাচের ঘাটতিও রয়ে গেছে একই কারণে। 

    দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন মেহেরব হাসান। কিন্তু বিশ্বকাপ স্কোয়াডে অন্তর্ভূক্তির জন্য ভারতে তিন দলের সিরিজে নেতৃত্ব বদল হয়ে বর্তায় রাকিবুলের কাঁধে। স্কোয়াডের শক্তি বাড়াতে রাকিবুলের সাথে ডাক পড়ে সাকিব ও প্রান্তিক নওরোজ নাবিলের। আগেরবারের স্কোয়াডে নাবিল থাকলেও ম্যাচ খেলেননি কোনো। তবে এবার শুরু থেকেই দলের সাথে ছিলেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। যদিও বিশেষ  কিছু আসেনি তার ব্যাট থেকে। বাকিরাও ব্যর্থতার মিছিলেই। শেষদিকে এর ব্যতিক্রম ঘটিয়েছেন আরিফুল ইসলাম। পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্লে অফের দুই ম্যাচেই করেছেন দুই সেঞ্চুরি। 

    আরিফুলের দুই সেঞ্চুরি বাদ দিলে উল্লেখযোগ্য তেমন কিছু দেখা যায়নি বাংলাদেশি যুবাদের ব্যাট থেকে।  গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের বোলারদের তোপে মাত্র ৯৭ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। অবশ্য পরের দুই ম্যাচে কানাডা ও আরব আমিরাতকে হারিয়ে সেই ধাক্কা সামলে ওঠেন বাংলার তরুণরা। কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত হয় এই দুই জয়ে। 

    সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে  প্রতিপক্ষ ছিল ভারত, যারা শক্তি-সামর্থ্যে ঢের এগিয়ে ছিল বাংলাদেশের চেয়ে। করোনাজর্জরিত ভারত সেই ম্যাচে নেমেছিল পূর্ণ শক্তির একাদশ নিয়ে। মাঠেও দেখালো, তারা কেন ফেভারিট। 

    বাংলাদেশের গলার কাটা সেই ব্যাটিংই। ভারতের বোলারদের দাগানো তোপের কোনো উত্তর দিতে পারেননি নাবিল-আইচরা। মাত্র ১১১ রানে অল আউট হলে ভেঙে যায় শিরোপা স্বপ্ন। সেই ম্যাচে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোরার মেহেরব।  

    সেমিফাইনাল প্লে অফেও কাটেনি ব্যাটিংয়ের দৈন্যদশা। পাকিস্তানের বিপক্ষে আগে ব্যাট করে ১৭৫’ এ থমকে যাওয়া। সেই ১৭৫ এর, ১০০ রানই এসেছে আরিফুলের ব্যাট থেকে। ফ্লিক, কভার ড্রাইভ, পুল শটের পসরা সাজিয়ে দারুণ এক সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। অবশ্য তার সেঞ্চুরি মলিন হয়ে যায় পাকিস্তানের দৃঢ় ব্যাটিংয়ে। হাতে ছয় উইকেট আর ২১ বল রেখে ম্যাচটা জিতে নেয় পাকিস্তান।

    শেষটাও রাঙাতে পারতো বাংলাদেশ। আরিফুলও সেঞ্চুরি করে দলের বোলারদের লড়াইয়ের জন্য যথেষ্ট রান স্কোরবোর্ডে জমা করেছেন; ২৯৩। কিন্তু সপ্তম স্থান নির্ধারণী এই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার ‘বেবি এবি’ খ্যাত ডেওয়াল্ড ব্রেভিসের দাপটেই উড়ে গেল বাংলাদেশ।

     

    ভবিষ্যতের তারকা হয়ে ওঠার এই মঞ্চে বাংলাদেশের প্রাপ্তি বলা চলে আরিফুলকে। জাতীয় দলের জার্সিতেও এভাবে মাতাতে চাইবেন নিশ্চিত। বিশ্বকাপের আগে আইচ মোল্লাহও ছিলেন দারুণ ফর্মে। টুর্নামেন্টে বড় ইনিংস খেলতে না পারলেও, ব্যাটিংয়ের ধরন তার ‘পজিটিভ’ ই। পেসার রিপনের কথা বলা যায় আলাদা করে। ডানহাতি এই পেসার টুর্নামেন্ট শেষ করেছেন তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৪ উইকেট নিয়ে। 

    রিপনের সাথে অভিজ্ঞ তানজিম হাসান সাকিব, রাকিবুল ছিলেন বোলিং আক্রমণের নেতৃত্বে। এস এম মেহেরব, নাইমুর রহমানদের নিয়ে বাকিটা বেশ আঁটসাঁট ই ছিল। কিন্তু মাঠে এর প্রতিফলন খুব একটা ঘটাতে পারেননি তারা। শেষ দুই ম্যাচের হারের দায় তথা টুর্নামেন্টে ব্যর্থতার দায় নিতে হবে তাদের নির্বিষ বোলিং আক্রমণকেও। 

    শেষ পর্যন্ত ভুগিয়েছে বড় মঞ্চ বাংলাদেশি যুবাদের অনভিজ্ঞতা, পরিস্থিতি সামলানোর দক্ষতাই। সর্বোপরি পর্যাপ্ত ম্যাচ খেলার অভাব। ছোট দলগুলোর বিপক্ষে জ্বলে উঠলেও, বড় প্রতিপক্ষের সামনে বাংলাদেশের অসহায় আত্মসমর্পন।  সব মিলিয়ে শিরোপা ধরে রাখার মিশন শেষ হলো হতশ্রী পারফর্ম্যান্সে।