• অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ ২০২২
  • " />

     

    বেবি এবি ডি ভিলিয়ার্স: মিল শুধু ব্যাটিংয়ের ধরনেই শেষ নয়!

    বেবি এবি ডি ভিলিয়ার্স: মিল শুধু ব্যাটিংয়ের ধরনেই শেষ নয়!    

    বুক ঝুঁকিয়ে প্যাড ছুঁইছুঁই ব্যাটিং স্টান্স, সটান হেড পজিশন, পপিং ক্রিজে হেঁটে বেড়িয়ে খেলা শটে বলের ঠিকানা এক্সট্রা কভার কিংবা ডিপ ফাইন লেগের ওপারে। হাঁটু গেঁড়ে স্লগ সুইপের পর ব্যাটটা মাথার ওপর ধরে রাখা, চাউনি বলের গতিপথে। কখনো আবার ‘নো লুক’ শট। রিভার্স সুইপ কিংবা লেংথ বলে তুলে মারা; এসব দেখে অস্ফুট স্বরে মুখ ফসকে বেরিয়ে যেতে পারে, ‘‘আরে এটা তো এবি ডি ভিলিয়ার্স!’ ডেওয়াল্ড ব্রেভিসকে দেখে ভ্রম হতে পারে, ডি ভিলিয়ার্সই কি অবসর ভেঙে ফিরে এলেন! 

    ব্রেভিস আলোচনায় এসেছেন চলতি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ দিয়ে। টুর্নামেন্টে এই তরুণ ব্যাটসম্যান ছিলেন দারুণ ফর্মে। দল ভালো না করলেও  টুর্নামেন্ট শেষ করেছেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়ে। ভেঙে দিয়েছেন ১৮ বছরের পুরনো এক রেকর্ড। শিখর ধাওয়ানকে সরিয়ে হয়েছেন যুব বিশ্বকাপের এক আসরে সর্বোচ্চ রান করা ব্যাটসম্যান। ২০০৪ সালের যুব বিশ্বকাপে শিখর ধাওয়ান করেছিলেন ৫০৫ রান। ব্রেভিস এবার করেছেন ৫০৬ রান। দুই সেঞ্চুরির সাথে তিন ফিফটি। লেগস্পিনে উইকেটও নিয়েছেন সাতটি।

    অমন সাফল্যের নেপথ্যে কে আছেন, জানেন? স্বয়ং এবি ডি ভিলিয়ার্স। গত দুই বছর ধরে ব্রেভিসের ‘মেন্টর’ হিসেবে আছেন এই প্রোটিয়া কিংবদন্তি। ডি ভিলিয়ার্সের ছোঁয়াতেই আরো শাণিত হয়েছেন ব্রেভিস। ব্যাটিংয়ের ধরনে মিলটা কাকতাল হিসেবে মেনে নিলেও, ব্রেভিসের ব্যাটিং দর্শনে যে ডি ভিলিয়ার্সের ছাপ আছে, তা তো মাঠেই দেখা গেছে। 

    দুজনের সাদৃশ্য আছে শিক্ষাজীবনেও। দুজনই পড়েছেন আফ্রিকার বিখ্যাত অ্যাফিস স্কুলে। যেখান থেকে উঠে এসেছেন ফাফ ডু প্লেসি, জ্যাক রুডলফ, নিউজিল্যান্ডের নিল ওয়াগনারের মতো ক্রিকেটাররা। দুজনের দেখাটা এক অনুষ্ঠানে। নিজের আদর্শ ক্রিকেটারকে সেদিন কাছে পেয়ে তাই কথা বলার সুযোগটাও হাতছাড়া করেননি। গল্পে গল্পে ডি ভিলিয়ার্সের মোবাইল নাম্বারটাও নেন। এরপর থেকেই চলতে থাকে ‘গুরু-শিষ্যর’ ক্রিকেট আলাপচারিতা। 

     

    এর আগেও ডি ভিলিয়ার্সের সঙ্গে দেখা হয়েছে ব্রেভিসের। প্রিটোরিয়া কালচারাল ক্লাবে সেবার ব্রেভিসের একটা সেলফির আবদার মিটিয়েছিলেন ডি ভিলিয়ার্স। সম্পর্ক গাঢ় হয়েছে অবশ্য স্কুলের হলরুমের আলাপচারিতার পরই।  

    সমস্যায় পড়লেই ব্রেভিস ফোন করতেন ভিলিয়ার্সকে। তিনিও ব্রেভিসকে কখনো মানা করেননি। নিজের বাসায় ডেকে নিয়ে নেট প্র্যাকটিস করিয়েছেন। নিজেও গেছেন ব্রেভিসের বাসায় বানানো নেটে। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বাতলে দিয়েছেন সমাধান। 

    দুজনের জার্সি নাম্বারও এক; ১৭। তবে জার্সির পেছনে নিজের হিরোর নাম্বারটা বসানোর আগে অনুমতি নিয়েছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে ব্রেভিস অবশ্য খেলেছেন চার নাম্বার জার্সি নিয়ে। ঘরোয়া ক্রিকেটের এক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে পারফর্ম করেই নির্বাচকদের নজরে আসেন।

    ইস্টার্ন্সের বিপক্ষে ২৫ বলে ৪৬ রানের ঝড়ো ইনিংস এসেছিল তার ব্যাট থেকে। তার এই ভয়ডরহীন ব্যাটিংয়ের নেপথ্যে আছে কেভিন পিটারসেনের ব্যাটিং দর্শন, ‘নিজের খেলাটা খেলো, বোলার নয় বল দেখো।’ 

    ক্রিকেট আইকনদের অনুপ্রেরণার পাশাপাশি ব্রেভিসের পক্ষে ছিল তার চারপাশের পরিবেশও। ব্রেভিসের ভাষ্যমতে, ‘ক্রিকেটটা তার রক্তে।’ আধো আধো বুলিতে তার প্রথম কথাটা ছিল ‘বল’। ক্রিকেটের প্রতি যার এমন টান, তার বেড়ে ওঠাও তেমনই হবে। ভাই রায়নার্ডের সাথে ব্যাকইয়ার্ড ক্রিকেটে শুরু। এখন এসে দাঁড়িয়েছেন অনন্য এক মঞ্চে। যেখানে তারই জয়জয়কার। 

    ধীরে ধীরে এগিয়েছেন নিজের লক্ষ্য ধরে। স্কুল পাশ করার বছরে চুক্তিবদ্ধ হন নর্দান প্রভিন্সের সঙ্গে। কৈশোরেই পুরোদমে পেশাদার ক্রিকেট। খানিকটা হাঁপিয়েও ওঠেন কিশোর ব্রেভিস। তবে ক্রিকেটকে ভালোবাসেন বলেই, বাকিসব পাশ কাটিয়ে গেছেন। এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, ‘ক্রিকেটের জন্য অনেক কিছুই বিসর্জন দিয়েছি। স্কুলের স্মৃতি মনে পড়ে। কত পার্টিতে যাইনি কেবল ক্রিকেটের জন্যই।’

    কৈশোরে কত পার্টি-উৎসবই না মিস করেছেন ব্রেভিস। কিন্তু ব্যাট হাতে যেভাবে ক্রিকেট উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন, স্কুল জীবনের ‘মিস’ করা পার্টির আফসোস হয়তে উড়েই গেছে তার। 

    ব্রেভিসের জীবনে নতুন মচ্ছব হিসেবে আসতে পারে আইপিএল। মেগা অকশনের জন্য বাছাই করা ৫৯০ ক্রিকেটারের মধ্যে তিনিও আছেন। যুব বিশ্বকাপে যেভাবে খেলেছেন, ক্রিকেটের রমরমা সেই দুনিয়াতে তাকে নিয়ে যেতে পারে আইপিএলের যেকোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি। 

    প্রিয় ক্রিকেটার ডি ভিলিয়ার্স খেলতেন রয়েল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে। ‘বেবি এবি’র প্রিয় আইপিএল দলটাও তাই। অবশ্য বিরাট কোহলির জন্যও তার মনে আলাদা জায়গা আছে।  বেঙ্গালুরুর জার্সি পরে ইন্সটাগ্রামে একটা ছবিও পোস্ট করেছিলেন ব্রেভিস। পুরনো সেই ছবি এখন এসেছে আলোচনায়। গুঞ্জন উঠেছে, ব্রেভিসকে দলে নিতে পারে বেঙ্গালুরু ফ্র্যাঞ্চাইজি। 

    যদিও দক্ষিণ আফ্রিকার আর দশটা তরুণ ক্রিকেটারের মতো ব্রেভিসের লক্ষ্যও একই। প্রোটিয়াদের জাতীয় দল। সামনে দীর্ঘ একটা পথ। কঠিন সেই পথে  শক্তি, সামর্থ্য, ধৈর্য্যর পরীক্ষা তো আছেই। দিতে হবে মানসিক দৃঢ়তার অগ্নিপরীক্ষাও। উত্থান-পতন, অফফর্ম, ক্রিকেটের রঙ বদল, ইঞ্জুরিসহ আরো কত বাধা। সেই কঠিন পথে ব্রেভিস কতটা কী করতে পারবেন, উত্তর দেবে সময়।