• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    লুইজ দিয়াজ: ক্ষুধা-দারিদ্র‍্য জয় করে অ্যানফিল্ডের রত্ন

    লুইজ দিয়াজ: ক্ষুধা-দারিদ্র‍্য জয় করে অ্যানফিল্ডের রত্ন    

    আপনার কাছে কলম্বিয়া মানে কী? কুখ্যাত ড্রাগ লর্ড পাবলো এস্কোবার? তাকে নিয়ে বানানো নেটফ্লিক্স ওয়েব সিরিজ নারকোস? কিংবা আধুনিক সময়ের রাদামেল ফ্যালকাও-হামেস রদ্রিগেজদের মতো তারকাদের কেউ? এই প্রশ্নের উত্তরে আপনার মনে এসবই আসবে হয়তো। তবে কলম্বিয়ার পতাকা হাতে আলোচনায় এসেছেন নতুন একজন। লুইস দিয়াজ। দারিদ্র্য, ক্ষুধা আর অপুষ্টিকে জয় করে যে ফুটবলার এখন মাঠ মাতাচ্ছেন লিভারপুলের জার্সিতে। 

    দিয়াজ বেড়ে উঠেছেন স্নো ক্যাপ মাউন্টেন ঘেরা ক্যারিবিয়ান উপকূলের ছোট্ট এক শহর বারাংকাসে। সেখানেই ফুটবলের শুরু তার আদর্শ মানতেন রোনালদিনহোকে। দিয়াজের সবচেয়ে বড় ব্রেক থ্রুটা এসেছিল ২০১৫ সালে। আদিবাসীদের কোপা আমেরিকার বাছাইয়ে তিনি নজর কেড়েছিলেন কার্লোস ভালদেররামার। স্বাস্থ্যহীন- লিকলিকে গড়নের হলেও ফুটবলীয় দক্ষতা দিয়ে দিয়াজ ঠিকই জায়গা করে নেন ২৬ জনের স্কোয়াডে। টুর্নামেন্ট খেলতে চড়ে বসেন চিলির বিমানে। বাছাইপর্বে ছিল ৪০০ জন তরুণ। 

    দেশে ফিরে ট্রায়াল পার হয়ে জায়গা করে নেন দ্বিতীয় সারির ক্লাব বারানকুইলা এফসিতে। সেই ক্লাবে সতীর্থরা তাকে ডাকতেন ‘ফিদেও’ বলে। ফিদেও মানে নুডলস। তাই অপুষ্টিতে ভোগা দিয়াজের স্বাস্থ্য ফেরাতে ক্লাব তাকে দেয় বিশেষ এক ডায়েট প্ল্যান। তখন ১০ কেজি ওজন বাড়াতে হয়েছিল দিয়াজকে। সাথে আবাসন, জিম ও কেন্দ্রীয় চুক্তিসহ যাবতীয় সকল সুবিধাই ক্লাবটি দিয়েছিল তাকে। 

    তারপর ক্যারিবিয়ান উপকূলের সবচেয়ে বড় ক্লাব অ্যাথলেটিকো জুনিয়রের ইয়ুথ প্রজেক্টে জায়গা করে নেন তিনি। পরিচিতি পেতে শুরু করেন সেই অ্যাথলেটিকো জুনিয়রের জার্সিতেই। ২০১৮-১৯ মৌসুমে কলম্বিয়ান লিগ জিতেছিল দিয়াজের দল। 

    সেই মৌসুমের পারফর্ম্যান্স দিয়েই ডাক পান জাতীয় দলে। অভিষেক হয়েছিল আর্জেন্টিনার বিপক্ষে। এরপর ২০১৯ সালে খেলেছেন কোপা আমেরিকাও। লেফট উইংয়ে গতি আর প্লেমেকিং দিয়ে নজর কাড়েন বেশ কয়েকটি ক্লাবের। সেখান থেকে দিয়াজের নতুন ঠিকানা হয় পর্তুগীজ ক্লাব পোর্তো। 

    জীবন নতুন মোড় নেয় পোর্তোতে যোগ দেয়ার পর। দিয়াজের বর্তমান ফুটবল সত্তার ভিত আরও পোক্ত হয়েছিল পর্তুগালের এই ক্লাবটিতেই। নিজের লালিত প্রতিভা আর প্রতিষ্ঠিত ফুটবল সত্তার ঝলক দেখিয়েছিলেন কোপা আমেরিকার গত আসরে। সমান ৪ গোল করে লিওনেল মেসির সাথে যুগ্মভাবে হয়েছিলেন কোপা আমেরিকার সেই আসরের সর্বোচ্চ স্কোরার। 

    ওদিকে দিয়াজের ওপর দীর্ঘদিন ধরেই নজর রাখছিল লিভারপুল। লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপও বলেছিলেন, ‘দিয়াজকে একটা লম্বা সময় ধরে আমরা চোখে চোখে রেখেছি।’

    সেই ধারাবাহিকতায় পোর্তোতে ৩ মৌসুম কাটিয়ে ৫৭ মিলিয়িন ইউরোতে চলতি বছরের জানুয়ারিতে লিভারপুলে যোগ দেন দিয়াজ সেখানেও নিজের প্রতিভার ছাপ রেখে চলেছেন ২৫ বছর বয়সী এই কলম্বিয়ান। ইয়ূর্গেন ক্লপও তার শিষ্যর হার না মানা মানসিকতার কথা জানেন। নতুন ধাচের ফুটবল হলেও ইংল্যান্ডের সাথে বেশ মানিয়ে নিয়েছেন দিয়াজ। দিয়াজের সাবেক এক কোচ বলেছেন মানিয়ে নেয়ার গুণটা তার মধ্যে ছোটবেলা থেকেই আছে। অনেক কিছুর সাথে যুদ্ধ করে বারাংকাস থেকে ইংল্যান্ডে পৌঁছেছেন দিয়াজ। লম্বা এই পথে নিত্যদিনই তাকে লড়তে হয়েছে অভাব অপ্রতুল নাগরিক সুবিধা, দারিদ্র্য আর অপুষ্টির সাথে। যুব দলের ক্যাম্পে জয় করতে হয়েছে বোগোতার উচ্চতাও। কারণ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৬৪০ মিটার উঁচু বোগোতা। 

    সতীর্থদের সাথে দিয়াজ হেরে যেতেন বল দখলের লড়াইয়ে, কিন্তু হাল ছাড়তেন না। যার চাক্ষুস প্রমাণ দিয়াজের সাবেক কোচরা। সেই সাবেক কোচদেরই একজন কার্লোস পানিয়াগুয়া। লেফট উইং ধরে ছুটন্ত শিষ্যকে দেখে তিনি নিজেই বলেছেন, কলম্বিয়ান ফুটবলের নতুন রত্ন দিয়াজ। কলম্বিয়ান এই রত্নের ভাগ এখন পাচ্ছে লিভারপুলও

    দিয়াজ কেন একটু স্পেশাল? কারণ কলম্বিয়ার সেই অনুন্নত এলাকায় যেখানে ঠিকভাবে বেঁচে থাকাই দায়, সেখান থেকে কারো বিশ্ব ফুটবলে উঠে আসার গল্পটা তো একটু আলাদা হবেই। কলম্বিয়া মানে কেবলই এস্কোবারের দেশ নয়, সেখান থেকে উঠে এসেছেন লুইস দিয়াজও।