• এফএ কমিউনিটি শিল্ড
  • " />

     

    সালাহ-নুনেজের নৈপুণ্যে শিল্ড জিতে মৌসুম শুরু লিভারপুলের

    সালাহ-নুনেজের নৈপুণ্যে শিল্ড জিতে মৌসুম শুরু লিভারপুলের    

    লিভারপুল বনাম ম্যানচেস্টার সিটি বলতে গেলে এখন ইংলিশ ফুটবলের এল ক্লাসিকো। সাম্প্রতিক সময়ে এই সূচির চেয়ে মানসম্মত ফুটবল সম্ভবত উপহার দিতে পারেনি বিশ্ব ফুটবলের আর কোনো সূচিই। এই দুই দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে ইংলিশ ফুটবল মৌসুম শুরু হওয়াটা তাই অনেক নিরপেক্ষ ভক্তেরও চাওয়া ছিল। 

    শনিবার সেসব ভক্তদের হতাশ করেনি ইয়ুর্গেন ক্লপ ও পেপ গার্দিওলার শিষ্যরা। কমিউনিটি শিল্ড প্রাক-মৌসুমের অংশ হলেও এতে মোটেও প্রীতি ম্যাচের আমেজ ছিল না এবার। যেকোনো কাপ ফাইনালের মতো উত্তেজনা ছড়িয়ে এবং ৯০ মিনিটের হাই-ইনটেনসিটি ফুটবল পেড়িয়ে ম্যাচে ৩-১ গোলে জয়ী হয়েছে লিভারপুল। এরই মাধ্যমে তারা অধরা কমিউনিটি শিল্ড শিরোপাটি ঘরে তুলেছে ১৬ বছর পর। 

    লেস্টারের কিং পাওয়ার স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরুটা করে লিভারপুলই। তৃতীয় মিনিটেই রাইট উইং থেকে পর পর দুটি আক্রমণ করেন মোহামেদ সালাহ। গতি, ক্ষিপ্রতা ও চতুর ড্রিবলিংয়ে দুবারই জোয়াও ক্যান্সেলোকে বোকা বানিয়ে ভিতরে ঢুকেন সালাহ। দ্বিতীয় আক্রমণে তার নেওয়া শট অল্পের জন্য বাইরে দিয়ে যায়। 

    গোলরক্ষক ব্যতীত বাকিসব পরিচিত মুখদের নিয়ে মাঠে নামা লিভারপুল ম্যাচের প্রথম কয়েক মিনিটেই বুঝিয়ে দেয় গত মৌসুম যেখানে শেষ করেছে, সেখান থেকেই এই মৌসুম শুরু করছে তারা। সেই পরিচিত প্রেসিং, মিডফিল্ডে থিয়াগো-হেন্ডারসনদের কারিগরি, এবং দুই উইঙ্গার ও দুই ফুলব্যাক মিলে কোনাকুনি লং বল খেলা, পরিকল্পনামাফিক ফুটবলে শুরুতেই সিটিকে চাপে ফেলে দেয় ক্লপ বাহিনী। তাতে ফলও পায় তারা। ২১তম মিনিটে এক উইং থেকে অপর উইংয়ে লং বল চালাচালি শেষে বক্সের ডানপাশে বল পান সালাহ। দেরি না করে উইং থেকে ভিতরের দিকে চলে আসা আর্নল্ডের দিকে বল বাড়ান তিনি। বক্সের ঠিক সামনে থেকে প্রথম টাচেই আলতো করে শট নেন আর্নল্ড। তার শট নাথান আকের মাথায় হালকা লেগে, বাঁপাশের পোস্টে লেগে জালে জড়ায়। 

    এই গোলের পর কিছুটা আগ্রাসী হয়ে উঠে সিটিজেনরা। প্রেস ও কাউন্টার প্রেসের মাধ্যমে বলের দখল নিজেদের কাছে রাখতে শুরু করে তারা, করতে শুরু একের পর এক আক্রমণ। অধিকাংশ আক্রমণ ভার্জিল ভ্যান ডাইকরা ঠেকিয়ে দিলেও ৩৩-৩৪ মিনিটে পরিষ্কার দুটি সুযোগ তৈরি করে সিটি। বার্নার্দো সিলভার নিখুঁত ক্রসগুলোর শেষ প্রান্তে দুবারই ছিলেন নতুন সাইনিং আর্লিং হালান্ড। কিন্তু দুটি সুযোগই কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন এই নরওয়েজিয়ান স্ট্রাইকার। 

    ১-০ ব্যবধানে প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে দুই দলই সমানে সমান খেলতে শুরু করে। ম্যাচ আগের চেয়ে খোলামেলা হয়ে যাওয়ায় দুই দলই গোল দেওয়ার মতো সুযোগ তৈরি করতে শুরু করে। কিন্তু বদলি খেলোয়াড়েরা নামার আগে আর কোনো গোল আসেনি। ৫৮ মিনিটে বদলি নামা ফিল ফোডেন ও হুলিয়ান আলভারেজের নৈপুণ্যেই শেষ পর্যন্ত সমতা ফেরায় সিটি। ৭০ মিনিটে ফোডেনের নেওয়া শট আদ্রিয়ান প্রথম চেষ্টায় ফেরালেও তার দুর্বল সেভের জন্য ফিরতি বলটি যায় আলভারেজের পায়ে। দুই-তিন মিটার সামনে থেকে সেই বল জালে জড়াতে ভুল করেননি আকাশী জার্সিতে প্রথম প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলতে নামা এই আর্জেন্টাইন। 

    সিটির বদলি খেলোয়াড় আলভারেজ যেমন স্বাক্ষর রেখেছেন ম্যাচে, লিভারপুলের হয়ে তেমন স্বাক্ষর রেখেছেন বদলি নামা ডারউইন নুনেজ। চড়া দামে বেনফিকা থেকে কেনা এই উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার প্রথম প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচেই তার জাত চিনিয়েছেন। ৮০ মিনিটে তার হেড হাত দিয়ে ঠেকিয়ে লিভারপুলকে পেনাল্টি উপহার দেন সিটি ডিফেন্ডার রুবেন ডিয়াজ। দুর্দান্ত এক পেনাল্টি নিয়ে ৮৩ মিনিটে জয়সূচক গোলটি করেন সালাহ। 

    এই সালাহ ও নুনেজের কল্যাণেই যোগ করা সময়ের সিটির কফিনে শেষ পেরেকটি বসায় লিভারপুল। রাইট উইং থেকে নিখুঁত ক্রসে ব্যাকপোস্টে থাকা রবার্টসনকে খুঁজে নেন সালাহ। রবার্টসনের ভলিতে মাথা ছুঁইয়ে দলের তৃতীয় গোলটি করেন নুনেজ। 

    এরই মাধ্যমে ১৬ বছর কমিউনিটি শিল্ডের স্বাদ পেল অলরেডরা, ক্লপ পূর্ণ করলেন লিভারপুলের হয়ে সম্ভাব্য সকল শিরোপা জেতার রেকর্ড। স্বস্তিদায়ক এই জয়ে সিটির কাছে শেষদিনে লিগ হারানোর দুঃখ হয়তো কিছুটা হলেও ভুলতে পেরেছে ক্লপ বাহিনী।