এশিয়া কাপ ২০২২: কার শক্তি কোথায়, দুর্বলতা কী?
এশিয়া কাপ ২০২২
২৭ আগস্ট-১১ সেপ্টেম্বর
রাত ৮.০০টা (বাংলাদেশ সময়)
বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, আফগানিস্তান চূড়ান্ত হয়ে ছিল আগে থেকেই। বাছাইপর্ব পেরিয়ে এসেছে হংকং। এই ছয় দল নিয়ে মাঠে গড়াতে যাচ্ছে এশিয়ান ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই এশিয়া কাপ। এবারের আসর অনুষ্ঠিত হবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। যেখানে পলকেই বদলে যেতে পারে সকল হিসাব নিকাশ। ভারত-পাকিস্তান শিরোপার অন্যতম দুই দাবিদার হয়েই নামবে। বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টিতে এখনো কাঁচা। তবে নতুন করে শুরুর চেষ্টায় আছে বোর্ড, ম্যানেজমেন্ট।
শ্রীলংকা সেই অর্থে শিরোপার দাবিদার হয়তো না। কিন্তু ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা-দাসুনা শানাকারা হয়ে উঠতে পারেন জায়ান্ট কিলার। টি-টোয়েন্টির ডার্কহর্স রশিদ খান-মোহাম্মদ নবীদের আফগানিস্তান। এশিয়া কাপে আগের তিনবার খেলে কোনো সুখস্মৃতি না থাকা হংকং কি পারবে কোনো মিরাকল ঘটাতে? তবে সব মিলিয়ে এশিয়া কাপ পরীক্ষা-নিরীক্ষারও মঞ্চ দলগুলোর জন্য। কারণ সামনের অক্টোবরেই আসছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।
বাংলাদেশ
মোট ১৩ আসরে খেলে তিনবার রানার আপ। এশিয়া কাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সাফল্য সেটাই। এশিয়া কাপের জন্য ১৬ সদস্যের দল ঘোষণা করে হয়েছে আগেই। স্কোয়াডে রাখা হয়েছে তারুণ্য আর অভিজ্ঞতার সন্নিবেশ। কেমন করবে বাংলাদেশ? যেকোনো টুর্নামেন্টের আগেই এই প্রশ্ন উড়ে বেড়ায় দলকে ঘিরে। কিন্তু এবারের এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে হওয়ায়, দলকে ঘিরে নানান কিছুই ঘুরপাক খাচ্ছে। ক্রিকেটের এই ফরম্যাটে এখনো খাবি খায় বাংলাদেশ।
এই বছর ৮ ম্যাচ খেলে ৫টিতেই হেরেছে বাংলাদেশ। সেসব ম্যাচে বারবার ফুটে উঠেছে ব্যাটিংয়ের দৈন্যদশা। বাংলাদেশে সেই অর্থে টি-টোয়েন্টির প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যান নেই। সাব্বির রহমান, শামীম হোসেনদের দিয়ে নিষ্ফলা চেষ্টাও করা হয়েছিল।অবশ্য এবার ব্যাটিং পরামর্শক জেমি সিডন্স বেশ জোরেশোরেই পাওয়ার হিটিংয়ের দীক্ষা দিয়েছেন।
বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডার অনুমিতই। লিটন দাস ছিটকে গেছেন ইনজুরিতে। দলে আছেন দুই ওপেনার আনামুল হক বিজয় ও পারভেজ হোসেন ইমন। যদিও তারা যথেষ্ট অনভিজ্ঞ টি-টোয়েন্টির মঞ্চে; দুজন মিলে খেলেছে ২০ টি-টোয়েন্টি। তবুও দল তাকিয়ে থাকবে তাদের ব্যাটেই। আনকোরা এই ওপেনিং জুটি
চমক দিতে পারবেন কিনা, সেই উত্তর সময়ই দেবে। তাদের ব্যাক আপ হিসেবে আছেন আরেক বাঁহাতি ওপেনার নাঈম শেখ। যদিও তার রেকর্ড একেবারেই টি-টোয়েন্টি সুলভ নয়। টপ অর্ডারে থাকবেন নতুন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। চার নম্বর পজিশনে খেলার সম্ভাবনা আছে আফিফ হোসেন ধ্রুবর। মিডল ও লেট অর্ডারে মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকের সাথে থাকবেন মোসাদ্দেক-মিরাজও। একজন বোলার কম খেলালে দেখা যেতে পারে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকেও।
পেস আক্রমণের নেতৃত্বে মোস্তাফিজুর রহমান। স্কোয়াডে আছেন আরও দুই পেসার এবাদত হোসেন ও তাসকিন আহমেদ। উইকেট ও কন্ডিশন বিবেচনায় সেরা একাদশে সুযোগ পেতে পারেন বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ।
ভারত
এশিয়া কাপের সফলতম দল ভারত। সাতবার শিরোপা জিতেছে তারা। তারকায় ঠাসা তাদের ব্যাটিং অর্ডার। অধিনায়ক রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুল, বিরাট কোহলি ও সূর্যকুমার যাদব। ওপেনিংয়ে রোহিতের জায়গা পাকা, তার সঙ্গী হবেন কে? গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর থেকে মাত্র দুটি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন রাহুল। দীপক হুদা, ইশান কিশান, সুর্যকুমারদের দিয়েও ইনিংস উদ্বোধন করা হয়েছে বেশ কয়েকবার। তবে জমাটি জুটি দেখা যায়নি সেভাবে। অভিজ্ঞতার বিচারে রাহুলের দিকেই হয়তো বেশি ঝুঁকবে পাল্লা।
ওপেনার অদলবদল করে খেলালেও পাওয়ারপ্লেতে রানের ভাটা পড়েনি ভারতের। গত বিশ্বকাপের পর থেকে ভারত পাওয়ারপ্লেতে রান তুলেছে ওভারপ্রতি প্রায় ৯ করে। এ বছরও দল ছিল দারুণ ছন্দে। ২১ ম্যাচের চারটিতে হারলেও ১৬টি জিতেছে র্যাংকিংয়ের শীর্ষে থাকা ভারত। মিডল ও লেট অর্ডার সাজবে হার্দিক পান্ডিয়া-ঋষাভ পান্টের ব্যাটে। ডেথ ওভারের পরিক্ষীত ব্যাটার দিনেশ কার্তিকও আছেন তাদের ব্যাক আপ হিসেবে।
ইনজুরিতে পড়ে এশিয়া কাপ খেলতে পারছেন না জাসপ্রিত বুমরাহ। ভারতের পেস আক্রমণের ফ্রন্টম্যানের দায়িত্ব ডেথ আর পাওয়ারপ্লের ওভারে সামলাবেন ভুবনেশ্বর কুমার ও আভেশ খান। ভুবনেশ্বরে ভরসা রাখলেও, রোহিতের চিন্তার কারণ হতে পারেন আভেশ। ডেথ ওভারে তার ইকোনমি রেট ১১.৯। যদিও পাওয়ারপ্লেতেই সবচেয়ে সফল তিনি। স্পিনারদের মধ্যে আছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও যুঝভেন্দ্র চাহাল। আছেন রবি বিষ্ণয়ও।
পাকিস্তান
একইসাথে পাকিস্তানের শক্তি ও দূর্বলতার জায়গা তাদের ওপেনিং স্লট। বাবর আজম-মোহাম্মদ রিজওয়ান গত বিশ্বকাপ থেকেই আছেন দারুণ ছন্দে। পাকিস্তানকে সেমিফাইনালে তোলার নেপথ্যে ব্যাট হাতে বড় অবদান এই দুজনের। এ বছর খেলা টি-টোয়েন্টির পরিসংখ্যান বলছে তাদের শুরুটা দারুণ। পাওয়ারপ্লের ১১১ ব্যাটিং গড়ও সেই সাক্ষ্যই দিচ্ছে ।
কিন্তু তাদের স্ট্রাইকরেট আর উইকেট খোয়ানোর মাশুল পাকিস্তানকে দিতে হয়েছে বড় ম্যাচে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেমিফাইনালে ১০ ওভারে ৭১-১ থেকে ২০ ওভারে ১৭৬ করেছিল পাকিস্তান। সেখানেই খানিকটা পিছিয়ে পড়েছিল দল। দুজনের স্ট্রাইকরেট যথাক্রমে; বাবর ১২৯.৪৪ ও রিজওয়ান ১২৮.৮৩। যার প্রভাবটা গিয়ে পড়ছে ডেথ ওভারে। ডেথ ওভারে পাকিস্তানের ব্যাটিং গড় ১৭.৩০।
তবে পাকিস্তানের মিডল অর্ডার বেশ শক্তিশালি। ফখর জামান, আসিফ আলী, শাদাব খানদের স্ট্রাইকরেট ১৩০-এর বেশি। বোলিংয়ে ভুগতে পারে পাকিস্তান। কারণ হাঁটুর চোটে এশিয়া কাপে নেই শাহীন শাহ আফ্রিদি। তিনি না থাকায় বাড়ি দায়িত্ব থাকছে শাহনেওয়াজ দাহানি, নাসিম শাহ, হারিস রউফদের কাঁধে।
শ্রীলংকা
রাজনৈতিক কারণে এক প্রকার বিধ্বস্ত এশিয়ার অন্যতম সফল দল শ্রীলংকা। ক্রিকেটকে আঁকড়ে ধরে সেসব ভুলে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে শ্রীলংকা। স্কোয়াডে কেবল স্বীকৃত দুই ওপেনার দানুশকা গুনাথিলাকা ও পাথুম নিশাংকা। ব্যাটিংয়ে ভরসা মিডল অর্ডারের চান্দিমাল-সিলভারাই।
এ বছরের পারফর্ম্যান্সও আশা জাগানিয়া নয়। ১১ ম্যাচের মাত্র দুটিতে জয় পেয়েছে শ্রীলংকা। তবে শ্রীলংকা আশায় বুক বাঁধতে পারে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে নিয়ে। দারুণ লেগস্পিনে আটকে ধরতে পারেন রানের চাকা, উইকেটও পান নিয়মিত। গত এক বছরেও ছিলেন ছন্দে। ২৫ ম্যাচে ৪৬ উইকেট নিয়েছেন মাত্র ৬.১৩ গড়ে। ব্যাট হাতেও সমান কার্যকরী হতে পারেন তিনি।
পেস আক্রমণটাও ঘুরিয়ে ফিরেয়ে দেখার সুযোগ ছিল দাসুন শানাকার কিন্তু দুশমন্ত চামিরা ছিটকে পড়ায় লংকার পেস আক্রমণ দূর্বল হয়ে পড়তে পারে কিছুটা। আরও ভোগাতে পারে শুরুর ৬ ওভারের ব্যাটিং। পাওয়ারপ্লেতে রান তোলার ওভারপ্রতি হার প্রায় ৭। তবে পাওয়ারপ্লেতে ২১.৪২ ব্যাটিং গড় চিন্তার কারণ হতে পারে। শংকার কারণ হতে পারে শেষ ৪ ওভারের ব্যাটিংও। ডেথ ওভারের ব্যাটিং গড় ১৫.৩৬।
আফগানিস্তান
এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের আবির্ভাব ২০১৪ সালে । সর্বশেষ খেলেছে ২০১৮ সালের আসরে। বড় মঞ্চে সাফল্য ধরা না দিলেও টি-টোয়েন্টি ভালোই রপ্ত করেছেন দলটি। এ বছর খেলা বেশিরভাগ ম্যাচই জিতেছে আফগানরা। ১০ ম্যাচের ৬টিতে জিতেছে, হেরেছে ৪টি।
আফগানদের শক্তির জায়গা পাওয়ার হিটিং আর বৈচিত্র্যময় স্পিন আক্রমণ। এবারের স্কোয়াডও তাই গড়েছে নিজেদের শক্তির জায়গাকে প্রাধান্য দিয়েই। হযরত উল্লাহ যাযাইয়ের মতো বিস্ফোরক ওপেনারের সাথে আছেন নবি-রশিদ-নাজিবউল্লাহদর মতো ফিনিশার। আলাদা নজরে থাকবেন রশিদ খান। ২০২১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত নিয়েছেন ২৩ উইকেট বোলিং গড় আছে ১৯-এর নিচে।
তার সাথে বৈচিত্র্য যোগ করবেন মুজিব উর রহমান, নুর আহমাদ। ভোগান্তি হতে পারে পেসারদের খরুচে বোলিং। আজমতউল্লাহ ওমরজাই-নাভিন উল হকের ইকোনমি রেট যথাক্রমে ৮.৩৭ ও ৮.৬৬। আলো কাড়তে পারেন বাঁহাতি পেসার ফজলহক ফারুকীও।
হংকং
প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের এশিয়া কাপে সুযোগ পেয়েছে হংকং। এর আগে এশিয়া কাপ খেলেছে তিনবার, সেই তিনবারই খেলা হয়েছে ওয়ানডে ফরম্যাটে। বাছাই পর্বে সিঙ্গাপুর, কুয়েত ও আরব আমিরাতকে হারিয়ে মূলপর্বের টিকেট পেয়েছে দলটি। তাদের দুই প্রতিপক্ষ ভারত ও পাকিস্তান। দুই শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে হংকং কিছু করতে পারলে সেটা মিরাকলই হবে।
ব্যাট হাতে বাছাইপর্বের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়েছেন হংকংয়ের ইয়াসিম মুর্তাজা। তিন ম্যাচে এক ফিফটিতে তার সংগ্রহ ১৩০ রান। বোলিংয়েও দাপট দেখিয়েছেন হংকংয়ের এহসান খান। তিন ম্যাচে ৬.৭৫ ইকোনমিতে নিয়েছেন ৯ উইকেট।