দামে কম মানে ভাল: এশিয়া কাপ ২০২২ ফ্যান্টাসি সংস্করণ
আরব আমিরাতে পর্দা নামতে চলেছে এশিয়া কাপের। এবারে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে হতে যাওয়া এই টুর্নামেন্টে সব দেশ পাঠিয়েছে প্রথম সারির দল; তারকার তাই নেই অভাব। এই তারকারাজির মাঝেও আপাতদৃষ্টিতে ছোট তারারাই কাড়তে পারেন নজর। ফ্যান্টাসিতে তাদের দলে রেখে স্বল্প খরচে অধিক পয়েন্ট পেতেও আপনাকে সাহায্য করবেন এই খেলোয়াড়গুলোই। দামে কম, মানে ভাল এই খেলোয়াড়দের নিয়েই আজকের এই প্রতিবেদন।
সূর্যকুমার যাদব
বিশ্বের দুই নম্বর টি-টোয়েন্টি ব্যাটারের নাম এখানে দেখে কিছুটা অবাক হতেই পারেন। তবে ভারতের তারকা ঠাসা ব্যাটিং লাইনআপে এবার তিনি যে আলো কাড়বেন সেটার স্বপক্ষে যুক্তি খন্ডন করতেই সূর্যকুমারকে এই তালিকায় রাখা। সেই সাথে রোহিত,কোহলিদের চেয়ে স্বল্প মূল্যও থাকবে তার নামের পাশে। ভারতের হয়ে এখন পর্যন্ত ২৩ ম্যাচে ৩৭.৩৩ গড়ে তিনি করেছেন ৬৭২ রান; তাও ১৭৫.৪৫ স্ট্রাইক রেটে! নেমেই কোনও সময় অপচয় না করে হাত খুলে খেলতে থাকা সূর্যকুমারকে ৩৬০ ডিগ্রি শট খেলতে পারার জন্য বর্তমান সময়ের এবি ডি ভিলিয়ার্সের তকমাই দিয়ে বসেছেন রিকি পন্টিং। শেষ সফরে তিনি ওপেন করেছেন। এশিয়া কাপে তা করলে বড় ইনিংসের সম্ভাবনা আরও বেশি থাকবে। গত ইংল্যান্ড সফরেই অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করে দলকে প্রায় অসম্ভব এক জয়ের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন প্রায় একাই। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে রেখেছেন নিজের ওপেন করার সক্ষমতার প্রমাণ। চাপ সামলাতেও যে তিনি পারদর্শী তার প্রমাণ রান তাড়া করতে নেমে ৮ ইনিংসে ৬৪.২ ব্যাটিং গড় ও ১৭৭.৩৪ স্ট্রাইক রেট।
পাথুম নিসাঙ্কা
গত দুই বছরে টি-টোয়েন্টিতে শ্রীলঙ্কার সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক নিসাঙ্কা। ২৩ ম্যাচে এই সময়ে ২৮.৫৪ গড়ে তিনি করেছেন ৬২৮ রান। স্ট্রাইক রেট ১১৫.৬৫ হলেও রান তিনি নিয়মিতই করেন বলা চলে। অস্ট্রেলিয়া, ভারতের মত দলের বিপক্ষে ফিফটি প্রমাণ করে বড় দলের বিপক্ষে এই ওপেনারের রান করার সামর্থ্য। এশিয়া কাপে নিজেকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার জন্য তাই তাই সর্বোচ্চটাই আশা করা যেতে পারে।
নাজিবউল্লাহ জাদরান
আফগানিস্তানের এই বাঁহাতি ব্যাটার গত দুই বছরে রয়েছেন দুর্দান্ত ফর্মে। শেষ ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ঝলক দেখিয়েছেন তিনি। ৩৩.০৪ ক্যারিয়ার গড়ের বিপরীতে তার গত দুই বছরের গড় ৩৬.৫০; সেই সাথে স্ট্রাইক রেটটাও গত দুই বছরে ছিল ১৪৩.৯৪। এশিয়া কাপেও নাজিবউল্লাহর ব্যাটে ঝড় উঠবে সেই আশা করাই যায়।
আফিফ হোসেন
নিজের সামর্থ্য বা নাম কোনটার প্রতি আফিফ জাতীয় দলের জার্সি গায়ে সুবিচার করতে পারেননি বলা চলে। গত দুই বছরে অবশ্য তাতে পরিবর্তনের আশা মিলেছে; যেই সময়ে এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের ৩য় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি। বাংলাদেশের স্বীকৃত ব্যাটারদের মধ্যে এই সময়ে সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেট তার: ১১৭.৪৬। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ফিফটি করে দেখিয়েছেন ওপরে খেললে তিনি দলকে কী দিতে পারেন। টপ অর্ডারে খেলে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়েও বিপিএল মাতিয়েছিলেন। এবারে চারে খেলার নিশ্চয়তা পেয়েও হয়ত নিজের সেরাটা দিবেন আফিফ।
দীনেশ কার্তিক
এই আইপিএলে ফিনিশার ভূমিকায় নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করা কার্তিক ভারত দলে জায়গা করে নেওয়ার পর থেকে নিজেকে নতুন করে চেনাচ্ছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও খেলেছেন দারুণ এক ফিনিশিং ইনিংস। গত দুই বছরে ভারতের হয়ে ১৩৩.৩৩ স্ট্রাইক রেটে ১৯২ রান করা কার্তিক এই ফরম্যাটে নীল জার্সি গায়ে প্রথম ফিফটিটাও পেয়েছেন এই ফিনিশার ভুমিকাতে ফিরেই। এশিয়া কাপেও মরুর বুকে ঝড় তুলতে তাই কার্তিক পানে ভারত চেয়ে থাকবে।
শাদাব খান
গত দুই বছরে ৭.২৭ ইকোনমি রেটে ২৫ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী স্পিনার তিনি। সেই সাথে ব্যাট হাতেও করেছেন ১৪৫.৭১ স্ট্রাইক রেটে ১৫৩ রানে। ফিল্ডিংয়েও দুর্দান্ত পাকিস্তানের সহ অধিনায়ক যে স্বল্প মূল্যে অধিক লাভের আদর্শ উদাহরণ হতে পারে তা নিয়ে দ্বিমত পোষণের খুব একটা অবকাশ নেই।
দাসুন শানাকা
শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক মিডল অর্ডার ব্যাটার হয়েও গত দুই বছরে টি-টোয়েন্টিতে শ্রীলঙ্কার ২য় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ১২২.২৯ স্ট্রাইক রেটে এই সময়ে ৫৩২ রান করার পাশাপাশি নিয়েছেন ৭ উইকেট। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অবিশ্বাস্য এক ফিফটি করে জয় এনে দেওয়া শানাকা এশিয়া কাপেও হয়ত এরকম কোনও লঙ্কাকাণ্ড ঘটিয়ে বসবেন।
শেখ মাহেদী হাসান
মাহেদী হাসান এবারের সম্ভাব্য কয়েকজন ওপেনারের একজন; যাকে এর আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও ওপেন করতে দেখা গিয়েছে। তবে ব্যাট হাতে ওপেন না করলেও বল হাতে তিনি শুরু করবেন বেশ কয়েক ম্যাচেই। এখন পর্যন্ত ৩৬ ম্যাচে উইকেট পেয়েছেন ২৯টি, যার মধ্যে ১৭টি উইকেট এসেছে বোলিং ওপেন করতে নেমে। ক্যারিয়ার ইকোনমি রেট ৬.৪৪ হলেও বোলিং শুরু করার সময় তার ইকোনমি রেট নেমে দাঁড়ায় ৫.৭২। শুরুতেই ব্রেকথ্রু এনে দেওয়ার পাশাপাশি এবার নিজের বিস্ফোরক ব্যাটিংটাও এশিয়া কাপে দেখাতে চাইবেন মাহেদী।
মাহিশ থিকশানা
শ্রীলঙ্কার এই রহস্য স্পিনার বল হাতে রীতিমত অস্ট্রেলিয়াকে খাবি খাইয়েছেন সাম্প্রতিক সিরিজে। আইপিএলেও তিনি রেখেছেন সামর্থ্যের প্রমাণ। ১৮ ম্যাচে তার উইকেট সংখ্যা ১৬ হলেও ইকোনমিটা নজরকাড়া: ৬.৪৪। আরব আমিরাতেও ব্যাটারদের তাকে পড়তে বেগ পেতে হবে বলেই ধারণা করা যায়।
আরশদীপ সিং
যদি গত দুই তিন মৌসুমের আইপিএলের খোঁজ রাখেন তাহলে এই বাঁহাতি পেসার সম্পর্কে আপনি অবশ্যই অবগত। তবে গত দুই তিন মাসের ভারতের খেলা দেখলেও তার সামর্থ্য সম্পর্কে আপনার একটা ধারণা হয়ে যাওয়ার কথা। খেলেছেন মোটে ৬টি ম্যাচ, যার ১টি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আর বাকি ৫টি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। টি-টোয়েন্টিতে শক্তিশালী দুই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে এই কয় ম্যাচেই মাত্র ৬.৩৩ ইকোনমি রেটে নিয়েছেন ৯টি উইকেট। এর মধ্যে ৮টি উইকেট এসেছে দল প্রথমে ব্যাট করার পর। লক্ষ্য বেঁধে দেওয়ার পর বল করতে নেমে তার ইকোনমি রেট মাত্র ৫.৮৮! চাপ সামলাতে যে তিনি পারদর্শী তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এবারের এশিয়া কাপে নিজেকে নতুন করে চেনাতে আরশদীপ তাই মুখিয়ে থাকবেন।
এহসান খান
এশিয়া কাপের কোয়ালিফায়ারে হংকংয়ের উত্তীর্ণ হওয়ার পেছনে তার অবদান অনেক বেশি। ৯ উইকেট নিয়ে কোয়ালিফায়ারের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী তিনি। ৩১ টি-টোয়েন্টিতে মাত্র ৬.০৬ ইকোনমি রেটে ৩৯ উইকেট নেওয়া এহসান যে ভারত, পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজেকে মেলে ধরতে মুখিয়ে থাকবেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না।