• এশিয়া কাপ
  • " />

     

    রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে পান্ডিয়া-পাওয়ারে পরাস্ত পাকিস্তান

    রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে পান্ডিয়া-পাওয়ারে পরাস্ত পাকিস্তান    

    এশিয়া কাপ, গ্রুপ পর্ব, দুবাই (টস-ভারত, ফিল্ডিং)
    পাকিস্তান- ১৪৭, ১৯.৫ ওভার (রিজওয়ান ৪৩, ইফতিখার ২৮, দাহানি ১৬, ভুবনেশ্বর ৪/২৬, হার্দিক ৩/২৫, আরশদীপ ২/৩৩)
    ভারত- ১৪৮/৫, ১৯.৪ ওভার (জাদেজা ৩৫, কোহলি ৩৫, হার্দিক ৩৩*, নাওয়াজ ৩/৩৩, নাসিম ২/২৭)
    ফলাফল: ভারত ৫ উইকেটে জয়ী

     

    ভারত-পাকিস্তান মহারণ মানেই প্রত্যাশার পারদ থাকে চুড়ায়; সেই প্রত্যাশার ষোলকলা মেটাল এশিয়া কাপে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের লড়াই। ভারতীয় পেসারদের দাপটে মোহাম্মদ রিজওয়ান-ইফতিখার আহমেদের ৪৫ রানের জুটির পর পাকিস্তান লড়ে যাওয়ার উপলক্ষ পেয়েছিল শাহনাওয়াজ দাহানির ১৬ রানের ক্যামিওতে। নাসিম শাহ-মোহাম্মদ নাওয়াজদের আঁটসাঁট বোলিংয়ে হাঁসফাঁস করতে থাকা ভারতকে এরপর জয়ের হাসি এনে দিয়েছে হার্দিক পান্ডিয়া-রবীন্দ্র জাদেজার ২৯ বলে ৫২ রানের জুটি। ভারত অবশ্য একান্ত ধন্যবাদটা দিতে পারে অলরাউন্ডার হার্দিককেই।

    যেই ধন্যবাদ দেওয়ার উপলক্ষ ভেস্তে দেওয়ার বন্দবস্ত করতে ১৪৭ রানের পুঁজি নিয়ে পাকিস্তানকে কাঙ্খিত শুরু এনে দিয়েছিলেন অভিষিক্ত নাসিম শাহ। দ্বিতীয় বলেই লোকেশ রাহুলের স্টাম্প উপড়ে ফেললে ভিরাট কোহলি-রোহিত শর্মা পাওয়ারপ্লেতে খেলেন রয়েসয়ে। দুজনে মিলে তোলেন ৩৮ রান। একেবারেই খোলসে ঢুকে যাওয়া ভারত অধিনায়ক হাত খোলার চেষ্টা করলে নাওয়াজকে স্বাগত জানান ছয়ে। তবে এক বল পরেই বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে মিড অফে ক্যাচ দিয়ে রোহিত ফেরেন ১৮ বলের ১২ রানের ইনিংস শেষে। পরের ওভারে প্রথম বলে এসেই এরপর নাওয়াজ ৩৪ বলে ৩৫ রানে থাকা কোহলিকে ফিরিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন।

    ওই ওভারে উইকেটে এসে তৃতীয় বলেই ছয় মেরে শুরু করা রবীন্দ্র জাদেজা নিজের পাঁচে নামার সর্বোচ্চ সুযোগ নিবেন বলেই মনে হচ্ছিল। অবশ্য নাওয়াজ-শাদাবের স্পিন জুটির জন্য জাদেজার সাথে থাকা সূর্যকুমার যাদবও তেমন সুবিধা করে উঠতে পারেননি। পাকিস্তানকে দুর্দান্ত শুরু এনে দেওয়া নাসিম এরপর সেটারই সুযোগ নিয়ে ১৫তম ওভারে দারুণ এক বলে সূর্যকুমারের অফ স্টাম্প উড়িয়ে দেন। উইকেটে এসে হার্দিক এরপর খেলেন পরিস্থিতি বুঝে। নাসিমের শেষ ওভারে উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়া জাদেজা এক ছয়, এক চারে ব্যবধান কমিয়ে আনেন। পরের ওভারে হারিস রউফকে তিন চার মেরে হার্দিক ম্যাচের পাল্লা প্রায় পুরোটাই নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে ফেললেও পেন্ডুলামের মত দুলতে থাকা ম্যাচে তখনও বাকি আরেক নাটক। শেষ ওভারের প্রথম বলেই ২৯ বলে ৩৫ রান করা জাদেজাকে ফিরিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তোলেন নাওয়াজ। তবে হার্দিক যেদিন ফর্মে থাকেন সেদিন প্রতিপক্ষের করার খুব কমই থাকে। শেষ ওভারে ৭ রানের প্রয়োজন হলে চতুর্থ বলে ছয় মেরে ভারতকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান হার্দিক।

    এর আগে পাকিস্তানের মত বল হাতে ভারতের শুরুটাও হয়েছিল দারুণ। বিশ্বের এক নম্বর টি-টোয়েন্টি ব্যাটার বাবর আজমকে ৩য় ওভারেই ভুবনেশ্বর কুমার ফেরান বাউন্সারের টোপ ফেলে। ফাখার জামানকে নিয়ে মোহাম্মদ রিজওয়ান ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করলেও পাওয়ারপ্লের শেষ ওভার করতে এসে ফাখারকে ফেরান আভেশ খান। পাওয়ারপ্লেতে পাকিস্তান তাই তুলতে পারে ৪৩ রান।

    ইফতিখার আহমেদকে সঙ্গী করে এরপর পাকিস্তানের ইনিংস রিজওয়ান এগিয়ে নিলেও এদিন তিনি যেন নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন। মাঝের ওভারগুলোতে (৭-১২) চেহেল-জাদেজা জুটি বেঁধে একেবারে কোণঠাসা করে রাখেন রিজওয়ান-ইফতিখার জুটিকে; ওই ওভারগুলোতে তারা নিতে পারেন ৪৪ রান। শিকল ভেঙ্গে ইনিংসের গিয়ার বদলাতে গেলেই সেটার সুযোগ নিয়ে ২৮ রানে থাকার সময় ইফতিখারকে বাউন্সারে পরাস্ত করেন হার্দিক। পরের ওভারে এসে ম্যাচের পাল্লা নিজেদের দিকে ভারী করে ফেলেন হার্দিক। আরও একবার বাউন্সারকে অস্ত্র বানিয়ে এবার রিজওয়ানকে ফেরান ৪২ বলে ৪৩ রানের এক অদ্ভুতুড়ে ইনিংসের ইতি টেনে। এক বল পরেই সেই একই অস্ত্রের সহায়তায় উইকেটে নবাগত খুশদিল শাহকে ফেরান হার্দিক।

    হার্দিক-শো’র পরে শুরু হয় ভুবনেশ্বর-আরশদীপের শেষের তোপ। আসিফ আলীকে ১৭তম ওভারে ভুবনেশ্বর ফেরানোর পরের ওভারে মোহাম্মদ নাওয়াজকে আরশদীপ ফেরালে পাকিস্তানের ইনিংস থেকে লড়াকু পুঁজির আশাও ভেস্তে যেতে বসেছিল। নিজের শেষ ওভারে টানা দুই বলে শাদাব খান, নাসিম শাহকে ফিরিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে কোনও ভারতীয় বোলারের হয়ে সেরা বোলিং ফিগারের রেকর্ড গড়ে ভুবনেশ্বর সেই আশা আরও ক্ষীণ করে তুলেছিলেন। তবে সেই লড়াকু পুঁজি পাকিস্তান ঠিকই পেয়েছিল অনাকাঙ্খিত একজনের কাছে; আরশদীপের কাছে স্টাম্প খোয়ানোর আগে ৬ বলে ১৬ রানের এক ক্যামিও খেলে পাকিস্তানকে লড়াই করার রসদ জুগিয়েছিলেন দাহানি। ম্যাচ জমিয়ে তুললেও শেষমেশ সেই রসদ নিয়েও নিরাশ হতে হয়েছে পাকিস্তানকে।