• এশিয়া কাপ
  • " />

     

    কেন বৃত্তের বাইরে এক ফিল্ডার কম নিয়ে খেলেছে ভারত-পাকিস্তান?

    কেন বৃত্তের বাইরে এক ফিল্ডার কম নিয়ে খেলেছে ভারত-পাকিস্তান?    

    এশিয়া কাপের দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে ভারত। টানটান উত্তেজনার সেই ম্যাচের নিষ্পত্তি ঘটেছে হার্দিক পান্ডিয়ার মারা ছক্কায়। কিন্তু এই ম্যাচে ভারত-পাকিস্তান দুই দলই নিজেদের ইনিংসের শেষ তিন ওভার বল করেছে ৩০ গজ বৃত্তের বাইরে একজন ফিল্ডার কম নিয়ে। যদিও সাধারণ নিয়মে ইনিংসের প্রথম ছয় ওভার বৃত্তের বাইরে সর্বোচ্চ দুইজন ও বাকি ১৪ ওভার বৃত্তের বাইরে সর্বোচ্চ পাঁচজন ফিল্ডার রাখার অনুমতি দেয়া হয়। 

    চলতি বছরের ৮ মার্চ ক্রিকেটের নিয়ম-কানুনে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে এমসিসি। তার অন্যতম একটি হচ্ছে এই স্লো ওভার রেটের শাস্তি। সাধারণত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ওভার শেষ করতে না পারলে ম্যাচ শেষে কার্যকর হয় স্লো ওভার রেটের শাস্তি। কিন্তু নতুন নিয়মে আর্থিক জরিমানার সাথে ম্যাচ চলাকালীনই শাস্তির বিধান রেখেছে এমসিসি।  

    নতুন নিয়মানুযায়ী ইনিংসের শেষ ওভারের প্রথম বলটি করার নির্দিষ্ট একটি কাট অফ টাইম থাকে। যা অন ফিল্ড আম্পায়ার আগেই জানিয়ে দেন ক্রিকেটারদের। বোলিং দল বেধে দেয়া এই সময়সীমার মধ্যে ইনিংসের শেষ ওভার শুরু করার মতো অবস্থানে না থাকলে বা করতে না পারলে, ইনিংসের যত ওভার বাকি থাকবে ঠিক তত ওভার বৃত্তের বাইরে একজন ফিল্ডার কম নিয়ে খেলতে হবে তাদের। 

    কাল এশিয়া কাপের ম্যাচে কাট অফ টাইমে ভারত সম্পন্ন করতে পেরেছিল মাত্র ১৭ ওভার। ১৮ তম ওভার থেকে তাই বৃত্তের বাইরে পাঁচজনের পরিবর্তে ছিলেন চার ফিল্ডার। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে শেষ তিন ওভারে পাকিস্তান তুলেছিল ২৪ রান। ওদিকে ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তানকেও দিতে হয়েছে স্লো ওভার রেটের মাশুল। কাট অফ টাইমের মধ্যে পাকিস্তান করতে পেরেছিল ১৭ ওভার। শেষ তিন ওভার তাই বৃত্তের বাইরে একজন ফিল্ডার কম নিয়েই বল করেছেন পাকিস্তানি বোলাররা।

    ম্যাচ জিতে যাওয়ায় ইন ম্যাচ পেনাল্টি ভারতকে সেই অর্থে হয়তো ভোগায়নি। কিন্তু পাকিস্তানের ক্ষেত্রে তা বড় প্রভাবক হয়ে উঠেছিল। হার্দিকের অনবদ্য ব্যাটিংয়ে শেষ ৩.৪ ওভার ভারত তুলেছিল ৩২ রান। এর মধ্যে ১৯তম ওভারে হার্দিক টানা দুটো চার মেরেছেন একই বাউন্ডারি রিজিওন দিয়ে; ওয়াইডিশ লং অন। পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজমের হাতও ছিল নিয়মের গ্যাঁড়াকলে বাঁধা। স্লো ওভার রেটের মাশুল গুনতে হয়েছে তাকে। তাই চাইলেও সেই রিজিওনে ফিল্ডার দাঁড়া করাতে পারেননি। বৃত্তের মধ্যে একজন ফিল্ডার বেশি নিয়েই খেলেছেন তারা। 

    আগামীতে দ্বিতীয় ইনিংসে রান তাড়া কিংবা ডিফেন্ড করার ক্ষেত্রে অন্যতম নিয়ামক হয়ে উঠতে পারে ইন ম্যাচ পেনাল্টির এই নিয়ম। ভারত-পাকিস্তানের হাই ভোল্টেজ ম্যাচ সেই বার্তাই দিয়ে গেল। চলতি এশিয়া কাপেও এমন চিত্র দেখা যেতে পারে আরও অনেকবারই। 

    *************************

    সর্বপ্রথম ২০২০ সালে ইংল্যান্ডের ঘরোয়া টুর্নামেন্ট ন্যাটওয়েস্ট টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টে এই নিয়ম চালু করা হয়েছিল পরীক্ষামূলকভাবে। এরপর ২০২১ সালে ইংল্যান্ডের সকল সীমিত ওভারের টুর্নামেন্টও মাঠে গড়ায় এই নিয়মে। ফলপ্রসু হয়েছিল একশ বলের ক্রিকেটে ‘দ্য হান্ড্রেড’-এ এই নিয়ম চালু করার সিদ্ধান্ত। মূলত সেখান থেকেই আইসিসির ক্রিকেট কমিটি এমসিসির কাছে সুপারিশ করেছিল এই নিয়ম অন্তর্ভূক্তির। 

    এর বাইরেও উল্লেখযোগ্য কিছু পরিবর্তন এসেছে নিয়ম কানুনে। এতদিন বিতর্ক থাকলেও এমসিসির নতুন নিয়মের অন্তর্ভূক্ত হয়েছে মানকাডিং। ডেলিভারির আগে নন স্ট্রাইক ব্যাটসম্যান ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে গেলে বোলার যদি উইকেট ভেঙে দেন, তাহলে সেটা রান আউট হিসেবেই গণ্য হবে। অর্থাৎ স্বাভাবিক রান আউটের নিয়মে যুক্ত হয়েছে মানকাডিং। 

    ক্যাচ আউটের সময় দুই ব্যাটসম্যান প্রান্ত বদল কিংবা ক্রস করলেও স্ট্রাইকে থাকবেন নতুন ব্যাটসম্যান। গত আইপিএলেও খেলা হয়েছে এই নিয়মে। সুইং আদায় কিংবা শাইনের জন্য বলে লালারস ব্যবহার করা যাবে না। এমসিসির এক গবেষণায় এসেছে বলের সুইংয়ে লালারসের তেমন কোনো প্রভাব নেই। তাই তেমনটা করলে বল বিকৃতির আওতায় পড়বে লালার ব্যবহার। তবে ঘামের ব্যবহারে থাকছে না কোনো বাধা। 

    ডেড বলের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে এমসিসি। ডেলিভারি স্ট্রাইডে যাওয়ার আগেই কোনো বোলার ব্যাটিং প্রান্তে থাকা ব্যাটসম্যানকে রান আউট করতে চাইলে ডেড বল ঘোষণা করবেন আম্পায়ার। আগের নিয়মে সেটা ছিল নো বল। খেলা চলাকালীন মাঠের কোনো সদস্যর শারীরিক অসুস্থতা কিংবা অন্য কোনো কারনে খেলা বাধাপ্রাপ্ত হলে সেটাও ডেড বলের আওতাভূক্ত হবে। মাঠে দর্শক কিংবা প্রাণীর অনুপ্রবেশের ক্ষেত্রেও থাকছে একই নিয়ম। 

    বোলারের হাত ফসকে কোনো ডেলিভারি উইকেটের বাইরে পিচ করলে শট খেলার বৈধতা পাচ্ছেন ব্যাটাররা। তবে উইকেটের বাইরে যেতে পারবেন না তারা। এর বিপরীত হলে সেই ডেলিভারি গণ্য হবে ডেড বল হিসেবে। অর্থাৎ ব্যাটারের শরীর কিংবা ব্যাটের অংশ থাকতে হবে উইকেটের ভেতরে। 

    আম্পায়ার ওয়াইড বলের সিদ্ধান্ত নেবেন ডেলিভারির আগে ব্যাটসম্যানের স্টান্স এবং ফুট পজিশন দেখে। কেউ অফস্টাম্পের বাইরে স্টান্স নিলে কিংবা সেখান থেকে শট খেলার চেষ্টা করলে ওয়াইড বিবেচনা করা হবে সেই অবস্থান দেখেই। ফিল্ডারদের জন্যও কঠোর আইন এনেছে এমসিসি। কোনো ফিল্ডার ইচ্ছাকৃত অযাচিত সুবিধা নিলে কিংবা নিয়মের বাইরে গিয়ে নড়াচড়া করলে ৫ রান যোগ হবে ব্যাটিং দলের পক্ষে। 

    ম্যাচ চলাকালীন ক্রিকেটার পরিবর্তনের নিয়মেও আসছে পরিবর্তন। নিয়ম মেনে কোনো ক্রিকেটারের বদলি হিসেবে অন্য কেউ একাদশে ঢুকতে পারবেন ঠিকই। কিন্তু সেই ক্রিকেটার কোনো কারণে শাস্তিপ্রাপ্ত হলে  শাস্তি বহন করবেন তার বদলি ক্রিকেটার। এর বাইরে দুই ইনিংসেই থাকছে থাকছে আড়াই মিনিট করে বিরতি।  যা নির্ধারিত হবে সিরিজ কিংবা ম্যাচের আগে দুই দলের সমঝোতার মাধ্যমে। 

    নতুন নিয়মে প্রথম টি-টোয়েন্টি মাঠে গড়ানোর কথা ছিল চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি। কিন্তু কোভিডের প্রকোপে সেই ম্যাচ বাতিলই হয়ে যায়। তবে আসন্ন ১লা অক্টোবর থেকে এসব নিয়ম চালু হতে যাচ্ছে ক্রিকেটে। যদিও এর বেশ কয়েকটি ইতোমধ্যেই কার্যকর হয়েছে।