পরিকল্পনার অভাব, পাওয়ারলেস হিটিং, পুরনো মানসিকতা: টি-টোয়েন্টিতে সেই পুরনো বাংলাদেশ
শেষ তিন ওভারে আফগানিস্তানের লাগতো ২৬ রান। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ১৮ নম্বর ওভারে এসে গুনে গুনে দিলেন ২২ রান। ডেথ ওভারে এমন বোলিং! অধিনায়ক তো অনেক আশা-ভরসা করেই তার হাতে বল তুলে দিয়েছিলেন। সেই আশার পাল নাজিবউল্লাহ জাদরান ছিড়ে দিয়েছিলেন টানা দুটো ছক্কা মেরে। পঞ্চম বলে শরীর ঘুরিয়ে ফাইন লেগের ওপর দিয়ে যে শটটা খেলেছেন, সেটাকে ক্রিকেটের ব্যকরণ অনুযায়ী কী বলা যায়? পুল, হুক, রিভার্স স্কুপ নাকি র্যাম্প শট?
সাইফউদ্দিন সেই বলটা করেছিলেন শর্ট লেন্থে। বাউন্সার না বলে টেনিস বল বাউন্স বলাই ভালো; যেন পালিয়ে বাঁচতে চাচ্ছিলেন এই ডানহাতি এই পেসার। শর্টকাট খুঁজছিলেন আরেকটা ডট বলের সন্ধানে। ম্যাচের পরিস্থিতি, ব্যাটারের মানসিকতা বিবেচনায় না নিয়ে পরিকল্পনাহীন বোলিংয়ের মাশুল দিয়েছেন সাইফউদ্দিন, দিয়েছে পুরো বাংলাদেশ দল। সেই ওভারে নাজিবউল্লাহর মারা একেকটা শটের পর শারজাহর গরমে ঘেমে ভিজে একাকার হওয়া অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের হতাশ চেহারায় ফুটে উঠেছিল টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সামগ্রিক চিত্র।
এশিয়া কাপের তৃতীয় ম্যাচের পুরোটাজুড়েই দেখা গেছে পুরনো পরিকল্পনাহীন, মানসিকভাবে দূর্বল সেই বাংলাদেশকেই। চার-ছক্কার এই ক্রিকেটকে যে এখনো ঠিকঠাক পড়ে উঠতে পারেনি দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি, সেটা আরও একবার বুঝিয়ে দিল আফগানিস্তান। অথচ এবার এশিয়া কাপের বিমানে চড়ার আগে বোর্ড প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে টিম ম্যানেজমেন্ট, কোচরাও শুনিয়েছিলেন আশার বাণী; আগ্রাসী মানসিকতা, বদলানো শরীরী ভাষা। অভিজ্ঞ আর তরুণদের কেন্দ্রে রেখে তারা জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ গাইতে চলেছে নতুন দিনের গান। দর্শক-সমর্থকরাও বুক বেঁধেছিলেন আশায়।
কিন্ত মূল মঞ্চের পর্দা সরিয়ে মাইক্রোফোনের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই শোনা গেল হেঁড়ে গলার কোরাস। শ্রুতিমধুর হওয়া তো দূর, টি-টোয়েন্টির ‘সা-রে-গা-মা-পা’ এখনো আয়ত্তে আসেনি তাদের। শারজাহর মঞ্চে সুর-তাল-লয়হীন সেই কোরাসের ব্যবচ্ছেদ করা যাক এবার।
সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব
ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে মোসাদ্দেক হোসেন বারবার বলছিলেন ‘আনফরচুনেটলি’ শব্দটা। ম্যাচের খরুচে ওভার থেকে শুরু করে ব্যাটিংয়ের দৈন্যদশা; সবকিছু বোঝাতে ভাগ্যকেই দোষারোপ করছিলেন সেই ম্যাচে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোরার মোসাদ্দেক।
ভাগ্যকে দোষারোপ করাটাই আপাতত ‘সেইফ গেইম’। তবে দিনশেষে কার্যোদ্ধার হয়নি, টি-টোয়েন্টির ‘ইন্টেন্ট’ বলে যে জিনিসটা আছে সেটা তারা দেখাতে পারেননি কোনো বিভাগেই, সেই দায় তো নিতেই হবে পুরো দল ও দল সংশ্লিষ্ট সকলকে। অথচ এই এশিয়া কাপই হতে পারতো নতুন করে ইতিহাস লেখার মঞ্চ। হতে পারতো সব ধুয়ে-মুছে নতুন শুরুর যে বার্তা দিয়ে এসেছিল বাংলাদেশ দল, তা প্রমাণের সুযোগ। কিন্তু প্রথম ম্যাচেই ফুটে উঠেছে ভগ্নদশা। এশিয়া কাপ তো দুরাশা সামনের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ভালো কিছুর আশা করবে না কেউ।
টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন দলের সবার প্রতি পরিস্কার বার্তা দিয়ে বলেছিলেন, ‘১৮০ করতে গিয়ে যদি ১২০ রানে গুটিয়ে যান আমি কিছু মনে করব না।’
ক্রিকেটাররা সেই বার্তা বুঝতে পেরেছিলেন আদৌ? স্কোরকার্ডই এই প্রশ্ন তোলার সু্যোগ করে দিচ্ছে। ২০ ওভারে ১২৭ রান করেছে বাংলাদেশ। শারজাহর উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য আদর্শ ছিল না, বল নিচু হয়ে যাচ্ছিল ব্যাটে। কিন্তু আফগানিস্তান দেখাল বিপরীত চিত্র। লক্ষ্য টপকে গেছে ৯ বল হাতে রেখে। অথচ ১৪ ওভার শেষে আফগানদের স্কোরবোর্ড ছিল ৬৫/৩। পরিকল্পনা, চিন্তাভাবনা, মানসিকতায় স্পষ্ট ফারাক দুই দলের। যে নতুন শুরুর কথা চর্বিতচর্বণ হয়ে উঠেছে গত পক্ষে, গতকাল বাংলাদেশ দলের কাছ থেকে তার ন্যুনতম ইঙ্গিতও পাওয়া যায়নি। কারো কাছ থেকে এমন কোনো কিছুই দেখা যায়নি যা দেখে কেউ বলতে পারবে; এই দল খোলনলচে বদলে ফেলতে চাইছে সব।
পাওয়ার হিটিংয়ের অমীমাংসিত রহস্য
লড়াই করার পুঁজি জোটাতেই যেখানে হিমশিম খেয়েছে, খাচ্ছে বাংলাদেশ। একটু ব্যঙ্গাত্মক শোনালেও পাওয়ার হিটিং সেখানে বিলাসিতারই সামিল। এশিয়া কাপের আগে ‘পাওয়ার হিটিং’ শব্দটা ‘ট্রেন্ডিং’ ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট পাড়ায়। কেবল টি-টোয়েন্টির জন্যই আলাদা করে নিয়ে আসা হয়েছে ‘টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট’। এই পদের মোড়কে তিনি পেয়েছেন ক্রিকেটের শর্টার ফরম্যাটের প্রধান কোচের দায়িত্ব। স্বভাবতই কদিন বেশ চর্চা হলো সেসব নিয়ে। এবার হয়তো কপাল খুলবে বাংলাদেশের ২০ ওভারের ক্রিকেটে।
এইতো সপ্তাহ দুয়েক আগেই ফেসবুকে একটা ভিডিও দিয়েছিলেন ব্যাটিং পরামর্শক জেমি সিডন্স, যেখান দেখা গেছে হাই ব্যাক লিফটে একের পর এক বল সীমানাছাড়া করার চেষ্টা করছেন আনামুল হক বিজয় ও মেহেদী হাসান মিরাজ। সিডন্সও বাহবা দিচ্ছিলেন তাদের। এশিয়া কাপের প্র্যাকটিসেও দেখা গেল নাসুমের মারা ছক্কা গিয়ে পড়ছে প্র্যাক্টিস গ্রাউন্ডের বাইরে। টেল এন্ডারদের ব্যাটিংয়েও এর ছাপ?
অথচ বাংলাদেশের ইনিংসে ছক্কা মাত্র একটা। সেটাও হতো না যদি ফিল্ডার ক্যাচ ধরতে গিয়ে বাউন্ডারি কুশনে পা ছোঁয়াতেন। ওদিকে নাজিবউল্লাহ একাই মেরেছেন ছয়টা ছক্কা। বিজয়ের ওপর ছিল ওপেনিংয়ের দায়িত্ব। সিডন্সের পাওয়ার হিটিং ক্লাসের নিয়মিত ছাত্রের ব্যাট থেকে ১৪ বলে এলো ৫ রান। তার আগে পরে নেই আরও দুই উইকেট। পাওয়ার প্লের স্কোর? ৬ ওভারে ২৮।
এই ধাঁধার সমাধান করবে কে? সমস্যাটা কোথায়? সামর্থ্য নেই নাকি মানসিকতায় ত্রুটি? যথাযথ কোচ, সুযোগ-সুবিধাদি তো আছেই বিজয়দের। তবুও কেন ম্যাচে পারছেন না তারা? পাওয়ারপ্লেতে এমন ধীরলয়ের ‘নেগেটিভ’ ব্যাটিং দিয়ে বোলারদের জন্য কিছুই রেখে যেতে পারছেন না বিজয়-নাঈমরা। অথচ নতুন শুরুর প্রথম বার্তাটা দেয়ার সুযোগ ছিল তাদের হাতেই। কিন্তু বৃত্তের বাইরে আফগানদের কেবল দুই ফিল্ডার থাকার পরেও তাদের ব্যাটে দেখা যায়নি আক্রমণাত্মক কোনো ছাপ। দেখা যায়নি ন্যুনতম কোনো চেষ্টাও। ব্যাটিং ব্যাপারটা আগাগোড়া পেশি-শক্তির। নেপথ্যে কাজ করে অনেক বৈজ্ঞানিক জিনিসও। পাওয়ার হিটিং আরও বেশি নির্ভরশীল এর ওপর। জেমি সিডন্সের হাতে গোনা ক্লাসগুলো যে দীর্ঘমেয়াদের সমাধান দেবে না, সেই দিকটা অন্তত পরিস্কার এখন।
‘ট্রাস্ট দ্য প্রসেস’
লিটন দাস নেই। জিম্বাবুয়ে সিরিজে ইনজুরিতে পড়ে এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে যাওয়া এই ওপেনার আছেন ছয় সপ্তাহের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায়। স্কোয়াডে এনামুল হক বিজয়ের সাথে ওপেনার হিসেবে রাখা হলো এক ম্যাচের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন পারভেজ হোসেন ইমনকে। দীর্ঘদিন ধরেই তাকে আগলে রাখছে বোর্ড। জোর সম্ভাবনা ছিল বিজয়ের সাথে তাকে ওপেনিংয়ে দেখতে পাওয়ার।
কিন্তু ইনিংস উদ্বোধন করলেন হাসান মাহমুদের জায়গায় স্কোয়াডে ডাক পাওয়া নাঈম শেখ। যার শেষ ১০ ইনিংসেও নেই কোনো ফিফটি, ত্রিশোর্ধ্ব ইনিংস মাত্র একটি। প্রশ্ন ছোঁড়াই যায় টিম ম্যানেজমেন্টের দিকে, নাঈমকে ম্যাচ খেলানোর প্রক্রিয়াটা কী? উইন্ডিজে ‘এ’ দলের ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করেছিলেন একটা। সেটা কি টি-টোয়েন্টি দলের মূল একাদশে জায়গা পাওয়ার যথাযথ মানদন্ড? ক্রীড়াঙ্গনে বহুল প্রচলিত ‘ট্রাস্ট দ্য প্রসেস’ শব্দটার মর্মার্থ আদৌ কি বুঝে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড? কিংবা টিম ম্যানেজমেন্ট? তা না হলে প্রথম ঘোষিত স্কোয়াডের ওপেনার হিসেবে বিজয়ের সাথে কেন ইমনকে দেখা যায়নি একাদশে? কিন্তু নাঈম বাদই পড়েছিলেন ধীরগতির ব্যাটিংয়ের সাথে ফুটওয়ার্কের অভাবের জন্য।
নাঈমের ডিসমিসালের দিকে খেয়াল করুন। স্পিনার মুজিব উর রহমানের বলের লাইনটা পড়তেই পারেননি তিনি। লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন। কিংবা ফজল হক ফারুকির করা প্রথম ওভারটা; দুইবার ইন সাইড এজ হলো। কাট করতে গিয়ে ব্যাটের মুখ বন্ধ করে দিয়েছিলেন আগেই। অথচ শ্রীধরন শ্রীরাম বলেছিলেন ‘নাঈম শেখ ন্যাচারাল হিটার। ম্যাচে গিয়ে ওর কাজ একটাই, মারা।'
অনুশীলনে হয়তো কিছু একটা শ্রীরাম দেখেছিলেন নাঈমের মধ্যে। নইলে এমনটা কেন বলবেন? কারণ গেল দেড় বছরেও বলার মতো কিছু করতে পারেননি নাঈম
অবশ্য এদিকে একটা আপেক্ষিক উত্তরের প্রশ্নও এসে যায়, নাঈমের জায়গায় ইমন হলে ফলাফল অন্যরকম হতো কিনা? হয়তো হতো, হয়তো বা নয়। কিন্তু টিম কালচার, কিংবা প্রক্রিয়াটা অন্তত মেনে চলা হতো। বোর্ড, টিম ম্যানেজমেন্ট, অধিনায়ক হয়তো সেই ভাবনাটা ভাবেননি।
তিন বছর পর জাতীয় দলে ফেরানো হলো সাব্বির রহমানকে। অতীতে টি-টোয়েন্টির ব্যাটিংয়ের যা একটু ছাপ দেখা গিয়েছিল তার ব্যাটেই। একাদশে তাকে দেখা যাবে ভেবেই খেলা দেখতে বসেছিলেন সবাই। ফিনিশারের যে ভূমিকা সেটাতেও তাকে দেখা যেতে পারত। কিন্তু সাব্বিরকে বসিয়ে রাখা হলো বেঞ্চেই। তাহলে তাকে স্কোয়াডভূক্ত করার অর্থটা কী দাঁড়ায়? যেহেতু ‘টি-টোয়েন্টি’ স্পেশালিস্ট বলা হয় তাকে।
দল আরব আমিরাতে যাওয়ার আগে শোনা গেল চার নম্বরে খেলবেন আফিফ হোসেন। কিন্তু কাল বিজয় আউট হওয়ার পর মাঠে নামলেন মুশফিকুর রহিম। শোনা যাচ্ছিল মেইকশিফট ওপেনারের কথাও। যেহেতু টি-টোয়েন্টি, সামনে আসছে বিশ্বকাপও; এমন কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাই যেত। শেখ মাহেদীকে ওপেনার হিসেবে কিংবা চারে-পাঁচেও খেলানো যেত। কিন্তু এতদিন ধরে পরিবর্তনের বাক্য আওড়ে শেষমেশ উঠে এলো সেই পুরনো ছবিই।
অধিনায়ক সাকিবের সাথে দুই সিনিয়র মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ। মাহমুদউল্লাহর কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছে অধিনায়কের দায়িত্ব। পড়তি ফর্ম, শরীরী ভাষা আর প্রশ্নবিদ্ধ ব্যাটিংয়ে দলে তার জায়গা পাওয়া নিয়েই আছে হাজারটা আপত্তি। অধিনায়কত্ব থেকে সরানোর পর বইছিল বদলের গান। কিন্তু জিম্বাবুয়ে সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতেই খেলানো হলো তাকে। খেলছেন এশিয়া কাপেও।
কদিন আগে রাসেল ডমিঙ্গো এক সাক্ষাতকারে জানিয়েছিলেন, মুশফিককে টি-টোয়েন্টি ছেড়ে ওয়ানডে ও টেস্ট নিয়ে ভাবতে। এই কোচের মতে টি-টোয়েন্টির ব্যাটিংয়ের বাজে প্রভাব পড়েছে মুশফিকের বাকি দুই ফরম্যাটের খেলায়। তাদের নিয়ে বোর্ড, টিম ম্যানেজমেন্ট, নির্বাচকদের কী পরিকল্পনা সেটা এখনো পরিস্কার নয়। এর ওপর সংবাদমাধ্যমে মাঝেমধ্যেই দেখা যায় পাল্টাপাল্টি বক্তব্য, সৃষ্টি হয় ধোঁয়াশার। যদিও সাকিব অধিনায়ক হয়েই বলেছেন মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ তার দলের অপরিহার্য অংশ।
মাঠের পারফর্ম্যান্সেও প্রতিদান আর দিতে পারলেন কই? মুশফিক ফিরেছেন ১ রানে। মাহমুদউল্লাহ শারজাহর ছোট বাউন্ডারিও পার করতে পারেননি রশিদ খানকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে। ক্যাচ দিয়েছেন ইনার সার্কেলের একটু বাইরে, মিড উইকেটে। ২৭ বলে ২৫ রানের ইনিংসে তার স্ট্রাইকরেট, ৯২.৫৯।
তবে অধিনায়কের এই বক্তব্যে মনে হয় না পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি ঘটবে। জনসমর্থন খুব বেশি নেই এই দুজনের পক্ষে। বিশেষ করে গত ম্যাচের পর আরও এক দফা সমালোচনা হয়েছে তাদের। বোর্ডেরও উচিত দুই সিনিয়রকে নিয়ে নিজেদের পরিকল্পনা জানানো। দুটো রাস্তা খোলা; যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে হয় তাদের যেতে দেয়া নইলে সর্বোচ্চ যতটুকু তাদের কাছ থেকে নেয়া যায় সেই ব্যবস্থা করা। এর বাইরে ড্রেসিংরুমে যেভাবে কোণঠাসা হয়ে আছেন দুজন, তাতে তরুণদের কাছেও একটা ভুল বার্তা যাচ্ছে।
১৫ রানের আজন্ম আক্ষেপ আর মানসিকতা
সংবাদ সম্মেলনে মোসাদ্দেক বলছিলেন ১০-১৫ রান কম করেছে বাংলাদেশ। সাকিবও ম্যাচ প্রেজেন্টেশনে একই কথা বলেছেন। বিগত অনেক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ শেষে ক্রিকেটারদের মুখ থেকে অনেকবারই শোনা গেছে এমন কথা।
ধরি আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ ১২৭ এর পরিবর্তে ১৪০-এর বেশি কোনো একটা সংগ্রহ পেল। হয়তো সাকিবদের মনোবলটাও তখন কিছুটা বাড়ত। কিন্তু ডেথ ওভারে আফগানিস্তান যেভাবে ব্যাট করেছে এরপরেও কি সেই দাবি ধোপে টেকে? ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী পরিকল্পনা সাজিয়ে মাঠে সেটার সফল বাস্তবায়নও করেছে আফগানররা। নাজিবউল্লাহরা পরিকল্পনামাফিক চড়াও হয়েছিলেন সাইফউদ্দিন-মোস্তাফিজের ওপর।
এই ১০-১৫ রানের আক্ষেপ ঘোচাবে কে? যার শুরুটা করবেন দারুণ একজন ওপেনার, শেষ আচড় টানবেন মারকাটারি ফিনিশার। কিন্তু বাংলাদেশে তেমন কেউই তো নেই। মুজিবের স্পিনে নাকাল হওয়া বিজয়ের ব্যাটিং দেখে কে বলবে, গত ডিপিএলে হাজারের বেশি রান তিনি একাই করেছেন! তার আড়ষ্ট পা, সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা শট; এসব দুর্বল মানসিকতারই বহিঃপ্রকাশ।
মোসাদ্দেক অবশ্য বলেছেন ১২৭ রানের পুঁজি নিয়ে আফগানিস্তানকে ১৮ ওভার পর্যন্ত আটকে রাখাটা তাদের জন্য ‘গুড এনাফ’। সব হারানোর ম্যাচে দলের সেরা পারফর্মার এসব ভেবে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতেই পারেন। কিন্তু এতে করে যে মানসিকতার পার্থক্যটা যে আরও দৃশ্যমান হয়ে পড়ছে সেটা তারা ভেবে দেখছেন কি?
সাকিব অধিনায়ক হওয়ার পর বলেছিলেন, সতীর্থদের মানসিকতায় বদল আনার চেষ্টা করবেন। যোগ্য নেতার মতো এক দফা ব্যাটও ধরেছিলেন তাদের পক্ষে এভাবে, ‘সবাই জানে দলে তাদের কাজটা কী। আমরা ক্লাস ফোর-ফাইভের স্টুডেন্ট না।’
বিসিবি সভাপতিও বলেছিলেন, সাকিব থাকলে কোনো কোচের দরকার পড়ে না। একাই একাদশ নির্বাচন করেন তিনি। সেই বক্তব্যের পর অধিনায়ক সাকিবকে ঘিরে প্রত্যাশার পারদও চড়েছিল আকাশে। এই বুঝি ধুকতে থাকা কাউকে বিশ্রাম দেবেন, তরুণদের দেবেন সুযোগ। কিন্তু এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচই বদলে দিল প্রত্যাশিত সব সমীকরণ। টি-টোয়েন্টির সরল অংক আরও জটিল হয়ে উঠলো বাংলাদেশের। নতুন দিনের আশা প্রতিনিয়তই দেখানো হচ্ছে, কিন্তু ঘুরেফিরে দৃশ্যপটে আসছে সেই ঝড়ঝঞ্ঝাময় দিনই।