• এশিয়া কাপ
  • " />

     

    কই মাছের প্রাণ কুসাল, শানাকার শক্তি আর অতিরিক্ত রানের সহায়তায় সুপার ফোরে শ্রীলঙ্কা

    কই মাছের প্রাণ কুসাল, শানাকার শক্তি আর অতিরিক্ত রানের সহায়তায় সুপার ফোরে শ্রীলঙ্কা    

    এশিয়া কাপ, গ্রুপ পর্ব, দুবাই(টস-শ্রীলঙ্কা/ বোলিং)
    বাংলাদেশ- ১৮৩/৭, ২০ ওভার (আফিফ ৩৯, মিরাজ ৩৮, মাহমুদউল্লাহ ২৭, করুনারত্নে ২/৩২, হাসারাঙ্গা ২/৪১, থিকশানা ১/২৩)
    শ্রীলঙ্কা- ১৮৪/৮, ১৯.২ ওভার (মেন্ডিস ৬০, শানাকা ৪৫, নিসাঙ্কা ২০, এবাদত ৩/৫১, তাসকিন ২/২৪, মাহেদী ১/৩০)
    ফলাফল: শ্রীলঙ্কা ২ উইকেটে জয়ী

     

    রুদ্ধশ্বাস এক ম্যাচে স্নায়ু ধরে রেখে জয় দিয়ে সুপার ফোরে জায়গা করে নিল শ্রীলঙ্কা। মেহেদী হাসান মিরাজের দারুণ পিঞ্চ হিটিংয়ের পর আফিফ হোসেনের টি-টোয়েন্টি সুলভ ইনিংস ও মোসাদ্দেক হোসেনের ফিনিশিং ক্যামিওতে এশিয়া কাপে টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ পেয়েছিল বাংলাদেশ। জীবন পেয়ে তার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করে কুসল মেন্ডিস ৬০ রান করার পর অধিনায়ক দাসুন শানাকার ৪৫ রানে শেষ ওভারে গড়ানো ম্যাচে এশিয়া কাপের টি-টোয়েন্টি সংস্করণে সর্বোচ্চ রানতাড়ার রেকর্ড গড়েছে শ্রীলঙ্কা। অবশ্য তার জন্য বাংলাদেশের ওয়াইড-নো বলের সমাহারকে ধন্যবাদ জানাতেই পারে শ্রীলঙ্কা।

    ১৮৪ রানের লক্ষ্যে শ্রীলঙ্কার শুরুটা হয় তাদের মনমত। ৩ রানে থাকার সময় কুসাল মেন্ডিসের ক্যাচ ফেলে দেন মুশফিক। সেটার সুযোগ নিয়ে পাথুম নিসাঙ্কাকে সঙ্গী করে হাত খুলে খেলতে শুরু করেন মেন্ডিস। ৫ম ওভারে সাকিবকে দুই ছয়, এক চার মেরে দুজন মিলে নেন ১৮ রান। পাওয়ারপ্লের শেষ ওভার করতে এসে অবশ্য শ্রীলঙ্কাকে কাপিয়ে দেন অভিষিক্ত এবাদত হোসেন। নিসাঙ্কার পর চারিথ আসালাঙ্কাকে ফেরান দারুণ দুই শর্ট বলে। ছুটতে থাকা শ্রীলঙ্কার স্কোরবোর্ড মুহূর্তের মধ্যে রং পালটালে তারা পাওয়ারপ্লে শেষ করে ৪৮ রানে ২ উইকেট হারিয়ে।

    পরের ওভারে আক্রমণে এসেই মাহেদী হাসান মেন্ডিসকে আরও একবার প্যাভিলিয়নের পথ দেখালেও এদিন যেন কই মাছের প্রাণ হয়ে গিয়েছিল মেন্ডিসের। রিভিউতে নো বল ধরা পড়ায় মেন্ডিস সুযোগ পেয়ে যান আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার। অবশ্য পরের ওভারে এসে আরও একটি দারুণ শর্ট বলে দানুশকা গুনাতিলাকাকে ফেরান এবাদত যার কৃতিত্ব দিতে হয় ৩০ মিটার দৌড়িয়ে ঝাপিয়ে পড়ে অসাধারণ এক ক্যাচ নেওয়া তাসকিনকে। সেই তাসকিন পরের ওভার এসে ভানুকা রাজাপাকসাকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের আশার পালে লাগান জোর হাওয়া।

    তবে উইকেটে আসা অধিনায়ক শানাকাকে নিয়ে এরপর মেন্ডিস গিয়ার পাল্টান। উইকেটের পেছনে মাঝে একবার ক্যাচ দিয়েও বাংলাদেশ রিভিউ না নেওয়াইয় জীবন পেয়ে এবাদতের করা ১৩তম ওভারে মারেন দুই ছয়, দুজনে মিলে নেন ২২ রান। সেই সাথে ৩২ বলে বাংলাদেশের সাথে নিজের ৬ষ্ঠ ম্যাচে মেন্ডিস পূর্ণ করেন ৪র্থ ফিফটি! মোস্তাফিজকে এরপর জুটি ভাঙার জন্য আনা হলে তিনি ঠিকই ফেরান ৩৭ বলে ৬০ রানে থাকা মেন্ডিসকে। দুর্দান্ত এক স্পেলের শেষ ওভারে এরপর তাসকিন হাসারাঙ্গাকে ফেরালে বাংলাদেশ তখন জয়ের স্বপ্নে বিভোর। সেই স্বপ্নে পানি ঢেলে দিতে শানাকা বদ্ধপরিকর হলেও ৩৩ বলে ৪৫ রানের অধিনায়কোচিত এক ইনিংস শেষে মাহেদীর শিকার হয়ে ১৮তম ওভারে ফেরেন শানাকা। তবে পেন্ডুলামের মত দুলতে থাকা ম্যাচে ১৯তম ওভারে ধুঁকতে থাকা এবাদত অতিরিক্ত রানের পসরা সাজিয়ে দেন ১৭ রান। সাকিবের প্রত্যুৎপন্নমতিতায় করুনারত্নে রান আউট হয়ে ফিরলেও অভিষিক্ত আসিথার মতই নিজ দেশের হয়ে অভিষেকে সর্বোচ্চ রান দেন এবাদত। শেষ ওভারে ৮ রান প্রয়োজন হলে ইন-ম্যাচ পেনাল্টির সুযোগ নিয়ে মাহেদীকে দ্বিতীয় বলে আসিথা চার মারার পরের বলে নো বল দিয়ে বসেন মাহেদী। আর শাপমুক্তির শ্বাস নিয়ে আসিথা গর্জে ওঠেন জয়ের উল্লাসে। বিশৃঙ্খল বোলিংয়ের মাশুল দিয়ে বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কা সেই সাথে দেখিয়ে দেয় বাড়ির পথ।

    এর আগে এদিন সাব্বির রহমান ও মেহেদী হাসান মিরাজকে দিয়ে ওপেন করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ। অভিষিক্ত আসিথা ফার্নান্দো সাব্বিরকে ৫ রানে ফেরালেও টি-টোয়েন্টিতে প্রথম ওপেন করতে নেমে দারুণ খেলতে থাকেন মিরাজ। সাকিবকে সঙ্গী করে স্কুপ, ডাউন দ্য গ্রাউন্ড শট, ড্রাইভ - প্রায় সব শটেই নিজেকে মেলে ধরেছেন মিরাজ। মিরাজের দক্ষতায় পাওয়ারপ্লেতে বাংলাদেশ তুলে ফেলে ৫৫ রান।

    পাওয়ারপ্লের পরের ওভারেই অবশ্য ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা আক্রমণে এলে ২৬ বলে ৩৮ রানের দারুণ ইনিংস শেষে স্লগ করতে গিয়ে ফেরেন মিরাজ, যার সূত্র ধরেই অবশ্য উইকেটের দেখে পেতে শুরু করে শ্রীলঙ্কা। উইকেটে এসে ১৫০০ আন্তর্জাতিক টি টোয়েন্টি রান পূর্ণ করার পরে ৪ রানে ফিরে যান মুশফিকুর রহিম। মুশফিকের বিদায়ের পর হাত খুলতে শুরু করা সাকিবও ফেরেন ২২ বলে ২৪ রান করে থিকশানার বলে বোল্ড হয়ে।

    সাকিবের বিদায়ের পর মাহমুদউল্লাহ উইকেটে এসে জবুথবু থাকলেও উইকেটের চারদিকেই শট খেলতে থাকেন আফিফ। স্কুপের সদ্ব্যবহার করে পেসারদের ভাবিয়ে তোলেন আফিফ। আফিফের মারমুখী ব্যাটিংয়ে কিছুটা সহজ হয়ে হাসারাঙ্গাকে এক ওভারে চার ছয় মেরে হাত খোলার ইঙ্গিত দেন মাহমুদ উল্লাহ। ১৬ ওভারে দুজনে মিলে দলকে ১৩৮ রানে নিয়ে গেলে দুজনেই গিয়ার বদলাতে উন্মুখ হন; সেটা করতে গিয়েই ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে ২২ বলে ৩৯ রানের দারুণ ইনিংস শেষে ফেরেন আফিফ। পরের ওভারে হাসারাঙ্গাকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ২২ বলে ২৭ রানে বোল্ড হয়ে ফেরেন মাহমুদ উল্লাহ। তবে শেষ দিকে উইকেটে এসেই ঝড় তোলেন তাসকিন আহমেদ ও মোসাদ্দেক হোসেন। ৬ বলে ১১* রান করে তাসকিন ও ৯ বলে ২৪* রান করে মোসাদ্দেক হোসেন শেষ ২ ওভারে ২৪ রান তুলে বাংলাদেশকে এনে দেন আরব আমিরাতে নিজেদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। ক্ষণে ক্ষণে রঙ পাল্টানো ম্যাচে সেই লক্ষ্য তাড়া করে পরের পর্বে চলে গিয়েছে এরপর লঙ্কানরাই।