• এশিয়া কাপ
  • " />

     

    'কিং কোহলির' রাজসিক সেঞ্চুরি, ভুবনেশ্বরের ভুবন ভোলানো স্পেলে পিষ্ট আফগানিস্তান

    'কিং কোহলির' রাজসিক সেঞ্চুরি, ভুবনেশ্বরের ভুবন ভোলানো স্পেলে পিষ্ট আফগানিস্তান    

    এশিয়া কাপ, সুপার ফোর, দুবাই(টস-আফগানিস্তান/বোলিং)
    ভারত-২১২/২, ২০ ওভার (কোহলি ১২২* রাহুল ৬২, পান্ট ২০*, ফারিদ ২/৫৭)
    আফগানিস্তান-১১১/৮, ২০ ওভার (ইব্রাহিম ৬৪*, মুজিব ১৮, রশিদ ১৫, ভুবনেশ্বর ৫/৪, দীপক ১/৩, আরশদীপ ১/৭)
    ফলাফল: ভারত ১০১ রানে জয়ী

     

    সেঞ্চুরির জন্য প্রায় তিন বছরের প্রতীক্ষা। মাঝে শেষ হয়ে গিয়েছেন বলে রবও কম উঠেনি। ১০২০ দিন, ৮৪ আন্তর্জাতিক ইনিংস পর প্রতীক্ষার অবসানও হল, সমালোচকদের মুখ বন্ধও হল ব্যাটে-বলের প্রতিটা মিষ্টিমধুর সংযোগে। ভিরাট কোহলি ফিরলেন রাজসিকভাবেই। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নিলেন, সাথে এদিন অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পাওয়া লোকেশ রাহুলের ৬২ রানে ভারত পেল এবারের এশিয়া কাপের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। সেই রানের পাহাড়ে পিষ্ট আফগানিস্তান পুড়ল ভুবনেশ্বর কুমারের আগুনে স্পেলে। আনুষ্ঠানিকতা হয়ে দাঁড়ানো এই ম্যাচ থেকে ভারতের প্রাপ্তির খাতাটা তাই বেশ চওড়া।

    রোহিতের অনুপস্থিতিতে এর আগে ওপেন করতে নেমেছিলেন কোহলি। টানা দুই ফিফটিতে আগেই ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে রানের খাতা খোলার আগে ফিরলেও এদিন শুরু থেকেই এক একটি বাউন্ডারিতে মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন পুরনো কোহলিকে। সাথে রাহুলও ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত দিলে ভারত পাওয়ারপ্লেতে পৌঁছে যায় ৫২ রানে।

    ৮ম ওভারে এরপর অবশ্য কোহলি সুযোগ দিয়েছিলেন। নবীর বলে ডিপ মিড উইকেটের ওপর দিয়ে তুলে মারতে গেলে ইব্রাহিম ক্যাচ তো ফেললেনই, উল্টো বানিয়ে দিলেন ছয়। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাননি কোহলি। ৩২ বলে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ ৩৩তম ফিফটি তুলে নিলেন। তিন বল পরেই রাহুলও তার ফিফটি পূর্ণ করলেন ৩৭ বলে। পরের ওভারে এসে ফারিদ আহমেদ মালিক জোড়া আঘাত হেনে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেন; ৪১ বলে ৬২ রানের ইনিংসের সমাপ্তি টেনে রাহুলকে ফেরানোর পর ছয় দিয়ে শুরু করা সূর্যকুমার যাদবকে ফেরান এক বল পরেই। তবে কোহলি যেদিন পণ করেছেন শেকল ভেঙ্গে গর্জে ওঠার, সেদিন তাকে থামায় কে! আহত বাঘ খাঁচা ভেঙ্গে খুনের নেশায় উন্মত্ত হয়ে উঠলে আশেপাশের সকলের শিরদাঁড়ায় যেরকম শীতল স্রোত বয়ে যায়, আফগানরাও তখন সেরকম ভীত-সন্ত্রস্ত। ১৬তম ওভারে রশিদকে বের হয়ে এসে ছয় মারার পরের ওভারেই মুজিবকে যখন টানা দুই চার মারলেন কোহলি তখনই আঁচ করা যাচ্ছিল আজ কোহলি অপ্রতিরোধ্য; খরা আজ কাটছেই, প্রতিপক্ষ এখন কেবল সময়।

    আফগানদের শঙ্কা সত্যি করে বলের হিসেবকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আরও একটি প্রথমের দেখা পেলেন কোহলি। ফারিদকে দারুণ এক পুল শটে মাঠ ছাড়া করে ৫৩ বলে কোহলি পেলেন সেঞ্চুরি। ৭১তম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি করে বসলেন রিকি পন্টিংয়ের পাশে। তবে সেখানেই থামলেন না। ঋষাভ পান্টকে সঙ্গী করে শেষ ৩ ওভারে তুললেন ৫৫ রান! আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেললেন; ১২ চার ও ৫ ছয়ে সাজানো ৬১ বলে ১২২* রানের সেই ইনিংস একই সাথে ভারতের হয়েও টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস।

    কোহলির মহিমায় উদ্ভাসিত ভারত যেন এরপর দেখা দিল নতুন রুপে। পাওয়ারপ্লেতে ২১ রান তুলতেই আফগানরা খুইয়ে বসল ৫ উইকেট। আর সেই উইকেটের মিছিলের নেপথ্যে ছিলেন একজনই - ভুবনেশ্বর। ডেথ ওভারে তার জুড়ি মেলা ভার, অথচ সেই ভুবনেশ্বর গত দুই ম্যাচেই ১৯তম ওভারে ডুবিয়েছিলেন ভারতকে। জবাব দেওয়ার বাকি ছিল তাই অনেক। একদম নির্ভার হয়ে ভুবি ফিরলেন নিজের বিধ্বংসী রুপে; জাযাই, জানাত, গুরবাজ, নবীকে ফিরিয়ে ভারতের হয়ে পাওয়ারপ্লেতে সেরা স্পেলের রেকর্ড (৩-০-৪-৪) গড়লেন। ছন্দে থাকা ভুবনেশ্বরকে তাই রাহুল স্পেল চালিয়ে দেওয়ার সুযোগ দিলে শেষ ওভারে ওমরযাইকে ফিরিয়ে নিলেন উইকেট মেইডেন। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ২য় বারের মত ৫-উইকেট পেয়ে ভারতের হয়ে এই ফরম্যাটে ৩য় সেরা স্পেলের রেকর্ড গড়লেন তিনি: ৪-১-৪-৫!

    ভুবনেশ্বরের তোপে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়ার আফগানরা এরপর ভারতের সংগ্রহের ধারেকাছেও পৌঁছাতে পারেনি। প্রাপ্তি বলতে শুধুই গুটিয়ে না যাওয়া। সেটার জন্য ইব্রাহিমের সাহসী ইনিংস ধন্যবাদ পেতেই পারে। গিয়ার পাল্টানোর জন্য সেই অর্থে অবশ্য চেষ্টা করেননি ইব্রাহিম। ৫৯ বলে ৬৪* রানে অপরাজিত থেকে শুধুই হারের ব্যবধানটুকুই কমিয়েছেন। কোহলির বিশেষ দিনটা ভারত তাই স্মরণীয় করে রেখেছে বিশাল এক জয়ে। হতাশাজনক এক টুর্নামেন্টের শেষভাগে এসে অবশ্য তাদের জীবন্ত কিংবদন্তীর মুখ ভরা হাসি, আর ব্যাটের ধার ফিরে পাওয়াটাই হয়ত এই ম্যাচ থেকে ভারতের সবচেয়ে বড় পাওয়া।